#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২১
মিহি লিফটে উঠতে ই অভ্র ও ফোন টিপতে টিপতে লিফটে উঠে। লিফট থেকে মিহি আগে বের হতে ই ফ্লোরে পড়ে যায়।
অভ্র গিয়ে ধরতে ই কয়েকবার ডাকলো। কিন্তু মিহি কোনো শব্দ করলো না। বুঝতে পারলো জ্ঞান হারিয়েছে। কপালে হাত ছুয়ে দিতে ই দেখলো অনেক জ্বর তাহলে কালকে বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় গিয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে না চাইতে ও মিহিকে কোলে তুলে নিয়েছে।
গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দিলো কিন্তু জ্ঞান নাই বসে থাকবে ই বা কী করে। আশেপাশে কাউকে দেখছে ও না। মিহিকে কোনোমতে সিটে বসিয়ে দিয়ে অভ্র গাড়িতে বসলো। একহাত দিয়ে ড্রাইভ করছে অন্য হাতে মিহিকে ধরে আছে।
ডক্টরের চেম্বারে নিয়ে যেতে ই জিজ্ঞেস করে,
–উনি আপনাট কে হয়।
অভ্র চুপ করে আছে কোনো উওর দেয়নি।
ডক্টর আবার জিজ্ঞেস করলো,
–উনি আপনার কে হয়।
–উনি কে হয় না বললে কী ট্রিটমেন্ট করবেন না নাকি।
–রেগে যাচ্ছে কেনো মিস্টার অভ্র এটা তো জিজ্ঞেস করতে ই পারি। উনার অনেক প্রবলেম উনি মনে হয় খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করে না, সারাক্ষণ চিন্তিত থাকে গায়ে বেশ জ্বর কোনো ওষুধ ও খাননি বলে মনে হচ্ছে। তাই জিজ্ঞেস করলাম। পেসেন্টর জ্ঞান ফিরে এসেছে। ঔষধ লিখে দিলাম আপনি এখন নিয়ে যেতে পারেন।
জ্ঞান ফিরে আসার বেশকিছুক্ষন পর অভ্র আমার সামনে এলো, আমার দিকে না তাকিয়ে ই বললো,
–গাড়িতে উঠে আসুন।
–স্যার আমি তো আপনার একজন সাধারণ স্টাফ আমার জন্য এতো কিছু করতে যাবে না। অবশ্য মিস্টার অভ্রের চোখে সব স্টাফ এক সমান। আমকে আজকে হসপিটাল নিয়ে এসেছে কালকে সব স্টাফদের ও নিয়ে আসতে হবে তাই আমি চাচ্ছি না আপনাকে এতো কষ্ট দিতে।
–স্টুপিড। যেতে বলেছি যান।
–আমি একা ই যেতে পারবো।
আমি বেড থেকে উঠতে গিয়ে আবার পড়ে যেতে লাগলাম।
–দেখলেন তো বড়দের কথা না শোনলে কী হয়। ভালো হয় না কখনো
–ঐদিন ও তো বড়দের কথা ই শুনেছিলা কই আজ তো আমি ভালো নেই।
–গাড়িতে ওয়েট করছি চলে আসুন।
আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অভ্র চলে গেলো।
আমি চুপ করে গিয়ে গাড়িতে বসলাম, পিছনের সিটে বসতে ই অভ্র আমাকে বললো,
–আমাকে কী আপনার ড্রাইভার মনে হয়।
–কেনো। কী করলাম।
–পেছনে গিয়ে বসেছেন যে।
–তাহলে কোথায় বসবো?
–আমার কোলে।
–সে তো আমি বসতে চাই ই।
–চুপ করে সামনে এসে বসেন।
আমি গিয়ে বসে পড়লাম। আর চোখে দেখছিলাম আমার দিকে তাকায় কিনা। কিন্তু যে সানগ্লাস পড়া আছে জীবনে ও বুঝা যাবে না তাকিয়ে থাকলে ও।
দুজন ই নিরবতা পালন করলাম কেউ কারো সাথে কথা বলিনি, অভিমানের পাহাড় এতোটা ই উচু হয়ে আছে যে আমি ইচ্ছে করে কথা বলতে চাইলে ও এড়িয়ে চলে।
গাড়ি এসে বাসার সামনে থামতে ই আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম,
–মিস মিহি
অভ্রের ডাকটা শোনে ই পিছনে তাকালাম। গাড়ির গ্লাসটা খুলে বললো,
–আপনি আমার স্টাফ না হয়ে যদি অচেনা কেউ ও হতেন তাহলে আজকের সাহায্যটা করতে। আমার ভিতরে মানবতা আছে আপনার মতো ছলনা নয়।
কথাটা বলে অভ্র একমুহূর্তে জন্য ও গাড়ি নিয়ে দাড়ায়নি,চলে যায়। অভ্রের গাড়ি যতক্ষণ দেখা গিয়েছি আমি ততক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম।চোখের আড়াল হতে ই বাড়ির ভেতরে পা রাখলাম।
–এতো দেরি হলো কেন মা।
–অফিসে কাজটা একটু বেশি ছিলো তাই।
–আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি।
মিহি মুখে একটা হাসি টেনে নিজের রুমে চলে গেলো, ঠিক তখন ই মনে পড়লো ফোনে চার্জ নাই। সাইড ব্যাগটা খুলে ফোন বের করতে যাবে তখন ই দেখে ঔষুধ, প্রেসক্রিপশন এর সাথে ছোট একটা চিরকুট ও পেলো। খুব উৎসাহ নিয়ে চিরকুট টা খুলতে ই দেখে লিখা,
“নিজেকে অনেক স্পেশাল ভাবো না তুমি আমার আশেপাশে আশার চেষ্টা করলে নিজের অস্তিত্ব ও খুজে পাবে না,তোমার কথা ই আমার সহ্য হয় না, আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখো এতে তোমার ই মঙ্গল
চিরকুট টা ভিজে গেছে চোখের পানিতে।কথাগুলো বুকের গভীরে গিয়ে ক্ষত করেছে কিন্তু এটা তো আমার ই কর্ম ফল। কথা মনে হতে ই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়ায়রুমে পা বাড়ালাম।
ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসতে ই মা জিজ্ঞেস করলো,
–নতুন জবটা কেমন রে মা।
আমি খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বললাম,
–অনেক ভালো মা।
–তোর কোনো অসুবিধা হয় না তো।
— না মা ঠিক আছি।
–বিয়ের কথা বললো তোর মা।
–আমি আমি বিয়ে করবো না আগে তুমি সুস্থ হও তারপর ভেবে দেখবো। তোমার অপারেশনটা আগে করিয়ে নেই।
–আমার জন্য তুই কী তোর নিজের জীবন নষ্ট করবি নাকি।
–কী বলো এসব মা জীবন নষ্ট মানে কী, চুপ করো এমন কথা আর কখনো বলবা না।
কথাটা বলে ই হাত ধুয়ে উঠে চলে আসলাম। মা অনেকবার পিছু ডাকলো কিন্তু রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
__________________________
সকাল বেলা রেডি হয়ে অফিসে চলে আসলাম। কালকে অরু ম্যাম এর কথা অনুযায়ী কাজ করছি। হঠাৎ মায়ের ফোন আসতে ই দূত বাসায় দিকে রওনা দিলাম। আজকে আমি অভ্রের আশেপাশে ও যাইনি কারো ভালো লাগার কারণ না হতে পারি খারাপ লাগার কারণ তো হবো না।
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে ই দেখলাম, বাড়িতে মেহমান অনেক।
–মা
–আরে এতো জোরে চিৎকার করছিস কেনো মেহমান আছে দেখছিস তো।
–কীসের মেহমান মা।
–তোর বিয়ের জন্য দেখতে এসেছে রেডি হয়েনে….
চলবে
#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২২
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে ই দেখলাম, বাড়িতে মেহমান অনেক।
–মা
–আরে এতো জোরে চিৎকার করছিস কেনো মেহমান আছে দেখছিস তো।
–কীসের মেহমান মা।
–তোর বিয়ের জন্য দেখতে এসেছে রেডি হয়েনে।
আম্মু আমি বলেছি তো বিয়ে করবো না।
–এতো উতেজ্জিত হচ্ছিস কেন। দেখলে ই বিয়ে হয়ে যাবে নাকি।
–তাহলে দেখতে ও হবে না।
–মিহি এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে। আর কোনো কথা বলবি না রেডি হয়েনে।
–কী হয়েছে মা।
মামাকে দেখে মাথায় কাপড় টেনে বললাম,
–কিছু না মামা।
–তুুই এখনো এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো। ওরা আমাকে তাড়া দিচ্ছি।
মা আমাকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসো। মা আলমারি থেকে সাদা রং এর একটা থ্রী পিছ বের করে পড়িয়ে দিলো। আমাকে রেডি করে ওদের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। আমি এক বার উপরে তাকিয়ে দেখি ও নি কারা এসেছে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,
–তোমার নাম কি মা।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও উওর দিলাম।
–মিহি।
–শুধু মিহি আগে পিছে কিছু নাই।
মনে মনে বললাম আছে আপনার মাথা,ওদের সামনে বলতে ইচ্ছে করছে আমি বিয়ে করবো না।
আরো অনেক প্রশ্ন করে আমাকে চলে যেতে বললো। আমি চলে আসলাম। রুমে এসে বসতে ই মামি এসে বললো,
–মিহি ওরা নাকি তোকে শাড়ি পড়ে দেখবে।
–মামি।
মামি আমার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতে ই আমি চুপ করে গেলাম।
বাধ্য হয়ে নেভি ব্লু কালারের একটা শাড়ি পড়ে নিলাম। অবশ্য মামি পড়েয়ে দিয়েছে। ম্যাচিং জুয়েলারি ও মামি খুজে এনেছে। এমন সাজানো শুরু করলো মনে হচ্ছে আমার আজকে ই বিয়ে।
আবার নিয়ে যাওয়া হলো ওদের সামনে।
–মেয়ের কী চোখে সমস্যা আছে নাকি উপরে তাকাচ্ছে না যে।
কথাটা শোনার সাথে সাথে আমি চোখ তুলে উপরে তাকালাম।
–এই তো মেয়ের সব ঠিক আছে। উপরে তাকিয়েছে।
দুইজন মহিলা আর তিনজন পুরুষ দেখতে পেলাম। কিন্তু আমার কার সাথে বিয়ে হবার কথা চলছে তা ই বুঝতে পারছি না। সবগুলোর বয়স ই আর থেকে দিগুণ হবে।মনে হয় ছেলে আসেনি।
রুমে আসার পর অভ্রের কথা খুব মনে পড়ছে। জীবনে প্রথম অভ্র নামক ব্যাক্তিকে নিজের করতে চেয়েছিলাম কিন্তু নিজের তো আর এতো সৌভাগ্য নেই। যার কাছ থেকে সব চেয়ে ভালোবাসা পাওয়ার কথা এখন তার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি।
মামির ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসলাম।
— রক্তিম আসছে তো দেখতে।
–রক্তিম কে মামি।
–তোর হবু হাসবেন্ড।
–আজব আমি তো বিয়ে করবো না।
–একদম চুপ। তোর মায়ের কিছু হলে কী আমাদের ঘাড়ে বসে বসে অন্য ধ্বংস করতে দিবো নাকি।
–মামি?
এই থাম চিৎকার দিস না, রক্তিম আসছে ভালো করে কথা বলবি নয়তো আমরা আর তোদের পিছনে নাই।
–মামি তোমারা বোঝার চেষ্টা করো আমি তো জব করছি আর মায়ের কিছু হবে না। প্লিজ আমাকে এখন বিয়ের কথা বলো না।
–ন্যাকা কান্না করিস না। তোর মায়ের সব চিকিৎসার টাকা রক্তিম দিবে বলেছে
যদি রক্তিমকে কোনো উল্টাপাল্টা কিছু বলেছিস তাহলে বুঝবি আমি কে।
বলে ই চলে গেলো। দুচোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। কী করবো আমি। প্রথমে বোনের জন্য নিজের ভালোবাসা কোরবানি করলাম। তারপর সংসারের জন্য নিজের পড়ালেখা একপ্রকার বাদ দিয়ে টিউশন তারপর জব করতে লাগলাম এখন আবার মায়ের জন্য বিয়ে করতে হবে।
এই যে বাবা মিহি মায়ের রুম, তুমি কথা বলো আমি বাহিরে যাচ্ছি।
–জ্বি আন্টি।
রক্তিমকে রুমে দিয়ে ই দরজা টা হালকা চাপিয়ে দিয়ে মিহির মামি রুমা বেগম চলে গেলো।
কিছুক্ষণ দুজনই নিরবতা থাকার পর রক্তিম বলে উঠলো,
–আপনার সমস্যা না হলে আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি।
আমি চুপ করে আছি কোনো প্রশ্নের উওর দিতে ই চাচ্ছি না।
–কী হলো কিছু বলছেন না যে।
মামির কথা মনে হতে ই বললাম,
–জ্বি বলুন।
–আপনার কী আমাকে পছন্দ হয়।
চোখ তুলে উপরে তাকাতে ই দেখলাম আমার থেকে বয়সে অতটা বড় হবে না। দেখতে মুটামুটি লম্বা আছে। গায়ের রং ফর্সা ই। তখন আমি দেখিনি কেনো এই পাবলিক তখন কোথায় ছিলো।
–কী ভাবছে।
–কিছু না।
–আমার কোনো পছন্দ নাই আমার মামা মামির পছন্দ ই আমার পছন্দ।
–কেনো আপনার কোনো পছন্দ নেই।
–যেখানে আমার পছন্দের কোনো মূল্য নেই সেখানে আমার ইচ্ছে প্রকাশ করাটা ই মূল্যহীন।
–তাহলে কী বুঝে নিবো আপনি আমাকে পছন্দ করেননি।
–তা কেনো হবে বাবা আসলে মিহি ছোট থেকে ই এমন , আমাদের পছন্দ ই তার শেষ পছন্দ।
–ওহ আচ্ছা।
মামি রক্তিমটাকে নিয়ে বের হয়ে গেলো। বের হয়ে যেতে ই আমি দরজা বন্ধ করে কান্না করা শুরু করলাম। এমন কেনো হয়ে গেলো আমার জীবনটা।
___________________
পরের দিন সকালে অফিসে আসতে ই অভ্র ডেকে পাঠালো। অভ্রের আবার কী হলো এসব ভাবতে ভাবতে অভ্রে কেবিনে উপস্থিত হতে ই বললাম,
–জ্বী স্যার বলুন।
–অফিসের কাজে আপনাকে আমার সাথে রাজশাহী যেতে হবে এবং ঐখানে থাকতে হবে। যদি জবটা করতে চান তাহলে যেতে ই হবে।
কথাটা শুনে ই থামকে গেলাম। মামা মামি আম্মু অনুমতি আমাকে দিবে কী অভ্রে সাথে যাওয়ার জন্য।
চলবে,