#তোমাতে_বিভোর
#Season_2
#পর্ব_৮
#Sapna_Farin
–আহান ভাবনার মাঝখানে ডুবে যায়।তার মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন গুলো উঁকি দিচ্ছে।কিন্তু সে প্রশ্নের উত্তর গুলো তার অজানা।সে বুঝতে পারছেনা কোথায় থেকে কি হচ্ছে।সবকিছু তার চোখের সামনে।কিন্তু সবকিছু কেমন অস্পর্শ।তখন তার মনে অজানা প্রশ্ন গুলো ধলা পাকিয়ে যেতে।সে স্থির থাকতে পারলো না।সে বিছানা থেকে হকচকিয়ে উঠে বসে বলে।
–“আমার সবকিছু কেমন অস্বাভাবিক লাগছে।বুঝতে পারছিনা ঐ অচেনা মেয়েটি এবং ছেলেটির রুদ্রের ফ্যামিলির সাথে কি সম্পর্ক?মেয়েটি যখন চলে যাচ্ছিলো তখন অশ্রু ভেজা চোখে রুদ্রের দিকে ফিরে তাকিয়ে ছিল এবং রুদ্র তার দিকে ফেলফেল চোখে তাকিয়ে ছিলো।তখন আমার কেমন লাগছিলো কিন্তু অধরার ভাবনার মাঝখানে বিভোর হয়ে।সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম।তাহলে কি আমার সন্দেহ ঠিক দিকে যাচ্ছে।রুদ্র এবং অচেনা মেয়েটির কোন সম্পর্ক আছে।তাদের চোখের ভাষা আমাকে সেদিকে ইশারা করছে।তাহলে অবশ্যই আছে।এখন আমাকে সবকিছু জানতে হবে।এখানে অধরার জীবন জড়িয়ে আছে।এভাবে বসে থাকলে চলবে না।কিন্তু মেয়েটি এবং ছেলেটির খোঁজ কিভাবে পাবো।কিভাবে সবকিছু জানবো?যে রুদ্রের সাথে কি সম্পর্ক।আমাকে কারো হেল্প নিতে হবে।আমাকে কে হেল্প করবে।কে?
–আহানের প্রতিধ্বনি দেয়ালে ভেসে তার কানে আসছে।তখন সে উত্তেজিত হয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে।তার কাছে রাখা সঁপিস ফ্লোরে ফেলে দিতে।তার ভাবনার মাঝখানে অধরার চেহারা ভেসে উঠে।তখন তার মুখে বাকা হাসির রেখা ফুটে উঠে।সে ফিসফিস করে বলে।
–“ওহ্ অধরা যে আমাকে হেল্প করতে পারবে।আমাকে তার হেল্প নিতে হবে।কিন্তু অধরা আমাকে হেল্প করবে?হ্যাঁ অবশ্যই করবে।তুমি নিজেকে যতো আমার কাছে থেকে আড়াল করতে চেষ্টা করোনা কেন অধরা?কিন্তু আহান তোমার মনের কথা খুব ভালো করে বুঝতে পারে।তুমি রুদ্রের সাথে কেমন আছো সে কথা আমাকে বলতে হবেনা।রুদ্র আমাদের জীবনে এসে আমাদের পুরো জীবন পাল্টে দিয়েছে।অধরা তুমি সামান্য অপেক্ষা করো।আহান সবকিছু ঠিক করে দিবে।রুদ্রের মুখোশের আড়ালের চেহারা সবার সামনে নিয়ে এসে।তোমার জীবন থেকে রুদ্র কে তাড়িয়ে দিয়ে।আমার জায়গা হবে তোমার জীবনে।আমার এবং তোমার মাঝখান থেকে রুদ্র নামক তৃতীয় ব্যাক্তি চলে যাবে।ভাবতে আমার কেমন ভালো লাগছে।”
–তার মনের মধ্যে অধরা কি নিয়ে আশার আলো জ্বলে উঠে।সে অধরা কে নিয়ে কল্পনা জল্পনা জুড়ে,স্বপ্ন গুলো সাজাচ্ছে মনের মধ্যে।সে স্বপ্নের মাঝখানে আহান বিভোর হয়ে যাচ্ছে।তার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে উজ্জ্বল হাসির রেখা।
______________________
–আভা বাসায় ফিরে চোখের অশ্রু মুছতে মুছতে,ছুটে নিজের রুমে চলে যাচ্ছিলো।আরিশ তার পিছু ছুটে যাচ্ছে এবং তাকে ডেকে যাচ্ছে।কিন্তু আভার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ হচ্ছেনা।সে তাড়াহুড়ো করে সিড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে স্লিপ কেটে পড়ে যাচ্ছিলো।তখন আরিশ তাকে ধরে ফেলে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“অনেক হয়েছে আভা এখন বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে?ঐ প্রতারক এবং বিশ্বাসঘাতক রুদ্রের জন্য নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছো।নিজের মধ্যে কেন দুমড়েমুচড়ে শেষ হচ্ছো তুমি।এখানে তোমার দোষ কোথায়।সে তোমার যোগ্য না,সে তোমাকে ডির্সাব করেনা।তারজন্য নিজের কি অবস্থা করেছো।ভালো করে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো।যে আভা সব সময় হাসিখুশি থাকে সকল কে মাতিয়ে রাখে।সে আভার আজকে এমন অবস্থা ঐ অমানুষ রুদ্রের জন্য।আমার ভেবে ভয় হচ্ছে!যে তোমার ভালোবাসা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে নিজের বিবাহিত স্ত্রী কে নিয়ে দিব্যি ভালো আছে।তারজন্য তুমি নিজেকে শেষ করে দিচ্ছো।”
–আভা ডুকরে কেঁদে উঠে,দু’হাতে নিজের কান চেপে ধরে চিৎকার করে বলে।
–“আরিশ ভাইয়া রুদ্র আমার অস্বিস্তে মিশে আছে।আভা রুদ্র কে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারেনা।আমার জীবনে রুদ্রের জায়গা অন্য কোন মানুষ কখনো নিতে পারবেনা।আভা রুদ্র কে ভালোবাসে এবং সারাজীবন ভালোবেসে যাবে।তোমার সাহস কি করে হয় রুদ্রের বিরুদ্ধে কথা বলার?তখন রুদ্রের বাসায় অনেক আবেগী হয়ে।তোমাকে তার বিরুদ্ধে কি বললাম তারজন্য তুমি সেখানে দাঁড়িয়ে আছো।
আমাদের জীবনে কথা বলার জন্য তুমি কে?কেন রুদ্রের বিরুদ্ধে আমাকে যেতে বলছো তুমি?”
–আরিশ স্তব্ধ হয়ে যায়।যে ছেলেটা আভার চোখের অশ্রুর জন্য দ্বায়ী।তারজন্য আভা এভাবে তাকে কথা শুনাবে তারজন্য আরিশ প্রস্তুত ছিলো।আরিশ নিজেকে সামলে নিয়ে ভ্রুকুচকে আভার দিকে তাকিয়ে বলে অস্ফুটস্বরে বলে।
–“আভা তুমি অন্ধ হয়ে গেছো রুদ্রের মিথ্যা ভালোবাসায়।তারজন্য চোখের সামনে সবকিছু তুমি স্বীকার করছো না।তুমি বুঝতে পারছো না রুদ্র বিবাহিত।তুমি তারজন্য নিজের ভেতর জ্বলে পুড়ে শেষ হচ্ছো কেন?তোমার এমন অবস্থা দেখেলে খালুজান কে কি উত্তর দিবে আরিশ।আমাদের কে ভরসা করে তোমাকে আমাদের কাছে রেখে এসেছিল।কিন্তু আমরা তোমাকে আগলে রাখতে পারলাম ঐ রুদ্রের কাছে থেকে।সে তোমার জীবনে ঝড়ের মতো এসে তোমার জীবন কেমন এলোমেলো করে দিলো।”
–আভা ঝটকা মেড়ে নিজেকে আরিশের কাছে থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে।
–“আমার এতো কিছু বুঝতে হবেনা আরিশ ভাইয়া।তুমি তোমার মতো থাকো।আমার জীবনে কোন অধিকার দেখাতে আসবেনা তুমি।আমাকে নিয়ে তোমার আদ্যিখেতা বন্ধ করো।কেন তুমি আমার পিছনে দেশে চলে এসেছো কেন তুমি এসব মিথ্যা ড্রামা করো আমার সাথে?”
–“তুমি আমাদের কাছের মানুষ।তোমার ভালো খারাপ দেখা আমাদের দ্বায়িত্ব।রুদ্রের ভালোবাসায় এতো বিভোর হয়ে গেছো তুমি।যে কাছের এবং দূরের মানুষের মধ্যে ব্যবধান করতে পারছো না।”
–“আমাকে জ্ঞান দেয়া বন্ধ করো।আমার এবং রুদ্রের ভালোবাসা নিয়ে কৈফত দিতে বাধ্য না আমি।যে নিজের ভালোবাসা সামলে রাখতে পারেনা সে অন্যের ভালোবাসা নিয়ে জ্ঞান দিতে এসেছে।আসলে তোমার সহ্য হয় না আভা রুদ্র কে এতো ভালোবাসে।”
–আভা ছুটে নিজের রুমে চলে যায়।আরিশ দাঁড়িয়ে আছে তার কানে আভার বলা শেষ কথা গুলো বাড়ে বাড়ে বেজে যাচ্ছে।তখন সে ছলছল নয়নে ফিসফিস করে বলে।
–“ভালোবাসা সত্যি বড় অদ্ভুত।যাকে ভালোবেসে যার ভাবনার মাঝখানে তুমি বিভোর হবে সে বিভোর হবে অন্যতে।তারা খব ভাগ্যবতী যারা ভালোবাসার মানুষ কে সারাজীবনের জন্য আগলে রাখতে পারে।”
–আরিশ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে দ্রুত গেস্ট রুমের দিকে যাচ্ছে।তখন করিডোর দিয়ে যাবার সময় আভার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে যায়।সে জানালা দিয়ে আভার রুমের মধ্যে উঁকি দিতে।তার বুকের ভেতর কেঁপে উঠে।আভা বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে নীরবে চোখের অশ্রু ফেলছে।আরিশ তার এমন অবস্থা দেখে।দরজায় দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের অশ্রু ফেলে ফিসফিস করে বলে।
–“আরিশ নিজের ভালোবাসা কে নিজের কাছে আটকে রাখতে পারেনি।কিন্তু সে চেষ্টা করবে আভা তোমার ভালোবাসা কে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবার জন্য।”
–আরিশ নিজের চোখের অশ্রু মুছে।বাড়িতে থেকে বেড়িয়ে যায়।যাবার সময় বলে যায়।
–“যে কোন মুল্যে আমার রুদ্র কে লাগবে।রুদ্র অপেক্ষা করো।আরিশ আসছে।”
___________________________
–কিছুক্ষণ পড়ে।অধরা ডুকরে কেঁদে উঠে বলে।
–“তুমি নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দিলে তাহলে রুদ্র ভাইয়া।তোমার ভালোবাসা মিথ্যা ছিলো।অন্যদিকে আভা কে ভালোবেসে।এখানে আমার সাথে ছিঃ।তোমাকে দেখে আমার ভালোবাসা থেকে বিশ্বাস চলে গেলো।আমার ভাবনা গুলো সত্যি ছিলো।তুমি আসলে খুব খারাপ এবং জঘন্য মানুষ।অধরা তোমাকে ঘেন্না করে।খুব বেশি ঘেন্না করে।”
–তখন রুদ্র অধরা কে ছেড়ে দিতে।অধরা বিছানার মধ্যে উবু হয়ে শুয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।রুদ্র উঠে সোজা ওয়াশ রুমে চলে গিয়ে সাজোরে দরাজা লাগিয়ে দিয়ে।ডুকরে কেঁদে উঠে।
–কিছুক্ষণ পড়ে রুদ্র হট শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এসে।ভেজা টাওয়াল অধরার মুখে ছুড়ে মেরে।মুখে বাকা হাসির রেখে টেনে বলে।
–“অধরা আমাদের সম্পর্ক তোমার স্বীকার করতে হবেনা।আজকে থেকে তুমি এবং আমি পরিপূর্ণ স্বামী স্ত্রী হয়ে গেলাম।এখন আহান কে তোমার জীবন থেকে মুছে ফেলে।আমাদের ফ্যামিলি প্লেনিং করা শুরু করে ফেলো কেমন সোনাবৌ।”
–অধরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।টাওয়ালটা ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে।রুদ্রের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া তোমার মতো অমানুষ কে অধরা যেখানে তার স্বামী হিসেবে স্বীকার করেনা।সেখানে ফ্যামিলি প্ল্যানিং করবে ভাবলে কি করে?”
–রুদ্র মুচকি হেসে অধরার কপালে আলতো করে চুম্মো খেয়ে বলে।
–“সময় হলে সবকিছু হয়ে যাবে।তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবেনা বৌ।”
–অধরা রেগেমেগে আগুন হয়ে।সোজা ওয়াশ রুমে চলে গিয়ে সাজোরে দরাজা লাগিয়ে দিতে।রুদ্র অট্টহাসি দিয়ে রেডি হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
–অধরা ঝর্নার নিচে বসে,ঝর্না ছেড়ে দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে বলে।
–“কেন রুদ্র কেন?তুমি আমার সাথে এমন কেন করলে।সবকিছু মুহূর্তে কেন শেষ করে দিলে।তুমি খুব খারাপ এসব করে তুমি আমার শরীর স্পর্শ করতে পেরেছো।কিন্তু আমার মন কখনো স্পর্শ করতে পারবে না।”
–কিছুক্ষণ পড়ে অধরা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এসে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসতে।
#চলবে…
#তোমাতে_বিভোর
#Season_2
#পর্ব_৯
#Sapna_Farin
–তার চোখের সামনে ভেসে উঠে রুদ্রের সাথে কাটানো কিছুক্ষণ আগের ঘনিষ্ঠ মূহুর্ত গুলো।তখন সে দু’হাতে নিজের মুখ লুকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে।আজকে তার মন খুলে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।আজকে তার মনের মধ্যে আকাশ সমান কষ্ট।যে কষ্ট গুলো তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।নিজের মধ্যে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে সে।মনের আঘাত গুলো সব থেকে বড় আঘাত।যে আঘাত গুলো ইচ্ছে করলে মুছে ফেলা যায়না।তেমন আজকে রুদ্র তার মনের মধ্যে যে দাগ লাগিয়ে দিলো।অধরা শতো চেষ্টা করে সে দাগ গুলো মুছে ফেলতে পারবেনা।আজকে নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছে তার।দিব্যি ভালো ছিলো নিজের জীবনে।কিন্তু ঝড়ের মতো রুদ্র তার জীবনে এসে তার জীবন উল্টো পাল্টা করে দিলো।মূহুর্তের মাঝখানে সবকিছু শেষ করে দিলো রুদ্র।
–এভাবে তার জীবন অন্য কোনো মোড়ে এসে দাঁড়িয়ে যাবে।এসব অধরার ভাবনার বাহিরে ছিলো।সে এসব কিছু সহ্য করতে পারছেনা।মূহুর্তের মাঝখানে সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।সে নিজেকে সামলে নিয়ে ছলছল নয়নে তার প্রতিবিম্বর দিকে তাকিয়ে আছে।মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেড় করতে পারছেনা।নীরবে চোখের অশ্রু ফেলছে।তার এমন অবস্থা দেখে তার প্রতিবিম্ব তাকে দেখে অট্টহাসি দিয়ে বলে।
–“অধরা অন্যকে পোড়াতে খুব ভালো লাগে!যখন নিজে পুড়ছো তখন কেমন লাগে?তোমার কাছে সামান্য মিথ্যা কিন্তু রুদ্রের কাছে অনেক কিছু।তোমার সামান্য মিথ্যা রুদ্রের পুরো জীবন উল্টো পাল্টা করে দিলো।সে কথা ভুলে গিয়েছিলে।এখন বুঝো কেমন লাগে।তুমি যে কষ্ট গুলো সামান্য সময় ধরে সহ্য করতে পারছোনা।সে কষ্ট গুলো রুদ্র দু’বছর ধরে সহ্য করেছে।তাহলে তার কেমন লাগছে?”
–অধরা নিজের প্রতিবিম্বর দিকে কিছু ছুড়ে মেরে।রক্ত বর্ন চোখে চিৎকার করে বলে।
–“শেষ পর্যন্ত তুমি রুদ্রের দিকে কথা বলছো ছিঃ!আমার ভাবতে ঘেন্না লাগছে তুমি রুদ্রের দিকে।তুমি সবকিছু ভুলে যাচ্ছো ঐ অমানুষ ঐ রুদ্র আমার জীবন নষ্ট করে দিলো।সেখানে তুমি তার হয়ে কথা বলো।তোমার সাহস হয় কি করো?তুমি আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যাবে এক্ষুনি।”
–ভেঙে যাওয়া আয়নার মধ্যে দিয়ে তার প্রতিবিম্ব মুচকি হেসে বলে।
–“আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো অধরা।তুমি ভুলে যাচ্ছো? যাকে তুমি তাড়িয়ে দিচ্ছো সে তোমার মনের মধ্যে থাকে।তোমার ভুল গুলো দেখিয়ে দেয়া আমার দ্বায়িত্ব।এখনো সময় আছে অধরা নিজের ভুল গুলো শুধরে নিতে পারো।সময় গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।তুমি ভুলে যাচ্ছো ভুল এবং প্রতিশোধ মানুষের জীবন কে ধ্বংস করে দেয়।যে ভুল এবং প্রতিশোধের আগুনে নিজে জ্বলে পুড়ে শেষ হচ্ছো।অন্যদিকে
রুদ্র সে ভুল এবং প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে পুড়ে শেষ হচ্ছে।”
–অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়।সে এখন নিজের প্রতিবিম্বর দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।নিজের প্রতি নিজের ঘেন্না হচ্ছে তার।দু’বছর আগের কোন মিথ্যা কথা তার পুরো জীবন উল্টো পাল্টা করে দিলো।তার নিজের ভুল গুলোর জন্য নিজের মধ্যে অনুতপ্ত হচ্ছে সে।অধরা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।তখন দড়জায় খট করে শব্দ করে রুদ্র রুমে আসে।রুদ্র কে দেখে অধরা নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের অশ্রু আড়াল করে।নিজেকে গোছাতে ব্যস্ত হয়ে যায়।তখন রুদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আয়নার মধ্যে দিয়ে অধরার দিকে তাকাতে। অধরা আয়নার মধ্যে ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে।রুদ্র অধরার চোখমুখ এবং ভাঙা আয়না দেখে সবকিছু বুঝতে পাড়ে।অধরার এমন অবস্থা দেখে তার বুকের ভেতর কেঁপে উঠে।তখন সে নিজের অজান্তে গুটিগুটি পায়ে অধরার দিকে যেতে।অধরা উঠে চলে যাচ্ছিলো।তখন রুদ্র হেঁচকা টানে তাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে।তার কোমড় আঁকড়ে ধরে।তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে।
–“খুব কষ্ট হচ্ছে অধরা তোমার?তুমি খুব ঘেন্না করো রুদ্র কে!তারজন্য সবকিছু মেনে নিতে পারছোনা।কিন্তু বাস্তবতা কে তোমার মেনে নিতে হবে।এখানে আমার এবং তোমার কি করার আছে বলো।তুমি সবকিছুর জন্য দ্বায়ী।এখানে আমার কোন দোষ দিতে পারবে না।”
–অধরা মুখতুলে রুদ্রের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে বলে।
–“এখন ছাড়ো আমাকে রুদ্র।তোমার সব ইচ্ছে এবং সব প্রতিশোধ নেয়া হয়ে গেছে।এখন কিসের জন্য পড়ে আছো এখানে।তুমি আমার জীবনে দাগ লাগিয়ে দিয়ে।এখন কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে এসেছো।”
–রুদ্র অধরা কে হেঁচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে।রক্ত বর্ন চোখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–“তাহলে বুঝতে পারছো?তুমি যখন তোমার মিথ্যা কথা দিয়ে,আমার জীবনে দাগ লাগিয়ে দিয়েছিলে। তখন আমার কি অবস্থা হয়েছিল।তারপর তুমি ভাবলে কি করে রুদ্র তোমাকে এতো অল্পতে ছেড়ে দিবে।তুমি আমাকে প্রতিটি মুহূর্ত দুমড়েমুচড়ে শেষ করে দিয়ে।এতো সহজে আমার কাছে থেকে মুক্তি পাবেনা।”
–অধরা চোয়াল শক্ত করে ফিসফিস করে বলে।
–“রুদ্রের মতো অমানুষের কাছে থেকে অধরা কি আশা করবে?তুমি তোমার আসল রূপ এবং চেহারা খুব ভালো করে দেখিয়ে দিলে।তোমার কাছে থেকে আমার মুক্তি পেতে হবেনা রুদ্র।কিন্তু তুমি কখনো অধরার কাছে থেকে মুক্তি পাবেনা মনে রেখো হিসাবে বরাবর।”
–রুদ্র মুচকি হেসে চোখ মেরে বলে।
–“তারজন্য তোমাকে নিজের যোগ্য মনে হয় অধরা।তোমার সাথে আমার খুব মিল।দুমড়েমুচড়ে শেষ হয়ে যাবে কিন্তু নিজেকে কখনো লুজার মনে করবেনা।”
–অধরা রেগেমেগে আগুন হয়ে বলে।
–“তোমার আদিখ্যেতা শেষ হয়েছে ছাড়ো আমাকে?”
–রুদ্র নিজের মনের মধ্যে বলে।
–“আমার আদিখ্যেতার দেখছো কি?আমাকে পোড়াতে খুব ভালো লাগে এখন নিজে পুড়ো কেমন।”
–রুদ্রের মুখে বাকা হাসির রেখা ফুটে উঠে।সে নীরবতা কাটিয়ে বলে।
–“এতো তাড়া কিসের তোমার হ্যাঁ,এখানে বসো। নিজের কি অবস্থা করে রেখেছো।”
–রুদ্র অধরা কে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিতে।অধরা হকচকিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।রুদ্র অধরার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তাকে টেনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিয়ে বলে।
–“তুমি সব সময় এমন কেন করো?এখনে বসো ভালো মেয়ের মতো।কোন কথা বলবে না!”
–অধরা রুদ্রের ব্যবহার দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়।সে বুঝতে পারছেনা রুদ্র কি চাচ্ছে।রুদ্র অধরার ভেজা এবং খোলা চুল গুলো হেয়ার ড্রাইভ দিয়ে শুকিয়ে।চুল গুলো আঁচড়িয়ে দিচ্ছে।অধরা আয়নার মধ্যে দিয়ে ফেলফেল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।রুদ্র সামনে তাকাতে সে নিজের চোখ নামিয়ে নিচ্ছে।মুহূর্তের মাঝখানে তারা সবকিছু ভুলে নিজেদের মধ্যে বিভোর হয়ে যাচ্ছে।রুদ্রের মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে দুষ্ট মিষ্টি হাসির রেখা এবং অধরা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।তখন রুদ্র অধরার কাধের ডান পাশে তার খোলা চুল গুলো রেখে।তার নগ্ন পিঠে আলতো করে চুম্মো খেতে।অধরার মনে শীতল অনুভূতি ভয়ে যায়।সে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে
নিজেকে সামলে নিয়ে।চোখ বন্ধ করে আছে।রুদ্র তখন তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে।তার খোলা চুলে মুখ ডুবিয়ে।তার কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে ফিসফিস করে।
–“তোমার খোলা চুলের ঘ্রাণে রুদ্র তোমাতে বিভোর হয়ে যায় শ্যাম কন্যা।তবে আমাদের মাঝখানে কেন এতো দূরত্ব?তুমি কি কখনো বুঝতে পারবে না আমার মনের কথা।”
–অধরা রুদ্রের হাতদুটো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফিসফিস করে বলে।
–“অধরা যে তোমাতে বিভোর রুদ্র।তুমি কি বুঝতে পারোনা তার মনের কথা।”
–সবকিছু ভুলে তারা নিজেদের মধ্যে বিভোর হচ্ছিলো।এমন সময় রুদ্রের ফোন বেজে উঠলো।তখন ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে এসে।অধরা কে ছেড়ে দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে।
–“নিজের লিমিটের মধ্যে থাকবে অধরা।আমার সুযোগ নেবার চেষ্টা করবেনা।খুব খারাপ হবে কিন্তু?”
–অধরা বোকার মতো তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে।
–“এখন সব দোষ আমার?তুমি নিজের ইচ্ছায় আমার কাছে আসবে এবং আমাকে কথা শুনাবে।তুমি ভুলে যাচ্ছো সবকিছু?কিছুক্ষণ আগে আমার সাথে ব্যক্তিগত ভাবে কাটানো মুহূর্ত গুলো।”
–“অধরা?”
–“রুদ্র চিৎকার করবে না?শুনতে খারাপ লাগে!তুমি আমার সাথে ব্যক্তিগত মূহুর্ত কাটাতে পারবে।সেখানে অধরা বললে দোষ হবে।আচ্ছা আভা জানে এসব কিছু।আভার সাথে দেখা হলে সবকিছু বলো কেমন।”
–রুদ্র স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অধরা নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে ঝাপটা মেরে রুদ্রের মুখের মধ্যে।মুচকি হাসি দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় এবং যাবার আগে বলে যায়।
–“দেখো এখন কেমন লাগে?আমার কাটা গায়ে তুমি নুনের ছিটা দিবে।তোমার কাটা গায়ে অধরা ছিটে দিতে পারবে না।”
–রুদ্র ধপাস করে বিছানার মধ্যে বসে পড়ে।তার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।সে নিজের মাথার চুল গুলো খাঁমছে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।এখানে অধরা অন্যদিকে আভা?এখানে প্রতিশোধ এবং দ্বায়িত্ব অন্যদিকে ভালোবাসা।রুদ্র সবকিছুর মাঝখানে ডুবে যাচ্ছে।তখন তার ফোন দ্বিতীয় বারের মতো ভেজে উঠে।সে চোখের অশ্রু মুছে।ফোনের স্ক্রিনে তাকাতে দেখে অচেনা কোন নম্বার।তখন সে ফোন রিসিভ করতে কোন অচেনা পুরুষ কন্ঠ বলে।
–“হ্যালো রুদ্র।”
#চলবে…