#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২
–কালকে আমি হাতে চুমু খেয়েছি তাই হাত বিমবার দিয়ে ধুয়েছো। আজকে যদি অন্য কোথাও দেই তাহলে তো ধুতে গিয়ে খেতে হবে।
কথাটার মানে বুঝতে পেরে মিহি ভয় পেয়ে যায়।
অভ্র আস্তে আস্তে মিহির দিকে আসতে থাকে। মিহি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
–অভ্র…
কারো বজ্রকন্ঠ শোনে মিহি ও চোখ ফুলে ফেলে অভ্র ও পেছনে ঘুরে তাকায়। পেছনে ঘুরে তাকাতে ই দেখে অভ্রের মা রেহনুমা অাহমেদ এই কলেজের ইংরেজি টিচার।
–তুমি মেয়েদের বিরক্ত করছো কেনো।এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোমাকে, এতো অবক্ষয় হয়েছে তোমার। মিহি মা চলো আমার সাথে
এই বলে মিহিকে নিয়ে কলেজে প্রবেশ করে রেহনুমা আহমেদ।
অভ্র মিহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
–মা আমি কাউকে তো ডিস্টার্ব করি না শুধু মিহিকে ছাড়া।
মনে মনে কথাটা বলে বাইক নিয়ে চলে গেলো অভ্র।
——————————-
–তুমি কী কলেজে নতুন এসেছো।
–জ্বি ম্যাম নতুন বলতে একমাস তো হয়ে ই গেছে।
–ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার?
–জ্বি ম্যাম। গ্রুপ সাইন্স।
–তাহলে আমার ক্লাস আছে তোমাদের। এতোদিন ছুটিতে ছিলাম। আচ্ছা আসি আমি ক্লাসে দেখা হবে। আমার ছেলেকে ক্ষমা করো মা ও একটু এমন ই।
এটুকু বলে ই রেহনুমা আহমেদ চলে গেলো। মিহি ওর তার ক্লাসের চলে গেলো।
মিহি এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। বড় বোন মিনতি অনার্স শেষ করেছে। এখন আপাতত কিছু ই করে না। অভ্র, ইমরান অনার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। ইমরানের সাথে অবশ্য ই একবছর আগে থেকে পরিচয়। কিন্তু ইমরানের মিহিকে দেওয়ার মতো সময়ের বড় অভাব এতে মিহি অভাস হয়ে গিয়েছে কিন্তু মনের ভেতর লুকোনো অনেক অনুভুতি আছে ইমরানকে নিয়ে।
ক্লাসের ঘন্টা পরতে ই ক্লাসে মনোযোগ দিলো মিহি।
_______________________
টিফিন টাইম হতে ই মিহি রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইমরান আসার কথা ছিলো কিন্তু আসেনি। হয়তো আবার কোনো কাজ নিয়ে ব্যসত হয়ে আছে।
–কী এতো ভাবছো টিয়াপাখি
অভ্রকে দেখে ই চলে যেতে নিলে অভ্র মিহির সামনে এসে দাড়ালো।
–সমস্যা কী তোমার, আমাকে দেখলে ই পালাতে ইচ্ছে হয় নাকি।
–আপনার সমস্যা কী। আপনি সামনে আসেন কেনো।
–ভালোবাসি
“” তুমি আমার ভালোবাসা
স্বপ্নের কাছে আসা
অন্ধকার মিলিয়ে যাওয়া আবেগ
দূর থেকে স্পর্শ করা অনুভূতি
হয়তো নিশ্চিত জীবন সঙ্গী”
–হয়েছে এখন আমাকে যেতে দিন।
–হয়নি হবে একদিন তোমার মতো মিষ্টি একটা বেবি।
ছিঃ আপনি একটা অসভ্য। এটা বলে ই মিহি চলে আসতে নিলে
ই দেখলো রেহনুমা ম্যাম এর সাথে মিহির বাবা কথা বলছে। এটা দেখে মিহি হা করে তাকিয়ে আছে। ম্যাম এর সাথে বাবা আবার কী বলছে। মিহিকে দেখে ই সাইফুল সাহেব কথা শেষ করে মিহির দিকে আসে।
–বাবা তুমি কলেজে।
–ম্যাম এর সাথে কথা বললাম, আজকে বিকেল থেকে ম্যাম এর বাসায় প্রাইভেট পড়তে যাবি।
–আজকে থেকে ই।
–হে।
–বাবা তুমি অন্য কাউকে দেখলে না, এই ম্যাম এর কাছে কেনো।
–তোর সমস্যা কী।
–কিছু না বাবা।
–তাহলে আমি যাই। তুই প্রাইভেট পড়ে সাবধানে বাসায় ফিরিস।
আমি মাথা নাড়ালাম। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে ই সন্ধ্যা হয়। রেহনুমা ম্যামদের বাসা মানে অভ্রদের বাসা। এটা কেনো হলো। অভ্র তো এমনি আমাকে শান্তিতে থাকতে দেয়না তারউপর ওদের বাসায় গেলো তো আমার অবস্থা কী হবে ভাবতে ই আমার কান্না পাচ্ছে।
আল্লাহ বাচাও আমাকে।
হঠাৎ নীরা এসে জিজ্ঞেস করলো কী হলো বান্ধবী কী এতো ভাবছিস।
–বাবা প্রাইভেট ঠিক করে গিয়েছে ইংরেজি।
–প্রাইভেট না পড়লে তো তুই ইংরেজিতে ডাব্বা ও মারতে পারিস তাই চাচা আগে থেকে ই সতর্ক হচ্ছে।
–থাপ্পড় খাবি, আমি ডাব্বা মারলে তো তুই ও মারবি আমি যদি আমার খাতায় ক লিখি তুই তো আমার কাছ থেকে দেখে সেই ক টা ই খাতায় লিখিস।
–আস্তে বল মানুষ শুনবে।
–ইসসস কী লজ্জা।
–তুমি লজ্জা ছাড়া নাকি
সামনে তাকাতে ই দেখে নাহিদ।
–আবার আপনি আমার সামনে আসছেন।কালকে আপনার জন্য আমি থাপ্পড় খাইছি।
–যান, আপনি আমার সামনে থেকে।
–মিহি আমার কথাটা তো শোনো।
–আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।
–তো কী হইছে, আমরা বন্ধু তো হতে পারি।
–প্রথমে বন্ধু পরে অন্য কিছু জানি আমি দূর হন এখান থেকে।
একটু রাগ দেখাতে ই নাহিদ চলে গেলো। মিহি এবার নীরাকে নিয়ে ক্লাসরুমে চলে গেলো।
–তুই যার জন্য সবাই কে ফিরিয়ে দিস সে কী সত্যি তোকে ভালোবাসে।
–ইমরানকে নিয়ে কোনো কথা বলিস না প্লিজ। ইমরান ব্যস্ত থাকে তাই আমাকে সময় দিতে পারে না।
–তোর লাইফ তুই ই ভালো জানিস।
বলে ই নীরা চুপ হয়ে গেলো, জানে মিহিকে এখন শত বুঝালে ও ইমরানকে ভুল বুঝবেনে কারণ আবেগের মোহতে পড়ে আছে মিহি। তাই অযথা সময়টা নষ্ট করলো না। ক্লাসে মন দিলো।
______________________________
ক্লাস শেষে একরাশ ভয় নিয়ে বের হলো। যদি অভ্র সামনে পড়ে তাহলে তো শেষ। একটা রিকশা নিলো ঠিকানা অনুযায়ী বাসার সামনে গেলো।
বাসার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল চাপতে ই একজন কাজের লোক এসে দরজা খুলে দিলো
–ম্যাম বাসায় নেই, আপনি বসেন। আমি একটু বাগানে যাচ্ছি
বলে ই কাজের লোজটা চলে গেলো।
সোফায় গিয়ে বসার সাথে সাথে ই রুমের ভেতর থেকে কেউ একজন মা মা বলে চিল্লাতে থেকে।
মিহি বেশ কিছুক্ষন এই ডাক শোনে ও কোনো উওর দেয়নি। কিন্তু এবার আর সহ্য হচ্ছে না কানের পর্দা মনে হয় ফেটে যাচ্ছে তাই মিহি বিরক্ত হয়ে নিজে ই যে দিক থেকে শব্দ আসছে ঐদিকে যেয়ে রুমের বাহির থেকে ই বলে।।
–ম্যাম বাসায় নেই।
হয়তো মিহির কথা শোনেনি আবার ডাকা শুরু করলো,
এবার মিহি রুমে ডুকতে গেলো অভ্র ও বের হতে গেলো দুজনের ই ধাক্কা লেগে অভ্রের উপরে পরে।
রেহনুমা ম্যাম বাসায় এসে অভ্র বলে ডাকতেছে। মনে হচ্ছে অভ্রের রুমের দিকে ই আসছে।
মিহি ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ও অভ্র ছাড়ছে না….
চলবে,
#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩
এবার মিহি রুমে ডুকতে গেলো অভ্র ও বের হতে গেলো দুজনের ই ধাক্কা লেগে অভ্রের উপরে পরে।
রেহনুমা ম্যাম বাসায় এসে অভ্র বলে ডাকতেছে। মনে হচ্ছে অভ্রের রুমের দিকে ই আসছে।
মিহি ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ও অভ্র ছাড়ছে না.
মিহি কান্না করে দেওয়ার অবস্থা দেখে অভ্র ছেড়ে দেয়। মিহি দ্রুত উঠে রুম থেকে বের হয়ে যায়। রুম থেকে বের হয়ে সোফায় গিয়ে বসে রেহনুমা ম্যাম মনে হয় ফ্রেশ হতে গেছে নয়তো আজকে রক্ষা ছিলো না।
কিছুক্ষনের মধ্যে ই ম্যাম চলে আসে।
–সরি আমার একটু লেইট হয়ে গেছে।
–ইটস ওকে ম্যাম।
–তুমি কী অসুস্থ।
–না ম্যাম
–তাহলে এমন দেখাচ্ছে কেনো। অসুস্থ হলে আজকে বাসায় চলে যেতে পারো।
–না ম্যাম আমি ঠিক আছি।
ম্যাম আর কিছু না বলে পড়ানো শুরু করলো।
পড়ানো শেষ হওয়ার পর আমি বাসা থেকে বের হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এর মধ্যে ই অভ্র হনুমানটা বাইক নিয়ে হাজির।
—উঠে বসো।
–নাহ্।
–উঠে বসতে বলছি।
জোরে দমক দিয়ে বললো,
–এভাবে কেনো বলেন আমি ভয় পাই না।
–ওকে, টিয়াপাখি ওঠে বসো।
–যাবো না।
–তুই যে আমার কথা শোনিস না এই জন্য ই মেজাজ খারাপ হয়।
–আমি আপনার বিয়ে করা বউ নাকি আমি আপনার কথা কেনো শোনবো।
–আর একদিন যদি এই কথা বলছো একেবারে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।
এর মধ্যে ই একটা রিক্সা চলে আসে। মিহি বিনা বাক্যে রিক্সাতে গিয়ে বসে। অভ্র আর ডিস্টার্ব না করে বাইক নিয়ে মিহির রিক্সার পিছনে পিছনে যেতে থাকে।
মিহি একেবারের জন্য ও পিছনে তাকায় না।
__________________________
পরের দিন কলেজে যেতে ই নীরা দৌড়ে এসে বললো,
–মিহি চল।
–আরে এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেনো।কী হয়েছে।
–আগে চল পরে সব বলবো।
–যাবো না আমি ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।
–মিহি তোর দুইটা পায়ে পড়ি চল না প্লিজ।
এমন করে নীরা রিকুয়েষ্ট করায় মিহি নীরার সাথে গেলো।একপ্রকার দৌড়ে ই গেলো মনে হলো,
গিয়ে যা দেখলো এতে মিহি জ্ঞান হারানোর অবস্থা। ইমরান খুব আপত্তি কর অবস্থায় একটা মেয়ের সাথে।
মিহি এ দৃশ্য দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। ইমরান বলে জোরে চিৎকার দিতে ই ইমরান পিছনে তাকিয়ে দেখে মিহি।
–মিহি তুমি এখানে,
–আশা করোনি তো।
–সরি মিহি আমাকে ভুল বুঝো না।
কথাটা বলার সাথে সাথে মিহি সজোরে একটা থাপ্পড় মারে ইমরানকে।
ইমরানের গায়ে হাত তুলায় ইমরান ও মিহিকে থাপ্পড় মারতে গেলে অভ্র এসে ইমরানকে লাথি মারে। লাথি এতোটা ই জোরে লাগে ছিটকে গিয়ে দেওয়ালের সাইডে পড়ে। অভ্র ইমরানের কলারে গিয়ে চেপে ধরে বলে,
–তোর সাহস কম না আমার জানের গায়ে হাত তুলতে যাস। তোর জীবন আজকে ই ইতি ঘটবে।এতোদিন কিছু বলি কারণ মিহি তোকে ভালোবাসতো এটাকে ভালোবাসা কী করে বলি তোর ক্ষনিকের মোহতে পড়ে ছিলো।
হঠাৎ নীরা জোরে চিৎকার করে অভ্র ভাইয়া। মিহি কী হয়েছে দেখেন না মিহি তো চোখ খুলছে না।
অভ্র দৌড়ে গিয়ে মিহিকে কোলে তোলে নেয়।কলেজের মেইন গেইট দিয়ে মিহিকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসায়। নীরা ও সাথে ছিলো।
অভ্রের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।
মিহিকে একটা হসপিটালে এডমিট করা হয়। মিহিকে ইমারজেন্সিতে নেওয়া হয়েছে। কাউকে ডুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
বেশকিছু ক্ষন পর ডক্টর বেরিয়ে এসে বললো,
–তেমন কিছু না জ্ঞান হারিয়েছে। ভয় পেয়েছে খুব যার কারনে এমন হয়েছে। ঔষুধ লিখে দিচ্ছি । পেশেন্ট কে নিয়ে যেতে পারেন।
–অসংখ্য ধন্যবাদ ডক্টর।
অভ্র মিহির সামনে যেতে ই মিহি মুখ ফিরিয়ে নেয়।
–আমি কী করলাম।আমার সাথে এমন করছো কেনো টিয়াপাখি।
–সব ছেলেরা ই তো এক।
–এটা ভুল বললে টিয়াপাখি।
–এতো টিয়াপাখি টিয়াপাখি করেন কেনো।
–ভালোবেসে ডাকি।
–প্রয়োজন নেই। আমার থেকে দূরে থাকবেন।
— কী প্রয়োজন আছে আর কী প্রয়োজন নেই সেটা আমি বুঝবো।
–বাসায় যাবো আমি।
–আমি দিয়ে আসবো।
মিহি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
–বললাম তো আমি একা ই যাবো।
–জানপাখি রাগ করো না প্লিজ।
এবার মিহি রাগি চোখে অভ্রের দিকে তাকায়।
—আমি তুমি ছাড়া কাউকে ই চাইনা মিহি।
–এগুলো আমার বুঝা হয়ে গেছে। এখন ফোন ধরলে ই চেট লিস্ট গার্লস স্কুলের হাজিরা খাতা বের হবে।
–এই নেও ফোন নিজে ই দেখে নেও।
ফোনের স্ক্রিনে তাকাতে ই দেখে,
রেহনুমা ম্যাম অভ্রকে অনেকগুলো কল দিয়েছে। অভ্র এতোক্ষণ তা খেয়াল করেনি।
যখন ই দেখেছে তখন ই কল করেছে অভ্র।
–মা এতোগুলো কল কেনো দিয়েছো।
–মিহি তোর সাথে আছে।
–হে মা।২০
–মিহিকে নিয়ে এখন কলেজে আসবি।
–কেনো মা কী হয়েছে।
–এতো কেনো কেনো করবি না। প্রিন্সিপাল স্যার ডেকেছে।
অভ্র বুঝতে পারলো মা অনেক রেগে আছে তাই কিছু বললো না।
মিহির পাশে দাড়িয়ে অভ্র কথা বলছিলো। মিহি সবটা শোনেছে।
–দেখলেন তো আপনার জন্য সব হলো।
–আমি কী করলাম।
–আপনি ই তো জামেলা করলেন।
–ওহ্ ইমরানের হাতের চড় খেতো খুব ভালো লাগছিলো। তাহলে চলো ইমরানের কাছে দিয়ে আসি। একটা চড় খেয়ে এসো।
–এখন যদি বাবাকে ডাকে , বাবা আমার কলেজ বন্ধ করে দিবে।
–আরে এতো টেনশন করছো কেনো টিয়াপাখি আমি আছি তো।
–হে আপনি আমার জীবনে যতদিন থাকবেন আামর লাইফে ঠিক এমনটা ই হবে।
অভ্র কথাটায় অনেক কষ্ট পেলো তাও কিছু বললো না।
কিছুক্ষনের মধ্যে দুজনে ই প্রিন্সিপালের রুমে গেলো।
মিহি সামনে তাকাতে ই দেখে……
চলবে