তোমাতে বিভোর ২ পর্ব-০৬

0
926

#তোমাতে_বিভোর
#Season_2
#পর্ব_৬
#Sapna_Farin

–সে চিরচেনা পুরানো মানুষটি আভার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।আভা স্তব্ধ হয়ে তার দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে এবং তার চোখ দিয়ে শুধু অনবরত অশ্রু পড়ছে।মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেড় করতে পারছেনা।আভার এমন অবস্থা দেখে তার চিরচেনা মানুষটি রক্ত বর্ন চোখে আভাকে ঝাকিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে।

–“আভা কি হয়েছে এখানে সবকিছু আমাকে খুলে বলো?কারো সাহস কি করে হয় তোমরা ঐ চোখে অশ্রু ঝোড়ানোর জন্য।আরিশ সবকিছু শেষ করে ফেলবে কিন্তু কখনো তোমার ঐ চোখে অশ্রু দেখতে পারবে না।তুমি কেন কেঁদে যাচ্ছো বলো আমাকে?”

–আভা ডুকরে কেঁদে উঠে আরিশ কে আঁকড়ে ধরে বলে।

–“আরিশ ভাইয়া…।”

–“হ্যাঁ বলো আভা কি হয়েছে?

–আভা নিজেকে সামলে নিয়ে রুদ্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার দিকে ইশারা করে বলে।

–“রুদ্র সবকিছু শেষ করে দিলো আরিশ ভাইয়া।সবকিছু মিথ্যা করে দিলো।দু’বছর আগের ঘটনা পুনরায় ঘটালো।শুধু ব্যাবধান ছিলো তখন সে বলেছিল সবকিছু মিথ্যা।কিন্তু আজকে সবকিছু স্বীকার করে নিয়েছে।আমার ভালোবাসা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে রুদ্র দিব্যি ভালো আছে।বড্ড বোকা আভা যে এখনো রুদ্রের অপেক্ষায় বসে ছিলো।”

–আভার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ছে।আরিশ আভার চোখের অশ্রু মুছে দিতে।আভা ডুকরে কেঁদে উঠে দ্বিতীয় বার আরিশ কে আঁকড়ে ধরে।আরিশ আভার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে।

–“আভা সবকিছু ঠিক করে দিবে আরিশ বিশ্বাস করো।তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না।এমন করোনা দয়া করে।তোমার জন্য আমার বুকের ভেতর কেমন এলোমেলো ঝড় শুরু হয়েছে।তুমি বুঝতে পারবে না।এভাবে কেন চলে আসলে তুমি।আম্মুর কাছে থেকে সবকিছু শুনে তোমার পড়ের ফ্ল্যাটে চলে আসলাম।এখানে এসে তোমার এমন অবস্থা দেখার জন্য আরিশ প্রস্তুত ছিলো না!
তুমি এভাবে বিশ্বাসঘাতক এবং প্রতারকের জন্য কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো।দেখো তোমার প্রাক্তন প্রেমিক রুদ্র দিব্যি ভালো আছে।তারজন্য তুমি সবকিছু ছেড়ে মুহূর্তের দেশে চলে এসেছো।সে তোমাকে ডির্সাব করেনা।”

–আভা নিজেকে সামলে নিয়ে আরিশ কে বলে।

–“আরিশ ভাইয়া দয়া করে রুদ্র কে নিয়ে কিছু বলোনা।রুদ্র কে আভা খুব বেশি ভালোবাসে।তাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারেনা।আমার পুরো অস্তিত্বে রুদ্র মিশে আছে।ভুল আমার ছিলো নিজের ভালোবাসা কে নিজের কাছে আটকে রাখতে পারলাম না।আমার ভুল ছিলো,রুদ্র কে বিশ্বাস করলে।আজকে আমরা সাথে থাকতাম।চলো এখান থেকে তাড়াতাড়ি।মুহূর্তের জন্য এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”

–আভা আরিশ কে টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছিলো।তখন আরিশ থেমে গিয়ে।নিজের হাত আভার কাছে থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে।রুদ্রের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলে।

–“রুদ্র তুমি কাজটা ঠিক করলে না!তোমার সাথে খুব তাড়াতাড়ি আরিশের দেখা হবে।তুমি ভুল করে আমার কলিজায় আঘাত করেছো।তার হিসাব তোমাকে দিতে হবে।কথা গুলো মনে রেখো।”

–আরিশ রুদ্রের সামনে দিয়ে আভার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছিলো।রুদ্র ফেলফেল চোখে আভার দিকে তাকিয়ে ছিলো।আভা চলে যাবার সময় একবার পিছু ফিরে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে চলে যাচ্ছিলো।তখন আহানের আগমন ঘটে।সে বোকার মতো দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখলো।কিন্তু কিছু বুঝতে পারলো না।আরিশ এবং আভা রুদ্রের বাড়িতে থেকে চলে গেলো।তখন আহানের আগমন হলো।তাকে দেখে রুশা বলে উঠে।

–“ব্যাস হয়ে গেলো।পুরো ড্রামাটিক সিনেমায় শুধু তার আসার বাকি ছিল।আজকে এখন তার আসতে হলো।”

–তখন তিশা বলে উঠে।

–“রুশা তুমি ঠিক বলছো।তোমার ভাইয়া রুদ্র হলো ধামাকা,সে আসার পড়ে থেকে শুধু ধামাকা হয়ে যাচ্ছে।”

–তারা সাথে হেসে উঠতে।তখন অভ্র জেরে কেশে বলে।

–“তিশা আজকাল তুমি বড্ড বেশি রুদ্র কে নিয়ে ভেবে যাচ্ছো।তাকে নিয়ে তোমার এতো ভাবতে হবেনা।অলরেডি তাকে নিয়ে অন্যজন লড়ে গেলো।তারপর আমার বোন তার স্ত্রী।কি দেখে যে রুদ্র কে বিয়ে করলো।”

–তিশা আড়চোখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে।

–“ভালো করেছে অধরা তো আমার মতো এমন বোকামি করেনি।”

–“কি তুমি আমাকে বিয়ে করে বোকামি করেছো।”

–“অভ্র তুমি কিন্তু ইদানিং আমার সাথে বেশি ঝগড়া করছো।বড় আব্বুর কাছে নালিশ দিবো।রুদ্রের মতো তোমার অবস্থা করবে।”

–“না ঠিক আছে।”

–অভ্র নীরব হয়ে যায়।আহান সবার অবস্থা দেখে নীরবতা কাটিয়ে বলে উঠে।

–“অসময় মনে হয় চলে আসলাম।আজকে তাহলে যায় অন্য সময় আসবো।”

–তখন রায়মান সাহেব গম্ভীরমুখে বলে উঠে।

–“অসময় কেন আসবে।আমরা তোমার ফ্যামিলির মতো।এখানে আসতে কি সময় দেখে আসতে হবে।বসো আহান।”

–আহান সোফায় বসে বলে।

–“আসলে কালকে এতো কিছু হয়ে গেলো।তারজন্য দেখতে আসা সবকিছু ঠিক আছেতো।অধরা তুমি ঠিক আছো।”

–অধরা হাসিমুখে কিছু বলতে যাবে।তখন রুদ্র বলে উঠে।

–“হ্যাঁ অধরা ঠিক আছে এবং আমার পুরো ফ্যামিলি ঠিক আছে।তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবেনা।রুদ্র এসে পড়েছে সবকিছু ঠিক করে ফেলবে।”

–তখন মিসেস রিমিঝিম আড়চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে।

–“কি হচ্ছে রুদ্র মেহমানের সাথে এভাবে কেন কথা বলছো?”

–“আম্মু আহান আমাদের মেহমান না।সে আমাদের ফ্যামিলির লোক কি বলো আহান।”

–“হ্যাঁ আন্টি রুদ্র ঠিক বলেছে।”

–“আচ্ছা আহান আসো নাস্তা করবে সবার সাথে।”

–“কেন আন্টি কি হয়েছিল?আপনারা এখন নাস্তা করবেন?”

–মিসেস রিমিঝিম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে।

–“পুরনো কথা আহান তুমি চলো।”

–“হুম আন্টি।”

–তখন তিশা বলে উঠে।

–“টেবিলে নাস্তা রেডি তাহলে সকলে আসেন।”

–সকলে নাস্তা করতে চলে যায়।সকলের নীরবতা, সকলে খাচ্ছে কিন্তু রুদ্রের মুখ দিয়ে খাবার নামছে না।রুদ্রের বুকের ভেতর অজানা ঝড় শুরু হয়েছে।যে ঝড়ের আঘাত গুলো রুদ্র কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরছে।রুদ্র না পারছে কিছু করতে,না পারছে সবকিছু সহ্য করতে।তখন নিজের এমন অবস্থার জন্য অধরা কে দ্বায়ী মনে হচ্ছে তার।তখন সে আড়চোখে অধরার দিকে তাকাতে দেখে সে মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে।তার এমন অবস্থা দেখে রুদ্রের ইচ্ছে করছে,সবার সামনে অধরার আসল চেহারার কথা তুলে ধরতে।কিন্তু আজকে তার কথা কে বিশ্বাস করবে।আজকে সে অপরাধী সবার কাছে।এসব ভেবে খাবার রেখে চলে যায় রুদ্র।তখন অধরা চলে যাচ্ছিলো কিন্তু রায়মান সাহেব তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে।

–“কারো জন্য এতো আদ্যিক্ষেতা করতে হবেনা অধরা।তুমি খাবার শেষ করে যাবে।”

–“আচ্ছা বড় আব্বু।”

–সবার নাস্তা শেষে।তারপর যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।তখন অধরা চলে যাচ্ছিলো নিজের রুমের দিকে।তখন আহান তাকে পিছু ডেকে বলে।

–“অধরা তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।”

–অধরা মুচকি হেসে বলে।

–“হ্যাঁ বলো আহান ভাইয়া কি বলবে?”

–“আসলে অধরা কিভাবে যে বলবো!”

–অধরা আহানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে।

–“কি হয়েছে আহান ভাইয়া!তোমাকে এতো চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন?”

–“অধরা তুমি ঠিক আছো?গতকাল রাতে তোমাকে নিয়ে অনেক বাজে স্বপ্ন দেখেছি।তারপর থেকে মনের মধ্যে তোমাকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন গুলো নাড়া দিচ্ছে।”

–“কেমন প্রশ্ন?”

–“তুমি রুদ্রের সাথে ভালো আছো?”

–অধরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে।

–“কেন আমার ভালো খারাপ নিয়ে তোমার কি আসে যায় আহান ভাইয়া।তুমি সবার মতো।কালকে যখন জানলে রুদ্রের সাথে আমার বিয়ের কথা।তখন মুহূর্তের মাঝখানে আমাকে ছেড়ে চলে গেলে?আমার মতো বিবাহিত মেয়ের জন্য তোমার এতো টান কিসের?”

–“অধরা।”

–“আহান ভাইয়া অনেক দেরি হয়ে গেছে।অধরা এখন বিবাহিত।সে এখন রুদ্রের স্ত্রী।”

–অধরা নিজের চোখের অশ্রু আড়াল করে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে।আহান ফেলফেল করে অধরার চলে যাবার দিকে তাকিয়ে আছে।তখন করিডোরে দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে দুটি চোখ তাদেরকে দেখে দেয়ালে সাজারো গুসি মেরে নিজের রুমে চলে যায়।আহান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বেড়িয়ে পড়ে।
___________________

–অধরা রুমে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গান করছে।তখন রুদ্র রুমে এসে দরাজা লক করে। অধরা কে হেচকা টানে রুমের মধ্যে নিয়ে এসে।তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজের ফোন অধরার সামনে ধরে চিৎকার করে বলে।

–“এসব কি অধরা?answer me,what is this!কি হলো বলো।কি শুরু করেছো তুমি?তুমি অনেক বেশি বাড়াবাড়ি করছো।”

–অধরা তাচ্ছিল্যের হাসির রেখা টেনে বলে।

–“বাড়াবাড়ির দেখছো কি তুমি রুদ্র।তুমি আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছো।তারপর এতো অল্পতে তোমাকে ছেড়ে দিবো ভাবলে কি করে।তোমার ফোনের স্ক্রিনে মেসেজ আসলো।তুমি ব্যস্ত ছিলে উত্তর অধরা দিয়ে দিলো।”

–রুদ্র রেগেমেগে আগুন হয়ে।অধরার হাত মোচড় দিয়ে ধরতে।অধরে বলে।

–“তোমার মতো অমানুষ সাইকো লোক শুধু এসব করতে পারবে।তুমি আমার শরীরে আঘাত করবে।অধরা তোমার মনে আঘাত করবে।হিসাব বরাবর হয়ে যাবে।তোমার মতো রুদ্র কে অধরা ঘেন্না করে।”

–রুদ্র অধরা কে ছেড়ে দিয়ে ধাক্কা মেরে বিছানার মধ্যে ফেলে দিয়ে বলে।

–“অধরা তুমি অনেক বাড়াবাড়ি করছো?তারপর আহানের সাথে কথা বলার সাহস কি করে হয় তোমার!তুমি আমাকে ঘেন্না করো।রুদ্র তোমার সাথে নিজেকে এমন ভাবে মিশিয়ে দিবে।তোমার সারাজীবন আমার চিহ্ন বয়ে বেড়াতে হবে।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে