#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৭
রাতে ঘুমের মধ্যে ই মিহির শরীরের কেউ কোথাও আটকে রেখে এমন মনে হচ্ছে। মিহি ভয় পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। মিহি কথা বলতে পারছে না মুখ বাধা, হাত পা ও বাধা মিহি এমন অবস্থায় চিৎকার ও দিতে পারছে না। চোখ দিয়ে শুধু অনবরত পানি পড়ছে।
অভ্র এতো খেয়াল করেনি মিহির দিকে। অবশ্য মিহির চোখ বাঁধা ছিলো। অভ্র কোলের উপর নিয়ে বসে বসে ফোন চাপছিলো। মিহি হাত পা নাড়া চাড়া করাতে ই অভ্র দ্রুত সব বাধন খুলে দেয়।
–প্লিজ জান এভাবে কান্না করো না।
মিহি কান্না ই করে যাচ্ছে।
অভ্র দুচোখ মুছে দিয়ে বুকে টেনে নিলো। তাও কান্না থামছে না এক হাতে অভ্রের শার্ট খামচে ধরে আছে। বুঝতে পারলো অভ্র খুব বেশি ভয় পেয়েছে। তাই আর কোনো কথা বললো না।
বেশকিছুক্ষন পর মিহি স্বাভাবিক হয়ে অভ্রকে রাগি চোখে জিজ্ঞেস করলো,
–আমি এখানে কেনো।
–তোমার বোন প্রেম করতে আসছে সাথে তোমাকে না আনলে নাকি আসবে না তাই তোমাকে এমন ভাবে নিয়ে আসা।
–এই রাতের বেলা??কয়টা বাজে বলুন তো।
–মাত্র সাড়ে বারোটা।
–এতো রাতে প্রেম করতে আসছে। কোথায় মিনতি।
–প্রেম কী আর সময় মানে বলো। এই তো দেখো সামনে তাকিয়ে দুজন বসে কী গল্প জুড়ে দিয়েছে।
মিহি কথাটা শোনে ই জিপ থেকে নেমে যেতে চাইলে ই অভ্র হাত ধরে ফেলে।
–কোথায় যাচ্ছো টিয়াপাখি।
–হাত ছাড়ুন। মিনতির কাছে।
–পাগল তুমি মাত্র আসলাম। বাদ দেও আমার সাথে কথা বলো ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দেও প্লিজ।
মিহি এবার অভ্রের দিকে তাকালো। ল্যাম্পপোষ্টের আলো এসে পড়েছে অভ্রের মুখে। ফর্সা গালে দাড়িগুলো চিক চিক করছে। নেভিব্লু শার্ট পড়নে কালো পেন্টে ক্রাশ খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। যে কেউ দেখলে ই প্রেমে পড়বে। কিন্তু মিহি কেনো দূরে রাখে অভ্রকে। চাইলে ই তো পারে ভালোবাসে আপন করে নিতে কিন্তু সে ও যদি ইমরানের মতো ধোকা দেয়।
—এতো দেখো না টিয়াপাখি প্রেমে পড়ে যাবে।
অভ্রের এমন কথা শোনে মিহি অন্য দিকে তাকিয়ে যায়।
এতো কাছ থেকে এতো গভীর ভাবে আর কখনো দেখা হয়নি অভ্রকে।
—আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।
–কেনো।
–এমনি ঘুম পাচ্ছে, ওদের প্রেম শেষ হলে বাসায় যাবে আমকে দিয়ে আসুন।
–বাসায় দিয়ে আসতে পারি একটা শর্তে।
–কী।
–আমাকে আই লাভ ইউ বলো।
–যাবো না বাসায় আমি।
আস্তে আস্তে মিহির দিকে ঝুকে আসতে মিহি পিছনে চলে যায়। গাড়ির ভেতর কোথাও পালানোর ও কোনো পথ নেই।
অভ্র মিহির অনেকটা কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
–তাহলে কোথায় যাবে।
মিহি চোখ বন্ধ করে উওর দেয় কোথাও না।
অভ্র মন ভরে দেখে নিচ্ছে চোখ বন্ধ করলে তো আরো মায়া বেড়ে যায়।
অভ্র হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেয়ে জিপ থেকে নেমে যায়। এই মোহ লাগনো মুখখানা দেখতে থাকলে নিজেকে দূরে রাখা যায় না।
তীব্র আর মিনতি কী সুন্দর হাটতেছে আর কথা বলতেছে। এটা একটা রাস্তা। রাস্তার সাইডে ল্যাম্পপোস্ট দেওয়া পুরো দিনের মতো ই দেখা যায়। মিনতি আর তিব্র বেশ খানিকটা দূরে। অভ্র তীব্রের কাছে যেতে চাইলো। পরে আবার ভাবলো হয়তো ডিস্টার্ব ফিল করবে তাই কল দিলো, কয়েকবার কল বাজার পর রিসিভ করলো,
বেশ বিরক্ত নিয়ে তীব্র বললো,
–কী হয়েছে।
—আমি চলে যাচ্ছি মিহিকে নিয়ে তোরা থাক। প্রেম করা শেষ হলে বিয়ে করে বাসায় ফিরিস।
–আরে ভাই রাগ কেনো করছিস।
–আরে আর কতো মিহির ঘুম পাচ্ছে চল।
–আরেহ বাহ মিহির জন্য তো দেখছি ভালো ই চিন্তা হচ্ছে আপনার(তিব্র)
অভ্র কথা ঘুরানোর জন্য বললো,
–তুই যাবি নাকি বাসায় এটা বল।
–আরে দশ মিনিট। একটু ওয়েট কর ভাই।
অভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিপ গিয়ে বসতে ই দেখলো মিহি ঘুমিয়ে পড়েছে। অভ্র খুব আস্তে করে মাথাটা অভ্রে বুকে রাগলো। মুখে এসে বিরক্ত করতে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়েছে। কপালে বার বার ওষ্ঠদ্বয় ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছিলো তাও নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো।
ঘুমন্ত মিহির সাথে কয়েকটা ছবি তুলে নিয়েছে।
বেশকিছুক্ষন পর, দেখা যাচ্ছে মিনতি আর তীব্র আসছে তাই অভ্র মিহিকে নিজের থেকে সরিয়ে সিটে শুইয়ে দেয়।
মিনতি এসে মিহিকে নিজের সাথে নিয়ে বসে। অভ্র ড্রাইভার করতে থাকে আপন গতিতে।
__________________________
সকালে ঘুম থেকে উঠে ই মনে হলো কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মিটমিট করে চোখ খুলে দেখলাম অভ্র।
—তাহলে ঘুম ভাঙ্গলো মহারানীর। উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিতে বলেন ভাবি,আপনার ঘুম পাগলি বোনকে।
মিহি তাকিয়ে দেখে বেড সাইডে বসে বেশ গল্প জুড়ে দিয়েছে মিনতির সাথে।
–আপু তুই রুম থেকে বের হ।
অভ্র মিহির ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
পড়নে টি-শার্ট ছিলো যার বেরিয়ে যেতে বললো।
মিহি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাস্তা করে নিলো।
সবাই বেড়িয়ে পড়লো বিয়ের শপিং করতে। রেহনুমা আহমেদ, অভ্র তিব্র আর মিহির মা। মিহি মিনতি।
শপিংমলে ডুকে অভ্র কয়েকবার ইশারে করে মিহিকে সাইডে যেতে বলেছে। এতে মিহির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
মিহি মিহির মতো শপিং করায় ব্যস্ত
হঠাৎ মিহির একটা ট্রায়াল রুমের সাইডে দিয়ে যেতে নিলে হঠাৎ কেউ একজন টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়।
–আপনি আমাকে এখানে আনলেন কেনো কেউ দেখতে পেলে কী হবে জানেন।
–দেখলে তো আমার ই ভালো বিয়ে করে নিবো।
–আমি আপনাকে কখনো বিয়ে করবো না।
–তাই নাকি, তখন ডাকছিলাম আসছিলে না কেনো।
–এমনি।
–তাই
কথাটা বলে ই অভ্র নেশা ভরা চোখ নিয়ে এগোতে থাকে এক হাত দিয়ে মিহিকে নিজের সাথে খুব ভালো ভাবে আটকে নিয়েছে।
হঠাৎ কেউ একজন বাহির থেকে দরজায় নক করছে।
–ভেতরে কে আছেন বের হন। আর কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবো। এবার কিন্তু ম্যানাজারকে ডাকবো।
কন্ঠটা অভ্রের খুব চেনা কারণ নিজের মায়ের কন্ঠ চিনতে কেউ ভুল করে নাকি।
–সব আপনার জন্য হয়েছে। এখন কী করবো।
চলবে
#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৮
কন্ঠটা অভ্রের খুব চেনা কারণ নিজের মায়ের কন্ঠ চিনতে কেউ ভুল করে নাকি।
–সব আপনার জন্য হয়েছে। এখন কী করবো।
অভ্রের এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আগের ন্যায় মিহিকে ধরে ই দাড়িয়ে আছে। অভ্রের হাতে একটা শাড়ি, লাল গোল্ডেন কম্বিনেশনে। মিহির মাথায় শাড়ির কতোটুকু অংশ রেখে মিহিকে সামনে দাড় করিয়ে অভ্র পিছনে দাড়িয়ে আয়নার দিকে তাকাতে বললো।
কী সুন্দর লালা টুকটুকে বউ মনে হচ্ছে। মুহুর্তে ই অভ্র মিহিতে ডুবে যেতে চাইলে ও মনে হলো মায়ের কথা
কিছুক্ষণ পর সুযোগ বুঝে অভ্র মিহিকে আগে বের করে দিলো। মিহি ট্রায়াল রুম থেকে বেরিয়ে অন্য এক দোকানে ডুকে পড়ে। মনে মনে অভ্রকে বকতে থাকে কী একটা বিপদে পরতো যদি কেউ দেখে ফেলতো।
রেহনুমা আহমেদ অনেক ডাকাডাকি পর ও যখন কেউ ট্রায়াল রুম থেকে বের হচ্ছিলো না তাই সময় নষ্ট না করে অন্য ট্রায়াল রুমে ডুকে পড়েছিলো।
রেহনুমা আহমেদ আর মিহির মা দুজন মিলে মিনতির জন্য শাড়ি লেহেঙ্গা পছন্দ করছে। মিহি এসে পিছনে দাড়াতে ই মিনতি জিজ্ঞেস করলো
— তুই এতোক্ষণ কোথায় ছিলি।
মিহি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। তাও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে উওর দিলো,
____ একটা শাড়ি পছন্দ হয়েছিলো ট্রায়াল রুমে গিয়েছিলাম একটু পড়া দেখার জন্য। দেখতে কেমন দেখায়।
–তা তোর শাড়ি কোথায়।
–দ্রুত আসতে গিয়ে মনে হয় ট্রায়াল রুমে ই রেখে এসেছি।
–যা তো নিয়ে আস।
মিহি অসহায় ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কোনো শাড়ি ই তো পছন্দ করে নি।
–কী হয়েছে বল তো, এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো।
মিহি দাতে নখ কাটতে কাটতে শাড়ি দেখছে কোনটা নেওয়া যায়।
হঠাৎ অভ্র এসে হাতে শাড়িটা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
রাত প্রায় নয়টা বাজে।শপিং করতে করতে খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। সবার জন্য শপিং করা শেষ হয়েছে।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তে ই দুচোখে ঘুম এসে ভর করে। চোখ মেলে আর তাকাতে পারেনি ঘুমিয়ে পড়েছে মিহি।
মিহির মা ও খুব ক্লান্ত।
___________________________
দেখতে দেখতে হলুদের দিন চলে এসেছে। অবশ্য বিয়ের দুইদিন আগে মিনতির হলুদ হবে। তারপরের দিন তীব্রের। দুইটা হলুদের অনুষ্ঠান এক সাথে হলে সব নিয়ম একসাথে পালন করলেও সব কাজ খুব দ্রুত করতে হয় তাই একটু সময় নিলো।আজ মিনতির হলুদ।
মিহি সকাল থেকে স্টেজ সাজাতে ব্যস্ত। মিহি সাথে আছে মিহির কাজিন অলি,রিয়া,প্রিয়া,রুহিত। সবাই মিলে খুব মজা করে কাজ করছে। স্টেজ সাজানোটা খুব সুন্দর হয়েছে।
মিহি কাপড় রেডি করছে, পার্লার থেকে মেয়ে এসেছে। মিনতিকে সাজাচ্ছে। এর পর ই মিহির পালা। এমন সময়
মিহির ফোনে বেজে উঠছে। নম্বরটা মিহি চিনে না। তাই একবার কেটে দিলো। পরের বার আবার কল করো। আবার মিহি কেটে দিলো। আবার কল আসলো। এবার মিহি কলটা রিসিভ করলো,
–মিহি তুমি কলেজে আসো না কেনো?
–কে আপনি।
–আগে বলো তুমি কলেজে আসো না কেনো
–দেখুন আপনার পরিচয় না দিলে আমি ফোন কেটে দিতে বাধ্য হবো।
–নাহিদ
নামটা শোনে ই মিহির রাগ হয় এমনি এ পাগলের যন্ত্রনায় বাচি না এখন আসছে আরেক আপদ।
–আপনাকে বলতে হবে আমি কেনো কলেজে যাই না।
–মিহি আমি তোমার বাড়ির সামনে বাড়িতে এতো সাজসজ্জা কেনো। তোমার কী বিয়ে নাকি।
–আমার বিয়ে হলেই আপনার কী আর না হলে ই আপনার কী।
–মিহি চলো আমরা পালিয়ে যাই।
–এই আপনাকে আমি চিনি ই বা কদিন হলো। আপনার সাথে আমি পালাতে যাবো কেনো।
–মিহি তোমাকে আমার চাই।
–আপনাকে তো আমার চাই না।
–তুমি যতোক্ষণ আমার সামনে না আসবে আমি এইখান থেকে যাবো না।
মিহি আর কোনো কথা বললো না।ফোনটা কেটে দিলো।
মিহি আপু তোমাকে ডাকছে, মিনতি আপু।
আসছি…..
মিহি এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে চলে গেলো।
_____________________________
সাজগোজ শেষ হওয়ার পর মিনতির ফোনে বার বার তীব্র কল দিচ্ছে। মিহি টান দিয়ে ফোনটা নিয়ে নেয়। রিসিভ করতে ই বলে।
–জান কী করো।
–আপনার জান বসে আছে।
তীব্র লজ্জায় কল কেটে দিলো। মিনতি ও বেশ লজ্জা পেয়েছে।
–মিহি ফোন দে।
–তা তীব্র ভাইয়ার জান এখন চলেন আম্মু রুমে। ফোনটা এখন দিবো না। আজকে নো ফোন নো টকিং।১০
মিহি মিনতি দুজন ই মায়ের রুমে যায়। মা তার দুই মেয়েকে দেখে কান্না করে দেয়। আজ এক মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে কয়দিন পর তো আরেক মেয়েকে ও দিতে হবে।
–আম্মু কান্না করছো কেনো।তুমি কান্না করলে কিন্তু আমি আর রুম থেকে বের ই হবো না(মিনতি)
চোখের পানি মুছে মেয়েদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে অন্য রুমে চলে যায় মিহির মা। মেয়েদের সামনে থাকলে কান্না চেপে রাখতে পারছে না।
অভ্রদের গাড়ি মিহিদের গেইটে এসে থামলো মাত্র। অভ্র গাড়ি থেকে নেমে ই চোখ যায় রাস্তা পূর্ব সাইডে। গাড়ির লাইটের স্পষ্ট আলোয় নাহিদ এর মুখটা দেখা যাচ্ছে। নাহিদকে দেখে ই অভ্রের রাগ মাথায় চেপে বসে।
অভ্র গিয়ে শার্ট এর কলার ধরে জিজ্ঞেস করে,
–তুই এখানে কী চাস।
–তা মিহিকে জিজ্ঞেস করলে ই জানতে পারবি।
অভ্র নাহিদকে ছেড়ে দিয়ে সোজা বাড়ির ভেতরে চলে যায়। ভেতরে গিয়ে মিহিকে খুজতে থাকে। মিহিকে খুজে পেয়ে ই টানতে টানতে বাড়ির পেছনে নিয়ে যায়। নিয়ে ই একটা থাপ্পড় মারে……
চলবে,