#তোমাতে_বিভোর
#পর্ব_১০
#Sapna_Farin
–অধরার কথা শুনে রুদ্রের বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠে।নিজের অজান্তে তার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।সে নিজের চোখের অশ্রু আড়াল করে।অধরার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।তার মায়াভরা মুখখানা দেখা রুদ্রের বড্ড মায়া হয়।যে অধরা কে রুদ্র সহ্য করতে পারতো না।সে অধরার জন্য আজকে কেন এতো কষ্ট হচ্ছে।তার কারণ অবশ্য রুদ্র জানানে।নিজেকে আজকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে তার।মনে হচ্ছে তারজন্য কি অধরার জীবন এমন এলোমেলো হয়ে গেলো।তারজন্য আহানের মতো মানুষ অধরার জীবনে এলো।সবকিছুর জন্য কি রুদ্র দ্বায়ী।
–অধরার চোখের মাঝে তাকাতে রুদ্র যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলে তার মাঝে।অধরার জন্য অদ্ভুত কোন টান অনুভব হয় তার।মনের মাঝখানে অনুভব হয় অদ্ভুত কোন মায়া।তাকে হারানোর ভয়ে বুকের ভেতরটা কোন অজানা ভয়ে নাড়া দিয়ে উঠে।তখন রুদ্র ভাবতে থাকে।
–“জীবন বড় অদ্ভুত!যে অধরা কে রুদ্র সহ্য করতে পারতো না।আজ সে অধরার জন্য বুকের ভেতর কোন অজানা কষ্ট গুলো ধলা পাকিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কেন?অধরা আমার কে হয়।শুধু কাজিন বলে তার প্রতি আমার এতো ফিলিংস।না অন্য কিছু।যে অধ্যায় গুলো আমার ভাবনার বাহিরে ছিলো।সে অধ্যায় গুলো কি আমার মনের মধ্যে নাড়া দিয়ে উঠলো।”
–রুদ্রের নীরবতা দেখে অধরা বলে উঠে।
–“রুদ্র ভাইয়া এভাবে তাকিয়ে কি দেখো।কয়েক টা দিন আমাকে কষ্ট করে সহ্য করে নিয়ো।তারপর তোমার জীবন থেকে সারাজীবন এর জন্য চলে যাবো।আহানের সাথে বিয়ের পড়ে হয়তো রুদ্র নামের অধ্যায়টা আমার জীবনে থাকবে না।তুমি অনেক ভালো থেকো রুদ্র ভাইয়া।”
–অধরার কথা গুলো বলতে।রুদ্র অধরার ঠোঁটের উপরে নিজের ডান হাতের আঙুল রেখে।তাকে থামিয়ে দিয়ে।করা গলায় বলে।
–“আমাদের ছেড়ে যাবার কথা কখনো ভুলে চিন্তা করবি না অধরা।এমন আজেবাজে কথা কখনো ভুল করে উচ্চারণ করবি না।কিসের বিয়ে কার বিয়ে?কোন আহানের সাথে তোর বিয়ে টিয়ে হবেনা।আমি থাকতে হতে দিবোনা।”
–অধরা রুদ্রের কথা শুনে।অদ্ভুত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে থেকে।তার হাত সড়িয়ে দিয়ে।তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো।
–“রুদ্র ভাইয়া তুমি আমার সাথে মজা করছো।অধরা এখন সব বুঝতে পারে।আগে অনেক বোকা ছিলাম।তোমাতে বিভোর ছিলাম।কিন্তু সময়ের সাথে তুমি আমাকে খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছো আমার জায়গা তোমার মনে কি?আচ্ছা রুদ্র ভাইয়া আমার গায়ের রঙ কালো বলে তুমি আমাকে অনেক ঘেন্না করো।এতোটা ঘেন্না করো তাড়াতাড়ি নিজের বন্ধুর সাথে বিয়ে দিয়ে আমাকে বিদায় করতে চাচ্ছো।তাহলে আজকে কেন এতো ড্রামা করছো।এসব করার দরকার কি?অধরা সত্যি মেনে নিতে পারে।কিন্তু সে পারেনা মেনে নিতে কোন মিথ্যার আশ্রয় এবং কোন করুণা।তুমি আমাকে ঘেন্না করো আমার চলবে।কিন্তু তুমি আমাকে করুণা করোনা।”
–কথা গুলো বলে অধরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।রুদ্র অধরার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে বলে।
–“অধরা।”
–অধরা অট্টহাসি দিয়ে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া তোমার মুখে আমার এমন নাম যে মানায় না।কোথায় তুমি কোথায় অধরা।তুমি তো আকাশের চাঁদ।আর অধরা মাটি যেখানে আমাদের মাঝখানে অনেক দূরত্ব।আচ্ছা রুদ্র ভাইয়া শুনলাম, তুমি বিয়ের জন্য বড় আব্বুর বন্ধুর মেয়েকে দেখতে যাচ্ছো।মেয়ের ছবি কিন্তু নিয়ে এসো কেমন।”
–কথা গুলো বলতে অধরার গলার আওয়াজ ভারী হয়ে আসে।তবু নিজেকে সামলে নিয়ে মিথ্যা হাসির রেখা টেনে বলে।
–“কি হলো তাকিয়ে আছো কেন তাড়াতাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে আসো।আমি কতো বোকা তোমার সাথে কথা বলে তোমাকে আটকে দিচ্ছি।আমারো তো কাজ আছে।আহানের সাথে শপিংয়ে যেতে হবে।ভুলে গিয়েছিলাম।সামনে বিয়ে কতো কেনাকাটা বাকী।”
–কথা গুলো বলে।অধরা চলে যাচ্ছিলো।তখন রুদ্র আচমকা অধরার হাত ধরে হেঁচকা টানে তাকে পিছু টেনে।দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।রক্ত মাখা চোখে দাঁতে দাঁত চেপে চোয়াল শক্ত করে বলে।
–“তোর অনেক পাংখা হয়েছে না অধরা?রুদ্র জানে কিভাবে তোর পাংখা ভেঙে ফেলতে হয়।বিয়ের আগে আহানের সাথে কিসের এতো মেলামেশা হ্যাঁ।নিজের লিমিটে থাকতে শেখ অধরা।অনেক বড় হয়ে গেছে রুদ্র কে কথা শোনাচ্ছে তাকে জ্ঞান দিচ্ছে অধরা।তোর সাহস কি করে হয়।আমার মুখের উপর কথা বলার।”
–অধরা রুদ্রের ব্যবহার দেখে অবাক।সে নিজেকে সামলে নিয়ে।রুদ্রের কাছে থেকে ছোটার জন্য ছটফট করে রাগে কটমট করতে করতে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া তোমার সাহস কি করে হয়।আমার ব্যক্তিগত জীবনে দখল দেবার।আহান আমার হবু স্বামী।তাকে নিয়ে যেখানে ইচ্ছে যাবো।তার সাথে যেভাবে ইচ্ছে মেলামেশা করবো তোমার কি?তুমি কে আমার ব্যক্তিগত জীবনে কথা বলার।”
–অধরার কথা শুনে রুদ্র রেগেমেগে আগুন হয়ে।তার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলে।
–“অধরা বোঝাচ্ছি রুদ্র কে।”
–কথা গুলো বলে রুদ্র নিজের ঠোঁট জোড়া অধরার ঠোঁটের দিকে নিয়ে যেতে।অধরা চোয়াল শক্ত করে ফিসফিস করে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া তুমিতো এটাই করতে পারো।জোরজবরদস্তি করে কারো ঠোঁটের স্বাদ নেয়া অথবা জোর করে কারো শরীরের উপরে ঝাপিয়ে পড়া।তুমিতো শুধু দেহের স্বাদ নিতে জানো।হয়তো অচেতন হয়ে হয়তো জ্ঞান থাকা অবস্থায়।মনের খবর কি রাখো তুমি।তুমি নিজের ইচ্ছে মেটাতে পারলে হলো।তাছাড়া তোমার কাছে অন্য কারো মূল্য কি?তুমি আমাকে সহ্য করতে পারোনা।কিন্তু আমার দেহের স্বাদ ঠিকি নিতে পারো।”
–কথা গুলো বলতে অধরার চোখ গুলো বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।রুদ্র অধরার কথা শুনে ঠাস করে অধরার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে।অধরা কে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত গতিতে ওয়াশ রুমে চলে যায়।
–অধরা গালে হাত দিয়ে ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়ে।ডুকরে কেঁদে উঠে।বিড়বিড় করে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া তুমি এসব যা-তা কি বলো।তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।তুমি মনে হয় আবারো ড্রিংক করেছো।তারজন্য ঘোরের মধ্যে কি বলছো।তুমি নিজে বুঝতে পারছোনা।ঘোর কেটে গেলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।এসবের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে নিজেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে পারবেনা অধরা।তুমি ভালো থেকো রুদ্র ভাইয়া।অধরা তোমাকে মুক্ত করে দিয়েছে।”
–কথা গুলো বলে অধরা নিজেকে সামলে নিয়ে।দ্রুত রুদ্রের রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।রুদ্র ওয়াশ রুমে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে অধরার বলা কথা গুলো ভাবতে।তখন সে ফিসফিস করে বলে।
–“অধরা আমাকে এমন মনে করে ছিঃ।তার দৃষ্টিতে রুদ্র খুব খারাপ মানুষ।কেন অধরা কেন?”
___________________
–আহান বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।তখন দরজায় কড়া নেরে আহানের রুমে আসে অধরা।আহান অধরা কে দেখে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে।বিড়বিড় করে বলে।
–“আসো অধরা তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।জানতাম তুমি আসবে।আমার অপেক্ষার শেষ হবে।”
–অধরা বারান্দায় গিয়ে বলে।
–“আহান ভাইয়া অসময় এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে?”
–আহান বোকার মতো মুখ করে বলে।
–“কি করবো বলো।সময় কাটাচ্ছিলাম আমাকে সময় দেবার মতো কে আছে বলো।”
–আহানের কথায় কেমন উদাসীনতার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠে।তার এমন অবস্থা দেখে অধরার তারজন্য মায়া হয়।তখন অধরা বলে।
–“আহান ভাইয়া এভাবে বলছেন কেন?নিজেকে কখনো এমন অসহায় মনে করবেন না।সকলে আপনার পাশে আছে।এতো মন খারাপ কেন করতে হবে।”
–অধরার কথা শুনে আহান বলে।
–“আচ্ছা এসব কথা রাখো।তোমার খবর কি কিছু বলবে।কোন কিছু লাগবে।”
–অধরা কোন ভ্রুক্ষেপ ছাড়া বলে উঠে।
–“আজকে তো আমাদের শপিংমলে যাবার কথা ছিলো আহান ভাইয়া।তাহলে রেডি হয়ে আসেন।”
–অধরার কথা শুনে আহান ভেবাচেকা খেয়ে বলে।
–“তুমি যাবে আমার সাথে।”
–“হুম।”
–“আচ্ছা তুমি সামান্য সময় আমার জন্য অপেক্ষা করো।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসবো বেশি সময় লাগবে না।”
–“ঠিক আছে।”
–কথা গুলো বলে।অধরা দ্রুত আহানের রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।তখন আহান বলে উঠে।
–“রুদ্র দেখছো আহানের প্লেন কখনো নষ্ট হয়না।অধরা নিজে থেকে আমার কাছে চলে এসেছে।আমার প্লেন কেবল শুরু।সামনে দেখতে থাকো তোমার জন্য কি অপেক্ষা করে।”
–কথা গুলো বলতে আহানের মুখে বাকা হাসির রেখা ফুটে উঠে।
_____________________
–রুদ্র শাওয়ার নিয়ে বেড় হয়ে।নিজের মতো রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লো।পড়নে তার কালো জ্যাকেট সাদা শার্ট এবং কালো প্যান্ট।হাতে দামী ব্যান্ডের ঘড়ি পড়া।নিজেকে খুব গোছানো রাখে সে সব সময়।আজকে তেমন ভাবে রেডি হয়ে আসছে।নিজের অজান্তে মনের মধ্যে অধরার প্রতি রাগ ক্ষোভ অভিমান গুলো যেন ধলা পাকিয়ে যাচ্ছে।তবু নিজেকে সামলে নিয়ে আসছে।মিথ্যা লুক নিয়ে।
______________________
–তিশা এবং রুশা রেডি হয়ে লিভিং রুমে বসে আছে। রুদ্রের অপেক্ষা করছে তারা।মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে বিরক্তির ছাপ।তিশার ইচ্ছে না থাকা স্বত্তেও তার বড় আব্বুর কোথায় যেতে হচ্ছে তাকে।তখন কোথায় থেকে অধরা এসে বলে।
–“তোমরা কোথায় যাচ্ছো?”
–তিশা অধরা কে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়।
সে কি বলবে বুঝতে পারছেনা।তখন রুশা বলে।
–“অধরা আপু ভাইয়ার জন্য আব্বুর বন্ধুর মেয়েকে দেখতে যাচ্ছি।”
–রুশার কথা শুনে।অধরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে।
–“আচ্ছা।”
–তখন রুদ্র এসে এখানে অধরা কে দেখে।তাকে শুনিয়ে বলে।
–“আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছেতো আব্বু কোথায়।”
–রুদ্রের কথা শুনে রুশা বলে।
–“ভাইয়া আব্বু বেড় হচ্ছে।”
–তখন আচমকা আহান এসে রুদ্র কে দেখে।অধরার হাত আঁকড়ে ধরে বলে।
–“অধরা চলো আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
#চলবে…