তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-২০+২১

0
546

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২০
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

বিকালে নিজের বাড়িতে পৌঁছালো তাহসী। তার সাথে তনন ও এসেছে। তাহসী,তনন বাড়িতে ঢুকতেই উৎসবের আমেজ পেল। বাড়ি সাজানো হচ্ছে। নাতাশা রহমান ই প্রথমে ওদের দেখলেন। দু’জনের সাথে কুশল বিনিময় করে ওদেরকে নাঈমের ঘরে নিয়ে গেলেন।
নাতাশা রহমান তননকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“আপাতত এই রুমে রেস্ট নাও তনন। তাহসীর রুম এতদিন বন্ধ আছে। পরিষ্কার করে দিতে বলছি আমি।”

তাহসী লাগেজ রেখে স্কার্ফ খুলে ব্রুজ সহ এক জায়গা জড় করে রাখলো।
নাঈম বারান্দায় ছিল। ওদের দেখে রুমের ভিতরে আসলো।
-“কেমন আছো, তোমরা?”

-“আলহামদুলিল্লাহ।”
মুচকি হেসে উত্তর দিল তনন।

তাহসী স্কার্ফ কাঁধের উপর রেখে ওড়নার মতো করে সামনে নিয়ে আসলো। তারপর নিজের রুমে চলে গেল।
নাঈম বললো,
-“ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে নিয়ে আপাতত এখানে রেস্ট নাও। আপুর রুমে যেতে দেরি আছে।”

তনন ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলো,
-“তাহসীর রুমে কি হয়েছে? তাহসীর তো কাল আসার কথা ছিল। তাহলে তো আগেই…..”

-“আরে জানো না? আপুর রুম তো লক করা। একটা চাবি আপুর কাছে। আর একটা বাবার কাছে থাকে। আপু কে না বলে আপুর রুম খোলা নিষেধ।”

কৌতুহল নিয়ে তনন জিজ্ঞেস করলো,
-“কেন?”

-“আপু পছন্দ করে না তার রুমে যেয়ে কেউ এটা ওটা হাত দিবে, প্রশ্ন করবে। আর আপু না থাকলে আমরা কেউ যাই না। অবশ্য আমরাও এটা পছন্দ করিনা।”

-“তাই বলে পরিষ্কার করতেও দেয় না?”
অবাক হয়ে বললো তনন।

-“না, আর রুমের সব আপুর একদম মুখস্থ বলতে পারো। আমি যদি আপুর টেবিলে কিছু এলোমেলো করি বুঝে যাবে কেউ হাত দিয়েছিল।”

-“কেন?”

নাঈম ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“ধরো তুমি নেই বাড়িতে। তোমার রুমে যেয়ে তোমার পছন্দের জিনিস নিয়ে কেউ ব্যবহার করলো, তুমি কিছু বলবে না?”

-“কে আর করবে! তনু বা আম্মু। ওরা করলে সমস্যা নেই।”

-“কিন্তু আপু কিছু শেয়ার করে না। আপুর রুমে দেখেছো সব? সব মিনিয়েচার শো-পিচ। এগুলো আপুর অনেক পছন্দের। বাচ্চারা যদি কেউ দেখে কি অবস্থা বুঝেছো! শাফিন আর ফুফির মেয়ে ওইযে লিখি এই দুইটার ঢোকা একদম নিষিদ্ধ! আর কারো জিনিস না বলে ধরা বা নেওয়া আপু পছন্দ করে না। নিজের জিনিস কেউ নিবে সেটাও সহ্য করবে না। আমরাও করিনা এসব। যাদের ভদ্রতা নেই, তাদের কাজ এসব। এখন আপুর রুম পরিস্কার করছে সার্ভেন্ট,তাই আপু চলে গেল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করবে।”

তাহসী নাঈমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তোর ভাষণ দেওয়া শেষ হলে দুজনে এই রুমে আসতে পারিস!”

নাঈম দাঁত বের করে হেসে দিল। তাহসী চোখ গরম করে বললো,
-“কতদিন বলেছি দাঁত বের করে না হাসতে। এটা গুনাহ! মুচকি হাসবে সবসময়।”

-“স্যরি।”
নাঈম মনে মনে ভাবলো,’ এর থেকে আরো বড় কিছু করে বসে আছি, এইটা আর কি সেই তুলনায়!’

তাহসী ভিতরে এসে লাগেজ টেনে নিয়ে গেল। তনন গেল পিছু পিছু।

নাতাশা রহমান এসে নাস্তা দিলেন। তাহসী লেবুর শরবতে এক চুমুক দিয়ে বললো,
-“বাবা কোথায়?”

-“মাংসের অর্ডার দিতে গেছে।”

-“ভাইয়া?”

-“ঘুমাচ্ছে।”

নাতাশা রহমান চলে গেলেন। নাঈম এসে ওদের সাথে জয়েন করলো।

🍁🍁🍁
এই দুইদিন খুব ব্যস্ত সময় কাটালো তাহসী। আজ হলুদের অনুষ্ঠান করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। মূলত আশপাশের মানুষ আর আত্মীয় স্বজন রা বলছিল হলুদের অনুষ্ঠান করার কথা। কিন্তু তৌহিদ হোসেন পাত্তা দেননি। হলুদের অনুষ্ঠান করার কথা ইসলামে নেই। তাহসীর বিয়ের সময় ও করা হয়নি। তাহসী তো আগে থেকেই বলে দিয়েছিল এসব ফালতু কাজ সে করতে পারবে না। কি সব নিয়ম! অন্য মহিলারা এসে তাকে গোসল করাবে। তাহসী শুনেই রেগে ছিল।
নাহিদের সময় ও হলো না। তনন এসব দেখে অবাক হয়ে বললো,
-“তোমাদের হলুদের অনুষ্ঠান করে না নাকি?”

-“ইসলামে নেই এসব; জানতে না?”

-“না, আমার তো দিয়েছিল। অবশ্য বিয়ের দিন সকালে একটু ছুঁয়ে ছিল। আমি তো এসেছিলাম ই রাতে! কোনো মানুষে আমার মতো বিয়ে করে?”

তাহসী ভ্রু কুঁচকে তাকালো তননের দিকে। তারপর সরে গেল ওর পাশ থেকে। শশী পাঁচ- ছয়টা মেহেদী নিয়ে এসেছে। তাহসী সেদিকে এগিয়ে গেল।
-“এই তোর কাছে মেহেদী কেন?”

আমতা আমতা করে‌ শশী উত্তর দিল,
-“নাঈম ভাইয়ার সাথে বাইরে দেখা। তো দিয়ে গেল আমার কাছে। বললো তোমাকে দিতে।”

-“ওহ্। কোথায় গেল এই বিকালে? একটু পরেই সন্ধ্যা হবে।”

-“জানিনা তো।”

তাহসীর খালাতো বোন মেহেদী দিতে পারে ভালো। আবার রুবি ও পারে। ওরা দুজন বসল মেহেদী দিতে। তনন তাহসীর কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তুমি পারো না মেহেদী দিতে?”

-“নাহ।”

-“ওহ্।”

তাহসী বসলো ওদের সাথে। তনন চলে গেল ড্রয়িং রুমের দিকে। ওখানে তাহসীর ছেলে কাজিন রা রয়েছে। আর এখানে আস্তে আস্তে মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে।

_________
তাহসী আর তনন দুজনের দেখা হলো একেবারে রাতে খাবার টেবিলে। নাতাশা রহমান, তাহসীর খালামনি আর শিরিন সবাইকে খাবার এগিয়ে দিলেন।
খাওয়া দাওয়া শেষে ওদের আড্ডা বসলো ছাদে। এখানে তাহসীর সব কাজিন বসে আছে ছেলেমেয়ে সহ। বাইরের বলতে শুধু তনন। নাহিদ নেই এখানে; ও নিজের রুমে বন্ধুদের সাথে বসেছে।

স্বর্ণালী বললো,
-“তাহলে ট্রুথ ডেয়ার খেলা‌ যাক।”

প্রায় সবাই তাহসীর দিকে তাকালো। তাহসী তননের পাশে সবার সামনে বসে থাকায় অস্বস্তি অনুভব করছে।সবার তাকানো দেখে বললো,
-“কি?”

-“ট্রুথ ডেয়ার?”

-“তোরা খেল। আমি নাই।”

রুবি তাচ্ছিল্যের সাথে বলে উঠলো,
-“কেন? আমরা ট্রুথ দিলে তোমাদের রিলেশনের ব্যাপারে জেনে যাবো তাই?”

তাহসীর রাগ হয়ে গেল।
-“ফালতু কথা বলবি না!”

-“তো?”
আগের ভঙ্গিতেই বলে উঠলো রুবি।

শশী বললো,
-“তাহসী আপু কিন্তু আগের থেকেই খেলে না রুবি! ফাজলামি বাদ দে এখন।”

-“বুঝি বুঝি! সেইজন্যেই আগে খেলতো না!”

তাহসী ধমকে উঠলো। শাসিয়ে বললো,
-“অনেক বেশি বাড়াবাড়ি করছিস তুই! তুই খুব ভালো করে জানিস এই ফালতু গেইম আমার পছন্দ না।”

তনন তাহসীর হাত চেপে ধরে ইশারায় শান্ত হতে বলল। তাহসী হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। তাহসীর ছোট মামার ছেলে ঈশান বললো,
-“আপু বসো তো। বাদ দাও। আমরা গানের কলি খেলি।”

তাহসী বসলো না। ছোট শাফিন তাহসীর হাত ধরে বসিয়ে দিল। সে তাহসীর আরেক পাশে বসে ছিল। শাফিনের টানাটানিতে না বসে থাকতে পারলো না তাহসী। তাহসী বসতেই তাহসীর কোলের উপর বসলো শাফিন। তাহসী উঠে যেতেও পারলো না। কাল বিয়ে, এই রুবির জন্য এই রাতের মজা মাটি করবে না সে।
রুবি মনে মনে হাসছে। নাঈম রুবি কে ধমকে বললো,
-“রুবি স্যরি বল।”

-“কেন?আমি মিথ্যা বলেছি?”

তনন ও বিরক্ত হলো। তার আর তাহসীর কখনোই রিলেশন ছিল না। ইভেন তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব ও ছিল না। শুধু পড়ালেখার ব্যাপারে কথা হলো স্কুল, কলেজ এ। এডমিশন এর পর তাও বন্ধ। আর পাঁচটা ছেলে বন্ধুর মতোই তাদের সম্পর্ক ছিল। তাহসী অবশ্য ক্লাসমেটদের মধ্যে তিন চারটা ছেলের সাথেই কথা বলতো।

সামিয়া বললো,
-“তুমি তাহসী আপু কে হিংসে করো কেন বলতো? তাহসী আপুর রিলেশন এর বিয়ে না আমরা সবাই জানি। তুমি কেন শুধু শুধু পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছো?”

রুবি মুখ বাকালো। স্বর্ণালী বললো,
-“এবার এইসব বাদ দাও। আমরা গানের কলি ই খেলি। ছেলেরা এক দল, মেয়েরা এক দল।”

শশী বললো,
-“না আপু। ছেলে মেয়ে না। তনন ভাইয়া তো গান করে।”

তনন ঢোক গিলল। এখন সবাই চেপে না ধরে গান গাওয়ার জন্য। তৎক্ষণাৎ আমতা আমতা করে বললো,
-”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২১
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তনন ঢোক গিলল। এখন সবাই চেপে না ধরে গান গাওয়ার জন্য। তৎক্ষণাৎ আমতা আমতা করে বললো,
-“গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছি আমি। এখন পারিনা।”

শশী বললো,
-“মানবো না ভাইয়া। স্কুলে থাকতে প্রাইজ সব নিজের বাসায় নিয়ে যেতেন আপনি। এখন ভুলে গেছেন এটা মানা যায় না। তাহসী আপু বলো এটা মিথ্যা না?”

নাঈম বলে উঠলো,
-“ভাইয়া গান পারুক আর না পারুক তাতে তোর কি হচ্ছে?”

-“ইশ্! আসছে। ছেলেরা জিতে যাবে, আমরা বসে বসে দেখবো?”
গলা চড়িয়ে বলে উঠলো শশী।

সামিয়া হাত উঁচিয়ে বললো,
-“সবাই থামো। শশী আমরা কম পারি না হু। আমরা জিতে দেখিয়ে দিবো।”

ওদের আড্ডা শেষ হতে হতে রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গেল। শেষ পর্যন্ত কোনো দল ই জিতিনি। দুই দল ই সমান সমান। তনন কে শেষ পর্যন্ত একটা গান গেয়ে শোনাতে হয়েছে। তননের গানের মাধ্যমেই আড্ডার সমাপ্তি ঘটেছে।
এরপর সবাই ছাদ থেকে নেমে গেল; নিজ নিজ রুমে ঘুমাতে চলে গেল। তাহসীর চাচাতো বোন,ফুফাতো ভাই বোন এখানেই থাকলো। ছোট বাচ্চাদের আগেই বাবা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সবার শেষে ছাদের দরজায় তালা লাগিয়ে বের হলো তনন আর তাহসী।

তনন রুমে যেয়ে বিছানায় বসে বসলো,
-“তোমাদের কাজিন দের মধ্যে বন্ডিং টা অনেক ভালো, তাই না?”

-“হ্যা, আলহামদুলিল্লাহ। কেন তোমাদের নেই?”

-“না, এমন নেই; মোটামুটি সম্পর্ক। নানি বাড়ি কতদিন যায় তারই হিসাব নেই!”

-“ওহ্,আমি শেষ গিয়েছি মাস দুয়েক আগে।”

-“পড়াশোনা বাদ দিয়ে অনেক সময় ব্যবহার করো তুমি।”

-“তা করি বটে। কিন্তু আমার কাছে মানসিক শান্তি টাই আসল।”

-“আচ্ছা রুবির সাথে ওমন ব্যবহার করলে কেন? একটু বেশিই রুড। কি হতো ট্রুথ ডেয়ার খেললে?”

-“এই গেইম টা একদম বাজে লাগে আমার কাছে। আর রুবির ব্যবহার খারাপ, মিথ্যা ও বলে। আগে ভালো ব্যবহার করতাম, বানিয়ে বানিয়ে চাচির কাছে যেয়ে মিথ্যা বলতো। এখন এমন ব্যবহার দেখে সাহস পায় না। যে যেমন তার সাথে তেমন ব্যবহার করা উচিত নয় অবশ্য, কিছু কিছু ক্ষেত্রে না করেও পারা যায় না!”
তনন আর কিছু বললো না।

তাহসী ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লো। তনন গেল এরপর। তনন বের হয়ে লাইট ওফ করে তাহসীর পাশে শুয়ে পড়লো। তাহসী তখন ঘুমের দোয়া, আয়াতুল কুরসি পড়তে ব্যস্ত।

তনন কিছু বললো না। তাহসীর সব পড়া শেষ হতে সে চোখ খুলে তাকালো। তনন তখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাহসী ইশারায় জানতে চাইলো কি। তনন মুচকি হেসে বলল,
-“কিছু না।”

তাহসীর ঠোঁটে গভীর ভাবে চুমু খেল তনন। এরপর তাহসীর থেকে সরে গেল। তাহসী লাজুক হেসে উল্টো ঘুরে চোখ বুজলো। কিছুক্ষণ বাদেই দুইজনের চোখে ঘুম নেমে আসলো। তাহসীর কেউ স্পর্শ করলে ঘুম আসে না, ঘুমাতে অসুবিধা হয় এটা জানার পরে তনন আর তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইনা। অবশ্য তননের ও তেমন ইচ্ছা নেই। রাত টাই শুধু ঘুমানোর জন্য; অবশ্যই স্বস্তিতে ঘুমানোর দরকার।

🍁🍁🍁
সকাল থেকে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হলো। দেখে মনে হলো আসলেই এটা বিয়ে বাড়ি। অবশ্য রাতে বেশি বোঝা যায় বাড়ির সৌন্দর্য। পুরো বাড়ির চারদিকে মরিচ বাতিসহ নানা ধরনের আলোক বস্তু।

সকালবেলা খিচুড়ি দেখেই তাহসীর মেজাজ গরম হয়ে গেল। চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
-“আম্মু আমার এখন খিচুড়ি খাওয়া লাগবে?”

-“না, সাদা ভাত দিচ্ছি। তননের খাবার টা রেডি করে দিই আগে।”

-“আচ্ছা।”

তনন বললো,
-“আমি একাই নিতে পারবো আম্মা। আপনি ওকে দিন।”

নাতাশা রহমান বললেন,
-“ওকে দেখে শেখ একটু!”

তাহসী মুখ বাকালো। নাহিদ ও ওদের সাথে জয়েন করলো। আর সবাই একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছে। ছাদ থেকে আসলেও সব গল্প করেছে। পড়াশোনার জন্য একসাথে হতে পারে না সবাই অনেকদিন। তাহসীর নানু বাড়ি আর দাদু বাড়ি মিলে সবার বড় নাহিদ। তারপর তাহসীর মামাতো ভাই রাতুল। এরপরেই তাহসী। সেই হিসেবে তাহসীর বিয়ে প্রথম আর দ্বিতীয় নাহিদের।

খাওয়া শেষে সব কাজে তৌহিদ হোসেন কে সাহায্য করলো তনন। এখানে আসার পর থেকেই নিজের যথাসাধ্য মতো করার চেষ্টা করে তনন। যেন তৌহিদ হোসেন এর পরেই তার দায়িত্ব। তাহসীর খালা,মামি’রা পরিবার সহ চলে আসলেও তাহসীর খালু,মামা,ফুফা’রা এখনও কেউ আসেনি।

তাহসী নাঈম কে দিয়ে বাসর ঘরের জন্য ফুল আনিয়ে রাখলো শহর থেকে।
নাঈমকে পাঠিয়ে দিয়ে তাহসী গোসল করে তৈরি হয়ে নিল। গোসল করতেই আজ প্রায় এক ঘন্টা লাগলো তাহসীর। যেখানে পনেরো থেকে বিশ মিনিটেই তার গোসল হয়ে যায়। স্কার্ফ বাঁধার সময় তনন রুমে আসলো। তাহসীকে কিছু না বলে সে-ও গোসল করে আসলো। আয়নার দিকে তাকিয়ে তনন বললো,
-“সুন্দর লাগছে।”

-“তাহলে কি চেঞ্জ করতে হবে? বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি সেখানে সুন্দর দেখা মানায় না।”

তনন তাহসীকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বললো,
-“সুন্দর তবে আকর্ষণীয় না। পারফেক্ট আছে, যেতেই পারো।”

ঠোঁটে লিপ বাম লাগিয়ে তাহসী বললো,
-“আমি তৈরি।”

-“আমিও।”

তাহসী এবার তননের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। আয়নাতে সম্পূর্ণ দেখা যাচ্ছিল না। ভ্রু কুঁচকে তাহসী বললো,
-“এটা কোন শার্ট? নেভিব্লু টা কোথায়?”

-“নেভিব্লু শার্ট আমার কবে দেখলে?”

তাহসী আলমারি খুলে সেইদিন কেনা শার্ট তিনটা বের করলো। নেভিব্লু শার্ট টা এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“এক্সট্রিমলি স্যরি। বলতে ভুলে গেছি। চেঞ্জ করে এটা পরে নাও। আর ব্লেজার।”

-“দেখো তাহসী আমি পারবো না। তার মানে এইসব তুমি আমার জন্য কিনেছিলে? তুমি বুঝো কিছু? আমার কি কিছু নেই যে এখন এই ব্লেজার পরতে হবে?”

