#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৪
তৌহিদ হোসেন পুনরায় মায়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
-“আমার মেয়ে ইনশাআল্লাহ ভালো থাকবে মা। ছেলে খারাপ না। এক বয়সী, বুঝবে ভালো। যারা বলে একই বয়সী হলে ঝগড়া হয়, বোঝে কম; তারা আসলে ভুল বলে। একই বয়সী বোঝাপড়াও ভালো হবে। ঝগড়া করবে, ভালো ও বাসবে। আর ছেলের কাজ দেখেছো! ফাইনাল পরীক্ষা, সে সব বাদ দিয়ে বিয়ের কথা শুনে ছুটে এসেছে। চোখের অবস্থা দেখেছো! সারারাত নির্ঘুম।”
-“তোর মেয়ে প্রেম করে কিনা দেখিস! ওই ছেলেও ঢাকা থাকে। তোর মেয়ে ঢাকা যেয়ে… ”
-“দেখো আম্মা আমার মেয়ে নিয়ে বাজে কথা বলবে না। প্রেম করে তোমার আদরের নাতি ছেলে নাহিদ। সেদিকে খোঁজ নাই, আমার মেয়ের পিছনে লাগতে আসছে। তুমি তো বিয়ে করছিলে এক বুড়া, তোমার থেকে কত বয়স বেশী! আমার মেয়ে জামাই কমবয়সী, সহ্য হচ্ছে না। আর তোমার ওই নাতনি রেবা আর তোমার মেজো বৌমা যদি নজর দিছে আমার জামাইয়ের দিকে, তো খবর আছে!”
নাতাশা রহমান এর সাথে মোহিনী বেগম এর সম্পর্ক ভালো। নাতাশা রহমান ওনাকে এভাবে খুচিয়েই কথা বলেন। মোহিনী বেগম কিছু না বলে হাসতেন প্রথম থেকেই। নাতাশা রহমান ও ব্যবহার পরিবর্তন করেননি। মোহিনী বেগম বিস্ময় নিয়ে বললেন,
-“কি নাহিদ প্রেম করে! ওকে আমি দেখে নিচ্ছি। তুই কিছু বলিসনি কেন? গেল ছেলেটা গেল! তুই নষ্ট করে ফেললি।”
মোহিনী বেগম উঠে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলেন।
নাতাশা রহমান হাসতে হাসতে বললেন,
-“এখন নাহিদ কে ঘুম থেকে উঠাবে না।”
তৌহিদ হোসেন ও অবাক হয়েছেন। বললেন,
-“মজা করে বলছো নাকি সত্যি? কোন মেয়ে?”
-“আমিও জানতাম না। তাহসী দেখিয়েছে। এই প্রায় এক মাস জেনেছি। তাহসী কিভাবে যেন দেখে ফেলেছে নাহিদের থেকে।”
-“কোন মেয়ে? আমাদের তো বলতে পারতো। আর হারাম সম্পর্কে থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কি হচ্ছে!”
-“আরে ওর বন্ধুর বিয়ে খেতে গেল না তিন চার মাস আগে। সেখানে দেখেছে। ওর বন্ধু তাজের খালাতো না মামাতো বোন হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তাহসীর এক ব্যাচ সিনিয়র। নাম মিথিলা। তেমন সম্পর্ক নেই।”
-“আমাকে বলোনি কেন?”
-“তুমি জিজ্ঞেস করেছো? আমি আর তাহসী শুধু জানি।”
-“জিজ্ঞেস না করলে বলবে না?”
-“না।”
তৌহিদ হোসেন ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। নাতাশা রহমান হেসে দিলেন। তৌহিদ হোসেন ও হাসলেন।
🍁🍁🍁
পরদিন সকাল সকাল তাহসী লাগেজ গুছিয়ে রেডি হয়ে নিল। নাঈম সেইটা দেখে বললো,
-“আপু ঢাকায় যাচ্ছো নাকি? এই কয়দিন থাকবে না?”
-“আমার পড়াশোনা বসে থাকবে, তাই না।”
-“ভাবলাম একবারে বিদায় দিবো তোমাকে! এখন তো দেখছি আগেই চলে যাচ্ছো। নিশ্চয় বিয়ের আগে এক সপ্তাহ প্রেম করবে।”
-“থাপ্পড় দিবো একটা। কলেজে উঠে বেয়াদব হয়েছো, না?”
নাহিদ আসলো। আয়েস করে তাহসীর বিছানায় বসলো। নাঈমের কান টেনে ধরে বললো,
-“বেয়াদবি না? সত্যি কথা কখনো মুখের সামনে বলতে হয়? মানুষ জ্বলে উঠে জানিস না!”
-“ভাইয়া তুমিও। তোমার কথা যদি বাবাকে না বলেছি! আমার টা মিথ্যা বাট তোমার টা তো সত্যি!”
-“বাবাকে বললেই বিশ্বাস করবে যত! এখন বের হ দ্রুত। নাহলে বাস মিস করবো।”
ঢাকাতেই চাকরি করে নাহিদ। গত বৃহস্পতিবার নাহিদ আর তাহসী এসেছিল। আজ শনিবার, ফিরে যাচ্ছে। আজকের ক্লাস মিস গেল তাহসীর। নাহিদ কৃষি অফিসার পদে সদ্য জয়েন করেছে। শুক্রবার ও শনিবার দুইদিন ছুটি তার।
তৌহিদ হোসেন রুমের বাইরে থেকে সবটাই শুনলেন। তবে কিছু বললেন না এই ব্যাপারে। নাহিদের উদ্দেশ্যে বললেন,
-“নাহিদ আপাতত এক সপ্তাহের ছুটি নাও। আজ থেকে ছুটি হলেই ভালো হতো অবশ্য। আজ তাহসীর সাথে ঢাকা যাচ্ছো যাও, তাহসী কে নিয়ে ফিরে আসবে মঙ্গলবারে।”
-“বাবা বুধবারে আসি।”
-“অবশ্যই না। তবে তুমি চাইলে বিশেষ কাউকে দাওয়াত দিতে পারো।”
তৌহিদ হোসেন বের হয়ে গেলেন।
নাহিদ ঘামতে ঘামতে বললো,
-“কাউকে মানে? বাবা কি বলে গেল।”
নাঈম হাসতে হাসতে তাহসীর বিছানার উপর শুয়ে পড়লো।
-“এই সাহস নিয়ে প্রেম করো? ঘাম ছুটে যাচ্ছে তোমার! হা হা হা! বাড়ির ছোট বড় এমনকি শাফিম ও জানে তুমি প্রেম করো।”
-“এ্যা?”
-“হ্যা। দাদির থেকে শুনলাম ভোরে উঠে। বাবা তোমাকে নামাজ পড়তে যেতে নিষেধ করেছে। হারাম কাজ করে মসজিদে যেয়ে কেবল মসজিদের অপমান।”
-“দাদি জানছে কিভাবে? তাহসী তুই!”
-“না। আম্মু।”
🍁🍁🍁
দুই দিন কেটে গেছে। এই দুই দিন আশায় আশায় বসে ছিল তাহসী। তনন হয়তো যোগাযোগ করবে তার সাথে। কিন্তু তনন যোগাযোগ করেনি। তননের সাথে প্রায় দুই মাস কোনো কথা নেই। দুইজনের প্রতিষ্ঠান আলাদা হওয়ার পর থেকে যোগাযোগ কমে গেছে। এখন দরকার ব্যতীত বা হঠাৎ হঠাৎ ছাড়া কথা হয়না। তনন কে অনলাইনেও ইনএক্টিভ দেখাচ্ছে। তাহসী মনে মনে রাগ করলো। তাহসীর মনের মধ্যে প্রশ্ন জমেছে কতকগুলো। তবুও নিজ থেকে যোগাযোগ করলো না সে। যা হয় হয়ে যাক।
তাহসী ঢাকাতে এসে আঁখির থেকে শুনেছে তনন তাহসীর কথা তোলায় আঁখি ও বলে দিছে। তাহসী কিছুই বুঝতে পারছে না। এখনো সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে তাহসীর কাছে। বলা নেই কওয়া নেই বিয়ে!
তাহসীর এইসব ভাবনার মাঝেই কল আসলো। আননোন নাম্বার দেখে তাহসী ধরলো না। দ্বিতীয় বার কল আসতেই তাহসী চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো। তবুও রিসিভ করলো না। তৃতীয় বার বাজতেই রিসিভ করে সালাম দিল।
সালামের উত্তরের পরেই ওপাশ হতে ভেসে আসলো,
-“কল ধরতে এতক্ষণ লাগে!”
ওপাশে তনন কথা বলছে বুঝতে পেরেই তাহসী অবাক হলো। তাহসী প্রথমে কিছুই বললো না; রুমের মধ্য থেকে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। তনন পুনরায় বললো,
-“কাল বিকেলে রেডি থাকবি, আম্মু এখান থেকেই সব কিনতে বলেছে।”
-“কি কিনতে বলেছে? আমি কেন রেডি থাকবো?”
-“বিয়ের বেনারসী। তুই না থাকতে চাইলে কে থাকবে তাকে পাঠিয়ে দিস। রাখছি।”
তনন কল কেটে দিল। তাহসী রাগান্বিত হয়ে ফোন কান থেকে সরিয়ে সামনে আনলো। তাহসী বিড়বিড় করে বললো,
-“যত ত্যাড়া ত্যাড়া কথা! এইজন্যই ভালো লাগে না একে! কোন ব্যস্ত মানুষ উনি! ফোন দিয়ে আবার নিজ থেকেই কেটে দিল। ধুর! আমার প্রশ্নগুলোও করা হলো না।”
তাহসী কল দিল না নিজ থেকে। নাম্বার সেইভ করতে যেয়েও করলো না।
🍁🍁🍁
পরেরদিন বিকেলবেলা তাহসী ভার্সিটি থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে তননের দেওয়া লোকেশনে যায়। তনন একটা রেস্টুরেন্টের লোকেশন দিয়েছে। তাহসী রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করতেই তার চোখে পড়লো তনন কে। টেবিলের উপর বই রেখে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। তাহসী মুখ বাকালো। তাহসীর মনে হয় এই ছেলে অতিরিক্ত পড়ে। অবশ্য এমনি এমনি তো আর বুয়েটে চান্স পাইনি। তাহসী ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সেদিকে। আঁখি কে এতবার বললো আসতে ওই মেয়ে আসলোই না। নাহিদ কে বললে সেও আসেনি।
তাহসী তননের সামনের চেয়ার টেনে বসলো। শব্দ শুনে তনন সামনে তাকালো। বই বন্ধ করে রেখে তাহসীর দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। তাহসী সবসময়ই বড় হাতার গোল লং জামা পড়ে তার সাথে জিন্স প্যান্ট বা লেগিন্স আর মাথায় স্কার্ফ। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তনন চোখ সরিয়ে নিল। প্রতিদিনের তুলনায় আজ যেন একটু বেশিই ভালো লাগছে তাহসী কে। তাহসীর অস্বস্তি তননের চোখ এড়ালো না। তনন ওয়েটার কে ডেকে দুই কাপ কফি দিতে বললে তাহসী মিন মিন করে বললো,
-“আমি কফি খাই না।”
তনন কিছু দিতে নিষেধ করলো। ওয়েটার তাহসীর কথা শোনায় কিছু বললো না। তনন উঠে দাঁড়িয়ে তাহসী ইশারায় তার সাথে আসতে বললো। তাহসী নিঃশব্দে উঠে আসলো।
তনন প্রশ্ন করলো,
-“কেমন আছিস?”
-“আলহামদুলিল্লাহ।”
-“ঢাকা থেকে কখনো শপিং করেছিস? মানে জানতে চাইছি পরিচিত ভালো শপ আছে? তাহলে সেখানেই যায়।”
চলবে ইনশাআল্লাহ;