তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-১৮+১৯

0
521

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৮
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

সেলিনা শেখ বললেন,
-“এত কিছু কেনার কি দরকার ছিল?”

-“আপনি তো আমাকে পছন্দ করেন না। এখন এইসব ও ভালো লাগছে না।”
মুখ ফুলিয়ে বললো তাহসী।

সেলিনা হোসেন বিস্ময় নিয়ে তাকালেন তাহসীর এমন কথার ধরণ শুনে। পরক্ষণেই তাহসীর দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন। তাহসীর গাল টেনে দিয়ে বললেন,
-“ভালোই লাগে না তো। ভালো লাগবে কেন শুনি?”

তাহসী গালে হাত দিল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“আমার ব্যথা লাগে না!”

-“তাই? আরেকটু টানি!”

তাহসী মাথা পিছিয়ে নিল। সেলিনা শেখ হেসে দিলেন। তনু বললো,
-“ভাবী তুমি আমার থেকেও আপন আম্মুর কাছে। একটু জিজ্ঞেস করো তো এইভাবে আমার সাথে কখনো কথা বলেছে নাকি! তোমার সাথে হাসছে, আর আমার সাথে?”

-“ওইযে বললাম আমাকে পছন্দ করে না!”
এটা বলে তাহসী হেসে দিল।

সেলিনা শেখ বললেন,
-“তোর মতো লাফিয়ে বেড়ায় না ও। আর তাহসী খেতে চলো। ক্ষুধা লেগে গেছে তাই না? দুপুরে তো ভাত ছিল না তেমন, একজনের ভাত ছিল। আমি তো তোমার আসার কথা জানতাম না।”

-“এশার নামাজ পড়ে খাবো। আমার ক্ষুধা লাগেনি। তখন খাওয়ার চেয়ে ঘুম টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তননের মনে হয় লেগে গেছে।”
শেষের কথাটা মন খারাপ করে বললো তাহসী।

-“ও চলে আসবে। মন খারাপ করো না।”

তনু বললো,
-“তোমার ড্রেস দেখাও ভাবী।”

তাহসী একে একে সব বের করে দেখালো। তনু এক একটা হাতে নিয়ে বললো,
-“তোমার চয়েস খুব সুন্দর ভাবী। জাস্ট ওয়াও।”

-“ওই একটু আধটু।”

-“ভাইয়া কিনে দেইনি তোমাকে কিছু?”

তাহসী আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখালো। সেলিনা শেখ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-“তননের বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে তনন খুব মেপে মেপে চলে। আগে সব ব্র্যান্ড দেখে কিনতো, প্রায়ই বন্ধুদের সাথে রেস্টুরেন্টে যেতো আর এখন কিছু কিনতে বললেই ওর নাকি আছে সেইটা!”

তাহসী কিছু না বলে শপিং ব্যাগ থেকে শার্ট, প্যান্ট বের করে বললো,
-“তননের জন্য এগুলো কিনেছি। তবে ওকে বলিনি।”

-“সুন্দর। তবে তনন এসে আবার ঝামেলা করবে দেখো। নিজের জন্য কিছুই কিনতে চাই না।”

তাহসী কিছু বললো না। সেলিনা শেখ সব গুছিয়ে নিতে বললেন। এশার আজান দিচ্ছে। তাহসী যেন নামাজ পড়ে সেলিনা শেখ কে ডাক দেয়, উনি খাবার দিবেন। এই বলে সেলিনা শেখ চলে গেলেন।
তাহসী তননের শার্ট, প্যান্ট আলমারি তে তুলে রাখতে যেয়ে বললো,
-“মামুনি আসল জিনিস তো দেখানো হয়নি।”

সেলিনা শেখ দরজা থেকে পুনরায় ফিরে আসলেন।
-“কি?”

-“এইযে এই ব্রেসলেট কিনেছি।”

সেলিনা শেখ হাতে নিয়ে বললেন,
-“সুন্দর হয়েছে। আর দুজন মিলে দিচ্ছো, বিষয় টা ভালো। সারাজীবন এভাবেই থেকো আর আমার ছেলেটা কে গুছিয়ে নিও।”
সেলিনা শেখ তাহসীর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল।

তাহসী লাজুক হাসলো। তনু বললো,
-“ভাবী ওই প্যাকেটে কি?”

-“রিং। আমার জন্য কিনেছে তোমার ভাইয়া। মামুনি তো দেখানোর আগেই চলে গেল।”

-“ওয়াও। এত সুন্দর। তোমাকে মানাবে ভালো। দাঁড়াও আম্মু কে দেখিয়ে আসি।”

-“আচ্ছা। বিছানায় রেখে দিও। আমি নামাজ পড়তে বসলাম।”

-“ওকে।”

________
তনুর সাথে গল্প করতে করতে রাত এগারোটা বেজে গেল তাহসীর। তাহসীর ভাবতেই লজ্জা লাগছে তননের রুমে গিয়ে ঘুমাতে। তননের সাথে সন্ধ্যার পর আর কথা হয়নি। এইজন্যই বসে বসে তনুর বকবক শুনছে। তনুর হাই তোলা দেখে তাহসীর মনে হচ্ছে এইবার যেতেই হবে। শাশুড়ি না থাকলে এখানেই শুয়ে পড়তো তাহসী। সেলিনা শেখ একটু আগে এসেও দুজনকে ঘুমাতে বলে গেছেন।
তনু স্কুলের গল্প করছিল এতক্ষণ। গল্প শেষ করে হাই তুললো। তাহসী বুঝতে পারছে এখন আর এখানে থাকা মানায় না। তাহসী উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“আচ্ছা এখন না হয় ঘুমিয়ে পড়ো। আমিও যাই।”

-“না, ভাবী বসো। সমস্যা নেই।”

-“ঘুমাও। তোমার চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে আর থাকতে পারছো না। আরেক দিন আড্ডা দিবো।”
হেসে বললো তাহসী।

-“তোমরা কি কাল চলে যাবে না আর একদিন থাকবে?”

-“কাল যাবো ইনশাআল্লাহ।”

তনুর রুমের লাইট বন্ধ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিল তাহসী। এবার পা বাড়ালো পাশের রুমে। রুমে ঢুকতেই দেখলো তনন বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোন টিপছে। এক হাত মাথার নিচে দেওয়া। আর এক হাতে ফোন বুকের উপর ধরা। পরনে কফি কালারের টিশার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট।
তাহসী ওয়াশরুমে যেয়ে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিয়ে ব্রাশ করে আসলো।
ড্রিম লাইট জ্বালাতে মন চাইলেও তাহসী কিছু বললো না। তোয়ালে তে মুখ মুছে ইতস্তত করে তননের পাশে শুয়ে পড়লো।

তনন আড়চোখে একবার তাহসীর দিকে তাকালো। তাহসী ওর বিপরীত দিক হয়ে শুয়েছে দেখে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে নিল। চোখের সামনে তার প্রেয়সী শুয়ে আছে, যার সাথে তার বৈধ সম্পর্ক! এটা ভাবতেই তননের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। শব্দ দুইটা পুনরায় আওরালো তনন। এতক্ষণ ফ্রেন্ডস গ্রুপে কথা বলছিল , বন্ধুদের বাই বলে ফোনের নেট অফ করলো। ফোন পাশে রেখে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলো। লাইট ঠিক করে তাহসীর পাশে এসে শুয়ে পড়লো। আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,
-“ঘুমিয়ে পড়েছো?”

-“না।”
মৃদু স্বরে জবাব দিল তাহসী।

তনন তাহসীকে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘোরালো। তাহসী মুখ মুছলেও চুলের সাথে ফোঁটা ফোঁটা পানি লেগে আছে। তাহসী চোখ বন্ধ করে নিল। বললো,
-“তখনকার ব্যবহারের জন্য স্যরি। আসলে ওইভাবে বলতে চাইনি…”

-“ইট’স ওকে। আমি এমনিতেও বাইরে যেতাম নামাজ পড়তে। বাবা চলে যাওয়ার পর কেউ কিছু দিলে ভালো লাগে না। মনে হয় দয়া দেখাতে দিয়েছে!”

-“আমার টাও এমন মনে হয়?”
তননের স্বাভাবিক কথা বলায় সহজ হয়ে উঠছে তাহসী। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো সে।

-“আর হবে না।”
তাহসীর গাল টেনে বললো তনন।

তনন তাহসীর হাত টেনে হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল।
-“গাল টানলে ব্যথা লাগলেও তোমার গাল টানার অধিকার দিতে হবে আমাকে। এত সফট!”

তাহসী লজ্জায় মুখ নিচু করলো। যার ফলে তননের বুকের সাথে তাহসীর মাথা লেগে গেল। তনন ফিসফিস করে বলল,
-“আমার মনে হয় শুধু তোমার গা’ল নয়, তুমি পুরোটাই অনেক স’ফ’ট। তুমি কি বলো?”

তাহসীর থুতনি ধরে মুখ উঁচু করালো তনন। তাহসী চোখ বুজে রেখেছে। ঠোঁটে চির পরিচিত লাজুক হাসি। তনন মিষ্টি হেসে তাহসীর ঠোঁট হাত দিয়ে স্লাইড করতে শুরু করলো। তাহসী অজানা অনুভূতি তে কেঁপে উঠলো।
তনন মুখ নিচু করে তাহসীর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দিল। তাহসী এক হাত দিয়ে তননের টিশার্টের কাঁধের অংশটুকু মুঠো করে ধরলো। আর এক হাত তননের গলার নিচ দিয়ে তননের চুলে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর তনন তাহসীর ঠোঁট ছেড়ে দিল। তাহসী আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো তননের দিকে। তনন তাহসীর উপরে উঠে তাহসীর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল। তাহসী তননের চুল আঁকড়ে ধরলো।
তাহসী আজ কোনো বাঁধা দিল না। কোনো বাঁধা না পেয়ে তনন আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল। তাহসী মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠলো অজানা শিহরণে।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৯
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে হাচ্চি শুরু হলো তাহসীর। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে তনন তাকে জড়িয়ে রেখেছে সন্তর্পণে। তাহসী নিজেকে ছাড়ানোর আগেই হাচ্চি দিল দুইবার। ততক্ষণে তননের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। তাহসী তননের বাহু সরিয়ে উঠে বসলো। পুনরায় হাচ্চি হলো তার। তনন ও হাই তুলে উঠে বসলো। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,
-“কিহ! সাড়ে সাতটা বেজে গেছে।”

তাহসী মুখ বাকালো। রাতের বেলা মোটেও গোসল করতে চায়নি সে। এখন যে ঠান্ডা লেগে যাবে! ভাইয়ের বিয়ের মধ্যে ঠাণ্ডা লাগা মানে মজাই করতে পারবে না।
তনন পুনরায় বললো,
-“ফজরের নামাজ ও তো পড়তে পারিনি!”

নামাজের কথা মনে আসতেই তাহসী তাড়াতাড়ি করে ওযু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে শুরু করলো। ঘটনার আকস্মিকতায় তনন প্রশ্ন করার সময় পেল না। তাহসী নামাজ শেষ করে উঠতেই তনন প্রশ্ন করলো,
-“এখন নামাজ পড়া যায়? কাজা পড়লে?”

তাহসী তননের দিকে তাকালো না, অন্য দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল,
-“যায়। তবে প্রতিদিন না। বাণীটা মনে নাই। আর এখন পড়লে পাপ তো আর হচ্ছে না। আমি কাজা পড়ি না।”

তাহসী বের হয়ে রান্নাঘরের দিকে গেল। তনন ও উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিল।

রান্নাঘরে সেলিনা শেখ আর তননের চাচি বসে আসেন। তাহসী কে দেখেই তননের চাচি বলে উঠলো,
-“এ কি সেলিনা তোমার ছেলের বউ দেখি এত বেলা করে উঠে। তা বউ এসব কি পরেছো? শাড়ি পরতে হয় জানো না?”

তাহসীর কোনো কালেই এসব মানুষকে পছন্দ না। তাই বিরক্ত হলো এসব কথায়। মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বললো,
-“এই পোশাকে খারাপ কি আছে আন্টি? শাড়িতে তো দেখছি আপনার পেট দেখা যাচ্ছে। ওমা পিঠ ও দেখা যাচ্ছে! আমাকে দেখুন সব ঢাকা।”

চাচি মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
-“সেলিনা তুমি যেমন, বউ ও দেখছি তেমন পেয়েছো। বড় দের মুখে মুখে কথা বলে এসব কি! তোমার শাশুড়ি তো তাও চুপ থাকতো। আর তুমি?”

-“সত্য কথা বলতে ভয় নেই। আগে বলুন তো মিথ্যা বলেছি কিনা। আপনি বললেন তাই বলেছি। বরং মিথ্যা দেখেও চুপ করে থাকা সেইটা খারাপ।”

তননের চাচি চুপ করে গেলেন। কয়েক সেকেন্ড বাদে বললেন,
-“তা শাশুড়ি কে দিয়ে রান্না করাচ্ছো এইটা ভালো বুঝি?”

তাহসী প্রথমেই উত্তর দিল না, সেলিনা শেখ এর উত্তরের আশায়। সেলিনা শেখ তখন চুলা থেকে ভাঁতের পাতিল নামাচ্ছেন। তাহসী বললো,
-“আমাকে বললে আমি রান্না করে দিবো। আমাকে বলে করাতে……”

সেলিনা শেখ তাহসী কে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
-“আমার ছেলের বউ আমি বুঝে নিবো ভাবী। আপনার নাতনি টাকে আপনি যদি এখন কাছে নিয়ে রাখতেন তাহলে আপনা্য ছেলের বউ ভালো করে রান্না করতে পারে। সাত মাসের বাচ্চা নিয়ে মেয়েটা যে কষ্ট করে, তা যদি একটু বুঝতেন।”

তননের চাচি বসা থেকে উঠতে উঠতে বললেন,
-“ভালোই কথা শিখেছো দেখছি। ভালো ভালো! বউ যখন পায়ের উপর পা তুলে বসে খাবে, আর তোমাকে দিয়ে সব কাজ করাবে তখন বুঝো।”

তনন তখন রুম থেকে বের হচ্ছে। তননকে দেখে তননের চাচী বললো,
-“বউকে সামলে রাখিস তনন। তোর মায়ের তো যত ঢং। এখন মাথায় তুলছে, পরে বুঝবে।”

তননের চাচী চলে গেলে তনন এগিয়ে আসলো। তনন বললো,
-“কি হয়েছে আম্মু?”

-“তোর চাচির কথা ধরছিস? মানুষের বাড়িতে ঝামেলা বাঁধানো যার কাজ!”

-“তাহসী কিছু বলেছো?”

তাহসী কিছু বললো না। সেলিনা শেখ বললেন,
-“উচিত জবাব দিছে তাই সহ্য হয়নি। বাদ দে।”

-“বাদ বললেই তো দেওয়া যায় না আম্মু। তুমি, তনু একা একা থাকো এখানে।”

-“তাহসী ওকে নিয়ে ঘরে যাও তো। রান্না প্রায় শেষ। আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

তনন ভাঁতের পাতিল নিয়ে ঘরের দিকে গেল। তাহসী ইতস্তত করলো। মনে মনে ভাবলো এটা তো তারই কাজ ছিল। কিন্তু এসব তো তার কোনো আইডিয়া ই নেই। কিভাবে কি করতে হবে!

সেলিনা শেখ প্রেসার কুকার খুলতে খুলতে বললেন,
-“ইতস্তত করছো কেন তাহসী? তুমি যখন সংসার সামলাবে, তুমিও এসব এমনি এমনিই বুঝে যাবে। তননের এসব অভ্যাস আছে। তুমি আপাতত আমার ছেলেকে সামলাও। আর তনু কে যেয়ে ওঠাও তো। এখনো ঘুম থেকে উঠলো না।”

তাহসী লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে সরে গেল। বারান্দায় উঠতেই তনন বললো,
-“লজ্জা পাচ্ছো কেন? আমি কি কিছু বলেছি?”

তাহসী তননকে এড়িয়ে চলে যেতে লাগলে তনন হাত ধরে থামালো। সকাল থেকে তননের সাথে কথা বলতে লজ্জা লাগছে তাহসীর। হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে তনন ছাড়লো না।
-“কি হয়েছে? চাচী ওসব বললো কেন?”