তখন তৌহিদ হোসেন তাহসীর রুমের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন। নক করতে যেয়ে তননের কথা শুনে সরাসরি রুমে ঢুকে পড়লেন। তাহসী কিছু বলার আগেই তিনি বললেন,
-“তনন তুমি হয়তো ভাবছো তোমার নেই এটা ভেবে দিয়েছি। আসলে তা না। আমি তাহসী,নাঈম,নাহিদ সবার জন্যেই টাকা পাঠিয়ে ছিলাম। পরে ভাবলাম তুমি কেন বাদ যাবে, তাই তোমার জন্যে পাঠালাম। তোমাকে নিজের ছেলের মতোই ভেবেছি। এখন তুমি যদি আমাকে….”

তনন অস্বস্তি বোধ করলো। তৌহিদ হোসেন কে দু’জনের একজন ও খেয়াল করিনি। তৌহিদ হোসেন এর কথা বুঝতে পেরে তনন বললো,
-“স্যরি বাবা।”

তৌহিদ হোসেন পুনরায় বললেন,
-“তৈরি হয়ে নিচে এসো। তোমার মা বোন এসেছে। আর সবাই তৈরি। নাঈম গোসলে গেছে। ও তৈরি হলেই আমরা রওনা দিবো।”

তৌহিদ হোসেন চলে গেলেন। তনন ঝটপট তৈরি হয়ে নিল।

নাঈম নিচে নামতেই বরযাত্রী রা বের হলো।

কনে বাড়িতে পৌঁছালে ওনারা সব ফর্মালিটিজ পূরণ করে বরযাত্রীদের ঢুকতে দিল।
নাহিদ ফিতা কেটে গেট থেকে একটু আগাতেই মেয়েরা শরবত, মিষ্টি এগিয়ে দিল। রাতুল বললো,
-“একটা ডিল হয়ে যাক। বর যদি সঠিক শরবত খেতে পারে তাহলে টাকা দিবো না। না পারলে দিবো।”

মেয়েরা সব হইহই করে উঠলো,
-“না, এমন হবে না!”

-“বললেই তো হলো না। লজিক দিয়ে কথা বলতে হবে। ঝালের শরবত ও খাবে, টাকাও দিবো তা তো হচ্ছে না!”

-“এমন নিয়ম নাই।”

-“ওইযে বললাম লজিক দিয়ে কথা বলতে হবে। এই যুগে এসে ওসব বললে তো চলবে না।”

তাহসীর খালাতো ভাই শায়ন বললো,
-“তার চেয়ে আমরা বরং সমঝোতায় আসি। আট হাজার নয় চার হাজার টাকা দিয়ে দিই।”

মেয়েরা কিছু বলার আগেই পিছন থেকে গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসলো,
-“যা করার তাড়াতাড়ি করো সবাই। এতো দেরি হচ্ছে কেন?”

মেয়েরা সবাই চুপ হয়ে গেল। একজন মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো সায়ন এর কথায়। তনন টাকা বের করে সায়নের হাতে দিলে সায়ন তনন কে ফিসফিস করে বললো,
-“কত দিলেন ভাইয়া?”

-“সাত। আসার সময় বাবা তো এটাই দিছে।”

-“আচ্ছা।”

সায়ন সামনে থাকা টেবিলের উপর টাকার খাম রেখে বললো,
-“সাত হাজার আছে। হাত ধোয়ার টাকা সহ।”

কেউ তেমন কিছু বললো না। নাহিদ শরবত, মিষ্টি খাওয়ার পর টেবিল সরিয়ে ভিতরে ঢুকতে দিল। তাহসী দেখিয়ে দিয়েছে শরবত যার ফলে ভালো টাই পেয়েছে নাহিদ। কিন্তু মিষ্টি মুখে নিতেই ঝাল অনুভব করেছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে