#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩২(অন্তিম পর্ব)
বিয়ের আজ দুমাস পূর্ণ হলো,রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। অভ্রের বুকের উপর গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে মিহি। অভ্র মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে আর ভাবছে। এই দুমাস জীবনের সবচেয়ে ভালো কেটেছে সারাজীবন যদি এমন কাটতো। চোখ বন্ধ করে নিজে ও ঘুমানোর চেষ্টা করলো। হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে সামনে তাকাতে ই মা বলে জোরে ডাকে।
জোরে শব্দ শুনে মিহি জেগে যায়। চোখ মেলতে ই রেহনুমা আহমেদকে সামনে দেখতে পেলো।
রেহনুমাকে দেখে মিহি একটু ভয় পায় না। চুপচাপ বসে আছে।
–অভ্র এই মেয়ে এইখানে কেনো।
–এই মেয়ে না মা, বলো বউমা।
অবাক হয়ে রেহনুমা আহমেদ বললো,
–একবার ও আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করলি না।এই মেয়ে তোমাকে এতো ভয় দেখালাম তাও তুমি বিয়েটা করলেই।
–মা দেখো আমরা যেহেতু সুখে আছি এখানে তোমার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
–তুই সুখে আছিস বাবা।
–দেখে মনে হচ্ছে না মা?
–আমার ইচ্ছে ছিলো দুইটা ছেলেকে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বিয়ে করাবো। এতে আমার আত্মীয় বাড়বে।
–এই জন্য তুমি আমাদের আলাদা করতে চেয়ে ছিলে। তোমার এই ঠুকনো ইচ্ছে কাছে আমাদের সুখটা হেরে যেতো মা। সকল মান অভিমান ভুলে কী মা আমরা ভালো থাকতি পারি না?
–তুই ভালো থাকলে আমি সব পারবো।
রেহনুমা আহমেদ চোখ মুছতে মুছতে রুম ত্যাগ করলো।
আমি অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললাম,
–না বলে চলে আসলো হঠাৎ?
–হয়তো আমাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছে। এসে নিজে ই সারপ্রাইজ হয়ে গেলো।
–নিচে চলো। তোমার বোন ও এসেছে মনে হয়।
–এইরকম বোনের আমার কোনো প্রয়োজন নেই।নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বুঝে না।মা কতো কান্না করে তাও এক মিনিট কথা বলার সুযোগ হয় নাই, এই মেয়েটার।
–হয়েছে বাদ দেও। কোলে করে নিবো না এমনি আসবা।
–সিরিয়াস মুডো ও তোমার এতো প্রেম কোথা থেকে আসে।
বলে ই উঠে নিচে গেলাম। নিচে যেতে ই দেখলাম আমার বোন আর অভ্রের মা দুজন ই খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা মগ্ন। আমাকে দেখে ই মিনতি আমার দিকে আসলো, রাগি চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন ই অভ্র বলে উঠলো।
–এখন আপনার বোনটা পড়ে আমার বউটা আগে। আপনার জ্যা হয় বুঝে শুনে কথা বলবেন।
–অভ্র
–চেচিয়ে লাভ নেই স্বার্থপর বোন আমার নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু ই বোঝে না।
আমার কথাটা শোনার পর, আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
–সরি বোন আমাকে মাফ করে দে প্লিজ আমি এতোদিন বুঝিনি তুই আমার জন্য তোর ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে চলে যেতে চেয়েছিস। অথচ আমি নানা অযুহাতে তোদের সাথে কথাটা পর্যন্ত বলিনি।
মিনতির এমন কান্ডে আমি অভ্র দুজন ই বিস্মিত হলাম। এটা তো কাম্য ছিলো না।
–বোন তুই আমাকে মাফ করে দিস আমি মায়ের সাথে দেখা করে আসি।
–আরে এতো রাতে তুই একা কোথায় যাবে।
–কিছু হবে না তীব্রকে নিয়ে যাবো।
এটুকু বলে ই মিনতি তীব্র ভাইয়াকে নিয়ে চলে গেলো।
সোফায় চোখ পড়তে ই দেখলাম মা চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। অভ্র ইশারায় আমার আমাকে মায়ের সামনে যেতে বললো। আমি ও গেলাম। মায়ের পাশে বসে বললাম,
–মা আপনি বললে কিন্তু আমি অভ্রকে ছেড়ে চলে যাবো। শুধু একবার মুখ ফুটে বলুন।
এটা বলার পর মা কোনো কথা বললো না।তাই আমি আবার বললাম,
–মা আমি চলে যাবো। শুধু আপনি বলেন। প্রত্যেকটা মা ই সন্তানের ভালো চায় আপনি চান। তাই আপনি বললে ই আমি চলে যাবো।
এবার ও কোনো কথা বললো না।
–থাক মা বুঝলাম আপনার কিছু বলতে হবে না। চুপ করে থাকা সম্মতির লক্ষন। আমি চলে যাবো
এটা বলে উঠার সাথে সাথে বললেন,
–তোমার সাথে আমি যা করেছি তারপর কোন মুখে কথা বলবো বলো।
–মা আমি সব ভুলে গিয়েছি। আপনি ও ভুলে গিয়ে আমাকে মেনে নিন।
মা আমাকল জড়িয়ল ধরে কান্না করে দিলো। দূর থেকে তাকিয়ে দেখলাম অভ্রের চোখে ও পানি।
__________________
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে ই দেখি, মা আর মিনতি আপু খাবার বানাচ্ছে। অবশ্য অলরেডি দশটার মতো বাজে। আজকে অফিসে যাবো না অভ্র অনেক্ষন আগে ই চলে গেছে। আমি কিচেনে ডুকতে ই মিনতি আর মা চিল্লিয়ে উঠলো,আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
–কী হলো
–কিচেনে ডুকছিস কেনো।
–হেল্প করবো তোমাদের সাথে।
–আজকে আমরা দুজন রান্না করবো তুই খাবি।
–কেনো। তোমরা কালকে মাত্র এসেছো রেস্ট করো
–নাহ্ সোফায় গিয়ে বসে বসে রান্নার স্মেইল নে।
–আপু আমি রান্না করতে পারি।
–কিচেনে তো ডুকিস না চম্পার কাছ থেকে সব কিছু শুনেছি।
চম্মার দিকে তাকাতে ই দেখলাম ছত্রিশটা দাত বের করে খিলখিল করে হাসছে। আমি আর কি করবো সোফায় গিয়ে বসে বসে টিভি দেখতে লাগলাম।
রান্না শেষ হওয়ার সাথে সাথে অভ্র বাসা চলে আসে।
আমি খাবার টেবিলে বসতে ই আমার পাশে অভ্র বসলো,
–কী ব্যাপার আজকে এতো দ্রুত চলে আসলা।
–বউ ছাড়া ভাল্লাগে না।
–ঢং
–মায়ের রান্না মিস করা যাবো না। খেয়ে নেও।
সবাই এক সাথে খেতে বসলাম। অনেক হুল্লোড়েরে আমাদের দিন কাটতে লাগলো।
মনটা খুব ভালো লাগছে, এভাবে ই আল্লাহ সারাটা জীবন আমাদের পরিবারকে সুখে রাখুক।
সকাল বেলা,
আটটা বাজে আমি উঠেছি অনেক্ষন হলো অভ্র যেভাবে জড়িয়ে ধরে আছে। নিজেকে ছাড়ানো বৃথা চেষ্টা করতেছি।
–অভ্র
–প্লিজ ডেকো না আর একটু ঘুমাবো।
–তুমি ঘুমাও আমাকে যেতে দেও। সবার জন্য নাস্তা বানাতে হবে তো।
–সে চম্পা বানিয়ে নিবে।
–আরে আজব তো তোমার সমস্যা কী।
–আমার সমস্যা তুমি।আবার সমাধান ও তুমি।
–এসব প্রেম আলাপ বাদ দিয়ে একটা কথা বলো তো। ঐদিন যদি আমি সত্যি চলে যেতাম তাহলে তুমি কী আরেকটা বিয়ে করতে।
–তুমি ছাড়া কারো কথা কখনো ভাবিনি আর ভাববো ও না। আর তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্তে ও থাকতে পারি না। ভালোবাসা তুমি আমার, হৃদ স্পন্দন তুমি আমার, আসক্তি তুমি আমার তাই তো আমি তোমাতে আসক্ত।
কথাটা বলে ই আলতো করে ওষ্ঠদ্বয় কপালে স্পর্শ করলল।
সমাপ্ত।