-“আমি কেন এই পোশাক পরে আছি আর ঘুম থেকে কেন এতো বেলা করে উঠেছি তাই।”

-“তুমি কি বলেছো?”

-“কেন?”

-“চাচী ওইভাবে বলে গেল তাই জানতে চাচ্ছি।”

সেলিনা শেখ দুই হাতে মাংসের পাতিল ধরে গ্রিলের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
-“গ্রিল খোল। তোর এত জানা লাগছে না। তাহসী কে জেরা করতে শুরু করেছিস এখানে এসে।”

তনন তাহসীর হাত ছেড়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে গ্রিল খুলে দিল। তাহসী তনুর রুমে ঢুকে গেল। দরজার ছিটকিনি আটকিয়ে ঘুমালেও ফজরের সময় উঠে দরজার ছিটকিনি খুলে রাখে তনু। তনন বাড়িতে না থাকলে তনু আর সেলিনা শেখ এক রুমেই ঘুমায়।

সকাল বেলার নাস্তা শেষ হলো সাড়ে আটটার দিকে। সেলিনা শেখ খাওয়া শেষে তাহসীর জন্য লেবুর শরবত করে দিল। তাহসীর হাতে গ্লাস দিয়ে বললো,
-“গরম যেয়ে শীত আসি আসি করছে। সকালবেলায় বেশ ঠাণ্ডা পড়ে। জানালা খুলে রাখতে নেই এই সময়। ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকে রুমের মধ্যে। তোমার তো অলরেডি ঠাণ্ডা লেগে‌ গেছে! এখন লেবুর শরবত খেয়ে নাও। এর পর থেকে জানালা খুলে রাখবে না।”

তাহসী সায় জানিয়ে খেয়ে নিল। মনে মনে বেশ লজ্জা পেল সে। রাত সাড়ে বারোটার দিকে বারান্দার জানালা খুলে দিয়েছিল। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশ থাকলে ঘুম ভালো আসে। তাহসী হঠাৎ বললো,
-“আপনার রান্না সুন্দর।”

-“সত্যিই নাকি? তুমি তো বেশি খেলেই না!”

-“সত্যি। আমি এমনি এমনি কিছু বলি না। গরুর মাংস টা সুন্দর হয়েছে। আমি তো সকালে বেশি‌ খাই না।”

সেলিনা শেখ মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। তাহসী মিষ্টি হাসলো।
-“আমার আজ একটু তেল বেশি পড়ে গেছে। তোমার আম্মু এমন রাঁধে বুঝি?”

-“হ্যা, তেল বেশি দিয়ে। এমন ভাসা ভাসা তেল থাকে।”

-“মাছ কি এইজন্যই নিলে না? তেল কম?”

-“তা নয়। মাংস পেলে আর কিছু লাগে না।”

তনু বলল,
-“ভাবী তুমি ডায়েট করো? সকালে বেশি খাও না কেন?”

-“গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা আছে। আর ঘুম থেকে উঠে বেশি খেতে ভালো লাগে না। খারাপ লাগে।”

-“ওহ্।”

সেলিনা শেখ বললেন,
-“আজকেই চলো যাবে নাকি?”

-“আপনি কি বলেন?”
আমতা আমতা করে প্রশ্ন করলো তাহসী।

-“আমার কিছু বলার নেই। শুধু বলবো দুপুরে খেয়ে বিকালে যেও।”

-“আচ্ছা। ধন্যবাদ।”

-“ধন্যবাদ এর কিছু নেই। আমাকে নিজের মা ভেবে সহজভাবে কথা বললেই খুশি হবো। তুমি ইন্ট্রোভার্ট তাই না?”

তাহসী অবাক হলো মনে মনে। তার শাশুড়ি তো তাহলে বেশ শিক্ষিত। আস্তে করে বললো,
-“হুম।”

-“এইটাই তো সমস্যা বুঝলে। তুমি ইন্ট্রোভার্ট আর আমার ছেলের ইগো বেশি।”

তাহসী কিছু বললো না। তনন উঠে চলে গেল হাত ধোয়ার নাম করে। সেলিনা শেখ অন্য কথায় চলে গেলেন। অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন করতে লাগলেন।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে