#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৪
কিছুক্ষনের মধ্যে দুজনে ই প্রিন্সিপালের রুমে গেলো।
মিহি সামনে তাকাতে ই দেখে সব টিচাররা মিহি আর অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে পাশে হাত বেন্ডেজ করা অবস্থা ইমরান দাড়িয়ে আছে।
—অভ্র তুমি ইমরানকে মেরেছো কেনো। আমি জানতাম তুমি খুব ভালো স্টুডেন্ট,এতোটা অভদ্রতা পরিচয় দিবে ভাবতে পারিনি।
— সরি স্যরি কিন্তু অ মিহিকে মারতে গিয়েছিলে।
–কেনো মিহিকে মারতে যাবে কেনো।
–মিহি..
–জ্বি স্যার
–তোমাকে কী ইমরান মারতে গিয়েছিলো।
—……..
–কথা বলছো না কেনো।
মিহি মাথা নিচু করে উওর দিলো
–না স্যার
এতে অভ্রের বেশ রাগ হলো। মিথ্যেটা কেনো বললো।
রাগে দুটো চোখ রক্তবর্ণ ধারন করে আছে।
–অভ্র ওয়ার্নিং দিলাম নেক্সট টাইম এমন কিছু হলে তোমাকে টি. সি দেওয়া হবে।
অভ্র আর কিছু বললো না সোজা প্রিন্সিপালের রুম থেকে বরে হয়ে বাইক নিয়ে সর্বোচ্চ স্পিডে চালানো শুরু করলো।
মিহি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে বারান্দায়। মিথ্যে বলে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে কিন্তু মিহির তো কিছু করার ছিলো না। এখন যদি সত্যি টা বলে দিতো তাহলে সবার সামনে চলে আসতো একটা চরিত্রহীন ছেলেকে মিহি ভালোবাসতো।
–মিহি মা চলো তোমাদের বাসায় যাবো আজ।
রেহনুমা ম্যাম এর কথায় কল্পনা ছেড়ে বাস্তবে ফিরলো।
মিহি খুশি হয়ে উওর দিলো,
–চলুন ম্যাম।
রেহনুমা ম্যাম মিহিকে বাসায় দিয়ে আসার কারণ আছে। জানে অভ্র রাস্তায় মিহির সাথে খারাপ আচরণ করতে পারে কারন মিহির কারনে আজকে অভ্রকে সবার সামনে ছোট হতে হলো। শুধু যে অভ্র ছোট হয়েছে তা কিন্তু নয় রেহনুমা ম্যামকে ও বেশ কথা শোনিয়েছে প্রিন্সিপাল।
রেহনুমা ম্যাম আর মিহি বেশ গল্প করতে করতে ই বাসায় গিয়ে পৌছে। বাসার সামনে যেতে ই রেহনুমা ম্যাম বলে উঠলো,
–এখন তুমি বাসায় যাও। তুমি বাসায় ডুকলে আমি বাসায় চলে যাবো।
–কেনো ম্যাম
–আজকে বাসায় যাবো না অন্য একদিন। নিজের খেয়াল রেখো।
–না ম্যাম আপনাকে যেতে ই হবে।
মিহি অনেক রিকুয়েষ্ট করে রেহনুমা ম্যামকে ভিতরে নিয়ে গেলো।
রেহনুমা ম্যাম মিহির বাবা মা কে সালাম দেয় এবং কেমন আছে তা জিজ্ঞেস করে। সোফায় উনারা বসে গল্প করছে মিনতি মুহূর্তে মধ্যে ই নাস্তা রেডি করে দেয়।
রেহনুমা ম্যাম মিনতির দিকে একদৃষ্টিতে কতোক্ষন তাকিয়ে থাকে মনে মনে বলে,
দুবোনকে ই আল্লাহ সৌন্দর্যতে ডুবিয়ে দিয়েছে।
–আচ্ছা তাহলে এবার উঠি অন্য দিন কথা হবে।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রেহনুমা ম্যাম চলে গেলেন।
মিহি ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে ক্লান্ত লাগছে খুব। বিছানায় শুয়ে পড়তে ই ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।
________________________
—মিহি সকাল সাড়ে নয়টা বাজে উঠ, কলেজ যাবি না।
মিহি ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে বললো,
–আম্মু মিথ্যা বলো না তো।
–কে মিথ্যা বলে। উঠে তো দেখ।
–আম্মু যাও তো ঘুমাতে দেও রোজ রোজ মিথ্যে বলে ঘুম থেকে উঠাও তুমি।
এবার মিহির আম্মু রেগে চলে গেলো। কিছুক্ষন পর মিহি চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকাতে দেখে নয়টা পয়তাল্লিশ বাজে। মিহি দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে কোনো রকম নাস্তা করে বাহিরে বের হতে হতে দশটা দশ বেজে গিয়েছে। সাড়ে দশটা থেকে ক্লাস বাসা থেকে কলেজের দূরত্ব প্রায় অনেকটুকু ই যেতে ত্রিশ মিনিটের মতো লাগে।
কিন্তু আজকে কী হলো একটা গাড়ি ও তো পাচ্ছি না।
—গাড়ি পাবে না উঠে এসো।
পিছনে ফিরে তাকাতে ই দেখলাম অভ্র শয়তানের নানা।
–যাবো না।
–আজকে গাড়ি পাবে না বল্লাম তো। ফার্স্ট ক্লাসে যে এক্সাম আছে তা কিন্তু দিতে পারবে না।
–আপনার কথা ই হবে নাকি, যাবো না আমি আপনার সাথে।
–আমি সব গাড়িকে নিষেধ করে দিয়েছি আগামী দুইঘন্টা ই রাস্তায় কোনো গাড়ি আসবে না। তাদের দু-ঘন্টা ভাড়া আমি দিয়ে দিবো।
–ইসসস কী আমার বিল গেইটস।
–এর অপেক্ষা ই আছি, এতো টাকা থাকলে তো তোমাকে বিয়ে ই করে ফেলি।
–আপনার এই বাকা খোমা দেখে কে বিয়ে করবে আপনাকে।
–এই কার বাকা খোমা(মুখ), তুৃমি জানো আমার পিছনে কতো মেয়ে ঘুরে।
–তাই তো বলি আপনাকে দেখতে পাবলিক টয়লেট এর মতো লাগে কেনো।
–মিহি।
–আমার কানে প্রবলেম আস্তে বলুন।
–ভয়রা, যাবে নাকি ক্লাস মিস দিবে।
মিহি এক্সাম এর কথা ভেবে উঠলো বাইকে।
–ধরো না কেনো পড়ে যাবা তো।
–পড়লে আপনার কী।
–বাইক থেকে পড়ে যেতে রাজি আছো তাও তুমি আমাকে ধরতে পারবা না।
–না।
–ওকে স্টার্ট দিলাম কিন্তু।
–কেনো বাইক স্টার্ট দিতে এখন আপনাকে দাওয়াত দিতে হবে নাকি।
–ওকে।
মিহি অভ্রকে না ধরে ই বসেছে। কী একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব পুরো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে।
অভ্র বাইক স্টার্ট দিয়ে স্পিড বাড়াতে ই মিহি ভয়ে অভ্রকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বসেছে।
–আস্তে চালান এতো জোড়ে চালালে পড়ে যাবো তো।
অভ্র এতো স্পিড আর বাতাসে কারনে গাড়ি চালাচ্ছে মিহির কথা কানে যাচ্ছে না। অভ্র মিহির কথা শোনছে না বলে অভ্রের কানের কাছে গিয়ে বলতে গেলো
–আস্তে চালান পড়ে যাবো।ভয় পাচ্ছি।
প্রতিটি কথা অভ্রে কানকে বার বার মিহির ঠোট জোড়া স্পর্শ করেছে।মিহি অবশ্য বুঝতে পারেনি এমন হবে।
অভ্র সাথে সাথে বাইক থামিয়ে দেয়। শরিরে কী এক শিহরণ বয়ে গেছে। প্রথম কোনো মেয়ের এভাবে স্পর্শ করা।
—আস্তে চালাতে বললাম, থামিয়ে দিলেন কেনো।
অভ্র মিহির দিকে একনজর তাকিয়ে আবার বাইক স্টার্ট দেয়।
ঠিক সময় মতো পৌছে যায় মিহি।
–স্পিডে চালাম বলে ই ঠিক সময় মতো আসতে পারলে।
মিহি কোনো কথা না বলে ই চলে গেলো।
__________________
রাতের বেলা,
মিহি সোফায় বসে বসে পড়ছিলো।
–রুমে বসে পড় এখানে পড়লে পড়া মুখস্ত হবে না।
–রুমে একা একা ভালো লাগে না মা।
হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ আসলো,
–যা দরজা খুলে দিয়ে আস।
–আমাকে শুধু কাজ দেও।
–চোখের সামনে থাকলে কাজ দিবো ই,
মিহি বিরক্ত নিয়ে দরজা খুলে দেখে অভ্র। মিহির ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে বাসায় বাবা সহ সবাই আছে কী বলতে বসলো অভ্র। আবার কোন বিপদ আসছ….
চলবে
#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৫
মিহি বিরক্ত নিয়ে দরজা খুলে দেখে অভ্র। মিহির ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে বাসায় বাবা সহ সবাই আছে কী বলতে বসলো অভ্র। আবার কোন বিপদ আসছ।
–ভেতরে যেতে দিবে না নাকি।
–কেনো এসেছেন আপনি।
–তোমাকে নিয়ে যেতে।
কথাটা বলার সাথে সাথে মিহি দরজা অফ করে দেয়। অভ্র মেকি হাসি দিয়ে আবার কলিং বেল বাজানো শুরু করে।
–মিহি কী হয়েছে দরজা খুলছিস না কেনো।
–মা ডাকাত এসেছে মনে হয় এইজন্য দরজা খুলতে ভয় লাগে।
–বেদ্দপ মেয়ে দরজা খুলে তো দেখ। তুই খুলতে ভয় পেলে তোর বাবাকে ডাক।
–না আম্মু আমি ই খুলছি।
অভ্র কলিং বেল বাজাতে ই চলছে।
–এই আপনি এতো অভদ্র কেনো।
–তাতে তোমার কী।
–যান এইখান থেকে।
–তোমাকে না নিয়ে যাবো না।
হঠাৎ মিহির মা বলে উঠলো,
–এই তুই কার সাথে এতো কথা বলছিস রে।
–বললাম তো মা ডাকাত এসেছে।
–হে মাকে বলো ডাকাত এসেছে তোমার ছোট মেয়ের মন চুড়ি করতে। (অভ্র)
–লজ্জা থাকলে আর কলিং বেল বাজাবেন না।
–কাপড় তো পড়ে ই আসছি।
–ইচ্ছে হলে খুলে ফেলুন।
কথাটা বলে ই মিহি আবার দরজা বন্ধ করে দিলো।
এবার অভ্র কলিং বেল বাজাচ্ছে দরজা ও ধাক্কাচ্ছে।
মিহির মা এবার এসে মিহিকে সরিয়ে দরজা খুলে দিলো।
দরজা খুলতে ই দেখে রেহনুমা ম্যাম সাথে দুইটা ছেলে।
মিহির মা হাসি মুখে ভেতরে ডুকতে বললেন। মিহি হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এ কী হলো। উনারা ই বা কেনো আসলেন।
সাথে অনেকগুলো মিষ্টি ফল মিহির জন্য চকলেট। সবগুলো মিহির হাতে দিতে ই মিহি ভেতরে নিয়ে যায়।
মিহির মা সবাইকে নাস্তা দিয়েছে।
মিহির মা বাবা, রেহনুমা ম্যাম, অভ্র, তিব্র সবাি এক সাথে বসে বিভিন্ন গল্প করছে।
—ভাইজান আসল কথাটা বলে ই ফেলি(রেহনুমা)
–কী আসল কথা আপা(মিহির বাবা)
-এই হলো আমার ছেলে তীব্র,পাশেরটা ছোট ছেলে অভ্র। আপনার বড় মেয়েকে আমার বড় ছেলের জন্য দিতে হবে।আপনি কী বলেন।
—আলহামদুলিল্লাহ, এটা তো খুশির খবর।
–জ্বি ভাইজান এখন মেয়েকে নিয়ে আসেন আমরা দেখি।
–জ্বি আপা আপনারা বসেন আমি এখন ই মেয়েকে নিয়ে আসছি।
___________
মিহি বসে বসে চকলেট খাচ্ছে। মিনতি পাশে ই বসে আছে।মিহির মা দ্রুত রুমে ডুকে বলে,
–মিনতি রেডি হয়েনে তো।
মিহি চকলেট খেতে খেতে বলে,
–রাতের বেলা করে কী নানুর বাসায় যাবে আম্মু। আমি চকলেট খেয়ে রেডি হচ্ছে ওয়েট করো।
–তুই রেডি হবি কেনো আর কীসের নানুর বাসা।
–তাহলে তুমি মিনতিকে রেডি হতে বললে কেনো।
–তোর রেহনুমা ম্যাম এর বড় ছেলে তীব্রের জন্য মিনতির বিয়ের কথা বলতে এসেছে।
মিহি চকলেট খাওয়া অফ করে মিটমিট করে তাকিয়ে আছে। এ কী শোনলাম।
মা মিনতিকে রেডি করে দিচ্ছে। মিহি শুধু ভাবছে এটা কী হচ্ছে।
মিনতিকে নিয়ে গেলে। মিহি একা রুমে বসে আছে হাতে ফোন। অভ্র মেসেজ করেছে। মিহি কোনো উওর দেয়নি।
মিনতির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তীব্র, অভ্র এ অবস্থা দেখে পায়ে জোরে আঘাত করে।এতে তীব্রের ঘোর কাটলো।
তীব্র অভ্রের দিকে রাগি চোখে তাকাতে ই অভ্র বললো,
–সবার সামনে ই শুভদৃষ্টি সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিস নাকি।
–চুপ কর তুই।
–মুরব্বিরা আছে একটু বুঝে শোনে তাকাস।
দুই ভাইয়ের মধ্যে কথা বলতে বলতে মিনতি ভেতরে চলে গেলো।
–এই যা চলে গেলো।(তীব্র)
— তুই ও যা সাথে।
–ভাই একটা কাজ করে দে।
–কী বল।
–ওর সাথে আমাকে কথা বলিয়ে দে আলাদা।
অভ্র বড় বড় চোখ করে তীব্রের দিকে তাকিয়ে আছে।
–দে না প্লিজ।
–আচ্ছা ওয়েট মাকে বলে দেখি।
–তুই পারবি আমি জানি।
–মা বলছিলাম কী ভাইয়া আর মিনতি আপুকে একটু কথা বলতে দেওয়া হক।(অভ্র)
–হে তাও ঠিক।
রেহনুমা মিহির বাবা সাইফুল সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলেন ভাইজান আপনি কী বলেন।
–এখনকার যে রীতি মানে। তাদের ও তো দুজনের কথা থাকতে পারে তাই না।যাও বাবা কথা বলে এসো।
____________________________
মিনতি মিহির হাত ধরে দাড়িয়ে আছে। অভ্র আর তীব্র বিছানায় বসে আছে। তীব্র অভ্রের দিকে কিছুটা ঝোঁকে বললো,
–তোরা দুইজন থাকলে কিভাবে কথা বলবো।
–কী নিয়ম রে ভাই খাইতে দিলে ঘুমাইতে চাস। সব কিছু রেডি করে দিলাম আমি এখন আমি থাকলে তোর সমস্যা।
–তুই একা না সাথে ওর বোন ও আছে।
অভ্র উঠে গিয়ে বিনা বাক্যে মিহির হাত ধরে টান দিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে মিহি মিনতির হাত জোর করে ধরে রাখে।
–ভাবি আপনারা কথা বলুন তো আমি আর মিহি এখনে আপনাদের ডিস্টার্ব করতে চাই না।
–আমার বোন একা থাকবে না।
–তুমি বললে ই হলো নাকি। একা কথা বলতে দেও।
–আপনি চলে জান।
–কথা না শোনলে কিন্তু অন্য ব্যবস্থা করবো।
–কী করবেন আপনি।
অভ্র মিহির কাছের কাছে এসে বললো,
–কোলে তোলে নিয়ে যাবো।
কথাটা বলার সাথে সাথে মিহি হাত ছাড়িয়ে নিলো।
অভ্র হাসি মুখে মিহিকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।৩৩
দরজাটা হালকা চাপিয়ে অভ্র মিহি দুজন ই বাহিরে দাড়িয়ে আছে। মিহি একটু পর পর দরজায় কান পাতে কী বলে শোনার জন্য।
–এই তুমি ওদের কথা শোনো কেনো।
–আপনার ইচ্ছে হলে আপনি ও শোনতে পারেন।
অভ্র দেওয়ালের একসাইডে সুন্দর করে দাড়িয়ে ছিলো।
মিহিকে এক হাত ধরে টান দিয়ে একবারে অভ্রের খুব কাছে নিয়ে আসে। মিহি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
মিহির চোখ বন্ধ দেখি অভ্র হালকা ফু দেয় মুখের উপর এতে মিহি চোখ খুলে তাকায়।
অবাধ্য চুলগুলো সরিয়ে কানের সাইডে দিয়ে অভ্র মিহির কানের কাছে গিয়ে বললো,
–তীব্র আর মিনতি আপুর সাথে যদি তোমার আর আমার বিয়ে হয় তাহলে কেমন হবে টিয়াপাখি……
চলবে
#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৬
তীব্র আর মিনতি আপুর সাথে যদি তোমার আর আমার বিয়ে হয় তাহলে কেমন হবে টিয়াপাখি।
অভ্রের প্রতিটি কথায় মিহির ভেতর শিহরণ সৃষ্টি করছে। এরকম কাছে আসাটা মিহি নিতে পরছে না। জোরে ধাক্কা দিয়ে অভ্রকে সরিয়ে দিয়ে মিহি রুমে ডুকে যায়।
মিহি রুমে ডুকতে ই তীব্র ভয় পেয়ে যায়। মনে হচ্ছে মিহির রুমে ডুকাটা আশা করেনি। মিহি হাত আগের ন্যায় শক্ত করে ধরে আছে মিনতি।
–অনেক কথা বলা হইছো এখন চল বাকি কথা বিয়ের পর(মিহি)
তীব্র লজ্জায় কোনো কথা ই বলছে না।
———————–
বাসায় আসা পর,
রেহনুমা আহমেদ ঘুমাতে চলে গেলেন। অভ্র ফ্রেশ হয়ে বের হলো। তীব্র অভ্রের সাথে কথা বলছে না তা দেখে অভ্র জিজ্ঞেস করলো,
–কী হলো ভাই কথা বলছিস না কেনো।
–আচ্ছা আমাকে বল তো ঐ টাইমে ওর বোন রুমে ডুকলো কীভাবে।
— কেনো তোদের বাসর রাত ছিলো নাকি যে রুমে ডুকা যাবে না।কী শুরু করেছিস, আর কী জীবনে কথা বলতে পারবি না নাকি।
–মিনতির নম্বরটা ও আনতে পারিনি। আনলে তো এখন কথা বলতাম।
–ওয়েট আমি ম্যানেজ করে দিচ্ছি।
–তুই কীভাবে মিনতির নম্বর পাবি(তীব্র)
–ভাবির বোন মিহির কাছ থেকে।
–আরে বাহ্ তোর গতি তো দেখছি 5G আমি যা পারলাম না তুই তা করে আসলি।
(তোর মিনতির সাথে বিয়ের কথা বলার আগে থেকে মিহিকে আমি ভালোবাসি) কথাটা মনে মনে বললো অভ্র।তাও তীব্র যেনো না বুঝতে পারে তার জন্য বললো,
–হলো তো যার জন্য চুরি করি সে ই বললো চোর। তোর জন্য ই তো মিহির নম্বরটা নিলাম যেনো তুই ভাবির সাথে কথা বলতে পারিস।
তীব্র আর কিছু বললো না। অভ্র বারান্দায় গিয়ে মিহির নম্বরে কল দিলো,
মিহি কল না দেখে ই রিসিভ করলো,
–জানপাখি কী করো,
–সরি রং নম্বর
কথাটা বলে ই মিহি কল কেটে দিলো।
অভ্র আবার কল দিলো। অভ্র বুঝতে পেরে মিহি আর কল রিসিভ করলো না।
অভ্র বেশকিছুক্ষন কল দেওয়ার পর একটা মেসেজ পাঠালো,
–এখন যদি কল না ধরো তাহলে কালকে তোমার বাসায় গিয়ে বলবো তুমি আমাকে ভালোবাসো বিয়ে করতে চাও।
মেসেজটা দেখার পর সাথে সাথে কল রিসিভ করলো মিহি,
–টিয়াপাখি।
— আমি টিয়াপাখি না।
–হুম আমার জান।
–এইজন্য ই বললাম রং নম্বর।
–হে হয়েছে ভেবো না তোমার সাথে কথা বলার জন্য কল দিয়েছি। মিনতি আপুর সাথে কথা বলবো দেও।
মিহি আর কোনো কথা না বলে মিনতিকে ফোনটা দিতে গেলো।
–আমি ফোন দিয়ে কী করবো।
–কথা বলে দেখ।
মিনতিকে ফোন দিয়ে চলে আসলো। রুমে এসে নিশ্চিতে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।
___________________
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে দাতে নখ কাটতে কাটতে সোফায় বসে আছে মিহি। প্রবলেম একটা ই মিহিট ক্ষুধা লেগেছে কিন্তু মিহির আম্মু কাজ করতেছে খাওয়ানের সময়টুকু তার কাছে নেই। অনেক কাজ যে আজকে অভ্রদের বাসা থেকে সব মুরুব্বীরা আসবে ডেট ফিক্সড করতে।
মিহির হাতে খেতে একদম ভালো লাগে না তাই আর খাওয়া ও হলো না।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো, অভ্রদের বাসা থেকে সবাই চলে এসেছে। মিনতিকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিচ্ছে মিহি।
অভ্র আসার পর থেকেই দুচোখে শুধু তার ভালোবাসাকে খুজতেছে কিন্তু কোথাও খুজে পাচ্ছে না। বার বার ইচ্ছে করছে জিজ্ঞেস করবে কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করবে তা ই খুজে পাচ্ছে না। সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করলে মিনতিকে নিয়ে আসা হলো। এই সুযোগে অভ্র মিহিকে খুজতে গেলো। মিহির মা সামনে পড়তে ই সকল লজ্জা ত্যাগ করে জিজ্ঞেস করলো,
–আন্টি সবাইকে দেখলাম মিহিকে তো দেখি নাই। উনি কী অসুস্থ।
–না বাবা। আসলে সকালে কাজের জামেলার জন্য মিহিকে খাইয়ে দিতে পারিনি। তাই এখন ও না খেয়ে বসে আছে রুম থেকে ও বের হয় না। বড্ড রাগি মেয়ে আমার জামেলা শেষ হলে আমার কলিজারটার রাগ ভাঙ্গাতে হবে।(মিহির মা)
–আন্টি আমাকে খাবার দিন আমি দিয়ে আসি।
–খাবে না বাবা।
–আমি চেষ্টা করে দেখি। আপনি খাবার রেডি করে দেন।
মিহির মা কিছু একটা ভেবে অভ্রকে খাবারের প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
–পাশের রুমে আছে দেখো খায় কি না।
অভ্র খাবারের প্লেট নিয়ে দরজায় দাড়িয়ে বললো,
–আসতে পারি ম্যাম
–না।
–তুমি না করলে ই আমি শোনবো।
–তাহলে প্রথমে ডুকে যেতে অনুমতি নিতে গেলেন কেনো।
–আমার ইচ্ছে তাই।
মিহি অভ্রের কথা শোনে আরো রেগে গেলো।
অভ্র টি টেবিল এর উপর খাবার প্লেটটা রেখে মিহির সামনে চেয়ার টেনে বসে বললো,
–আচ্ছা বলো টিয়াপাখি তুমি কী নিজ হাতে খাবে নাকি আমি খাইয়ে দিবো।
–আমি খাবো না।
–ওকে খাবো না মানে হচ্ছে আপনি খাইয়ে দেন।
–আমি এটা কখন বললাম।
–তাহলে নিজ হাতে খাও নয়তো আমি খাইয়ে দিবো।
মিহি একরাশ বিরক্ত নিয়ে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলো।
অভ্র বিরক্ত না করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে বলে গেলো আবার দেখতে আসবে খেয়েছো কি না।
মিনতিকে দেখে সবার ই পছন্দ হয়েছে। তাই তারা বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে আগামী শুক্রবার।
মিহি শুনে লাফালাফি শুরু করে দেয় একমাত্র বোনে বিয়ে। কতো মজা শপিং করা,হলুদ,মেহেদি, বিয়ে, বৌভাত ওফফ ভাবতে ই কতো আনন্দ লাগছে। অভ্র দূর থেকে দাড়িয়ে দেখছে আর হাসতেছে।
___________
রাতে ঘুমের মধ্যে ই মিহির শরীরের কেউ কোথাও আটকে রেখে এমন মনে হচ্ছে। মিহি ভয় পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। মিহি কথা বলতে পারছে না মুখ বাধা, হাত পা ও বাধা মিহি এমন অবস্থায় চিৎকার ও দিতে পারছে না। চোখ দিয়ে শুধু অনবরত পানি পড়ছে….
চলবে