#তোমাতে_বিভোর
#Season_2
#পর্ব_৭
#Sapna_Farin
অধরা রুদ্রের ধাক্কার টাল সামলাতে না পেড়ে বিছানার মধ্যে উবু হয়ে পড়ে যায়।তখন সে রেগেমেগে আগুন হয়ে মুখ তুলে রুদ্রের দিকে তাকাতে দেখে।রুদ্র নিজের টি শার্ট খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে।রক্ত বর্ন চোখে গুটিগুটি পায়ে তার দিকে যাচ্ছে।তার মুখে স্পর্শ ফুটে উঠেছে বাকা হাসির রেখা এবং তার ঐ চোখে ফুটে উঠেছে অধরার জন্য রাগ ক্ষোভ গুলো।যে রাগ ক্ষোভ গুলো মূহুর্তের মাঝে দুমড়েমুচড়ে অধরা কে শেষ করে দিতে চাচ্ছে। আজকে তারমধ্য কোন অমানুষ এসে ভর করছে। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে নিজের অস্বস্তি থেকে হারিয়ে গেছে সে।কি করছে কেন করছে তার বোধগম্য হচ্ছে না এখন।”
–অধরা রুদ্রের অবস্থা দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে বিছানায় উঠে বসে।রুদ্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে।
–“তোমার মতো কাপুরষ এসব ছাড়া কি করতে পারে রুদ্র ভাইয়া?তুমি নিজের স্বামীত্ব ফলালে।অধরা তোমাকে স্বামী হিসেবে স্বীকার করে নিবে ভাবলে কি করে?তুমি ইচ্ছে করলে অধরার শরীর ছুতে পারবে কিন্তু অধরার মন কখনো ছুতে পারবে না।তোমাকে অধরা ঘেন্না করে এবং সারাজীবন ঘেন্না করে যাবে।”
–রুদ্র তাচ্ছিল্যের হাসির রেখা টেনে বলে।
–“তোমার ড্রামাটিক সিনেমা দেখে রুদ্রের মন যে গলবে না অধরা।আজকে তোমার জন্য আমার এমন অবস্থা।তারপর কোন মুখে তুমি এসব কথা বলো।তোমার লজ্জা করেনা সামান্য?আমাদের সম্পর্ক তোমার স্বীকার করতে হবেনা।তোমার কোন কথায় আমাদের সম্পর্ক মিথ্যা হয়ে যাবেনা।রুদ্রের জীবনে তোমার জায়গা কি?তুমি খুব ভালো করে জানো।সো এসব করে কোন লাভ হবেনা।তুমি আমার থেকে মুক্তি পাবেনা কখনো।তুমি যেভাবে আমার জীবনে শেষ করে দিয়েছো।রুদ্র সেভাবে খুব যত্ন করে তোমার জীবন শেষ করে দিবে।তারপর হিসাব বরাবর হবে কেমন সোনাবৌ।তুমি অপেক্ষা করো এবং দেখো।তুমি ভুল করে নিজের জীবনে রুদ্রের আগমন ঘটিয়েছো।এখন এসব মিথ্যা কাহিনি করে কোন লাভ হবেনা?”
–অধরা রেগেমেগে আগুন হয়ে বলে।
–“তোমার ঐ মুখে আমাকে সোনাবৌ বলবে না রুদ্র ভাইয়া।নিজের লিমিটের মধ্যে থাকবে।আমার জন্য তোমার এমন আদিখ্যেতা দেখলে।আমার পুরো শরীর জ্বলে যায়।”
–“আচ্ছা সোনাবৌ খুব খারাপ লাগছে আমার আদিখ্যেতা।তুমি করতে পারবে কিন্তু আমি করলে তোমার সহ্য হবেনা।কেন গো আমার মিষ্টি বৌ?তুমি কি আমার কোন ব্যবহার রাগ করে আছো বৌ।”
–“রুদ্র ভাইয়া বললাম না আমাকে বৌ বলবে না?তুমি কথা বুঝতে পারছো না।নিজেকে কি মনে করো হ্যাঁ?আমার জীবনে তুমি এসে আমার পুরো জীবন উল্টো পাল্টা করে দিয়েছো।”
–“তুমি শুরু করেছো আগে সবকিছু।এখানে আমার কি করার আছে সুইটহার্ট বৌ।তোমাকে এখন সামান্য সহ্য করতে হবে।তুমি রুদ্র কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিবে।রুদ্র কি বসে থাকবে এখানে।কিছু সময় আগে সবার সামনে আমার মিথ্যা বৌয়ের যে ড্রামা করলে।তখন আমার কেমন লাগছিলো।ইচ্ছে করছিল তোমার মুখোশের আড়ালের চেহারা সবার সামনে নিয়ে আসতে।কিন্তু কি করবো বলো সোনাবৌ?সবকিছু যে আমার বিপরীতে ছিলো কে আমার কথা বিশ্বাস করবে।তুমি বিশ্বাস করতে আমার কথা।”
–অধরা তাচ্ছিল্যের হাসির রেখা টেনে বলে।
–“অধরা তোমাকে সহ্য করতে পারেনা রুদ্র ভাইয়া।তুমি কেন বুঝতে পারছো না।তুমি আমার জীবনে কোন কালো অধ্যায়ের মতো।যে অধ্যায় আমার পুরো জীবন উল্টো পাল্টা করে দিয়েছে।তুমি দু’বছর আগে অধরার কে শেষ করে দিয়েছিলে।ভুলে যাচ্ছো সবকিছু।আজকের অধরা এবং সে সময়ের অধরার মাঝখানে অনেক ব্যাবধান।তুমি কি ভেবেছিলে শুধু তুমি পারো কারো জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে?তুমি আমার জীবনের সীধান্ত নেবার কে হ্যাঁ।”
–রুদ্র অধরার দিকে ঝুঁকে অধরার মুখোমুখি হয়ে।তার চোয়াল শক্ত করে ধরে বলে।
–“তুমি এখনো বুঝতে পারছোনা রুদ্র কে তোমার হ্যাঁ?”
–অধরা ফেলফেল চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–“আসলে কে তুমি হ্যাঁ?আমার মাঝেমধ্যে জানতে খুব ইচ্ছে করে।রুদ্র আসলে কে আমার জীবনে!যখন ইচ্ছে করবে আমার জীবনে হিরোর মতো এন্ট্রি নিয়ে।আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে পুরো ভিলেন হয়ে যাবে।তোমার উদ্দেশ্য কি।আমার জীবন নিয়ে শুধু ছিনিমিনি খেলা?”
–রুদ্র দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে।
–“তোমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কোন ইচ্ছে আমার ছিলো না।তুমি ভুল করতে যাচ্ছিলে সে ভুল ঠিক করে দিয়ে।তোমার জীবনে ভিলেন হয়ে গেলো রুদ্র।তারজন্য তুমি আমার জীবন এলোমেলো করে দিলে!ইদানিং তুমি খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছো।তুমি কি ভেবেছিলে আমার জীবন নষ্ট করে।এখন পর পুরুষের সাথে নষ্টামি করে বেড়াবে?”
–অধরা ঝটকা মেড়ে রুদ্রের হাত সড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া।”
–রুদ্র মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে।অধরা ঠোঁটের উপরে আঙুল রেখে ফিসফিস করে বলে।
–“হুস।কোন কথা বলবে না তুমি।আজকে রুদ্র বলবে তুমি শুনবে।তোমার জন্য আজকে আমার এমন অবস্থা।তোমার জন্য আমার জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে।কি দোষ ছিলো আমার?কেন এমন করলে তুমি আমার সাথে।এখন রুদ্রের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।অনেক কিছু সহ্য করেছে রুদ্র তোমার জন্য।তার হিসাব তোমাকে দিতে হবে অধরা।”
–অধরা ফেলফেল চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।তার চোখ বেয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।রুদ্র তার এমন অবস্থা তার কাছে বসে অট্টহাসি দিয়ে বলে।
–“তোমার ঐ ছলনা রুদ্রের মন গলাতে পারবে না।তোমাকে বিশ্বাস করা আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে।”
–অধরা নিজের চোখের অশ্রু মুছে।তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে।রুদ্রের মুখোমুখি হয়ে বলে।
–“হ্যাঁ তুমি ঠিক রুদ্র।আমর জন্য তোমার এমন অবস্থা।কিন্তু তুমি দু’বছর আগে আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিলে ভুলে যাচ্ছো?তোমার জন্য আমার এমন অবস্থা।ভুলে যাচ্ছো ধ্রুবের কথা?তুমি আমার জীবন থেকে ধ্রুব কে কেড়ে নিয়েছিলে। আজকে যখন সুযোগ ছিলো তোমার জীবন থেকে আভা কে কেড়ে নেবার।অধরা শুধু সময় কে ভালো করে ব্যবহার করেছে।এখন বুঝতে পারছো কেমন লাগছে?”
–“অধরা?”
–“এভাবে চিৎকার করবে না রুদ্র।তোমার জন্য আজকের অধরা।তুমি আমার জীবন শেষ করে।এখন কি প্রতিশোধ নিতে আসছো।তুমি দু’বছর আগে অধরা কে গলা টিপে মেরে দিয়েছো।তারপর নিজের সাথে আমার নাম জড়িয়ে আমাকে রেখে বাহিরে চলে গেলে।তোমার জন্য অনেক কিছু সহ্য করেছি।তারপর সবকিছু ভুলে যখন মুভ অন করে।আহান কে বিয়ে করার সীধান্ত নিলাম।তখন আমার জীবনে কালো ছায়া হয়ে ফিরে এলে কেন?”
–রুদ্রের চোখ গুলো রক্ত বর্ন ধারন করে।সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–“রুদ্র তোমার অস্বিস্তে মিশে থাকার জন্য ফিরে এসেছে।তুমি ইচ্ছে করলে নিজের জীবন থেকে রুদ্র কে মুছে ফেলতে পারবেনা।যে রুদ্র কে তুমি ঘেন্না করো সারাজীবন তার চিহ্ন বয়ে বেড়াতে হবে তোমাকে।তুমি তোমার জীবনে রুদ্র কে কাল হয়ে আসতে বাধ্য করেছো।আমাকে নিয়ে নিজের জীবনে যে মিথ্যা দাগ গুলো লুটিয়ে ছিলে রুদ্র।সবকিছু সত্যি করে দিবে আজকে।”
–অধরা ডুকরে কেঁদে উঠে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া তুমি আমার সাথে এমন করতে পারোনা?”
–“দেখো রুদ্র কি করতে পারে।”
–রুদ্র অধর কে বিছানায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে। বিছানার মধ্যে তার হাত দুটি চেপে ধরে।অধরার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
_______________________
–আহান মন খারাপ করে বাসায় ফিরতে।মিসেস আলেয়া চিন্তিত মুখে উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“আহান কোথায় ছিলে তুমি?এভাবে আমাকে চিন্তায় না ফেললে তোমার চলে না।আমাকে বলে যেতে পারতে।এখন খুব বড় হয়ে গেছে ছেলে।তারজন্য মায়ের কাছে সবকিছু আড়াল করে।কখন থেকে তোমার ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছি।তুমি ভুলে ফোন বাসায় রেখে গিয়েছিলে।এতো আনমোনা হয়ে।সকাল বেলা কোথায় গিয়েছিল?”
–আহান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
–তখন মিসেস আলেয়া বলে উঠে।
–“কি হয়েছে তোমাকে এমন লাগছে কেন?সবকিছু ঠিক আছে তুমি কোথায় থেকে আসলে।”
–“আম্মু আমার ভালো লাগছে না।পড়ে তোমাকে সবকিছু খুলে বলবো।”
–আহান চলে যাচ্ছিলো তখন মিসেস,আলেয়া তাকে পিছু ডেকে বলে।
–“আহান।”
–“হ্যাঁ আম্মু।”
–“তুমি অধরা দের বাসায় গিয়েছিলে।”
–আহান নীরবতা কাটিয়ে বলে।
–“হুম।”
–“আজকে কেন গিয়েছিলে?কালকে এতো কিছু হয়ে গেলো।আজকে অবশ্য তোমার ঐ জায়গায় যাওয়া উচিৎ ছিলোনা!”
–“কি করবো আম্মু অধরার জন্য চিন্তা হচ্ছিলো।আচমকা কালকে এতো কিছু হয়ে যাবে এসব সবার ভাবনার বাহিরে ছিলো।মেয়েটির জন্য বড্ড চিন্তা হয়।”
–“আহান এখন অধরা কি নিয়ে চিন্তা করা এবং ভাবনার মানুষ এসে পড়েছে।তুমি এখন অধরার কাছে থেকে দূরে থাকো।এসব বিষয় গুলো রুদ্র ভালো চোখে দেখবে না।আমি চাচ্ছিনা আমার ছেলে রুদ্র এবং অধরার মাঝখানে আসুক।আশাকরি তুমি বুঝতে পেরেছো।”
–“জ্বি আম্মু।”
–“আহান আজকে অফিসে যাবেনা?”
–“না আম্মু।হুট করে সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।নিজেকে সামান্য সময় দিবো।তারপর কাজে ফিরবো।”
–আহান সোজা নিজের রুমে চলে যায়।মিসেস আলেয়া চিন্তিত মুখে ছেলের দিকে তাকিয়ে থেকে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে।
–“যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সবকিছু ঠিক হয়ে গেলে ভালো।আহান মা তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে।কিন্তু আমাদের কি করার ছিলো?অধরা বিবাহিত সে রুদ্রের স্ত্রী।তোমার কথা ভেবে রুদ্রের জীবন তোমার মা নষ্ট করতে পারলো না।পারলে মা কে ক্ষমা করো।”
–মিসেস আলেয়া নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।
–আহান রুমে এসে বিছানার মধ্যে ধপাস করে শুয়ে।সিলিং ফ্যানের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে থেকে ফিসফিস করে বলে।
–“রুদ্র কেন আচমকা আমাদের জীবনে এলো?সে আমাদের জীবন এসে কেমনে এলোমেলো করে দিলো আমাদের জীবন।রুদ্র সব তোমার জন্য হয়েছে সব দোষ তোমার।সবকিছুর শেষ আহান দেখে ছাড়বে।আচ্ছা ঐ মেয়েটি এবং ছেলেটা কে ছিল যারা এভাবে রুদ্রের বাসায় থেকে চলে গেলো?”
#চলবে…