তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-৩১

0
1350

#তোমাতে আসক্ত২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩১

সকালের সোনালি রোদ চোখে পড়তে ই বালিশ দিয়ে মুখ ডেকে নিলো মিহি। অভ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো প্রেয়সী দিকে । অভ্র বিরক্ত হয়ে বালিশটা সরায়ে ফেলতে ই মিহি লজ্জায় চাদর দিয়ে মুখ ঢাকে। কালকে রাতের কথা মনে পরতে আরো লজ্জা লাগে, তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত ছিলো এটা, দুজন দুজনকে আপন করে নিয়েছে।
অভ্র ব্যাপারটা বুঝতে পেড়ে বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

ফ্রেশ হয়ে বের হতে ই দরজার বাহির থেকে ডাক পড়লো,

–ভাইয়া আপনাকে খালামনি ডাকছে।

কণ্ঠটা শুনে বুঝলো মিনির কোনো কাজিন এটা। অভ্র দরজা খুলতে যাবে ঠিক তখন ই দেখলো দরজা বাহির থেকে নল করা।

–কী ব্যাপার লক করলো কে।

দরজার ওপাশ থেকে শব্দ আসলো,

–এতোগুলো শ্যালিকার কথা আপনি ভুলে গেলো ও কালকে রাতে আমাদেরকে ধোকা দেওয়ার কথা আমরা ভুলিনি। হয়তো টাকা দিন নয়তো রুমের ভেতরে বসে থাকুন। এটা ও মনে রাখবেন খালামনি আপনাকে ডেকেছে।

–দরজা না খুললে কী করে দিবো।

–নো চালাকি।

–চালাকি কই করলাম।

–কালকে রাতের কথা কেউ ভুলে যাইনি।

–আচ্ছা দরজা খোল টাকা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি।

–জানালা খুলে টাকা গুলো দিন, তাহলে ই দরজা খুলা হবে।

অভ্র আর উপায় না পেয়ে জানালা দিয়ে ই টাকা দিলো৷ আর দরজা ও খুলে দিলো।

অভ্র এই পিচ্চিগুলোর জন্য টাকা রেখেছিলো ঠিক ই কিন্তু একটু মজা করার জন্য টাকাটা রাতে দেয়নি।

মিহির মায়ের রুমের দরজায় দাড়িয়ে বললো,

–আসবো মা।

–আরে অভ্র বাবা আসো।

–কেমন আছেন মা। আপনি কর অসুস্থ।

–না বাবা তেমন কিছু না। মিহির বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ই আমার শরিরের অবনতি হচ্ছে। যা ই হক আমার মেয়েটাকে আমি ভালো মানুষ এর কাছে তুলে দিতে পেরেছি এখন আমি মরে ও শান্তি পাবো।

–কী বলেন মা এসব।

–ঐদিন যদি আমি ঠিক সময় না পৌঁছাতে পারতাম তাহলে হয়তো আজ ও তোমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি থাকতো।

(ফ্লাশব্যাক,

মিহির এসব কথা আর সহ্য করার মতো না নিজের মায়ের বিরুদ্ধে এসব কথা শুনতে কারো ই ভালো লাগবে না। রুম থেকে বের হতে ই অভ্র মিহির মাকে দেখতে পায়।

–আপনি।

–চলো বাবা নিচে গিয়ে কথা হবে।

নিজেকে স্বাভাবিক রেখে অভ্র উওর দিলো।

–কীসের কথা।মিহির সাথে দেখা করে নিন।

–না বাবা আসছিলাম, আমার মেয়েটার সাথে দেখা করতে কিন্তু এসে এমন পরিস্থিতি দেখতে হবে তা বুঝতে পারিনি।

— তাহলে সব শুনেছেন, আপনি। এভাবার ভাবুন তো আপনার মেয়েটা কতো নিচে নামতে পারে শেষ পর্যন্ত আমার মাকে নিয়ে এসব বললো।

–নিচে চলো বাবা তোমার সাথে আমি কথা বলবো।

অভ্র আর কোনো কথা না বলে নিচে গেলো।

–শুনো বাবা মিহি যা বলেছে সব ই সত্যি। তোমার কষ্ট লাগলে ও এটা সত্যি যে তোমার মা মিহিকে পিছন করতো না। চাইতো তোমাকে অন্য কাউকে বিয়ে করাতে যার কারণ এসব ঘটনা ঘটলো।

মিহির মা একে একে সব ঘটনা খুলে বললো। সব কিছু শুনে অভ্র বললো,

–মা এগুলো আপনি আগে বলেননি কেনো।

–বাবা কী করে বলতাম আমার আরেকটা মেয়ে যে তোমাদের বাড়িতে আছে। তোমার মা বলেছে যদি তোমার কানে টু শব্দটি ও যায় তাহলে মিনতি এ বাড়িতে থাকতে পারবে না। যার কারনে আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু এখন তো সময় হয়েছে বলার। আর চুপ করে থাকাটা আমার বোধহয় ঠিক হবে না। তুমি আমার মেয়েটার সাথে আর খারাপ ব্যবহার করো না বাবা।

এটা বলে মিহি মা কান্না করে দিলো। অভ্রের ও খুব খারাপ লাগলো। নিজের অজান্তেই মিহিকে অনেকটা কষ্ট দিয়েছে এবার ভালোবাসা দিয়ে সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে হবে।

–বাবা শুনো আমি যে এসেছি আর তোমাকে এসব কথা বলেছি তা কখনো মিহিকে বলবে না।

এটা বলে ই মিহির মা ঐদিন চলে আসে।)

চোখ মুছে বাস্তবে ফিরলো মিহি মা। অভ্র চলে গেলো নাস্তা করে তো এখন চলে যাবে। বাড়িটা আবার ফাকা হয়ে যাবে।
_________________________________

অভ্র রুমে ডুকতে ই দেখলো মিহি আগের ন্যায় চাদর দিয়ে মুখ ডেকে শুয়ে আছে। এটা অভ্র পাচকোল করে চাদর সহ ওয়াশের নিয়ে পানি ডেলে দিয়ে দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে চলে আসলো।

–এই দরজা খুলো।

অভ্র কোনো উওর দিলো না। তাই আবার ডাকলাম।

–দরজা খুলো।

এবার ও কোনো উওর দিলো না। আবার বললাম।

–দরজা খুলো।

এবার ও অভ্র কোনো শব্দ করলো না। এবার আমি জোড়ে চিৎকার দিয়ে বললাম,

—গোসল সেরে চাদর পড়ে বের হবো নাকি। আমার ড্রেস দিয়ে যাও।

অভ্র উঠে গিয়ে ড্রেস হতে নিলো। দরজা খুলে দিয়ে ড্রেস দিতে যাবে ঠিক তখন ই টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে গিয়ে আমি ও মাথায় পানি ডেলে দিলাম।

অভ্র রাগি মোড নিয়ে বললো,

–কী করলে এটা।আমি মাত্র গোসল করলাম।

–এতোক্ষন ডাকার পর ও কোনো রেসপন্স করোনও কেনো।

–এই জন্য ভিজিয়ে দিবে নাকি।

–প্রতিশোধ নিলাম।

অভ্র টান দিয়ে নিজের সাথে আমাকে একবারে মিশিয়ে নিয়ে বললো,

–প্রতিশোধ কিন্তু আমি ও নিতে পারি। অফিস লেট হয়ে যাবে তাই ছাড়া পেলে।

অভ্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কাপড় চেঞ্জ করে নিলো। আমি ও ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। দ্রুত রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে চলে গেলাম। নাস্তা শেষ করে, দুজন অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।

অফিসের সামনে এসে অভ্র আমাকে নামিয়ে গাড়ি পার্ক করতে গেলো। ঠিক তখন ই দুইটা মেয়ে আমার অপজিটে দাড়িয়ে আমকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিলো।

–আমাদের স্যার তো কোনো মেয়ের দিকে চোখ ফিরে ও তাকাতো না হঠাৎ এই মেয়ের সাথে এতো মেশছে যে।

–অরু ম্যাম কী এসব দেখে না নাকি। কেউ স্যারের সাথে বেশি কথা বললে ও তো ঐ মেয়ের চাকরি নট করে দিতো, এখন কী এসব দেখে না নাকি।

–আরে কিছু মেয়ে আছে দেখবি গায়ে পড়ে থাকে সব সময় এই মেয়েটা ও এমন ই। ভালো মেয়ে হলে কী আর একটা ছেলের সাথে এভাবে দিন কাটায়। কে জানে রাত ও কাটায় নাকি। চরিত্র ঠিক আছে বলে তো মনে হয় না।

কথাগুলো শুনে আর সহ্য হলো না। সাথে সাথে গিয়ে মেয়েটাকে সজোরে কয়েকটঅ থাপ্পড় মারলাম।

অভ্র দূর থেকে দেখে দৌড়ে আসে।

–মিহি কী হয়েছে এমন করছো কেনো।

আমি আর কান্না আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। কান্না করতে করতে সবগুলো কথা অভ্রকে বললাম। কথাগুলো শোনার পর অভ্রের চোখগুলো লাল হয়ে গেছে।

সাথে সাথে অফিসের সব স্টাফ ডেকে এক সাথে করলো,

–সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছি। আপনারা আপনাদের লিমিট ক্রস করবেন না। আমার পাশে যাকে দেখছেন, মিহি উনি আমার বিবাহিতা স্ত্রী। আশা রাখি আজ থেকে কারো মনে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
এটুকু বলে ই অভ্র মিহিকে নিয়ে বেরিয়ে আসলো।

_____________________________

বিয়ের আজ দুমাস পূর্ণ হলো,রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। অভ্রের বুকের উপর গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে মিহি। অভ্র মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে আর ভাবছে। এই দুমাস জীবনের সবচেয়ে ভালো কেটেছে সারাজীবন যদি এমন কাটতো। চোখ বন্ধ করে নিজে ও ঘুমানোর চেষ্টা করলো। হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে সামনে তাকাতে ই মা বলে জোরে ডাকে।
জোরে শব্দ শুনে মিহি জেগে যায়। চোখ মেলতে ই রেহনুমা আহমেদকে সামনে দেখতে পেলো।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে