#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৯
তাহসী তননের দিকে এগিয়ে যেতেই তনন বললো,
-“সবাই কি রেগে আছে নাকি? এইভাবে চলে যাচ্ছি।”
-“না, এমন কোনো বিষয় না।”
তনন ব্যাগের চেইন আটকে তাহসীর পাশে বিছানায় বসলো। তাহসী তার আগেই বসেছে। তাহসীর হাতজোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
-“আর তুই?”
তাহসী নড়েচড়ে বসল। তার শরীর কম্পন যেন তনন টের না পায় তাই প্রাণপণে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কোনোরকমে বললো,
-“আমি কেন রেগে যাবো?”
-“তো কে রাগবে? আমি জানি তোর মনে অনেক প্রশ্ন। এইযে হুট করে বিয়ে! ইনশাআল্লাহ সময় নিয়ে একদিন সব প্রশ্নের উত্তর দিবো।”
তাহসী কিছু বললো না। হাত ছাড়িয়ে নিতেও পারছে না, আবার হাত ধরে আছে এটাতেও অস্বস্তি লাগছে।
তনন তাহসীর হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ব্যাগ থেকে টিশার্ট আর জিন্স নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। রেডি হয়ে এসে আগে পরা ড্রেস ভাঁজ করে ব্যাগে ঢোকাতে লাগলো।
তাহসীকে প্রশ্ন করলো,
-“ঢাকা কবে যাবে?”
-“ইনশাআল্লাহ কালকে।”
পুনরায় নীরবতা বিরাজ করলো দু’জনের মধ্যে। নীরবতা কাটানোর জন্য তাহসী ইতস্তত করে প্রশ্ন করলো,
-“এক্সাম কবে শেষ?”
তননের ব্যাগ এর চেইন আটকে তাহসীর কাছে গেল। তবে আগের বারের মতো আর বসলো না, দাঁড়িয়ে থাকলো। নিঃশব্দে হেসে বলল,
-“কেন? আমার সাথে ঘুরে বেড়াবে নাকি?”
তাহসীর মুখ চুপসে গেল। সে এবার কি উত্তর দিবে? নীরবতা কাটানোর জন্যই তো সে কিছু না পেয়ে এই কথাটা তুলেছে।
-“এমন কিছুই না। শুধু জিজ্ঞেস করলাম। আম্মু জিজ্ঞেস করেছিল একবার।”
সত্যিই একবার নাতাশা রহমান জিজ্ঞেস করেছিলেন। তবে সেটা বিয়ের আগে। তাহসী বলেছিল জানেনা।
-“পুরোপুরি এক মাস পরে। আচ্ছা শোন আমি কিন্তু এই একমাস তোকে কোনো সময় দিতে পারবো না। রাগ করবি?”
তাহসী মাথা নাড়ালো। যার অর্থ রাগ করবে না। তনন তাহসীর আরো কাছে এগিয়ে আসলো। এতক্ষণ তাহসী ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল। তনন তাহসীর থুতনি ধরে মুখ উঁচু করলো। তাহসীর চোখের দিকে তাকালো। তাহসী চোখ সরিয়ে নিতে পারলো না।
তনন গভীরভাবে তাহসীর ঠোঁট স্পর্শ করলো। কয়েক মিনিট পর তাহসীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে তনন চোখ বুজে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো,
-“ভালোবাসি।”
তনন চোখ মেলে তাকালো তাহসীর দিকে। তাহসী তার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে। তাহসী লজ্জায় কিছু বলতে পারলো না; তার মনে যে অনেক প্রশ্ন। তনন তাহসীর কাছ থেকে সরে আসলো কিছুটা। এরপর তাহসীর গাল টেনে দিয়ে তনন বললো,
-“এত লজ্জা পেতে হবে না। এক মাস পর যেন দেখি আমাদের সাথে কথা বলতে কোনো জড়তা নেই।”
তাহসী মৌন রইলো। নিচ থেকে নাহিদের ডাক শুনতে পাওয়া গেল। তনন কে বেরিয়ে পড়তে বলছে। সময় হয়ে গেছে। তনন ঘড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে নিল। নয়টা বেজে দশ মিনিট।
তনন তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আসি। ভালো থেকো। ইনশাআল্লাহ ঢাকায় দেখা হবে।”
তনন ব্যাগ নিয়ে বের হতে যেতেই তাহসী তাড়াহুড়ো করে আলমারি থেকে একটা বক্স বের করে হাতে দিল।
তনন বললো,
-“সেই গিফট?”
-“হু।”
তনন পুনরায় তাহসীর ঠোঁটে চুমু খেল। ভালো থেকো বলে তাহসীর রুম থেকে বের হলো। তাহসী মুচকি হেসে ঠোঁট মুছে তননের পিছু পিছু আসলো।
কথা হয়েছে নাহিদ বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌছে দিবে তননকে। এটা জানালো তাহসী।
নিচে নামতেই নাতাশা রহমান তননকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিলেন। তনন কৌতুহল নিয়ে বললো,
-“কি এটা?”
তৌহিদ হোসেন বললেন,
-“তেমন কিছু না। একটু খাবার দিয়েছে। কাল গরম করে নিয়ে খেয়ে ফেলো।”
তনন অবাক হলো। সাথে মনে মনে খুশি হলো। তার প্রতিবার ঢাকায় ফেরার সময় সেলিনা শেখ রান্না করে পাঠিয়ে দেয়। প্রথম দুইদিন বাড়ির খাবার গরম করে নিয়ে খায় তনন।
নাহিদের যাওয়ার কথা থাকলেও বাইক নিয়ে তৌহিদ হোসেন তননকে নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে গেল। যাওয়ার সময় তনন সবার থেকে বিদায় নিয়ে সবশেষে তাহসীর কাছ থেকে বিদায় নিল।
তৌহিদ হোসেন যখন তননকে নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছালেন তখনও বাস আসেনি। পনেরো মিনিট সময় বাকি দশটা বাজতে। আর বাস তো সঠিক সময়ে আসবেও না এটা ভালোই জানে তনন। তাহসীর বাড়ি থেকে বাস স্ট্যান্ডে আসতে বাইকে করে পনেরো থেকে বিশ মিনিট সময় লাগে।
বাস আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন তৌহিদ হোসেন। তননকে অনেক কথা বললেন।
-“এই কয়দিন আর কিছু তে মন দিও না। মন শুধু পড়াশোনাতেই সীমাবদ্ধ রেখো।”
তনন মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। তৌহিদ হোসেন পুনরায় বললেন,
-“আসলে তোমার পরীক্ষার মধ্যে বিয়ের ডেইট ফেলা উচিত হয়নি। আর কি করবো! ভাবলাম চেয়ারম্যান এসে যদি ঝামেলা করে! অবশ্য করেনি এমন না। যাক এসব বাদ দাও। আমার উপর রাগ রেখ না। পরীক্ষার মধ্যে তোমার এত এত চাপ যাচ্ছে।”
তনন হেসে বলল,
-“এইভাবে বলবেন না প্লিজ। আমার সমস্যা নেই। বৃহস্পতিবারে পরীক্ষা দিয়ে এসেছি। আবার এখন চলে যাচ্ছি। তবে শনিবারে মানে আজ পরীক্ষা থাকলে সমস্যা হতো। কিন্তু না থাকার জন্য সুবিধা হয়েছে। আমাকে এইভাবে বলবেন না প্লিজ।”
-“বলবো না যদি তুমি আমাকে বাবা বলে সম্বোধন করো। এমন করে সম্বোধন ব্যতীত কথা বললে আমিও এইভাবেই ব্যবহার করবো।”
-“আচ্ছা,বাবা-ই বলবো।”
ওনাদের কথা বলার মধ্যে বাস চলে আসলো। তৌহিদ হোসেন বললেন,
-“খাবার তোমাকে দেওয়ার জন্য আগে আগে ঠাণ্ডা করে ফ্রিজে রেখেছিল। তবুও তেমন বরফ হয়নি। তুমি হোস্টেলে পৌঁছে আগে ফ্রিজে রাখবে। আর এই কয়দিন মন দিয়ে পড়াশোনা করো। দিন হলে তাহসীকেও তোমার সাথে পাঠিয়ে দিতাম। ক্লাস মিস যাচ্ছে ওর।”
তৌহিদ হোসেন আরো কিছু উপদেশ মূলক কথা বললেন। তনন তাকে বিদায় জানিয়ে বাসে উঠলো। বাস ছেড়ে দিতেই তিনিও বাড়ির পথে রওনা দিলেন।
____________
তাহসী ঘুমাতে গেল বেশ রাত করে। অনেকদিন পর সকল কাজিন এক জায়গায় হয়েছিল। তননের কথা মনে হয়ে ভাবলো একবার ফোন দিবে কিনা। পরক্ষণেই এত লজ্জা এসে ভর করলো যে সেই ভাবনা নাকচ করে দিল। তনন যদি আবার লজ্জাজনক কথা বলে!
তাহসী চোখ বন্ধ করলেই শুধু তননের মুখ ভেসে উঠলো। বারবার কানে বাজতে লাগলো তননের বলা ভালোবাসি শব্দটা। তাহসী তো এতদিন এইটার জন্যই অপেক্ষা করেছিল। এতো সহজে সব হয়ে গেল তাহসী ভাবতে পারছে না। তাও আবার বৈধ ভাবে। তনন নামক মানুষটি এখন তার শুধু আপনই নয় বরং একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ। তনন এই রুম থেকে চলে যাওয়ার সময় এক বুক ভালোবাসা নিয়ে তাকিয়ে ছিল তার দিকে। কাল রাতেও তননের চোখে এই দৃষ্টি দেখেছে তাহসী। তাহলে তনন কি তাকে সম্পূর্ণরূপে পেতে চেয়েছিল? এটা ভাবতেই ছটফটিয়ে উঠে বসলো তাহসী। আর কিছু না ভেবে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করার জন্য উঠে বসলো। ওয়াশরুম থেকে ওযু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে শুরু করলো।
তনন বাসে বসে পড়া দেখতে দেখতে যাচ্ছে। তবে বই থেকে মন বেশি তাহসীর কাছে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে সেলিনা শেখ দুইবার আর নাতাশা রহমান একবার ফোন দিয়েছিলেন। তনন সেলিনা শেখ কে রাগ করে বলেছে ঘুমিয়ে পড়তে। না হলে না ঘুমিয়ে একটু পরপর ফোন দিত। এদিকে তাহসী একবারও ফোন দিল না ভেবে তাহসীর উপর অভিমান হলো। বই বন্ধ করে চোখ বুজলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ;