তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-১৪+১৫

0
515

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৪
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তনন বললো,
-“তো? আমি কিছু দিলে কি সেইটা নেওয়া যায় না? নাকি কম দামি হয়? আর্থিক অবস্থা তোমার মতো তো আমার না, এটা তোমাকে বুঝতে হবে!”

তাহসী রাগান্বিত হলেও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো। বলে উঠলো,
-“আমি বলেছি এমন কখনো?”

তখন দু’জনেই বের হয়ে এসেছে দোকান থেকে। তনন উত্তর দিল না। পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট, সেখানে তাহসীকে নিয়ে যেয়ে বসলো। বললো,
-“কি খাবে? অর্ডার দাও।”

তাহসী কোনো কথা বললো না। তনন পুনরায় বললো,
-“মোটামুটি সব শেষ। স্কার্ফ কিনবো তোমাদের। আর তনুর চুরি। ভেবেছিলাম বেশ সময় লাগবে। তা তো লাগলো না। চেইন তো খুলনা যেয়ে নিতে বললে। নাও এখন নাস্তা করো।”

তাহসী কিছু না বলে হাতে থাকা শপিং ব্যাগ তননের কাছে রেখে চলে যেতে লাগলো। তনন প্রথমে ভেবেছে ওয়াশরুমে যাবে। যখন দেখলো তাহসী রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যাচ্ছে তখন দাঁড়িয়ে পড়লো। শপিং ব্যাগগুলো গুছিয়ে নিয়ে সেও রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলো। তাড়াতাড়ি হেঁটে তাহসীর কাছে আসলো। তাহসী তখন রিকশার জন্য রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।

তনন তাহসীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
-“কি হয়েছে? এইভাবে চলে আসার মানে?”

-“কিছুই না।”
কাঁপা কাঁপা গলায় বলল তাহসী। তার এখন কান্না পাচ্ছে। সাথে খুব রাগ হচ্ছে। মূলত রাগের কারণেই চোখে অশ্রু এসে ভিড় করেছে।

-“কেন? আমার সাথে থাকতে আর ভালো লাগছে না? নাকি এসব রেস্টুরেন্টে বসে খাস না তুই? কোনটা”

তাহসী নিজেকে ছাড়িয়ে নিল তননের থেকে। নিজের রাগ না চেপে বললো,
-“তোমার মতো নিম্ন মানসিকতার মানুষের সাথে মিশি না আমি। আসছি।”

রিকশা পেয়ে উঠে বসলো তাহসী।
-“তাহসী নামো।”

তাহসী শুনলো না। চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে গেল। তনন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তাহসী চোখের দৃষ্টি সীমার বাইরে যাওয়ার পর বুঝলো তাহসীর সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে সে। তনন ফোন বের করে তাহসীর ফোনে কল দিল। যা ভেবেছিল তাই,তাহসী ফোন ধরলো না। তনন ‘স্যরি’ লিখে এসএমএস দিল।
তনন-ও একটা রিকশা নিয়ে তাহসীর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কিন্তু তাহসীর বাসা পর্যন্ত যেতে হলো না। জ্যামের কারণে তাহসী আটকা পড়েছে। তনন এই রাস্তা টুকুর ভাড়া মিটিয়ে রিকশা থেকে নেমে গেল। তাহসীর রিকশার কাছে যেয়ে শিওর হলো তাহসী কিনা। এরপর তাহসীর পাশে উঠে বসলো। তাহসী চমকিত দৃষ্টিতে তাকালো।

তনন জড়িয়ে নিল তাহসীকে।
-“স্যরি।”

-“ছাড়ো দেখবে সবাই।”

তনন ছেড়ে দিল। কি অবস্থা মানুষ বিয়ে না করে কত কি করে। আর সে সামান্য জড়িয়ে ধরতেই পারছে না। হুড উঠিয়ে রিকশায় চড়া তাহসীর পছন্দ না।
-“স্যরি, তাহসী। আসলে আমি ওইভাবে বলতে চাইনি।”

-“থাক তনন। আর কিছু বলতে হবে না।”

-“আই এম এক্সট্রিমলি স্যরি। আমার আজ মেজাজ খারাপ ছিল। তোমার উপর রাগ দেখাতে চাইনি, তবুও কিভাবে..।‌ যাইহোক এমন আর হবে না। আমি জানি তুমি আমার থেকে কিছু নিতে চাও না এমনিতেই। এভাবে বলার জন্য স্যরি তাহসী।”

-“হয়েছে।”
অন্যদিকে তাকিয়ে থেকে উত্তর দিল তাহসী।

তনন কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর বললো,
-“রিকশা ঘোরাতে বলি?”

-“কি কেনার আছে কিনে নাও। ওগুলো কিনতে আশা করি আমাকে লাগবে না। শুধু শুধু এখানে এসে সময় নষ্ট করছো।”

-“তাহসী!”

তাহসী কিছুই বললো না। তনন বললো,
-“যেখানে আমি একবার স্যরি বলি না, সেখানে কয়েকবার বলে ফেলেছি। আমারই ভুল হয়েছে এইভাবে আসা। তুমি থাকো।”

তনন নামতে যেয়ে নামলো না। পুনরায় বললো,
-“শপিং ব্যাগগুলো নাও। পৌঁছে দিও আমার বাসায়। তুমি তো আগে যাচ্ছো।”
পরক্ষণেই বললো,
-“না,থাক। তোমাকে লাগবে না।”

জ্যাম তখনই ছাড়লো। তনন নামতে গেলে তাহসী হাত ধরে আটকালো।
-“এখনই পড়ে যাচ্ছিল আর বড় বড় কথা!”
অন্যদিকে তাকিয়ে ভেঙচি দিয়ে বললো তাহসী।

তনন কিছু না বলে বসে থাকলো। তাহসী নিজ থেকেই কথা বললো এবার।
-“ভাবীকে চেইন না দিয়ে একটা ব্রেসলেট দিই। তুমি হাফ দিবে,আমি হাফ!”

-“সিরিয়াসলি?”

তাহসী কিছু বললো না, গাল ফুলালো। কিছু কিছু কথা সে বারবার বলতে পছন্দ করে না। একে তো তনন রাজি হয় কিনা সেইটা নিয়ে ভাবছে। রাজি না হলেই তো তাহসীর অপমান। আর তনন মজা করছে!

তনন তাহসীর গাল টেনে বললো,
-“ওকে,গাল ফুলানো লাগবে না।”

তাহসী গালে হাত দিল। ব্যথা লেগেছে একটু। তনন তাহসীর হাত সরিয়ে নিয়ে গালে চুমু খেল নিঃশব্দে। তাহসী চোখ বড় বড় করে তাকালো। আজ বলেই বসলো,
-“অসভ্য।”

-“সভ্য ছিলাম কবে?”

তাহসীর ফ্ল্যাটের সামনে পৌঁছালে তাহসী তননকে একটু দাঁড়াতে বললো। তনন জানতে চাইলে কিছু বললো না। কিছুক্ষণ বাদে তাহসী আসলো। নিজের হাতে থাকা টিফিন বক্স তননের হাতে দিল। তনন জিজ্ঞেস করলো,
-“কি আছে এতে?”

-“ওরা রান্না করলো, তাই ভাবলাম নিয়ে আসি।”
তাহসী উত্তর দিয়ে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না। লাজুক হেসে চলে গেল। তননের মন চাইলো লজ্জায় রাঙা গাল ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সে সুযোগ আর পেল না।
তনন প্রচুর খুশি হলো। তাহসী তবে স্বাভাবিক হচ্ছে। দুপুরে খাইনি আজ। হোস্টেলের রান্না থেকে নিশ্চয়ই তাহসীর রান্না ভালো হবে।

🍁🍁🍁
পরেরদিন,
তাহসী সারাদিন হীনমন্যতায় ভুগেছে তননকে কল দিবে কি দিবে না। তনন বলেছিল আজ ফ্রি না। আবার সকালে একবার কল দিয়ে সারাদিন আর কথা হয়নি।
বিকেলবেলা তাহসী নিজেই কল দিল তননকে। তখনও আছরের আযান হয়নি।
দুইবারের সময় তনন রিসিভ করলো। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
-“বলো।”

সাধারণত তনন এভাবে ডিরেক্ট কথা শুরু করে না। তাই তাহসী অবাক হলো। আবার ঘুমিয়ে ছিল,এটা‌ বুঝলো তাহসী। তনন তো এই সময়ে ঘুমায় না!
উৎকন্ঠা নিয়ে তাহসী বললো,
-“ঘুমিয়ে ছিলে এই সময়? আবার জ্বর এসেছে নাকি?”

-“না, একটু টায়ার্ড ছিলাম। এখন বেশ আছি।”

-“যাবে বাইরে?”

-“এখন নাকি নামাজ পড়ে? আচ্ছা যাবো। কালকের বাকিগুলো তো কেনা হয়নি।”

-“আমি এখনই ফরজ নামাজ পড়ে নিচ্ছি। তুমি এসো। আযান দিলে মসজিদ দেখে পড়ে নিও।”

-“ওকে।”

-“তুমি একবারে শপিংমলে আসো। বারবার এখানে আসা ঝামেলা।”
কল কেটে তাহসী লোকেশন বলে দিল মেসেজে।

___________

তননের দেখা পেতেই তাহসী এগিয়ে গেল। তাহসীও এখানে এসে দাঁড়িয়েছে সবে দুই তিন মিনিট।
কুশল বিনিময় করে তনন বললো,
-“অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছিস নাকি?”

-“না।”

তননকে আজ অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে। অন্যান্য দিনের মতো উৎফুল্লতা নেই। তাহসী এই ব্যাপারে কিছু বললো না। তনন তাহসীর হাত ধরে শপিং মলের ভিতরে ঢুকলো।
তাহসী নিজের ড্রেস দেখতে শুরু করলো। দুইটা শপিংমল দেখার পর তনন বললো,
-“কাল তো খুব তাড়াতাড়ি চয়েস করলে। আর আজ? ওহ আল্লাহ!”
থেমে পুনরায় বললো,
-“তার মানে কি কাল কোনোরকমে চয়েস করেছো?”

-“না, তুমি দিলে তোমার পছন্দের। আর তনুর টা ভালো লেগেছিল। আমার অনেক টাইম লাগে। সন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে।”

-“আজান হচ্ছে। আমি নামাজ পড়ে আসবো?”

-“নিউ মার্কেট যাবো। ওখানে যেয়ে নামাজ পড়ো। চলো।”

-“আজ আমাকে পাগল না বানিয়ে দাও।”

-“আজ ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে।”

তনন কিছু বললো না। রিকশায় উঠে তাহসী বললো,
-“কাল থেকে একটা বিষয় চেপে যাচ্ছো। ভাবলাম বলবো না, হয়তো ব্যক্তিগত। এখন মনে হচ্ছে গুরুতর!”

-“আম্মু কে বলো না আবার। আমি আজ মেসে উঠেছি।”

তাহসী বিস্ময় নিয়ে বললো,
-“কেন?”

-“রুমে নতুন ছেলে আসছে। ঝামেলা হয়েছে। রুমে এসে সিগারেট ধরায় কিছু বলিনি। কিন্তু আমার মনে হলো নেশাজাতীয় কিছু খায়। তাই আমিই সরে আসলাম। হলের হেডকে জানিয়ে লাভ হয়নি। তাই ভাবলাম ঝামেলা মুক্ত থাকি।”

-“আগে থেকে বলতে রিহান ভাইয়া ছিল যে।”

-“রিহান স্যার? প্রয়োজন নেই। কেন তুমি বলে দিতে?”

-“উহু। উনি কিন্তু বাবার বন্ধুর ছেলের পাশাপাশি ভাইয়ার বন্ধুও হন। ভাইয়াকে বললেই হয়ে যেত।”

-“ওহ্। এটা সেদিন বলোনি। উনি তোমাকে পছন্দ করতো না?”

তাহসী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-“তোমাকে বলেছে উল্টাপাল্টা কিছু?”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৫
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তাহসী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-“তোমাকে বলেছে উল্টাপাল্টা কিছু?”

-“না, সেইদিন দেখেই মনে হচ্ছিল।”

-“হ্যা, করতো।”
তনন আর কিছু বললো না।
তাহসী পুনরায় বললো,
-“আজ মেসে উঠার জন্যই ব্যস্ত ছিলে তাহলে?”

-“হ্যা। আর কাল এই জন্যই মেজাজ খারাপ ছিল।”

পৌঁছানোর পর তনন প্রথমে নামাজ পড়ে নিল। তাহসী কসমেটিকস এর দোকান ঘুরে দেখতে লাগলো।
তনন আসলে দুই তিন দোকান দেখার পর তাহসীর একটা রেডিমেড থ্রিপিচ পছন্দ হলো। তনন বললো,
-“তুমি থ্রিপিচ পড়ো না, কাল বললে! আর কখনো পড়তেও দেখিনি।”

-“আরে জামাটা তো গোল। আর থ্রিপিস কিনেছি এর আগে। বাট বোঝা যায় না। কারণ আমি থ্রিপিসের পায়জামা পড়ি না, ওইটা ফেলে দিয়ে এর সাথে লেগিন্স পড়ি।”

-“তাহলে কিনে লাভ কি হলো?”

-“এখন একটাও টপস পছন্দ হয়নি। আর বাবা পোশাক কেনার সময় একটা জিনিস দেখে সেইটা সুতি কাপড়ের কিনা। এটাও তো সুতি কাপড়ের। আর জামাটা তো পছন্দ হয়েছে। আমি লেগিন্স পড়ি যেহেতু তাই গোল জামা পড়ি।”

তনন আর কিছু বললো না। মাঝে মাঝে মনে হয় তাহসীকে সারাজীবন ধরেও বুঝবে না। তাহসী লেডিস প্যান্টের দিকে গেল। তনন ছুটলো পিছু পিছু।
তাহসী দুইটা প্যান্ট হাতে নিতেই বললো,
-“আচ্ছা। তুমি নাকি লেগিন্স পড়ো শুধু। অথচ জিন্স পড়তে দেখেছি বিয়ের আগেও আর এখন তো হাতেই দেখা যাচ্ছে।”

-“জিন্স না এইটা। লেগিন্স কিন্তু একটু মোটা আর নেভিব্লু কালার।”

-“তুমি পারোও বটে।”

তাহসী এরপর স্কার্ফ কিনে চুড়ি, ব্রেসলেট সহ আরো কিছু কিনলো। তনন বাকিগুলো কিনলো।
এগুলো কেনা শেষে তনন ঘড়ি দেখে নিয়ে বললো,
-“আলহামদুলিল্লাহ। অবশেষে হলো। মাগরিবের আজান দিতে চল্লিশ, পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাকি। সন্ধ্যার আগেই হলো।”

-“কে বললো হয়েছে? আমি এখনো আরেকটা ড্রেস কিনবো। আর জুতা কিনবো। ঘড়িও কিনতে হবে। ওহ্ আরেকটা কথা তো ভুলেই গেছি। ব্যাংকে যেতে হবে।”

-“এখনও এতকিছু? ব্যাংকে কেন?”

-“টাকা তুলবো। ভাবীর গিফটের জন্য।”

-“জমানো টাকা তোলার মানে কি? তোর বাবার দেওয়ায় তো হচ্ছে।”

-“আরে বাবার টাকা না। আমার টিউশন করে জমানো টাকা।”

তনন হতবাক হয়ে গেল।
-“কিহ? কিসের টিউশন?”

-“আমি টিউশন করায় তো দুইটা। লাগে না টাকা, হাতখরচ রেখে, কিছু পথশিশুদের দিয়ে বাকিটুকু ব্যাংকে রেখে দিই।”

-“আমাকে তো বলিস নি।”

-“আল্লাহ আর আমি ছাড়া কেউ জানেনা। আর ফ্ল্যাটের গুলো জানে। সব কাজ সবাইকে জানিয়ে করতে ভালো লাগে না, মনে শান্তি লাগে না।”

-“কিন্তু আমরা বিয়ের রাতে দুইজন দুইজনকে কথা দিয়েছিলাম তাহসী, যে আমাদের মাঝে অজানা কিছু থাকবে না।”

-“তোর মনে হয় তুই আমাকে সব বলিস? আর নতুন করে কিছু করলে তো সেইটা জানিস। আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে আমার ভালো লাগে না। দ্রুত চল এসব বাদ দিয়ে। সময় চলে যাচ্ছে। রাত করে ব্যাংকে যাওয়া রিস্ক।”

-“আমাকে জিজ্ঞেস করিসনি আমিও বলিনি। আগ বাড়িয়ে বলতে আমি নিজেও পছন্দ করি না। তা আমার না জানা আর কি কি‌ আছে? ”

-“জানতে চাইলে প্রশ্ন করতে হবে।‌ এখন চল।”
তনন কিছু না বলে তাহসীর সাথে অন্য দোকানে ঢুকলো।
যেতে যেতে তনন বললো,
-“আমার কেনা ড্রেস কি পরবি না? এতগুলো কিনছিস যে!”

-“আরে ওইটা আর এইটা দিয়ে দুইটা হয়েছে। আরো একটা কিনেছি ভাইয়ার সাথে এসেছিলাম। তোকে বলা হয়নি। তিনটা হলো। আর একটা নিলে চারটা। চারটা চারদিন।”

-“ওহ্। কিন্তু তিনদিন না?”

-“না, আপনি যেন বিয়ের পরদিনই ফুরুত! বিয়ের আগের দিন, বিয়ের দিন, পরের দিন আর তার পরের দিন ভাবীকে আনতে যাবো একবারের মতো।”

-“ওহ্, আচ্ছা!”
তননের মন খারাপ হলো কিছুটা। সে তো শুধু একটাই কিনলো তনুর জন্য! মায়ের জন্যেও তো একটা শাড়ি কিনেছে। ভালো ড্রেস আছে ওদের তাও তো দুইদিন হবে। আর একদিন!

ইতিমধ্যে তাহসী ড্রেস দেখতে শুরু করে দিয়েছে। তাহসী তননের দিকে তাকিয়ে দুইটা ড্রেস দেখিয়ে বললো,
-“ওয়াও! কেন যে তনুর জন্য তখন ওইটা নিয়েছি। এইটা বেশি সুন্দর হতো।”

তনন আলতো হাসলো। বললো,
-“কি আর করার। ভাগ্যে আছে ওইটা!”

তাহসী তননের কথা পাত্তা না দিয়ে দুইটাই হাতে নিল। দুইটার টাকা দিয়ে বের হয়ে আসার সময় তনন বললো,
-“পাঁচটা হয়ে গেল যে!”

-“হু। ওতো বোঝা লাগছে না।”

তাহসী ছেলেদের পোশাকের দোকানে ঢুকলে তনন বিস্ময় নিয়ে বললো,
-“ছেলেদের দোকানে কি?”

-“কাজ আছে। ভাইয়ার জন্য শার্ট নিবো ভাবছি। ঘড়ি ও কিনতে হবে। ভালো কথা! টাকা আছে না তোমার কাছে? ধার দাও। ব্যাংকে যেয়ে দিয়ে দিবো। আবার টাকা দিতে চেও না, তাহলে তো আর আমার নিজে কিনে গিফট দেওয়া হবে না।”

-“আচ্ছা। কিন্তু তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমি আজ অনেক টায়ার্ড।”

তাহসী সব শপিং ব্যাগ তননের হাতে দিয়ে দোকানদারের কাছ থেকে ফিতা নিল বলে। ফিতা তননের কাঁধে রেখে শার্টের মাপ নিতে গেলে তনন বললো,
-“আরে আমাকে মাপ কেন?”

-“আমি জেনে বসে আছি ভাইয়ার মাপ? তোমার মতোই তো ভাইয়া লম্বা। দুইজন তো প্রায় সমান মনে হয়। আর ভাইয়া তোমার মতোই, না?”

-“হুম।”

তাহসী তননের প্যান্টের মাপ ও নিল। এরপর দুইটা শার্ট আর দুইটা প্যান্ট কিনলো। তননের একটু খারাপ লাগলো মনে মনে তাহসী তো তাকে একবার বলতে পারতো দেওয়ার কথা। দিক আর না দিক।

দোকানে ছেলেদের সব কিছুই আছে। তাহসী সুন্দর দেখে কাপল ওয়াচ নিল। এরপর নাঈমের জন্য একটা ওয়াচ কিনলো।
পরক্ষণেই কিছু একটা মনে পড়তেই চুড়ির দোকানে গেল। একসেট চুড়ি কিনতেই তনন বললো,
-“জীবনেও তো চুড়ি পরো না। দুই দিনের জন্য টাকা নষ্ট।”

-“বেশি বোঝা লাগছে না। নূপুর জোড়াও খুব সুন্দর। কিন্তু থাক। চুড়ি আমি বাসার মধ্যে মাঝে মাঝে কিন্তু নূপুর পরি না। থাক এটা।”

দুইজনে বের হয়ে মেইনরোডে আসলো। তনন বললো,
-“হয়েছে সব?”

-“আপাতত মনে পড়ছে না। আর মনে পড়লে কিনে নিবো। বাড়ি যেয়েও পারবোনে, খুলনা শহর বেশি দূরে না। আর যাচ্ছিই তো পরে।”

তনন তাহসীকে দাঁড়াতে বলে পুনরায় মলের ভিতরে ঢুকলো। কিছুক্ষণ পর ফিরে আসলে তাহসী জিজ্ঞেস করলে তনন বললো না। শুধু বললো এমনিই। তাহসী ও আর ঘাটালো না।

তনন রিকশা ডাকতে গেলেই তাহসী তননের হাত ধরে টান দিল। তনন প্রশ্নসূচক চাহনিতে তাকাতেই তাহসী বললো,
-“মেইন জিনিস ভুলে গেছি! বাবা আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে।”

-“এইসব কি কথা!”

তাহসী কিছু বললো না। এসব কথা সে বলে না। কিন্তু মুখে এসে গেছে। এমন একটা ভুল করেছে। তাহসী শার্ট কেনা দোকানেই গেল। ওখানে যেয়ে একটা নেভি ব্লু কালারের ব্লেজার পছন্দ করে তনন কে জিজ্ঞেস করলো,
-“কেমন লাগছে এইটা?”

তনন মন থেকেই উত্তর দিল,
-“খুব সুন্দর! কিন্তু মনে হচ্ছে তুমি কনেপক্ষের দায়িত্ব পালন করছো! ছেলের জিনিস তো কনেপক্ষ থেকে আসে।”

-“হ্যা। এবার এর সাথে মিলিয়ে শার্ট কোনটা দেখো।”

-“আরেকটা শার্ট?”

-“হ্যা। তাড়াতাড়ি।”

তনন মিলিয়ে নিয়ে শার্ট টা তাহসীর হাতে দিল।
-“পারফেক্ট ম্যাচ, নাও।”

তাহসী দরদাম করে টাকা দিল। একদরের দোকান বলাতেই তাহসী বললো,
-“একটু আগেই তো এতকিছু নিয়ে গেলাম। আবার এসেছি অন্য টা তে না যেয়ে। হলে দেন, না হলে থাক।”

অগত্যা সেলারকে দিতে হলো। তাহসী নেভি ব্লু কালারের একটা ঘড়ি আর একটা জুতাও নিল তননের মাপের। তনন বললো,
-“ফাজলামি পাইছো? পা ও কি সেইম হবে!”

-“হলে হলো, না হলে নাই। আমি কি এখন ভাইয়াকে ডাকতে যাবো!”

তনন কিছু বললো না। ব্লেজারের টাকা বের করে দিল আর বাকিগুলোর টাকা তননের থেকে নিল।

তনন বললো,
-“এই টাকা আসলো কোথা থেকে এখন?”

-“ব্লেজারের কথাও মনে ছিল না, টাকার কথাও না।”
যুক্তি দেখালো তাহসী। তনন মেনে নিল।

তাহসী এবার মেয়েদের জুতার দোকানে ঢুকে একটা গোলাপী,সাদা মেশানো জুতা কিনলো।
তনন বললো,
-“হয়েছে?”

-“হুম। চলো।”

দুজনে মিলে ব্যাংকে গেল এবার। তাহসী তননকে বাকি টাকা বুঝিয়ে দিল।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে