#তোমাতে_বিভোর
#পর্ব_১৪
#Sapna_Farin
–তারা গাড়ি পাকিং করে।গাড়ি থেকে নেমে রায়মান সাহেবের পিছু সদর দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে।মধ্যে বয়স্ক একজন লোক হাসিমুখে এগিয়ে এসে রায়মান সাহেবের সাথে কোলাকুলি করে।সকল কে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো।বাড়িটি দেখে বোঝা যাচ্ছে তারা খুব বিত্তশালী এবং শৌখিন।খুব সাজানো গোছানো সবকিছু ।শহরের নামকরা বিজনেস ম্যান রায়মান সাহেবের বন্ধুর বাসা বলে কথা।এমন আভিজাত্য হতে পারে অস্বাভাবিক কিছু না।অয়ন সাহেব মেহমান দের ড্রয়িং রুমে বসতে দিয়ে।তাড়াহুড়ো করে সারবেন্ট দের বলে,তাদের জন্য নাস্তা দিতে।তার কথা মতো সারবেন্টরা তাদের নাস্তা দিয়ে গেলো।সবার নিস্তব্ধতা!অয়ন সাহেব বুঝতে পারছেনা তাদের জন্য কি থেকে কি করবো।তার এমন উত্তেজনা দেখে তার বন্ধু রায়মান সাহেব বলে উঠে।
–“বন্ধু আমাদের নিয়ে তোমার এতো উত্তেজিত হতে হবেনা।আমরা অতিথি না,তোমার বাড়ির লোক।আমাদের এতো আপ্যায়ন করতে হবেনা।আমাদের নিয়ে তুমি স্বাভাবিক থাকো।মনে হচ্ছে অসময় এসে তোমাকে সম্যসায় ফেলে দিলাম।এসবের কি দরকার বলো?”
–অয়ন সাহেব মুচকি হেসে বলে।
–“বন্ধু মেয়ের বাবা বলে কথা।এসব তো করতে হয়।তুমি বুঝতে পারবে না এখন।আগে তোমার সময় আসুক তারপর বুঝতে পারবে।আমাকে আমার মতো আপ্যায়ন করতে দেও।”
–“আচ্ছা বন্ধু তোমার সাথে কথায় আজ পর্যন্ত পারলাম না।এসব কথা রাখো।তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।আমার ছেলে রুদ্র,আমার মেয়ে রুশা এবং আমার ছোট ভাইয়ের পুত্রবধূ তিশা।”
— রুদ্র,রুশা এবং তিশা অয়ন সাহেব কে সালাম দিতে।সে সালামের উত্তর ফিরিয়ে দিয়ে।ছলছল নয়নে বলে।
–“আচ্ছা বন্ধু তোমার কেমন গোছানো ভরপুর সংসার।দেখলে কেমন মন ভরে যায়।কিন্তু আমার দেখো শূন্য সংসার মেয়েটা কে নিয়ে।তাকে পরের ঘরে পাঠিয়ে দিলে আরো শূন্য হয়ে যাবো।কি করবো বলো?বাস্তবতা কে তো মেনে নিতে হবে।আজকে রেনুমা বেঁচে থাকলে।”
–কথা গুলো বলতে।অয়ন সাহেবের চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।তখন রায়মান সাহেব বন্ধুকে সাত্ত্বনা দিয়ে বলে।
–“বন্ধু সব কিছু ভাগ্য,এখানে তোমার কি করার আছে বলো।ভাবি দূরে থেকে দাঁড়িয়ে ঠিক তোমাদের দেখছে।তুমি এমন ভেঙে পড়লে চলবে?
আজকের দিনে দয়া করে তুমি এমন ভেঙে পড়োনা।”
–তখন অয়ন সাহেব নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।
–“আমি ঠিক আছি।তোমরা যে কিচ্ছু নিচ্ছো না।এভাবে চলে বলো?পড়ে বলবে ছেলের শ্বশুর বাড়িতে ঠিকমতো আপ্যায়ন করেনি।”
–“বন্ধ হয়েছে তো অনেক!এখন মেয়েকে আসতো বলো।আমার এখানে থেকে অফিসে চলে যেতে হবে একটু তাড়াতাড়ি।”
–তখন অয়ন সাহেব আওয়াজ করে,লতা কে ডেকে বলে।
–“লতা আভা কে নিয়ে আসো তাড়াতাড়ি।”
–“জ্বি বড় সাহেব,এক্ষুনি নিয়ে আসছি ছোট ম্যাডাম কে।।”
–লতা ছুটে চলে যায় আভা কে নিয়ে আসতে।
কিন্তু আভা নাম নাম শুনে কারো বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে।রুদ্র মূহুর্তের মাঝখানে আভার নাম শুনে।আভার ভাবনার মধ্যে ডুবে গিয়ে।বিড়বিড় করে বলে
–“আভা!ঐ মেয়েটা?যাকে দেখে রুদ্র তার মধ্যে বিভোর হয়ে গিয়েছিল।যারজন্য মনের মধ্যে অন্য রকম অনূভুতি হয়েছিল।ভালোলাগা ভালোবাসার উঁকি দিয়েছিল মনের মধ্যে।কিন্তু ঐ মেয়েটা এখানে কিভাবে হবে?আমি একটু বেশি ভেবে যাচ্ছি।আভা কি শুধু তার নাম।অন্য কারো নাম হতে পারেনা।”
–কথা গুলো বলতে রুদ্র ভাবনা থেকে বেড়িয়ে বাস্তবে ফিরে আসে।সময় যেন সবকিছু কেমন জটিল করে দিচ্ছে।সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
–তখন রায়মান সাহেব বলে উঠে।
–“বন্ধু সবকিছু ঠিক থাকলে।সামনে সপ্তাহে আমার ভাতিজি অধরার বিয়ের সাথে রুদ্রের বিয়েটা সেরে ফেলবো।তুমি কি বলো?”
–“বন্ধু তুমি যেটা বলবে।”
–কথা গুলো বলে দুবন্ধু হেসে উঠে।কিন্তু রুদ্রের নীরবতা সে বুঝতে পারছেনা।কিসের মধ্যে সে আটকে যাচ্ছে।অবশেষে বিয়েটা না হয়ে যায়।সবকিছুর মাঝখানে নিজে কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে।
–তিশা এবং রুশার নীরবতা।কিন্তু অধরর কথা ভাবতে তিশার মনে অজানা কোন ভয় ধলা পাকিয়ে যাচ্ছে।তবু নিজেকে সামলে নিয়ে সবার সামনে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।
__________________
–লতা গিয়ে আভার রুমের দরজায় করে নেড়ে ভিতরে যেতে,তার চোখগুলো গোলগোল হয়ে যায়।সে আভার দিকে থেকে চোখ সড়াতে পারছেনা।সে ভ্রুকুচকে আভার দিকে তাকিয়ে বলে।
–“ছোট ম্যাডাম আজকে আপনাকে চেনা যাচ্ছেনা!নিজেকে অন্য সাজে সাজিয়েছেন।পুরো বাঙালি সাজে।শাড়িতে খুব ভালো লাগছে আপনাকে।
সে দেখলে আপনার মাঝখানে বিভোর হয়ে যাবে।
–“ওহ্ সে তাহলে এসে পড়েছে।তাকে বিভোর করার জন্য তো আভার এমন রূপ।সে আমার রুপের আগুন জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।আভা অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকবে তার দিকে।ব্যপারটি খুব রোমান্টিক হবে।ভাবতে আমার কেমন লাগছে।”
–“এখন এসব ভাবনা বন্ধ করেন ছোট ম্যাডাম।মেহমান অপেক্ষা করছে চলেন।”
–“আচ্ছা লতা আমাকে কেমন লাগছে?আমাকে দেখে তার ভালো লাগবে তো?”
–“কি যে বলেন ছোট ম্যাডাম,অসাধারণ লাগছে আপনাকে।তার চোখ আপনার মধ্যে আটকে যাবে।”
–“আচ্ছা তাকে দেখতে কেমন লাগছে আজকে লতা?”
–“কি বলবো ছোট ম্যাডাম লুকিয়ে দেখে আসলাম।পুরো সিনেমার হিরোদের মতো।খুব ভালো মানাবো আপনাদের।এখন চলেন তারা অপেক্ষা করছে।”
–“হুম চলো।”
–লতা আভাকে নিয়ে চলে যায়।আভা সিরি দিয়ে নামছে আর মনের মধ্যে কল্পনা জল্পনা জুড়ে দিচ্ছে।
–আভাকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসতে।সে চমকে যায়!সামনে বসে থাকা অচেনা মুখ গুলো দেখে।সে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।সবকিছু ভেবে,এসব কি হচ্ছে তার সাথে?এসব কিছু তার ভাবনার বাহিরে ছিলো।সে ভেবেছিলো আহান বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছে।তারজন্য কোন কিছু চিন্তা না করে,কোন কিছু না ভেবে।সোজা রেডি হয়ে ছেলেপক্ষের সামনে এসেছে।কিন্তু এখানে এসে দেখতে পাচ্ছে তার ভাবনার গুলো বিপক্ষে ছিল সবকিছু।তাহলে আহান আসেনি তার ভাবনার মাঝখানে ভুল ছিলো।সে শুধু নিজের আশেপাশে আহান কে খুঁজে যাচ্ছে।কিন্তু এখানে আহানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।এসব দেখে আভার বুকের ভেতর অজানা কোন ভয় নাড়াচাড়া দিয়ে উঠে সে স্তব্ধ হয়ে যায়।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।বুকের ভেতর উতালপাতাল ঝড় শুরু হয়েছে।
–এখানে এমন মূহুর্তে এমন অবস্থায়,রুদ্র আভা কে দেখে ভেবাচেকা খেয়ে যায়।সে তার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।নিজের চোখে দেখা দৃশ্য যেন তার বিশ্বাস হচ্ছেনা।মনে হচ্ছে সে কোন স্বপ্নের মধ্যে আছে।তার কল্পনার বাহিরে ছিলো এখানে আভাকে দেখতে পাবে।সে আভা যাকে প্রথম দেখায় তার ভালো লেগেছিলো মনের মধ্যে ভালোবাসার রিংটং বেজে উঠেছিল।কিন্তু মূহুর্তের মাঝে সবকিছু শেষ করে দিয়ে সেখানে আহানের আগমন ঘটে।সবকিছু শুরু হবার আগে মূহুর্তের মাঝে মধ্যে সবকিছু শেষ হয়ে যায়
–রুদ্র এবং আভার স্তব্ধতা দেখা লতা বলে উঠে।
–“ছোট ম্যাডাম এখানে বসেন।”
–আভা ধপাস করে সোফায় বসে পড়ে।লতা সেখান থেকে চলে।আভার বুকের ভেতর টা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে সবকিছু সকলে কে বলে দিতে।কিন্তু মূহুর্তের মাঝে তার বাবার চেহারা তার সামনে ভেসে উঠে।সে তার বাবাকে কিছুক্ষণ আগে বলেছিল।সে তার সব কথা শুনবে তারজন্য তার কোন মান সম্মান নষ্ট হবেনা।অবাধ্য মেয়েটা বাধ্য হয়ে গিয়েছিল তার বাবার ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে।।কিন্তু তার ব্যধ্যতার ফল সে এভাবে পাবে বুঝতে পারেনি কখনো।সে নীরবে সবকিছু মেনে নিচ্ছে।কারণ অবাধ্য মেয়েটার জন্য তার বাবা অনেক কিছু সহ্য করেছে।পুরো জীবন তার পিছনে দিয়ে দিয়েছে।সে চাচ্ছেনা তার বাবা তারজন্য আর কিছু সহ্য করুক।আভা বুকের মধ্যে পাথর রেখে এখানে বসে আছে।তার ভিতরটা কেমন অজানা ব্যাথায় কুকড়ে যাচ্ছে।তবু নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।
__________________
–দেখাশোনা কথা বলার পর্ব শেষ হলো।আভা মুখ বুজে সবকিছু মেনে নিলো।সে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।রুদ্র অবাক হয়ে আভার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটাকে বোঝার চেষ্টা করছে।কিন্তু সে ব্যার্থ হচ্ছে।তার গম্ভীর মুখখানা দেখে।আজকে মেয়েটা কে পুরো অন্য রকম লাগছে।সে দিনের মুখে হাসিখুশি মাখা, চটপটে মেয়েটা যেন কিসের ভাবনার মাঝখানে ডুবে আছে।তাকে দেখে বোঝা যাবেনা সেদিনের আভা, আর আজকের আভা দুজনেই একজন।এখানে আকাশ পাতাল ব্যবধান দেখতে পাচ্ছে রুদ্র
–তখন রায়মান সাহেব বলে উঠে।রুদ্র তিশা এবং রুশার উদ্দেশ্যে করে।
–“তোমাদের কি আরো কিছু বলার আছে।কিছু বলার থাকলে বলতে পারো।”
–নীরবতা কাটিয়ে রুশা বলে।
–“আব্বু আভা আপুকে আমার অনেক ভালো লেগেছে।বাকিটা তোমাদের ইচ্ছে।বিয়েটা রুদ্র ভাইয়া এবং আভা আপুর হবে।তাদের মতামত নেয়া জরুরি।”
–“অবশ্যই।কিন্তু আমার ছেলের উপর আমার ভরসা আছে।রুদ্র আমার কথার বাহিরে যাবেনা।কি রুদ্র?”
–রুদ্র স্তব্ধ হয়ে আছে।সে শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো।তখন রায়মান সাহেব অট্টহাসি দিয়ে বলে।
–“আমার ছেলে বলে কথা।আমার পুরো ফ্যামিলি আমার কথা যেখানে কখনো ফেলেনা।সেখানে তো আমার ছেলে রুদ্র।”
–ছেলের প্রসংশা করতে গর্বে বুক ভরে রায়মান সাহেবের।তখন অয়ন সাহেব বলে উঠে।
–“ঠিক বলেছো বন্ধু।আমার মেয়ের উপর আমার বিশ্বাস আছে সে আমার কথার বাহিরে যাবেনা।তাহলে দেরি কেন বিয়ের ডেট ঠিক করা যায়।”
–আভা স্তব্ধতা কাটিয়ে বাবার মুখের দিকে তাকালো।সে মুখটি দেখে আভার অনেক মায়া হলো।আজকে কতো বছর পড়ে তার ড্যাড কে এতো খুশি দেখছে।তার মা চলে যাবার পড়ে তো তার খুশি হাসি সবকিছু হারিয়ে গিয়েছিল।সে চাচ্ছিলো না তার সামান্য কোন কথা মূহুর্তের মাঝে তার ড্যাডের মুখের হাসি কেড়ে নিবে।তারজন্য সবকিছু সহ্য করে নিচ্ছিলো।
–তখন তিশা নীরবতা কাটিয়ে বলে উঠে।
–“আমার একটা কথা বলার ছিলো বড় আব্বু?”
–“হ্যাঁ বলো।
–“রুদ্র ভাইয়া এবং আভা কথা বলুক।এখানে মনে হয় তাদের কথা বলতে সম্যসা হচ্ছে।বিয়েটা তাদের হচ্ছে বড় আব্বু তাদের মতামত নিয়ে বিয়েটা ঠিক করলে ভালো হয়।ছোট মুখে বড় কথা বললাম কিছু মনে করবেন না।”
–তখন রায়মান সাহেব এবং অয়ন সাহেব বলে উঠে।
–“তুমি ঠিক বলেছো।কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়ের উপরে আমাদের বিশ্বাস আছে।তারা বিয়েতে মতামত দিবে।তবু যখন বলছো তখন কথা বলুক।”
–তখন অয়ন সাহেব বললো।
–“তিশা তুমি রুদ্র এবং আভা কে নিয়ে একটু রুমে দিয়ে এসো।তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে, আমাদের মতামত জানাবে।আমরা এখানে অপেক্ষা করি।”
–“আচ্ছা।”
___________________
–তিশা রুদ্র এবং আভাকে রুমে দিয়ে আসে।তিশার যে এসব করতে হবে।ভাবনার বাহিরে ছিলো তার।অধরার কথা মনে পড়তে,অধরার জন্য বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠে তার।চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।চোখের অশ্রু মুছে সে ছুটে নিচে চলে আসে।অধরা গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে।দুজনের নীরবতা তখন রুদ্র বলে উঠে।
–“আভা আপনার বিয়েতে মতামত না থাকলে আমাকে জানাতে পারেন।আমি সবকিছু সামলে নিবো।এভাবে স্তব্ধ হয়ে থাকলে আপনার মনের কথা কিভাবে বুঝতে পারবো।”
–আভা নীরবতা কাটিয়ে বলে।
–“আমার বিয়েতে মতামত আছে।”
#চলবে…