#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২
মাগরিবের নামাজের পর তনন বাড়িতে প্রবেশ করলো। তখন খাবার খেয়ে বন্ধুর সাথে বেরিয়ে গেছিল।
তনন গ্রিলের সিটকিনি খুলে ঢুকতেই সেলিনা শেখের সামনে পড়লো।
-“এই কোথা থেকে আসা হচ্ছে? বাড়িতে আসতে না আসতেই বন্ধুদের সাথে বেরানো। ঢাকা তে তো মনে হয় আরো রাত করিস, তাই না?”
-“না আম্মু। জায়ান এসেছিল তাই চলে গিয়েছি।”
সেলিনা শেখ বিকালের দিকে বাড়ি এসেছেন। ঘরে ঢুকে কাউকে পেলেন না। কোনো সাড়াশব্দ নেই। সোজা ছেলের রুমেও যেতে পারছেন না। নিজের অস্বস্তি একপাশে রেখে কথা বলতে বলতে ছেলের রুমের দিকে গেলেন। আগে থেকেই ভেবেছেন দরজা চাপানো থাকলে আর ডাকবেন না। কিন্তু দরজা খোলায় ছিল। চোখ পড়তেই দেখলেন তাহসী ঘুমাচ্ছে। তনন কে না দেখে এগিয়ে গেলেন। ওয়াশরুম চেক করেও পেলেন না। সেলিনা শেখ ফিরে আসলেন নিজের ঘরে। তাহসী কে জাগালেন না। পরে ঘুম থেকে উঠলেই শুনবে তনন কোথায়।
পরবর্তীতে তাহসীর কাছে জিজ্ঞেস করলে তাহসী বলেছে জানেনা। শুধু বলেছে বন্ধু এসেছিল। সেলিনা শেখ অনেকটা রেগেই গেছিলেন তননের এমন কাজে।
-“না বলে কেন গিয়েছিস?”
-“তুমি ছিলে না তো। আচ্ছা এবার অন্তত ছাড়ো। আর হবে না।”
সেলিনা শেখ আর কিছু বললেন না। তনন নিজের রুমে চলে গেল। রুমে যেয়ে তাহসী কে না দেখে ভ্রু কুঁচকালো। পাশের রুম থেকে তাহসীর কন্ঠ শোনা যাচ্ছে। পাশের রুমটা তনুর। তনন বুঝলো তনুর কাছেই তাহসী। এটা নিয়ে আর মাথা ঘামালো না। বিছানায় যেয়ে শুয়ে পড়লো।
সেলিনা শেখ মেয়ের রুমের দিকে গেলেন। তনু মায়ের আওয়াজ পেয়ে আঁতকে উঠলো। তাহসী হাসলো। সেলিনা শেখ দুইজনকে দেখে নিয়ে বললেন,
-“কি ব্যাপার তনু?”
-“কিছু না। তুমি যাও।”
তনুর এক হাত পিছনে। সেই দিকে তাকিয়ে সেলিনা শেখ বললেন,
-“কি লুকানো হচ্ছে তাই বল!”
তাহসী মৃদু স্বরে বললো,
-“আরে বলে দাও। কিছু বলবে না।”
-“তুমি বলো ভাবী।”
তনু মুখ কাচুমাচু করে পিছনে রাখা হাত সামনে আনলো। তাহসীর কিছু বলতে হলো না।
সেলিনা শেখ কপট রাগ দেখিয়ে বললেন,
-“সন্ধ্যাবেলার সময় তেঁতুল খাওয়া হচ্ছে দুইজনের। এখন এসব খেলে রাতে ভাত মুখে যাবে?”
-“কিছু হবে না মামুনি। আপনিও নিন।”
-“না, তোমরা খাও। তবে যদি শুনি কেউ বলেছে ভাত খাবো না, তাহলে তাকে মা’র দিবো।”
সেলিনা শেখ হাসিমুখে কথাগুলো বলে চলে গেলেন।
তাহসী কে দিয়ে বেশ করে তেঁতুল মখিয়েছে তনু। তনু দের একটা বড় তেঁতুলের গাছ আছে। তনু কালকে পেরে রেখেছিল তেঁতুল। সেইটা দেখেই খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তাহসী। তবে রাত করে তনু এটার আবদার নিয়ে বসবে এটা তাহসী বুঝেনি। তবে তাহসীর জন্য ভালো হয়েছে। আগ বাড়িয়ে নিজে কিছু চাইতে তাহসীর ঘোর আপত্তি।
সেইদিন রাতে অস্বস্তি নিয়ে তাহসী ঘুমাতে গেল। তনন তাহসীকে দেখেও কিছু বললো না। তাহসী মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো,
-“লাইট অফ করবো?”
