#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৯
সি.ভি টা দেখা শেষে হতে ই ফাইল সহ ছুড়ে দিতে ই মিহি মুখের উপর এসে পড়ে। মিহি বেশ অবাক হয় সামনে থাকা মানুষটা এতোটা পরিবর্তন যেনো মেনে নিতে পাড়ছে না। তিন বছর কী অনেকটা সময়। হে হয়তো, কারো কাছে না হলে ও মিহির কাছে ই তো অনেকটা সময় বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে চোখের রঙ্গিন চশমা খুলে ফেলতে হয়েছে। পরিবারের বড় ভাই না থাকায় সংসারের হাল নিজেকে ই ধরতে হয়েছে। চাকুরির ইন্টারভিউ দিতে এসে অভ্রেকে দেখবে তা কিন্তু কাম্য ছিলো না। অভ্রকে দেখে অবাক হলে ও তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে ব্যবহারে।
–অহ হ্যালো লিসেন,
মিহি চোখের কোনে থেকে পানি মুছে অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,
–হুম।
— জ্বী বলুন।
–শিক্ষাগত যোগ্যতা অতটা ও পারফেক্ট না সো এই পোস্টের জন্য আপনাকে না নেওয়াটা ই বেটার। ওকে আপনি এখন আসতে পারেন। আপনাকে পড়ে জানানো হবে।
মিহি অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু অভ্র একটা বারের জন্য ও চোখ তোলে তাকায়নি।মিহি আর পিছু না ফিরে কেবিন থেকে বেড়িয়ে পড়লো।
অফিস থেকে বেড়িয়ে পা হেটে ই যাচ্ছি। তিনবছর আগে যখন আমার ই কারনে অভ্র কলেজ থেকে বহিষ্কার হয়েছিল ঐদিনের পর থেকে কখনো অভ্র সামনে আসেনি। ঐদিন অভ্র একা বহিষ্কার হয়নি নাহিদকে ও বহিষ্কার করা হয়েছিলো।
নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য মেন্টালি খুব টর্চার এর শিকার হই। কলেজে বেশ কয়েকদিন আমি যেতে পারতাম না মানুষের নোংরা কথার জন্য। আমি একজন ছিলাম কিন্তু আমাকে নোংরা কথা শুনানোর মানুষ ছিলো অহরহ। সবকিছু সামলে উঠার ঠিক আগ মুহুর্তে বাবাকে হারালাম। কাছের মানুষগুলোকে চিনতে শুরু করলাম। শুরু হলো জীবন যুদ্ধ। আস্তে আস্তে পরিবারের অবস্থা খারাপ হতে থাকে।বাবার শোকে মায়ের অবস্থা ও ভালো না কিনডিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাবার মৃত্যুর আগে ই মিনতি আপু চলে যায় কানাডা। মিনতি ফোন দেয় মাসে একবার। কালকে ও কল দিয়েছিলো। বলেছে সি.ভি নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য। এই তো এলাম কিন্তু জবটা হবে নাকি সন্দেহ। সবেমাত্র অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি এসময় জব পাওয়াটা ও কল্পনা। আমাদের দেশে কতোমানুষ মাস্টার্স কমপ্লিট করা তাও জব পায় না। হাটতে হাটতে চলে এলাম টিউশনিতে। উহু আপনি পড়ি না পড়াই। এই টিউশনগুলো ই আমার এখন সব কিছু।।
_______________________
রাতে খাবার খেয়ে ঘুমে যাবো এর আগে একটু ফোনটা হাতে নিলাম। মেসেজ চেক করতে ই জব কনফার্ম হয়েছে এমন একটা মেসেজ এসেছে। মা পাশে ই শুয়ে ছিলো মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
–জবটা পেয়েছি মা।
মা আদর করে বুকে টেনে নিয়ে কান্না করে দিলো,
–আমার জন্য তোর কষ্ট করতে হচ্ছে মা।
–মা তুমি এগুলো কী বলো মায়ের জন্য কষ্ট করবো না কার জন্য করবো। তা ছাড়া আমার কোনো কষ্ট ই হচ্ছে না।
–সাবধানে থাকিস মা।
–হুম তা তো অবশ্য ই। তুমি দোয়া করে দিও।
মায়ের চোখ মুছে দিয়ে ই শুয়ে পড়লাম।
সকালের রোদটা চোখে পড়তে ই ঘুম ভেঙ্গে যায়। আড়মোড়া ভেঙে উঠে দৌড়ে কিচেনে গেলাম, নাকটা ফুলিয়ে মাকে বললাম,
–কতোদিন নিষেধ করেছি রান্নঘরে আসবে না।
–চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে খেতে আস। টিউশন যাওয়ার আগে খেয়ে নিবি।
–মা…
–আর ডাকতে হবে না ফ্রেশ হতে যা।
আমি আর কোনো কথা বললাম না। ফ্রেশ হতে চলে আসলাম। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে ফোনটা হাতে নিলাম কয়টা বাজে দেখার জন্য ঠিক সেই সময় আবার দেখলাম মেসেজ আসলো, মেসেজটা ওপেন করতে ই দেখলাম
অফিসে আজকে থেকে ই জয়েন করতে হবে সকল নিয়ম কারণ ও ডিটেইলস দেওয়া আছে।
খাবার খেয়ে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্য রিক্সায় উঠলো। অফিসের সামনে যেতে ই ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে অফিসের ভেতরে পা রাখলো। ভেতরে যেতে ই একজন ভদ্র মহিলা অভ্যর্থনা জানালো। আমাকে সোফায় বসতে বললো। আজকে আমার লাইফে ফার্স্ট কোনো চাকুরিতে জয়েন করেছি খুব নার্ভাস লাগছে।
অভ্র অফিসে ডুকতে ই সবাই সালাম দিলো। আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বললো,
–মিস মিহি আমার কেবিনে আসুন।
আমিও কথা মতো পিছনে পিছনে যেতে লাগলাম। কেবিনে ডুকে ই বসে জিজ্ঞেস করলো।
–কম্পিউটার চালাতে জানেন।
–জ্বি একটা কথা বলার ছিলো আপনাকে।
–আপনার কোনো কথা শুনতে আমি বাধ্য নই। অফিসের সব স্টাফরা স্যার বলে ডাকে আপনি ও স্যার ই বলবেন। কাজের বাহিরে কোনো কথা পছন্দ করি না।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
-সরি স্যার। আসলে আমি বুঝতে পারিনি।
–ইটস ওকে। মিস অরু উনাকে সবটা বুঝিয়ে দিবেন।
–জ্বি স্যার। সো আসতে পারেন।
আমি কেবিন থেকে বের হওয়ার আগে একবার অভ্রের দিকে তাকলাম কিন্তু অভ্র একটা ফাইন নিয়ে ব্যস্ত।
অরু ম্যাম আমাকে নিয়ে আমার ডেস্ক দেখিয়ে দেয়। আমি ডেস্কে বসে নিজের কাজে মন দিতে লাগলাম। কিন্তু অভ্রের ব্যবহার প্রতিটা কথা হৃদয়কে ক্ষত বিক্ষত করছে।
কাজ শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। অফিস থেকে বের হতে ই আকাশ অন্ধকার করা শুরু করেছে। অফসির প্রায় স্টাফরা চলে গিয়েছে। চারদিকে মানুষেজন নাই বললে ই চলে আমি বাহিরে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছি কিন্তু গাড়ি পাচ্ছি না। ভয় ও করছে এমন অবস্থায় বৃষ্টি শুরু হলে বাসায় যাবো কী করে।এসব ভাবতে ভাবতে পেছনে তাকাতে ই দেখি অভ্র…..
চলবে,
#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২০
কাজ শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। অফিস থেকে বের হতে ই আকাশ অন্ধকার করা শুরু করেছে। অফসির প্রায় স্টাফরা চলে গিয়েছে। চারদিকে মানুষেজন নাই বললে ই চলে আমি বাহিরে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছি কিন্তু গাড়ি পাচ্ছি না। ভয় ও করছে এমন অবস্থায় বৃষ্টি শুরু হলে বাসায় যাবো কী করে।এসব ভাবতে ভাবতে পেছনে তাকাতে ই দেখি অভ্র।
অভ্র সোজা গিয়ে নিজের গাড়িতে বসে। আমার সামনে দিয়ে যেতে ই থামানোর জন্য সিগনাল দেই।
–সমস্যা কী?
–স্যার যদি আমাকে একটু বাসায় ড্রপ করে দিতেন।
–আপনাকে ড্রপ করে দিলে তো আমার অফিসের বাকি স্টাফদেরকে ও প্রতিদিন ড্রপ করে দিতে হবে। আমার কাছে সব স্টাফ সমান আর আপনার সাহস কী করে হয় আমার গাড়ি থামিয়ে আমাকে আদেশ করার।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
–সরি স্যার।
অভ্র সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট চলে যায়। মুহূর্তে ই বৃষ্টি নামা শুরু হয়। অফিসের সামনে ই দাড়িয়ে ভিজতে থাকে। মিহি আর দাড়ায়নি হাটতে থাকে। কতোদূর যেতে ই রিকশা পায়।
রিকশা বাড়ির সামনে আসতে ই ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির ভেতরে ডুকতে ই মিহি মা দৌড়ে আসে।
–মা তুই এইভাবে ভিজলি কেনো?
–ভাগ্য ছিলো তাই।
–আমার জন্য তোর সব কষ্ট করতে হয়। তোকে তো একা পেটে ধরিনি। আরেকটা পাশান ও পেটে ধরেছিলাম আজকের এই দূরদিনে আমার পাশে এই পাশানটা নেই , একটা বারের জন্য ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস ও করে না। আমাকে আল্লাহ নিয়ে যাক তোকে তাহলে তুই শান্তিতে থাকবি রে মা।
–চুপ করো মা, তুমি না থাকলে আমার কী হবে।
বলে ই মাকে ধরে কান্না করে দিলাম। মা আচল দিয়ে আমার মাথাটা মুচে দিয়ে বললো,
–জামাটা চেঞ্জ করেনে মা।
———————————————–
বেলকনিতে বসে সিগারেট ধোয়া উড়াচ্ছে অভ্র। একদৃষ্টিতে বাহিরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে তাকাতে ই দেখলো মা ফোন করেছে,
–বাবা কেমন আছো।
–জ্বি মা ভালো। তুমি কেমন আছো।
–এই তো ভালো, তুমি কানাডা চলে আসো।
–আমি দেশে ই ঠিক আছি।
–মায়ের কথা শুনতে হয় বাব। আর মুন্নি মেয়েটা তোমাকে কতো মিস করে বলো তো।
মুন্নি নামটা শোনার সাথে সাথে অভ্র কলটা কেটে দিলো। আর কোনো মেয়েকে জীবনে জায়গা দিতে চায় না।অনেক হয়েছে এসব, ভালোবাসা শব্দটা শুনলে এখন বড্ড ভয় হয়। যদি কেউ পরিপূর্ণ ভালোবাসা দিতে পারে তাহলে পৃথিবীতে বেচে থাকাট সুখময় হয় আর যদি সেই ভালোবাসা ছলনায় পরিপূর্ণ থাকে তাহলে যে বেচে থাকা ই অর্থহীন। একটা সময় অভ্রের কাছে ও পৃথিবী টা অর্থহীন মনে হয়েছিলো। এখন নিজেকে অনেকটাই সামলে উঠেছে আবেকটা ও বেশ কাটিয়ে উঠেছে। বার বার এটা অনুভব করে এসেছে আর যা ই হক আবেক দিয়ে জীবন চলে না।আবার আবেগশূন্য মানুষ দিয়ে সংসার চলানোটা কষ্ট সাধ্য বটে তাই তো বিয়ে থেকে দূরে থাকাটা ই মঙ্গল মনে করে।
অঝরে বৃষ্টি পড়ছে, খুব সুন্দর আবহাওয়া কিন্তু এতো বৃষ্টি থাকলে ও ভালো লাগে না।
হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে বেডে গিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। এসব জল্পনা কল্পনা জগৎ এ থাকতে ভালো লাগে না।
_______________________
সকালে ঘুম ভাঙ্গলল একটা স্টুডেন্ট এর আম্মু কলে ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে কল ধরতে ই ওপাশ থেকে শব্দ আসলো,
–কী ব্যাপার আসেন না কেনো, আপনি তো মাস শেষ হলে ঠিক ই টাকা নিবেন। এই যে কালকে বন্ধ করলেন না এর জন্য কিন্তু মাস শেষে পড়িয়ে দিতে হবে।
উনার কথা শুনে মোটেও অবাক হইনি। এমন কথা আগে ও শুনতে হয়েছে। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে উওর দিলাম,
–আন্টি আমি আজকে ও পড়াতে পারবো না কারণ
–এই শুনেন এতো প্রাইভেট মিস করলে কিন্তু টাকা দেওয়ার সময় টাকা কেটে রেখে দিবো।
— হয়েছে আন্টি আপনি থামুন। আমি আপনার বাচ্চাকে আর পড়াচ্ছি না। আমার নতুন জব হয়েছে। কতো দিন মাসে এক হাজার তো। এমাস যে কদিন পড়িয়েছি এটা আমি তো নিবো না আপনার কাছে রেখে দিয়ে আপনি ধনী হয়েন। আর নেক্সট টাইম একটা টিচারকে এভাবে কথা বলার আগে ভাববেন তার কেমন লাগে। শিক্ষা কখনো টাকা দিয়ে কেনা যায় না। যেমন আপনি আপনাকে একলাখ টাকা দিলে ও শিক্ষিত হতে পারবে না।
কথাটা বলে ই আমি কল কেটে দিলাম। যতদিন উনার বাচ্চাকে পড়িয়ে ঠিক এরকম ব্যবহার ই করেছে তাই আজ বলে দিলাম।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম নয়টা বেজে গেছে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম। মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্য পা বাড়ালাম।
অফিসে ডুকে নিজের ডেস্কে বসতে ই পিছনে থেকে কেউ ডাকলো,
–মিহি।
অরু ম্যামকে দেখে দাড়িয়ে বললাম,
–গুড মর্নিং ম্যাম।
অরু হাসি মুখে বললো,
–গুড মর্নিং মিহি, স্যার একটা মিটিং এরেন্জ করেছো ঠিক এগারোটায় চলে এসো কেমন।
–জ্বি ম্যাম।
অরু চলে যেতে ই নিজের কাজ করা শুরু করলাম। ঠিক এগোটা বাজার পাচ মিনিট আগে ই মিটিং এর জন্য চলে গেলাম।মিটিং এর ফাকে ফাঁকে আর চোখে অভ্রকে দেখছিলাম। চোখ দুটো কখনো দেখতো পারি না সবসময় কালো সানগ্লাস পড়া থাকে।
–মিস মিহি আমার কথা শুনতে বলেছি আমার দিকে নজর দিতে বলিনি।
সবার সামনে এমন লজ্জা দিবে তা ভাবতে পারিনি,কথাটা শোনার সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললাম। বেশ লজ্জা লাগলো এতোগুলো মানুষের এটা কী করে ফেললাম। নিজের উপর রাগ হচ্ছে।
মিটিং শেষ করে সবার কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে অভ্র। আমি ইচ্ছে করে ই সবার পেছনে দাড়িয়ে আছি। যেনো সবার পিছনে কাজ বুঝে নিতে পারি।
–মিস মিহি।
–জ্বী স্যার।
–আপনার কাজ আমি মিস অরুকে বুঝিয়ে দিয়েছি। সো অরু আপনাকে বুঝিয়ে দিবে। আপনি আসতে পারেন।
আমি আর কোনো কথা বললাম না সোজা চলে আসলাম।
অফিস শেষ হয়েছে চারটা। এখন বাজে পাঁচটা। একঘন্টা লেইট করে অরু ম্যাম এর কাছ থেকে কাজ বুঝে নিলাম। উনি অন্য একটা কাজ নিয়ে বিজি ছিলো তাই লেইট হলো।
মিহি লিফটে উঠতে ই অভ্র ও ফোন টিপতে টিপতে লিফটে উঠে। লিফট থেকে মিহি আগে বের হতে ই ফ্লোরে পড়ে যায়…
চলবে