#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১২
অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ
নাহিদ বললো ,
-“আমার কথা বলেছো?”
-“আমি কিভাবে বলি?”
আমতা আমতা করে জবাব দিল মিথিলা।
-“তাহলে আমাকেই জানাতে হয়। ছেলে কি ঠিক করে ফেলেছে?”
নাহিদের স্বাভাবিক কন্ঠস্বর শুনে মিথিলা সাহস করে বললো,
-“না,একটা ছেলে আসার কথা পরশু। আমাকে কাল বাড়ি যেতে বলেছে।”
-“তাহলে যাচ্ছো কাল?”
মিথিলার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নাহিদ বললো।
মিথিলা ভড়কে গেল।
-“বুঝতে পারছি না।”
-“যেয়ে দেখো। আমি ইনশাআল্লাহ আজ আম্মুর সাথে কথা বলবো।”
মিথিলা মাথা নাড়ালো। দুজনে আরেকটু ঘোরাঘুরি করলো। যাওয়ার সময় মিথিলা বললো,
-“যাবো? ভয় লাগছে।”
-“তোমার ইচ্ছে।”
নাহিদ উত্তর দিল। এরপর মিথিলা কে রিকশা তে উঠিয়ে দিয়ে নিজেও অন্য একটা রিকশাতে উঠলো।
🍁🍁🍁
তনন আজ তাহসীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছে। সবুজ ঘাস ঘাস জায়গা দেখে তার উপর যেয়ে বসলো তনন। তাহসীকে পাশে বসার জন্য ইশারা করলো। তাহসী ইতস্তত করলো প্রথমে।
তনন পাশের জায়গা হাত দিয়ে একটু ঝেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-“বসো। নোংরা নেই।”
তাহসী বসলো। সেদিনের পর এক সপ্তাহ কেটে গেছে। তনন এখন পরিপূর্ণ সুস্থ। এখানে আসতে আসতে দু’জনের মধ্যে শুধু কুশল বিনিময় হয়েছে। তনন তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এখানে কেমন লাগছে?”
-“ভালো।”
-“আর আমাকে?”
মিষ্টি হেসে প্রশ্ন করলো তনন।
তাহসীর শরীরে অজানা শিহরণ বয়ে গেল। আসতে আসতে বেশ কয়েক বার আড়চোখে তননের দিকে তাকানো হয়েছে। বরাবরের মতই তনন শার্ট পড়েছে, সাথে জিন্স এর প্যান্ট। সামনের দিকে তাকিয়ে তাহসী উত্তর দিল,
-“ভালো।”
তনন তাহসীর বাম হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিল। তাহসী কেঁপে একবার তননের দিকে তাকালো। তাহসীর লাজুকতার মাত্রা আগের তুলনায় বাড়লো। তাহসীর হাত নিয়ে খেলতে তনন বলে,
-“কিছু প্রশ্ন জমে আছে তোর মনে, তাই না? আজ সেগুলোর জবাব ই দিবো।”
তাহসী কোনো উত্তর দিল না। তার শুধু মনে হচ্ছে সময় এখানেই থেমে যাক। তনন পুনরায় বলে,
-“আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতাম তাহসী। ভেবেছিলাম পড়াশোনা শেষ হলেই একবারে জানাবো। এতটুকু শিওর ছিলাম তুমি পড়াশোনা শেষ না করে বিয়ে করবে না। আর বিয়ে ব্যতীত অন্য কোনো সম্পর্কে জড়াবে না। তাই নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু তোমার বিয়ের কথা ওঠার পর কি যে হলো!”
তাহসী লজ্জা নিয়েই জিজ্ঞেস করলো,
-“কবে থেকে?”
তনন শরীর দুলিয়ে হেসে উঠলো। তাহসী আরো লজ্জা পেল। তনন কিছু বললো না। তার হাসির শব্দে আশেপাশের কেউ কেউ এদিকে তাকিয়েছে। তনন উঠে দাঁড়িয়ে তাহসী কেও তুললো। ধুলো ঝেড়ে বললো,
-“চলো হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।”
তনন তাহসীর হাত ছাড়লো না।
-“ক্লাস নাইন অর টেন ধরো।”
তাহসী তননের দিকে না তাকিয়েই মুখ ফোলালো। এটা কোনো সদুত্তর হলো নাকি! তননের ঠিক ই মনে আছে।
তনন তাহসীর গাল টেনে দিল। হেসে বলল,
-“গাল ফোলাতে হবে না। ক্লাস এইট থেকে পছন্দ করি।”
তাহসী কে কিছু না বলতে দেখে তনন পুনরায় বললো,
-“পছন্দ, বিয়ে করে নিয়েছি। আশা করি আর কোনো প্রশ্ন নেই। এখন কোথায় যাবে বলো।”
-“এখানে কি হলো?”
-“বেশি মানুষ! কোলাহল বেশি। তোমার এখানে ভালো লাগছে? তাহলে বসি চলো আবার।”
-“ভালো ও লাগছে না, খারাপ ও লাগছে না।”
-“তো নেক্সট বাড়ি যাচ্ছো কবে?”
-“সামনের উইকে। ভাইয়া যাবে। ভাইয়ার সাথেই যাবো।”
-“আমার বাসায় কবে যাচ্ছো?”
-“আমি কি জানি!”
-“তো কে জানে? আচ্ছা বাদ দাও। ফুসকা খাবে? সামনে চলো।”
তাহসী সামনে তাকিয়ে দেখলো কিছু দূরেই ফুসকার স্টল। তনন বলার পর সে আর না করলো না। দুই প্লেট ফুসকা শেষ করে পুনরায় হাঁটতে শুরু করলো ওরা। তনন শুধু দুইটা মুখে নিয়েছে।
তনন হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো। সাথে তাহসী ও দাঁড়ালো। তাহসী দেখলো ওদের সামনে একটা কাপল দাঁড়িয়ে।
ছেলেটি পাশের মেয়েটির উদ্দেশ্যে বললো,
-“বুয়েটের বড় ভাই।”
এরপর তননকে উদ্দেশ্য করে দাঁত বের করে বললো,
-“আসসালামু আলাইকুম ভাই। এটা ভাবী নাকি?”
তনন বললো,
-“হ্যা।”
ছেলেটি লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
-“এটাও আপনার ভাবী।”
পাশে থাকা মেয়েটা কে বললো,
-“চিনেছো? গত সপ্তাহে আমাদের ধমক দিল না আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে!”
তনন হাসিমুখেই বললো,
-“তাহলে এটা সত্যিই ভাবী?”
-“হ্যা ভাই।”
ছেলেটির ভাবভঙ্গির পরিবর্তন হলো না।
মেয়েটি বলে উঠলো,
-“গত সপ্তাহে আমাদের জ্ঞান দিলেন যেন এইসব সম্পর্কে না থাকি। আর আজ আপনিই! হাহা।”
তাহসী কিছুই বুঝছিল না। এই কথা বলার পর সবটা পরিস্কার হলো তার কাছে।
তনন একটু সরে যেয়ে কাউকে ফোন দিয়ে কথা বললো। তারপর ওদের কাছে এসে বললো,
-“তাহলে তোমাদের চলো রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়।”
দুজনে রাজি হয়ে গেল। পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট। ওখানে যাওয়ার জন্য সেদিকে যাচ্ছিল ছেলে আর মেয়েটা। তনন বললো,
-“ওখানে না। আমার পরিচিত আছে আলাদা। ওখানে চলো।”
দুইটা রিকশা তননের বলা ঠিকানায় চলতে লাগলো। ওরা আলাদা হতেই তনন তাহসীর উদ্দেশ্যে বললো,
-“বুয়েটেই পড়ে। আমার দুই ব্যাচ জুনিয়র। খুব ফাজিল।”
-“বুঝেছি কথা শুনেই।”
-“হু। গত সপ্তাহে দেখে নিষেধ করছি তাই শোধ তোলার চেষ্টা করছে।”
-“হু, আর খুব ভালো করেই বুঝছি মোটেও রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি না আমরা।”
-“রাইট। কাজী অফিসে যাচ্ছি। বাকিটা যেয়ে দেখবে।”
কিছুক্ষণ পরেই রিকশা দুইটা কাজী অফিসের সামনে যেয়ে থামলো। এটার পাশেও একটা রেস্টুরেন্ট আছে। রিকশা দুইটা ওদের নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। তননের বন্ধুরা এগিয়ে আসলো।
ছেলেটি বললো,
-“আপনারাও দেখি আছেন। তনন ভাই কি ট্রিট দিবেন সবাইকে?”
তননের এক ফ্রেন্ড বললো,
-“তনন কেন ট্রিট দিবে? বিয়ে তোর,ট্রিট তুই দিবি।”
-“মানে?”
ছেলেটি ঘামতে শুরু করলো। কাজী অফিস সেও দেখেছে।
তননের দুই বন্ধু এসে ওদের সামনে আগাতে নির্দেশ দিল।
ছেলেটি ভয়ে ভয়ে উচ্চারণ করলো,
-“ভাই আমাদের কোথায় নিয়ে আসলেন?”
-“তুই ই তো বললি এটা আমাদের ভাবী! ভয় নেই। তোদের কাবিননামা দেখা ছেড়ে দিচ্ছি, নাহলে বিয়ে করেনে।”
মেয়েটি সাহস করে বললো,
-“আপনি আগে করেন।”
-“আমি কয়েক মাস আগেই করেছি। তোমাদের হারাম সম্পর্কে থাকার দরকার নেই। বিয়ে করে নাও। তারপর পরিবারকে জানিয়ে করো।”
তননের বন্ধুরা বললো,
-“তনন তুই যা। একে আমরা দেখে নিবো।”
তনন সায় দিয়ে তাহসীকে নিয়ে সরে আসলো। তাহসী বললো,
-“বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?”
-“ওসব নিয়ে মাথা ঘামিও না। একটু ভয় দেখানো। দুমিনিট বাদেই ছেড়ে দিবে। তুমি বরং এটা ভাবো আমার সাথে কিভাবে ইজি হবে।”
তাহসী মুখ ঘুরিয়ে নিল। তনন বলল,
-“নীলক্ষেত যাবে? তোমার আবার বই পড়ার শখ।”
-“না, বই আছে কিছু না পড়া। দেড়মাস পড়ে সেমিস্টার ফাইনাল। এখন আপাতত বাদ।”
-“আচ্ছা তাহলে কোথায় যাওয়া যায়!”
তাহসী ঘড়ি দেখে নিয়ে বললো,
-“মাগরিবের আজান হবে আধা ঘন্টা পর। আজ কোথাও যেয়ে কাজ নেই।”
-“কেন? আমি সাথে থাকলেও ভয় লাগবে?”
চলবে ইনশাআল্লাহ;
#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৩
অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ
তাহসী ঘড়ি দেখে নিয়ে বললো,
-“মাগরিবের আজান হবে আধা ঘন্টা পর। আজ কোথাও যেয়ে কাজ নেই।”
-“কেন? আমি সাথে থাকলেও ভয় লাগবে?”
-“এমন কিছু নয়। আমি অন্যভা…..”
তনন হাঁটা থামিয়ে দাঁড়ালো। বললো,
-“বুঝেছি।”
একটা রিকশা সামনে পড়তেই তনন রিকশা ডেকে উঠে বসলো। রিকশাওয়ালাকে গন্তব্য বলে তাহসীর দিকে তাকালো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি তে যেতে বলেছে তনন। তাহসী মুচকি হেসে বলল,
-“নামাজ কালাম নেই?”
তনন মাথা চুলকে হাসলো। বললো,
-“আছে। নামাজের সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাবো।”
-“আজ মনে হচ্ছে স্টাডির চাপ কম!”
-“তা আছে। তবে এখন….”
তাহসী ভ্রু উঁচিয়ে পরবর্তী অংশ জানতে চাইলো। তনন কিছু না বলে চারিদিকে দেখে নিয়ে রিকশাওয়ালা কে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে তাহসীর দিকে তাকালো। তাহসী তখনও প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য তাকিয়ে আছে। তনন নিঃশব্দে প্রায় তড়িৎগতিতে তাহসীর ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে পুনরায় চলে আসল নিজের অবস্থানে।
এদিকে তাহসী হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে তননের দিকে। তনন তা দেখে হাসলো।
তাহসী বুঝে উঠতেই অন্যদিকে তাকালো। এই ছেলের কি লাজ লজ্জা নেই? না হলে হুড তোলা রিকশায়! মনে মনে ভাবছে তাহসী।
কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছাতেই ওরা রিকশা থেকে নামলো। তনন ভাড়া মিটিয়ে হাঁটতে শুরু করলে তাহসী তার পিছন পিছন যেতে লাগলো। তনন ফিসফিস করে বললো,
-“রাগ করেছো?”
তাহসী মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। তনন ঝালমুড়ি কিনে নিয়ে তাহসীর হাতে দিল। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটলো ওরা। স্বাভাবিক কথাবার্তা হলো। মাগরিবের আজান শুরু হতেই তনন রিকশা ডাকলো।
তাহসীর ফ্ল্যাট এখান থেকে কাছেই। তাই বেশি সময় লাগল না ওদের পৌঁছাতে।
বিদায় নেওয়ার সময় তনন বললো,
-“আজ বিকাল কেমন কাটলো?”
তাহসী লাজুক হেসে বলল,
-“আলহামদুলিল্লাহ।”
-“আর কি’স?”
তাহসীর কানের কাছে মুখ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো তনন।
তাহসী তনন কে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেল। তনন মাথা চুলকে হেসে চলে গেল।
তাহসী উপরে এসে হাঁপাতে লাগলো। লজ্জা লজ্জা ভাব লক্ষ্য করে আঁখি বললো,
-“কি রে তনন কি করেছে? এত লজ্জা পাচ্ছিস?”
তাহসী চোখ পাকিয়ে তাকালো। আঁখি কে সরিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললো,
-“কিছু না। সামনে থেকে সর, নামাজের সময় চলে যাবে।”
আঁখি হাসতে হাসতে চলে গেল রুম থেকে।
🍁🍁🍁
সময় নিজ গতিতে এগিয়ে চলে। তাকে থামানো সম্ভব নয়। এমনি দেখতে দেখতে কোনদিক দিয়ে যে দুইমাস চলে গেল তাহসী বুঝতেই পারলো না। সে অবশ্য ব্যস্ত ছিল। তৃতীয় বর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল ছিল। এতো দিন বইয়ে মুখ গুজেই থেকেছে। তননের সাথে কথা হয়েছে কম। এই দুইমাসে মাত্র তিনদিন তননের সাথে দেখা হয়ে সময় কাটিয়েছে ভাবতেই মনমরা হয়ে গেল তাহসী।
তবে আজ তনন দেখা করতে চেয়েছে। আজকেই তাহসীর পরীক্ষা শেষ হলো। আছরের নামাজ পড়ে তাহসী তৈরি হয়ে নিল। তৈরি হওয়ার পাঁচ মিনিট বাদেই তননের কল আসলো। তাহসী ফোন-ই দেখছিল। ইচ্ছা করেই দেরি করে ফোন রিসিভ করলো। সাথে সাথে ধরলো না, শেষে আবার তনন বলে বসে সে ফোন নিয়েই বসে ছিল কিনা। এই ছেলের মুখে কিছু আটকায় না।
তনন তাহসী কে নিচে নামতে বললে তাহসীও বিসমিল্লাহ বলে বের হলো। বাসার গেট খুলে বের হতেই তননের দেখা পেল। রাস্তার বিপরীত পাশে রিকশা তে বসে আছে। তাহসী রাস্তা পার হয়ে রিকশা তে উঠলো।
-“কেমন আছো?”
প্রতিবারের মতো তনন প্রথমে কথা বলে উঠলো।
-“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?”
-“আলহামদুলিল্লাহ।”
-“একবারে রিকশা নিয়ে তৈরি হয়ে আছো আজ!”
ততক্ষণে রিকশা চলতে শুরু করেছে।
-“হু। তোমার ভাবীর জন্য একটা চেইন নিতে হবে। আম্মু বলেছে বিয়েতে ওইটা দিতে।”
নাহিদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তাহসীর পরীক্ষার জন্যেও দেরি করা।
তাহসী প্রশ্ন করলো,
-“গোল্ড এর?”
-“তো?”
-“না, কিছু না।”
-“কেন? এটা ভালো হবে না?”
-“এমন কিছু না। আমি ভেবেছিলাম অন্য কিছু কিনবো।”
-“কি? তোমার আমার কি আলাদা দিতে চাচ্ছো?”
-“কেন একসাথে দেওয়ার কথা?”
-“না, এমন না। তোমার কথা শুনে বলছি। তোমার যা ইচ্ছা দাও। আম্মু আমাকে এটাই বললো।”
তাহসী চুপ থাকলো কিছুক্ষণ। একসাথে দেওয়া উচিত কি উচিত না সে নিজেই বুঝতে পারছে না। আলাদা দিলে কেমন দেখাবে? মনে প্রশ্ন না চেপে করেই বসলো,
-“আলাদা দিলে কেমন দেখাবে?”
-“আমি এতশত সম্পর্ক বুঝিনা। আম্মু টাকা পাঠালো তাই কিনতে যাচ্ছি।”
তনন দোকানে যেয়ে চেইন দেখাতে বললো। তাহসীর চোখ গেল এক দুলের দিকে। তৎক্ষণাৎ কিছু একটা ভেবে তননের কাছে সরে যেয়ে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,
-“বাজেট কত?”
তননও তাহসীর মতো নিম্ন স্বরে উত্তর দিল। তাহসী চেইনের সাথে সাথে কিছু দুল ও দেখলো। পরে দোকানদারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তননকে টেনে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলো।
তনন বললো,
-“কি হলো? এতগুলর মধ্যে একটাও পছন্দ হলো না? আরো শপিং আছে। কালকেই তো চলে যাবে। আজকের মধ্যে সব কমপ্লিট করতে হবে।”
-“আমিও ভেবেছিলাম গোল্ডের মধ্যে একটা ছোটখাটো রিং নিবো। তো আম্মুর থেকে আইডিয়া নিয়েছি প্রাইজের ব্যাপারে। এখানে মনে হলো একটু বেশি বেশি।”
-“হ্যা, আইডিয়া নিয়ে সব বুঝে বসে আছে! কোন শপে কমে দেবে শুনি? সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে।”
-“এখান থেকে নেওয়ার দরকার নেই। খুলনা থেকে নিতে হবে। ওখানে পরিচিত এক শপ আছে। পরিচিত বলতে ওখান থেকেই আমার ফ্যামিলির সবাই নেয়। আর সবচেয়ে বড় কথা যদি ঠকিয়ে দেয়?”
-“ওকে, হয়েছে। এবার চলুন।”
-“কোথায় এখন?”
-“ড্রেস।”
তনন প্রথমেই মেয়েদের পোশাক এর দিকে গেল। তাহসী অবাক হয়ে বললো,
-“মেয়েদের পোশাক যে? তনুর?”
-“হ্যা, আর তোমারও।”
-“আমার কেন?”
-“তুমি কিনবে না? তোমার-ই তো ভাইয়ের বিয়ে!”
-“আমি তো কাল কিনতে চেয়েছি। এখন তনুর টাই দেখো।”
তনন দাঁড়িয়ে পড়লো। বললো,
-“কাল মানে? কাল না তোমার বাস!”
-“না, পরশু টিকেট কেটে রেখেছে ভাইয়া। কাল শপিং করবো ভেবেছি। ভেবেছি আজ বলবো তোমাকে।”
-“ওহ্। আচ্ছা এসো।”
বলে তনন দরজা খুলে দোকানের ভিতরে ঢুকলো।
তাহসীকে দায়িত্ব দিয়ে তনন চুপ করে থাকলো। তাহসী খুঁজে খুঁজে একটা ড্রেস দেখালো। তননের ভালো লাগলো। তাহসী চেয়েছিল তনুর কাছে ছবি পাঠাবে। তারপর তনুর যেইটা পছন্দ হয়। তনন বলতে দিল না। তাহলে আর সারপ্রাইজ থাকবে না।
তনুর পোশাক পছন্দ শেষে তনন বললো,
-“এবার তুমি দেখো। এরপর শাড়ির দিকে যেয়ে আম্মুর শাড়ি দেখবো। এই তুমিও শাড়ি পড়বে?”
-“নো ওয়ে। শাড়ি পড়ে দিনটা মাটি করতে পারবো না। খুব ঝামেলা!”
-“ওকে। টপস, থ্রিপিস যা খুশি দেখো।”
-“থ্রিপিস পড়িনা আমি। আর বললাম না কাল…”
-“কাল আমার সময় নেই। এখন দেখো।”
-“সময় নেই মানে? কাল না ক্লাস অফ।”
-“তো? আমি ফ্রি?”
তননের কথাটা কেমন রাগ মিশ্রিত শোনালো।
তাহসীর মন খারাপ হলো। বুঝতে না দিয়ে বলল,
-“ওহ্, ওকে।”
তনন নিজেই একটা টপস বের করলো। বললো,
-“এটা মনে হয় তোমার পছন্দ হবে আর মানাবেও। তুমি তো এই ধরণের ড্রেস পড়ো। আর খুব সিম্পল না, বিয়ের মধ্যে যেকোনো দিন পড়তে পারবে।”
তাহসী ইতিবাচক মাথা নাড়ালো। সে শুধু তননের ব্যবহার নিয়ে ভেবে যাচ্ছে। তননের এমন ব্যবহার আগেও দেখেছে,তবে বিয়ের পর এই প্রথম।
তনন আরেকটা লেগিংস নিল তাহসীর জন্য। ড্রেস এর সাথে মিল রেখে।
এবার শাড়ির দিকে গেল তনন। পিছু পিছু তাহসীও গেল। তনন যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। তাহসী বুঝতে পেরে বললো,
-“আমি শাড়ির কিছুই বুঝিনা। পছন্দ ও হয় না। আর যে শাড়ি পছন্দ করবো,মামুনি পড়তে পারবে না।”
তনন দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছু দেখলো। একদম আন্দাজের উপর একটা নিয়ে নিল।
এরপর কাউন্টারে গিয়ে তনন টাকা দিল। তাহসী বললো,
-“আরে আমারটাও দিবে নাকি?”
-“তো? আমি কিছু দিলে কি সেইটা নেওয়া যায় না? নাকি কম দামি হয়? আর্থিক অবস্থা তোমার মতো তো আমার না, এটা তোমাকে বুঝতে হবে!”
তাহসী রাগান্বিত হলেও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো। বলে উঠলো,
-”
চলবে ইনশাআল্লাহ;