-“হুম।”
তাহসী রুমের লাইট বন্ধ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিল। এরপর ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম থেকে চেঞ্জ করে আসলো। শাড়ি খুলে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তাহসী দুরুদুরু বুকে এগিয়ে যেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আজকে দিয়ে পাঁচটা রাত হচ্ছে তননের সাথে ঘুমানোর। তননের বাড়ি আসার কারণ সম্পর্কে জানতে মন চাইলেও তাহসী জড়তা নিয়ে কিছু বললো না। তননও কিছু বললো না। তনন ক্লান্ত থাকায় তাহসীর আগেই ঘুমিয়ে পড়লো। তনন ঘুমিয়ে পড়েছে এটা বুঝে তাহসীর অস্বস্তি কেটে গেল। তননের ভারি শ্বাস প্রশ্বাসের মৃদু শব্দে তাহসী কাত হয়ে পাশে তাকালো। খুশি হলো মনে মনে তাহসী। তনন নাক ডাকে না ঘুমের মধ্যে। তাহসী -ও একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।
🍁🍁🍁
দুইদিন বাদে তননের সাথে তাহসী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। গতকাল তাহসী নিজের বাড়ি যেয়ে প্রয়োজনীয় সব নিয়ে এসেছিল। তাহসীর বাড়ি তননের গ্রামের দুই গ্রাম পরেই। তাদের দুজনের পরিচয় ছোট বেলা থেকেই। একসাথেই বেড়ে ওঠা। তারা দুজনেই ঢাকায় থাকে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে।
তাহসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর তনন বুয়েটে পড়াশোনা করে। চতুর্থ বর্ষে পড়ে। তনন সেখানেই হোস্টেলে থাকে। তাহসী তার তিনজন বান্ধবীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই এক বাসাতে ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকে।
তনন, তাহসী দুজন দুজনকে মনে মনে পছন্দ করতো। তবে এখন পর্যন্ত কেউ কাউকে সেইটা বলেনি। অনেকটা নাটকীয় ভাবেই তাদের বিয়ে হয়েছিল।
ফ্ল্যাশব্যাক……………
সকাল সকাল বন্ধুকে নিজের বাড়িতে দেখে অনেকটা অবাকই হলো তাহসী। তাও আবার ছোটবেলার বন্ধু। তবে শুধু বন্ধু হলে অবাক হতো না। দেখা করতে আসতেই পারে। এখন তাদের পড়াশোনার প্রতিষ্ঠান আলাদা। কিন্তু এ তো ফ্যামিলি নিয়ে উপস্থিত। এইজন্যই তাহসীর অবাক হওয়া।
তাহসী ছাদে দাঁড়িয়েই উঁকি ঝুঁকি দিল। সকালে আর বিকালে ছাদে উঠে ফুল গাছে পানি দেওয়া তাহসীর কাজ। অবশ্য এখন সে গ্রামে থাকে না,তাই প্রতিদিন পানি দিতে পারে না। যে ক’দিন থাকে সেই ক’দিন তাহসী-ই এই কাজ করে।
গ্রামে শুধু তাদেরই দোতলা বাড়ি। আশেপাশে আর কারো নেই। এই বাড়িটি তার দাদার করা।
বাড়ির উঠানে তাদের বসতে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের প্রায় সবাই সেখানে। মূলত বাড়ির সবাই উঠানে চেয়ার, বেঞ্চ পেতে বসে ছিল, সেখানেই বসেছেন ওনারা। তনন, তননের আম্মু আর বোন বসে আছে চেয়ারে। আর সবাই ঘিরে রেখেছে। সবাই বলতে তাহসীর দুই চাচুর পরিবার, দাদা দাদি আর তাহসীর পরিবার।
তাহসী ছাদ থেকেই দেখলো তাহসীর ছোট চাচুর মেয়ে শশী দোতলার বিল্ডিং এ ঢুকলো। কিছুক্ষণ পরেই ছাদে শশীর অস্তিত্ব পেল তাহসী। শশী হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
-“তুমি এখানে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো আপু। ওদিকে তোমার বিয়ের কথা চলছে!”
