তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-৯+১০

0
1286

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৯

অভ্র নাহিদকে ছেড়ে দিয়ে সোজা বাড়ির ভেতরে চলে যায়। ভেতরে গিয়ে মিহিকে খুজতে থাকে। মিহিকে খুজে পেয়ে ই টানতে টানতে বাড়ির পেছনে নিয়ে যায়। নিয়ে ই একটা থাপ্পড় মারে।

মিহি গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না।

–আমাকে তোর পছন্দ হয় না নাহিদের সাথে তো ঠিক ই প্রেম করে বাড়াচ্ছিস। কী আছে নাহিদের মধ্যে যা আমার মধ্যে নাই।

–অভ্র….

–আওয়াজ নিচে।

–কেনো কী করেছি আমি। কেনো মারলেন থাপ্পড় কীসের এতে অধিকার।

অভ্র মিহিকে এক হাতে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরেছে।অন্য হাতে মুখ চেপে ধরেছে।

–নাহিদ তোর বাসার সামনে কেনো। বল বিয়ে করবি নাহিদকে যা এখন ই চলে যা আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

মিহির আর এসব সহ্য হচ্ছে না শরিরের সব শক্তি দিয়ে অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।

–কী ভাবেন আপনি আমাকে। নাহিদ কেনো এসেছে এটা আমি কী করে জানি। আপনি কী কখনো দেখেছেন আমি নাহিদ এর সাথে কোনো অপ্রয়োজনীয় কথা বলেছি বা কারো কাছ থেকে শুনেছেন যে আমার নাহিদের সাথে কোনো সম্পর্ক আছে।

–তাহলে নাহিদ বললো কেনো তুমি জানো নাহিদ এখানে এসেছে কেনো।

–তা আমি কী জানি। সব কিছু যেনে মানুষকে অপবাদ দিতে আসবেন।

এটা বলে ই মিহি চলে যেতে নিলে অভ্র হাত ধরে ফেলে।
মিহি রাগে হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।

–ছাড়ুন।

–সরি টিয়াপাখি।

–সরি বললে সব সমাধান হয়ে যায় নাকি। আমাকে যে কষ্ট দিয়েছেন যে থাপ্পড় দিয়েছেন সেই ক্ষতটা সরি বলে কি মুছে ফেলতে পারবেন।

— রাগের মাথায় বলে ফেলেছে।প্লিজ এমন করো না।

মিহি আর কোনো কথা বললো না। খুব কষ্ট হচ্ছে। এসব কথা শুনতে হবে কখনো ভাবতে পারেনি।

মিহি রুমে ডুকার সাথে সাথে মিনতে এসে জিজ্ঞেস করলো,

–কী হয়েছে তোর।

–কিছু না আপু।

–বল আমাকে কিছু না হলে মন খারাপ করে আছিস কেনো।

–এমনি ভালো লাগছে না।

অভ্র এখনো ও বাড়ির পেছনে দাড়িয়ে আছে কী করবে বুঝতে পারছে না। রাগ করে তো মিহির সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেললো। এখন নিজে ই নিজেকে মারতে ইচ্ছে করছে।

অভ্র আস্তে আস্তে স্টেইজের দিকে যায়। পুরো বাড়ি লাইটিং করা। লাল, হলুদ, গোল্ডেন মরিচ বাতি দিয়ে খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করেছে।ক্যামেরা ম্যান ব্যস্ত সবার ছবি নিতে। অভ্র দাড়িয়ে থেকে এসব দেখছে আর মিহিকে খুজতেছে।

হঠাৎ মিহিকে দেখে অভ্রের চোখ আটকে গেলো। এ কাকে দেখছে। এতোক্ষণ তো শুধু রাগ ই দেখিয়েছে। আসার পর এই প্রথম স্পষ্ট আলোয় মিহির মুখখানা দেখলে। পারপেল কালারের একটা শাড়ি পড়েছে। সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি খোপায় গাজরার মালা। অভ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে। হাজার বছর এভাবে তাকিয়ে থাকলে ও মনে হয় তৃপ্তি আসবে না। যে যাকে ভালোবাসে সে দেখতে যতোই খারাপ হক না কেনে তার চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হয় তার প্রেয়সী।

—অভ্র.. এই অভ্র

–হে আপু বলো। (ইপ্তি অভ্রের কাজিন)

–কী দেখছিস ঐদিকে।

–কিছু না।

–ওহ্ বলতে চাচ্ছিস না।

–না আপু তেমন কিছু না।

–তা ভাই আমার প্রেমে পড়েছে বুঝি।

অভ্র মাথার চুলগুলো ঠিক করতে করতে মুচকি হাসি দিলো।

____________________________

পরের দিক সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠলো অভ্র। কথা অনুযায়ী আজকে তীব্রের গায়ে হলুদ। অভ্রের সব দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলে ও অভ্র পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। কালকের পর থেকে অভ্র আর কোনো কিছুতে ই মন বসে না। কেনো করলে মিহির সাথে এরকম। যতক্ষণ মিহি ক্ষমা না করছে ততক্ষণ শান্তি হবে না অভ্রের।
কালকে তো বেশ কয়েকবার ডেকেছে মিহিকে কিন্তু একবার ফিরে ও তাকায়নি। আজকে অবশ্য ই অভ্রদের বাসায় আসবে তখন কিছু একটা করতে হবে।

এসব ভাবতে ভাবতে অভ্র ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।

মিহির কালকে থেকে ই মন খারাপ। সব সময় কতো লাফালাফি করে এখন মেয়েটা কতো নিশ্চুপ হয়ে গেছে। মিহির মা তা লক্ষ করে মিহিকে কাছে টেনে নিলো। মা পরম আদরে জড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

–কী হয়েছে মা, আমার আম্মুর মন খারাপ কেনো।

–কিছু না মা।

–কিছু না কেনো বলছিস, কি লুকচ্ছিস।

–আমি ঠিক আছি মা টেনশন করো না।

–ঠিক আছে। মনে রেখো মা সবচেয়ে ভালো বন্ধু। কখনো কোনো বিষয় নিয়ে কষ্ট পেলে বা সিদ্ধান্ত হীনতায় পড়লে মাকে অবশ্যই যানাবে।

মিহির মা আর কোনে কথা বললো না। কালকে মেহমান কম ছিলো। আজ বেলা বাড়ার সাথে সাথে সব আত্মীয়রা আসা শুরু করেছে তাই আর মিহিকে বেশি সময় দিতে পারলো না। চলে গেলো নিজের কাজে।

আজকে মিহিরা অভ্রেদের বাসায় যাবে। সবাই সাজগোছ করতে ব্যস্ত কিন্তু মিহি মধ্যে তেমন উৎস নেই।
মিনতির দিকে তাকিয়ে মিহি শুধু অভ্রদের বাসায় যাচ্ছে নয়তো কখনো যেতো না।

_______________________

অভ্রদের বাসায় যাওয়ার পর, মিহির কাজিন প্রিয়াকে সাথে নিয়ে বসে আছে যেনো অভ্র কাছে আসতে না পারে।হঠাৎ একটা মেয়ে এসে বললো,

–তুমি মিহি না?

–হে।

–তোমাকে আমার সাথে যেতে বলেছে।

–কে?

–রেহনুমা ফুপ্পি

–ওহ্ আচ্ছা।

মিহি মেয়েটার সাথে সাথে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা রুমে নিয়ে যায় মিহিকে কিছু বলার আগে ই মেয়েটা দরজা বন্ধ করে চলে যায়।

চলবে,

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১০

মিহি মেয়েটার সাথে সাথে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা রুমে নিয়ে যায় মিহিকে কিছু বলার আগে ই মেয়েটা দরজা বন্ধ করে চলে যায়।
পুরে রুম অন্ধকার আমি তো ভয়ে পুরো কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছি। ফোনটা ও সাথে আনিনি প্রিয়ার কাছে দিয়ে এসেছি। এখন কী হবে।
হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম।এতে আরো ভয় পেয়ে গেলাম। হঠাৎ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি শত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ও এক বিন্দু পরিমাণ ও নাড়াতে পাড়ছি না। এই স্মেলটা আমার খুব পরিচিত।মানুষটা ও তো আমার খুব পরিচিত। কিন্তু এতো গভীর ভাবে ছোঁয়া টা আর নেওয়া যাচ্ছে না। শরিরে অন্যরকম শিহরণ সৃষ্টি হচ্ছে। মুখ দিয়ে কোনো কথা ও বের হচ্ছে না। শরিরের সমস্ত শক্তি যুগিয়ে বললাম,

–ছাড়ুন আমি আপনার বিয়ে করা বউ না।

–চলে বিয়ে করি ফেলি।

–ছাড়তে বলেছি আপনাকে আমি কখনো বিয়ে করবো না।

–আপাতত ক্ষমা করে দাও।

–কিসের ক্ষমা।

–প্লিজ টিয়াপাখি ভুল করেছি।

–তো আমি কী করবো।

–ক্ষমা করে দেওয় নয়তো ছাড়বো না।

–থ্রেড দিয়ে ক্ষমা চাচ্ছেন।

–তুমি ক্ষমা না করলে কী করার।

–আচ্ছা ছাড়ুন ক্ষমা করে দিয়েছি।

অভ্র ছেড়ে দিয়ে লাইট অন করে।

রুমটা দেখে মনে হচ্ছে গেস্ট রুম। অভ্র বেডে উপরে বসে। মিহিকে টেনে নিয়ে কোলে বসায়। এক হাত দিয়ে মিহির মুখেটা অভ্রের দিকে করে রেখে খুব আদর মাখা কন্ঠে বললো,

–অনেক ভালোবাসি টিয়াপাখি। খুব দ্রুত আমরা বিয়ে করে নিবো।জানো তোমাকে কতোটা সুন্দর লাগছে। আমাদের যখন বিয়ে হবে তুমি রোজ নতুন একটা শাড়ি পড়ে আমার ঘুম ভাঙ্গাবে।ভেজা চুলে গুলো আমার পাশে এসে নাড়াচাড়া করবে, চুলের পানি আমার মুখে পড়তে ই বুঝবো আমার পরীটা আমার পাশে বসে আছে।আমি চাই আমার সকলটা শুরু হক আমার মিহির কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে রাতটা শুরু হক আমার মিহিকে বুকে আগলে রেখে।
কথাটা শেষ করে ই হাতে একটা চুমু খেলো অভ্র। ঘোর লেগে যাচ্ছে।
মিহি অন্যদিকে তাকাতে ও পারছে না। অভ্র মুখে হাত দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে রেখেছে।
মিহি শুধু মুখ চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

—চলো তোমাকে দিয়ে আসি।

–একা ই যেতে পারবো।

–উহু তা হচ্ছে না। চলো।

মিহি নিচের দিকে তাকিয়ে বসে ই আছে। তাই অভ্র বললো,

–কি,কোলে করে নিয়ে যাবো নাকি।

কথাটা বলার সাথে সাথে মিহি উঠে দাড়িয়ে যায়।
মিহি এমন অবস্থা দেখে অভ্র হাসতেছে।

–চলো।

অভ্র মিহিকে নিজের সাথে বাহিরে নিয়ে গেলে।

__যাও তুমি আমি তোমার আশেপাশে ই আছি। নিজের খেয়াল রেখো।

মিহি চলে গেলো। প্রিয়ার পাশে বসতে ই বললো,

–এই আপু আমাকে ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলে।

–তুই আমার সাথে যেতে পারতি।

–তুমি তো একবার ও বলোনি। যে আমার সাথে আয়।

–হুম অন্যদিন নিয়ে যাবো l এখন থাম।

____________________

বিয়ের দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি। উঠে ই দেখি মিনতির কানে ফোন। ফোনটা টান দিয়ে নিয়ে আসলাম।

–মিহি ফোনটা নিবি না প্লিজ।

–এই যে আমার জিজু আর তো একটু সময় পরে তো আপনার কাছে ই চলে যে এখন একটু শান্তি দেন। আপনাদের বাড়িতে নিয়ে সারাদিন কথা বলেন কিন্তু এখন আর নাহ্।

বলে ই ফোনটা কেটে দিলাম। আচ্ছা লজ্জা ছাড়া মানুষ তো দুজন। বিয়ের দিন আবার এতো কথা কিসের।

–মিহি কী করলি এটা বল তো।

–আজকের পর থেকে আমাদের আর চাইলে ও দেখা হবে না। সব সময় তোকে কাছে পাবো না তাই আমাকে টাইম দে। জিজুর সাথে তো এখন থেকে বাকি জীবনটা থাকবি ই। তাই এখন কথা বন্ধ।

মিহির মা আচলে মুখ গুঁজে দুচোখের পানি এক করছে। কতো কষ্ট করে ছোট থেকে বড় করেছে কিন্তু নিজের কাছে সারাজীবন রাখতে পারবে না। নিজের হাতে মেয়ে বিদায় এর আয়োজন করছে। আজ একজনকে বিদায় দিবে তারপর দু আরেকজনকে ও বিদায় দিতে হবে। কি করে থাকবে শূন্য বুক নিয়ে। মেয়েরা কাছে থাকলে মনে হয় পৃথিবীর সকল পূর্নতা নিজের কাছে।

—আম্মু আসো তো।

মিনতির ডাকে চোখ জোড়া মুছে রান্না ঘর থেকে পা বাড়ালো মিহির মা।

__________________________

অভ্র আর তীব্র এক সাথে দাড়িয়ে আছে। দুই ভাই মিলে জমিয়ে সেলফি তোলতে ব্যস্ত। দুই ভাই ই সাদা লুঙ্গি আর গায়ে টাওয়াল জড়িয়ে আছে। ক্যামেরা ম্যান সার্বক্ষণিকের ছবি তোলে রাখছে। দুই ভাইয়ের খুনসুটি দেখে রেহনুমা আহমেদ হাসছে।
রেহনুমা আহমেদ ভাবছে বিয়ে করলে কি চেঞ্জ হয়ে যাবে। থাকবে তো পরিবারের মধ্যে এতো ভালোবাসা। এসব ভাবতে ভাবতে চোখে জল এসে যায়।

গোসল করানোর আগে তীব্রকে হলুদ ছোয়ানো হয়েছে। অভ্রকে তো হলুদ দিয়ে সবাই মাখামাখা বানিয়ে দিয়েছে। সবার সাথে বেশ আনন্দ করছে অভ্র।

____________________________

মিহি অভ্রের পছন্দ করা শাড়িটা পড়েছে। এমনিতে সুন্দর দেখতে তার উপর ব্রাইডাল সাজে তো পরীর মতো লাগছে। সবাই মিহিকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।

বিয়ে পড়ানো শেষ করে বউ দেখতে রুমে প্রবেশ করতে পাভেল। রুমে প্রবেশ করতে ই বউ এর দিকে চোখ যাওয়ার আগে বউ এর পায়ে বসে থাকা মেয়েটার দিকে চোখ যায় আগে। দেখতে তো মাশাল্লাহ। একবার তাকালে চোখে ফেরানোটা যে দায়। এমন একটা মেয়ে ই তো এতোদিন বিয়ের জন্য খুজছিলো। আজকে বাসায় গিয়ে বলতে ই হবে আম্মু বউমা খুজে পেয়েছি। পাভেল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পাশে থাকা পাভেলের বন্ধু জিজ্ঞেস করলো,

—এক দেখাতে প্রেমে পরলি নাকি।

–প্রেমে পড়া বারন নাকি।

–তা না তুই একা তো আর প্রেমে পরলে হবে না তুই যার প্রেমে পড়েছিস তাকে ও তোর প্রেমে পড়তে হবে।

পাভেল বাহিরে এসে দাড়ালো সুযোগ খুজছে মিহির সাথে কথা বলার। মিহি রুম থেকে বের হয়ে মায়ের রুমের দিকে যাচ্ছিলো হঠাৎ পাভেল হাত ধরে ফেলে। দূর থেকে অভ্র স্পষ্ট দেখতে পায় কেউ একজন তার টিয়াপাখির হাত ধরেছে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে