#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৫
মিহি ভয়ে চুপ করে আছে কী বলবে, এখন যদি বিদ্যুৎ চলে আসে তাহলো তো রেহনুমা আহমেদ সচোখে সব দেখে নিবে।
বিদুৎ আসার সাথে সাথে অভ্র মিহিকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। অভ্র বুঝে উঠতে পারছে না হঠাৎ কী হলো, মিহি তো এ কদিন ভালো ই ছিলো। ভেবেছিলাম হয়তো আমার ভালোবাসা মিহির মনকে একটু হলে ও স্পর্শ করতে পেড়েছে। কিন্তু এখন যা হচ্ছে মিহিকে নিয়ে খুব ভয় হচ্ছে।
বৌ ভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরার সময় অভ্র মিহিকে অনেক বার ইশারা করেছে অভ্রের সাথে বসার জন্য কিন্তু মিহি অভ্রের দিকে ভালো করে তাকায় ই নি। অভ্র রেগে আগুন হয়ে বাসায় এসে পড়েছে।
রেহনুমা আহমেদ খুব খুশি, মিহিকে ও আদর করছে। শুধু চায় ছেলের থেকে দূরে থাকুক আর তো কিছু চায়নি। মিহি গাড়িতে বসে বাহিরে দিকে তাকিয়ে আছে। কখন এ বাসা থেকে যাবে সেই চিন্তায় মগ্ন মিহি। এখানে দম আটকে আসছে।
_______________________
মিনতির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে মিহির। দ্রুত রেডি হতে বলছে। কালকে বৌ ভাতের জামেলার কারনে তাদের বাসায় যেতে পারেনি আজকে সকালে ই রওনা দিবে।
মিহি দ্রুত রেডি হয়ে নেয়।
রেহনুমা আহমেদ অভ্রকে নিষেধ করতে যাবে ঐ বাড়িতে না যাওয়ার জন্য এর আগে ই অভ্র রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। এখন ছেলেকে নিষেধ করলে কখনো শুনবে না। তাই আর রেহনুমা কিছু বললো না।
অভ্র আর অভ্রের কাজিনরা এক গাড়িতে বসেছে। মিহি আর মিহির কাজিনরা অন্য গাড়িতে তীব্র আর মিনতি অন্য গাড়িতে। অভ্র মিহিকে দেখে ও না দেখা ভাব করে গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করা শুরু করে এতে মিহি খুব কষ্ট পায়। আর চোখে বার বার অভ্রকে দেখছিলো। কিন্তু অভ্রের এমন ভাব দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
বেশ কিছুদূর যেতে ই মিহিদের গাড়ি থেমে গেলো। মিহি কপালে বিরক্ত ভাজ ভেলে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–কী হলো থামালেন কেনো।
–এমনি একটু সমস্যা হচ্ছে। আপনি একটু নামুন তো।
মিহি সামনের সিটে বসা ছিলো তাই নেমে দাড়ালো।মিহির কাজিনরা ও নামতে চেয়েছে কিন্তু মিহি বারন করে দিয়েছে।
অভ্রে গাড়ি এসে সামনে থামলো। অভ্র ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,
–কী হয়েছে চাচা।
–গাড়িতে ডিস্টার্ব দিয়েছে আশেপাশে গ্যারেজ আছে বলে ও মনে হচ্ছে না।
–ওহ্ আচ্ছা। কতো বার বলবো চাচা গাড়ির ঠিক আছে নাকি আগে দেখে নিবেন।
মিহি চলো আমার সাথে মেকানিক নিয়ে আসি।
–না আমি গাড়িতে বসি আপনি নিয়ে আসেন।
–তুমি না আসলে আমি ও যাবো না। আমি যাই তোমরা বসে থাকো।
–এই,,,এই দাড়ান। যাবো আমি।
মিহি অভ্রের পিছনে পিছনে দৌড়ে যায়। অভ্র ইশারা করতে ই দৃপ্ত আর অমি নেমে মিহিদের গাড়িতে গিয়ে বসে।
অভ্র গাড়িতে বসেতে ই মিহি পিছনে সিটে গিয়ে বসে।
–তোমার ড্রাইভার আমি?
–আমি এটা কখন বললাম।
–তাহলে পেছনে বসলে কেনো।সামনে আসো নয়তো গাড়ি চালাবো না।
মিহি অসহায় ভাব করে সামনে আসলো।
মিহি সামনের সিটে আসতে ই অভ্র ভালো করে ডোর লক করে দেয়। গ্লাসগুলো লাগিয়ে দেয়। মিহির দিকে এগিয়ে যেতে ই মিহি পিছনে যেতে থাকে।
–যতোই পেছনে যাও না কেনো আমার কাছে তো আসতে ই হবে টিয়াপাখি।
–আপনি মেকানিক আনতে যাবেন না।
–আমি ই তো মেকানিক। আমার রাজ্যে আমার রানি আমার উপর অভিমান করেছিলো। তাই রানীর রাগ ভাঙ্গিয়ে আমি ই মেকানিক হয়ে গেলাম।
–সরুন। তাহলে এই লুচুগিরি করার জন্য এই গাড়িরে নিয়ে এসেছেন।
–হোয়াট ইস দ্যা মিনিং অফ লুচুগিরি।
–এই যে এগুলো যা করতেছেন সব ই লুচুগিরি।
–তাই নাকি। তাহলে আরেকটু লুচুগিরি করি।
–এই না সরুন।
কিন্তু অভ্র কোনো কথা ই শোনছে না। মিহির অনেকটুকু কাছে যেতে ই মিহি ভয়ে চোখ বন্ধ করে দেয়।
অনেক্ষন হয়ে গেছে কিন্তু অভ্রের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে মিহি হালকা করে এক চোখ একটু খুলে দেখে অভ্র ঠিক আগের ন্যায় মিহির দিকে তাকিয়ে আছে।
মিহি এমন অবস্থা দেখে অভ্র একটা হাসি দিয়ে নিজের সিটে ঠিক হয়ে বসে। মিহির হাতে একটা চুমু খেয়ে ড্রাইভ করতে থাকে। এক হাতপ ড্রাইভ করছে অন্য হাতে মিহির হাত ধরে আছে।
–বেশি সুখ করলে কপালে দুঃখ থাকে তা জানেন তো।(মিহি)
–হুম, সব দুঃখ মাথা পেতে নিব রানী। শুধু আপনি পাশে থাকবেন।
__________________________
মিনতি বাড়িতে আসার পর, সবাই বরন করে ঘরে নিয়েছে। মিনতি ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বের হতে ই মা এসে জিজ্ঞেস করলো,
—কিরে মা শ্বশুর বাড়ি কেমন? সবাই আদর করে তো।
–মা অনেক আদর করে। এই রকম শ্বশুর বাড়ি ভাগ্য করে পেয়েছি।
মিহির মা মুখট মলিন করে জিজ্ঞেস করলো,
–মায়ের থেকে কী বেশি আদর করে।
মিহি হাসি মুখে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–মায়ের মতো কী কেউ আদর করতে পারে বলো। মা মায়ের জায়গায় অন্যরা অন্যদের জায়গায়।
— যেটা জানতে আসলাম,আচ্ছা মিহি কোথায়।
মিনতি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলে,
–আসেনি ও।
–না তো প্রিয়া রিয়াকে দেখলাম কিন্তু মিহিকে তো দেখিনি।
–কী বলো মা। এসেছি তো ঘন্টা খানিক হবে এখনো মিহি কোথায়।
রেহনুমা আহমেদ এই নিয়ে ছয়বার কল দিয়েছে। অভ্র কোথায় জানার জন্য। কী বলবে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো এখনো তো দুজনের খুজ নেই। রেহনুমা আহমেদ তো রেগে আগুন হয়ে আছে। অভ্র তো ফোন অফ করে রেখেছে। মিনতির ও প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আজকে বাসায় আসলে এর একটা বিহিত করে ছাড়বে…..
চলবে
#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৬
রেহনুমা আহমেদ এই নিয়ে ছয়বার কল দিয়েছে। অভ্র কোথায় জানার জন্য। কী বলবে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো এখনো তো দুজনের খুজ নেই। রেহনুমা আহমেদ তো রেগে আগুন হয়ে আছে। অভ্র তো ফোন অফ করে রেখেছে। মিনতির ও প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আজকে বাসায় আসলে এর একটা বিহিত করে ছাড়বে।
মিনতিকে এতো উত্তেজিত হতে দেখে তীব্র বললো,
–সমস্যা কী তোমার বলো তো।মিহি অভ্র দুজন এক সাথে আছে হয়তো এতে এতো টেনশন করার কী আছে।
— কিছু না। (আপনার মা যে রাগ দেখাচ্ছে মনে তো হচ্ছে আমার বোন আর অভ্র বিয়ে করতে গেছে) কথাটা মিহি মনে মনে বললো।
–আবার কী ভাবছো।
–ভাবছি সব কথা তো আর সব জায়গায় বলা যায় না তাই না।
তীব্র মিহিকে টান দিয়ে পাশে বসিয়ে বলে।
–বাদ দেও না এসব। আমার দিকে মনোযোগ দেও অন্যগুলো বাদ দেও।
মিহি প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। এতোক্ষন যে কিভাবে চলে গেলো তা বুঝে উঠতে পারেনি। মনে হচ্ছে এই তো মাত্র গাড়িতে বসলো এতো দ্রুত ই যে সন্ধ্যা হয়ে যাবে তা ভাবতে পারেনি। ৫ঃ৫৬ বাজে একটু পর ই তো সন্ধ্যা হবে। বাড়িতে যাওয়া পর কী হবে ভাবছে।
–টিয়াপাখি।
–……
–টিয়াপাখি
–……
দুইবার ডাকলো মিহি কিছু বলছে না।এবার মিহির কানের কাছে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,
–টিয়াপাখি
মিহি চোখ রাঙ্গিয়ে উওর দিলো,
–আমার নাম আছে। মিহি।
–তাই বলে কী আমি আদর করে একটা নামে ডাকতে পারবো না।
–না।
–হাজার বার ডাকবো৷ এখন বলো কী নিয়ে চিন্তায় আছো।
–বাসায় যাবো না আমি আজকে।
–তাহলে চলো বিয়ে করে নেই।দুজন বহুদূর চলে যাবো। একটা কুঁড়েঘর থাকবো। আমি আইসক্রিম বিক্রি করবো, যে টাকা পাবো তা দিয়ে দিন শেষে বাজার করে আমি ই এসে রান্না করবো আর তুমি শুধু আমার পাশে থাকবে। আমার চোখের সামনে থাকবে। আর আমাকে ভালোবাসবে। ফিউচার প্ল্যান কমপ্লিট চলো পালিয়ে যাই।
মিহি মুখটা বাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।
মিহি বাড়ির ভেতরে ডুকতে ই মিনতি বলে,
–তোর কাছে আমি জানতে চাবো না এতোক্ষন তুই কোথায় ছিলি কে তোর সাথে ছিলো,শুধু এইটুকু বলবো আজকের পর থেকে তোকে আর অভ্রকে যেনো একসাথে না দেখি। আরো অনেককিছু বলার ছিলো। বললাম না। শুধু এই কথাটা মনে রাখিস। বোনের সুখ দেখতে চাস তো অভ্রের সাথে মিলামেশা বন্ধ কর।
মিহিকে এইটুকু বলে ই মিনতি নিজের রুমে চলে গেলো।মিহি জানতো এমন কিছু একটা হবে তাই কথাগুলো শুনে অবাক হলো না।
নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুম ডুকলো।
রাতের বেলা,
সবাই খাবার টেবিলে খাবার খেতে বসলো কিন্তু মিহিকে দেখতে পাচ্ছে না অভ্র। বাসায় আসার পর তো একবারের জন্য ও দেখা মেলেনি মিহি। অভ্র বেশ কয়েকবার মিনতিকে জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু আশানুরূপ কোনো উওর ই পায়নি।
অভ্র ভেবেছিলো খাওয়ার সময় হয়তো মিহিকে দেখতে পাবে কিন্তু তা হলো আর কোথায়। অভ্র শুধু খাবারটা খেলো না।
–অভ্র না খেয়ে উঠে যাচ্ছো কেনো।
–ভাবি একটা ফোন আসছে ইমারজেন্সি। খাবারটা রুমে দিয়ে দিয়েন।
ইমারজেন্সি ফোন মানে। মিনতি দ্রুত মিহির রুমে যায়। কিন্তু মিহি শুয়ে আছে ফোনটা চার্জে দেওয়া তার মানে অন্য কেউ কল দিয়েছে। অযথা ই মিনতি সন্দেহ করছে না তো। এসব ভাবতে ভাবতে খাবার টেবিলের দিকে যেতে থাকে মিনতি।
রাত সাড়ে বারোটা মতো বাজে হঠাৎ প্রিয়া এসে বললো,
–আপু এভাবে শুয়ে আছো কেনো।
–এমনি ভালো লাগছে না।
–উঠে একটা কথ বলবো।
–কালকে সকালে বলিস এখন ঘুমা।
–আপু প্লিজ উঠো। বললাম তো কথা আছে।
–প্রিয়া প্লিজ তুই এখন চুপ কর নয়তো আমি চলে যাচ্ছি এই রুম থেকে।
মিহি বেশ জোরে চিৎকার দিয়ে কথাগুলো বললো এতে প্রিয়া আর কোনো কথা বললো না।
বেশকিছুক্ষন পর,
–টিয়াপাখি রাগ করে আছো কেনো।
অভ্র মিহির কানে কাছে গিয়ে ফিসফিস করে কথাটা বললো। এতে মিহি লাফিয়ে উঠে বসলো।
–আপনি..
–হুম অন্য কাউকে আশা করেছিলে নাকি।
–ফালতু কথা বলবে না কীভাবে এসেছেন।
–প্রিয়া হেল্প করেছে। মেয়েটার সাথে তুমি রাগ দেখালে কেনো।
–আমি জানতাম নাকি আপনি আসবেন।
–আমি আসবো জানলে কী রাগ দেখাতে না।বাহ তাহলে আমি তোমার হৃদয় আমার ভালোবাসার নামটা লিখাতে পেড়েছি।
–কখনো পাড়বেন না।
–শিকার করে নাও জানেমান। (অভ্র)
–কী শিকার করবো।
–এই যে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো।
–আমি কাউকে ভালোবাসি না(মিহি)
–আচ্ছা ভালোবাসতে হবে না। এখন খেয়ে নেও।
–আমার ক্ষুধা নেই।
–হয়েছে আর অভিমান করে থাকতে হবে না।
–ক্ষুধা নেই বললাম তো।
–আমি ও কিন্তু খাইনি। হা করো।
কথাটা বলে ই মিহির মুখে খাবার দিয়ে দিলো। অভ্র মিহির পাশে খাইয়ে দিচ্ছে নিজে ও খাচ্ছে।
প্রিয়া এই টাইমে তুই বাহিরে কী করছিস। মিহি কোথায়।
মিনতিকে দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায় প্রিয়া।
–ভয় পেলি কেনো। মিহি কী তোকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে।
–না আপু তেমন কিছু না।
–তাহলে চল তোকে রুমে দিয়ে আসি।
–আপু কিছু হয়নি তো আমি একা ই যেতে পারবো।
–আরে চল তো মিহি ও আমার সাথে রাগ করে আছে দেখি কী করে মেয়েটা।
–আপু এতো রাতে যাওয়ার কী দরকার ঘুমিয়ে আছে হয়তো।
–চুপ চল আমার সাথে….
চলবে।