-“কিসের বিয়ে? ওই ছেলেকে না বাবা না করে দিল।”
তাহসী চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
কিছুদিন ধরে গ্রামের চেয়ারম্যান জ্বালাচ্ছে বিয়ে নিয়ে। তাহসীর বাবা নিষেধ করার পরেও বারবার বলছে। তাহসীর দাদা প্রথমে কিছু বলেননি। ভেবেছে তাহসীর বাবায় নিষেধ করে দিবে। কিন্তু তাকেও চেয়ারম্যান এসে ধরেছে। পরে ওর দাদা কঠোর ভাবে নিষেধ করতেই চেয়ারম্যান পিছু ছেড়েছে।
-“আরে চেয়ারম্যান তো বাদ গেছে। ওইযে তোমার বন্ধু, বুয়েটে পড়ে। ধুর! নাম ভুলে গেছি।”
তাহসী বিস্ময় নিয়ে চাপা স্বরে বললো,
-“তনন! নিচে তো তনন-ই!”
-“হ্যা হ্যা। ওনার বোন তনু। আমাদের নিচের ক্লাসে মানে নাইনে পড়ে।”
-“কি বলিস তুই!”
ওদের কথার মাঝেই নিচ থেকে তাহসীর ডাক পড়লো। তাহসীর পিলে চমকে উঠলো এই ডাক শুনে।।
তাহসী নিচে নেমে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে বাবার পাশে যেয়ে দাঁড়ালো। তৎক্ষণাৎ তাহসীর বাবা তৌহিদ হোসেন তাহসীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন,
-“তনন কে তুমি ডেকেছো?”
বাবার শীতল কন্ঠ শুনে তাহসী ভয় পেল। এমনটা তো সে ভাবেনি দোষ তার উপর আসতে পারে! তাহসীর রাগ হচ্ছে তননের এমন কাজে। অবশ্য সেই সাথে মনে ভালো লাগা ছেয়ে যাচ্ছে।
তাহসী মৃদু স্বরে বললো,
-“না, বাবা।”
-“তোমাদের সম্পর্ক আছে?”
-“না, বাবা।”
তাহসী অবাক হয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নে। পরক্ষণেই মনে হলো এসব প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
তৌহিদ হোসেন বললেন,
-“সত্যি বলবে তাহসী। তাহলে তনন আসলো কেন?”
সেলিনা শেখ কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। তৌহিদ হোসেন তাকে থামিয়ে দিলেন।
তাহসী জড়তা নিয়ে বললো,
-“আমি সত্যিই এই ব্যাপারে কিছুই জানিনা বাবা।”
-“তোমাকে চেয়ারম্যান এর ছেলে বিয়ে করতে চেয়েছে এটা তুমি তননকে বলেছো?”
-“না, বাবা। তননের সাথে তো আমার অনেকদিন কোনো কথায় হয়না।”
তৌহিদ হোসেন এবার তননের দিকে তাকালেন। বললেন,
-“কোথা থেকে শুনেছো তনন?”
-“আঁখির থেকে।”
এটা ওদের আরেক ফ্রেন্ড সাথে তাহসীর রুমমেট। তাহসীর সাথেই পড়ে।
-“আচ্ছা। এবার বলো তাহসী তোমার মত কি?”
-“আমা…র মত মা..নে? কিসের?”
-“এইযে তোমার বন্ধু তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে।”
তাহসী কিছু বলার আগেই তাহসীর মেজো চাচি শিরিন কথা বললেন।
-“ভাই বলছিলাম কি তাহসীর তো পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগে তো বিয়ে দিতে চান না আর দিবেনও না। তাহলে আমার মেয়ে রেবার কথা বলেন না হয়।ওনারা কি খালি হাতে ফিরে…”
অনেকক্ষণ ধরেই তিনি এই কথা বলার জন্য স্বামীকে খোঁচাচ্ছেন। তাহসীর মেজো চাচা রাগ করেছেন ওনাকে। তবুও শুনলেন না। শেষ পর্যন্ত নিজেই বলে দিলেন।
তনন চোখ মুখ কুঁচকালো। মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার। সারারাত জার্নি করে এসেছে সে। সকালে খেয়েই মায়ের সাথে এখানে এসেছে। ঘুম হয়নি। চোখ লাল হয়ে আছে। তার মধ্যে এইসব কথার কোনো মানে হয়না।
তৌহিদ হোসেন ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
-”
চলবে ইনশাআল্লাহ;