তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-১৩+১৪

0
1269

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৩

মিহি এবার ভয় পেয়ে গেলো। এভাবে দুজনকে একরুমে দেখলে তো আজকে মানসম্মান শেষ। এভাবে ডাকছে কেনো যেনে ফেললো না তো আমি এই রুমে আছি।

মিহি অভ্রকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো

–এই শুনতে পাচ্ছেন। কেউ এসেছে হয়তো এখন কী হবে।

অভ্র মিহির কথায় বিন্দু পরিমান ও নড়লো না কোনো কথা ও বললো না। মিহি আরো কয়েকবার ডাকলো।

যখন দেখছে অভ্র উঠে ই না তখন মিহি উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে মুখে ঢেলে দিলো।

অভ্র উঠে রাগি চোখ নিয়ে মিহির দিকে তাকিয়ে আছি। মিহির হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

–আমাকে ভিজালে এখন তোমাকে ও ভিজতে হবে।

–বাহিরে যে দরজা নক করছে কে ঐটা দেখুন আগে। এখন আমার কী হবে। কেউ জেনে ফেললো না তো?

–এতো ভয় পেয়ো না। তুমি আলমারি পেছনে দাড়িয়ে থাকো আমি দেখি কে আসলো।

মিহি কথা মতো আলমারির পেছনে দাড়াতে ই অভ্র দরজা খুলে দিলো।

–ফুপ্পি এতো জোরে চিৎকার করছো কেনো। ঘুমাতে দিবা তো।(অভ্ররে বড় ফুপ্পি দিলরুবা)

দিলরুবা বেগম কোনো কথা না বলে রুমে ডুকে পড়লো।

মিহি খুব ভয় পেয়ে যায় তাহলে কী তার ধারনা ই ঠিক।

–অভ্র বিছানা এমন ভিজে আছে কেন?

–পানি খেতে গিয়ে গ্লাস হাত থেকে পড়ে গিয়েছে।

–গ্লাস হাত থেকে পড়ে গেলো কেনো??

–উফফ ফুপ্পি এতো প্রশ্ন কেনো করো বলো তো।চলো তো আমরা বাহিরে যাই।

এটা বলে ই অভ্র টানতে টানতে দিলরুবা বেগমকে নিয়ে রুম ত্যাগ করে।

মিহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একমুহূর্ত আর এই রুমে না দাড়িয়ে সোজা গেস্ট রুমে চলে যায়।

গেস্ট রুমের দরজা খুলা ই ছিলো মিহি প্রিয়ার পায়ে শুয়ে পড়ে ভাগ্যিস কেউ ঘুম থেকে উঠেনি। কালকে অবশ্য অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে যার কারনে হয়তো উঠতে লেইট হয়েছে।

_____________________

প্রিয়া ঘুম থেকে উঠে ই জিজ্ঞেস করলে,

–আপু কখন এলে তুমি। রাতে একবার উঠে ওয়াশরুম গিয়েছিলা তোমাকে তো দেখিনি।

–রাতে ই এসেছি তুই খেয়াল করিসনি।

হাসি মুখে কথাটা বলে ই ওয়াশরুম ডুকে পড়লো মিহি।

অভ্র সোফায় বসে বসে দাতে নখ কাটতেছে।সকালের পর থেকে মিহিকে আর একবার ও দেখেনি সকালে ফুপ্পি জন্য ভালো করে কথা ও বলতে পারেনি। সকালে নাস্তাটা ও মিহি রুমে করেছে বাহিরে বের হয়নি।

একটু পর সবাই রং খেলবে তখন তো মিহিকে বের হতে ই হবে। এটা অভ্রদের বসার নিয়ম। ছেলে মেয়েরা বিয়ের পরের দিন রং আর হলুদ নিয়ে মজা করে। অবশ্য রিতীটা ছিলো হলুদ নিয়ে সময়ের পরিবর্তনে এখন রং নিয়ে মেতে উঠে।

সবাইকে সাদা ড্রেস দেওয়া হয়েছে। মিহি সাদা থ্রি পিসটা পড়ে বেডে বসে আছে। এখন বাহিরে গেলে ই অভ্রের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু অভ্রের সামনে যেতে চায়না মিহি।অভ্র নামের গভীর মায়ায় নিজেকে জড়াতে চায়না। আর অভ্র সামনে আসলে ও তাকে প্রতাখ্যান করার মতো ক্ষমতা মিহি যোগাতে পারেনা। অভ্র পাশে আসলে ই হার্টবিট বেড়ে যায়। অনুভূতিগুলো একান্তই উপভোগ্য কিন্তু মিহি চায়না সেই অনুভূতি গুলো উপভোগ করতে।খুব ভালো করে জানে অভ্রকে ভালোবাসলে কষ্ট পেতে হবে।

–টিয়াপাখি।

আবার সেই ডাক। তারমানে অভ্র এসেছে। এই ডাকটা শোনার পর নিজেকে দমিয়ে রাখা যায়না। তাও যতটা পারি প্রতাখ্যান করি।

–টিয়াপাখি ভয় পেয়েছো তুমি। সরি আমি তোমাকে সকালের পরিস্থিতিতে ফেলতে চাইনি।

মিহি কোনো উওর দিলো না অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

–রাগ করে আছো।

–চলে যান আপনি।

— তাই নাকি।

–আমার দিকে তাকিয়ে বললে চলে যাবো।

মিহি অভ্রের দিকে ঘুরে তাকাতে ই চোখ আটকে যায়।সাদা একটা পাঞ্জাবি পড়েছে। চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে উড়তেছে। ঠোটগুলো হলকা গোলাপি হয়ে আছে। মুহুর্তের ই মিহির মন চেঞ্জ হয়ে গেলো।

মিহি উঠে দাড়িয়ে পড়লো।

–কী জানি বলছিলে টিয়াপাখি।

–কখন। কিছু বলেনি তো।

–তাই

বলে ই মিহির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মিহির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

–এভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন কেনো?

–তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো কেনো।

–আপনি এগিয়ে আসছেন তাই। সরে দাড়ান।

–তাহলে বলো ভালোবাসি।

–কেনো বলবো এই কথা।

–আমাকে ভালোবাসো তাই বলবে।

–আমি আপনাকে ভালোবাসি না।

–সত্যি তো।

–হুম

অভ্র আস্তে আস্তে মিহির খুব কাছে চলে যায়। কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,

ভালোবাসি টিয়াপাখি।সময় থাকতে আগলে রাখো নয়তো হারিয়ে ফেলবে। একটু ভালোবেসে দেখো পৃথিবীর সব সুখ তোমার ই চড়নে থাকবে।

মিহি চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ মিহির গালে অভ্র হাত ছোয়ে দিলো। একাদা লাল রং মুখে দিয়ে অভ্র ছুটে পালালো।মিহি পিছনে ছুটতে যাবে ঠিক তখন ই রেহনুমা আহমেদ রুমে ডুকে।

রেহনুমা আহমেদ মুখখানা মলিন করে জিজ্ঞেস করলো,

–কি হচ্ছিল এখানে।

মিহি কী উওর দিবে বুঝতে পারছে না। তাও বললো,

–উনি রং ছোয়াতো আসছিলো।

— তুমি বাহিরে যাওনি কেনো।

–আসলে ভালো লাগছিলো না তাই যাওয়া হয়নি।

–ওহ্। তোমাকে একটা কথা বলি।

মিহি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

–আমি চাইনা তোমার বোনের সংসার ভেঙে যাক। নিশ্চিয় তুমি ও চাওনা। তাই অভ্রের থেকে দূরে থাকবে কেমন….

চলবে

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৪

–ওহ্। তোমাকে একটা কথা বলি।

মিহি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

–আমি চাইনা তোমার বোনের সংসার ভেঙে যাক। নিশ্চিয় তুমি ও চাওনা। তাই অভ্রের থেকে দূরে থাকবে কেমন।

মিহির মুখটা মুহূর্তে ই চেঞ্জ হয়ে যায়। বোনকে তো অনেক বেশি ভালোবাসে। নিজে জেনে বুঝে তো আর বোনকে কষ্ট দিবে না।

রেহনুমা তো মিনিটের জন্য ও আর দাড়ায়নি। মিহিকে কথাটা বলে যেনো মনে প্রশান্তি হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। মিহি মোটে ও খারাপ না কিন্তু এক বাড়িতে দুইছেলের বিয়ে তো করাবে না। তার থেকে ও বড় কথা অভ্রের জন্য মিহির থেকে সুন্দর মেয়ে তিনি দেখে রেখেছেন। মেয়ে বিদেশে পড়ালেখা করে। লেখাপড়া পাঠ চুকিয়ে ই দেশে আসবে। তাই তো এতো অপেক্ষা।

মিহি বেডের এক কোনে বসে আছে। ভাবছে কী মন্ত্র পড়লে দূরে থাকা যাবে অভ্র নামক মায়া থেকে।চোখের কোনে তো অনেক জল ভীর জমিয়েছে, ঠিক মানতে পড়ছে না এতো দিন যাকে চোখে সহ্য করতে পারতো না আজ তাকে হারাবার ভয়ে অশ্রু বিসর্জন দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অশ্রু বিসর্জনে কী কোনো ফল পাবে সেই তো দূরে থাকতে হবে। ভালোবেসে ও মুখে উচ্চারণ করতে পারবে না।

–এই মিহি শুনতে পাচ্ছিস না কী এতো ভাবছিস।

মিনতি এসেছে। মিহিকে অনেক্ষন ডাকার পর ও যখন কোনো সারা শব্দহীন ভাবে বসে ছিলো তখন মিনতি দু’হাত দিয়ে শরীর ঝাকিয়ে জানান দিলে মিনতি এসেছে। মিহির ভাবনার সুতোয় টান পড়লো তখন।

বোনের দিকে চোখ তুলে তাকাতে ই দেখলাম মুখে মিষ্টি হাসি। লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পড়ে আছে। মাথায় গামছা পেঁচানো কতগুলো চুল সামনে এসেছে পড়ে আছে। গামছাটা ভালো ভাবে পেচানো হয়নি এই বুঝি খুলে পড়ে যাবে।

মিহির চোখে যে পানি তা দেখে মিনতি বোনের পাশে বসলো। দুহাত দিয়ে মুখখানা উপরে তোলে কপালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলো,

–কী হয়েছে কান্না কেনো করছিস।

মিহির মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না। বোনকে জড়িয়ে ধরে সকল কষ্ট অশ্রু ধারার সাথে মিশিয়ে নিজেকে হালকা করার চেষ্টা করছিলো।

ছোট বোন তো খুব আদরের, বোনকে কখনো এভাবে কাদতে দেখনি। ভয়ে আঁতকে উঠে মিনতি কী হলো, এমন ভাবে কাদছে কেনো।

ঠিক সেই মুহুর্তে রুমে ডুকলো তীব্র আর অভ্র। হাসিখুশি মুখটা মুহুর্তে ই চুপশে গেলো অভ্রের। মনে হচ্ছে নিজের কলিজে থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। মিহির মন খারাপ ছিলো তা তো বিন্দু মাত্র ও টের পায়নি অভ্র। এতো ভালোবাসে অথচ মন খারাপ তা বুঝতে পারেনি। এ কেমন দায়সারা হয়ে পড়েছে।

–কী হয়েছে ভাবি?

অভ্রের প্রশ্নের কী উওর দিবে মিনতে জানে না কারন সে তো নিজে ই মিহির মন খারাপের কারন জানে না।

–আমাকে কিছু বলছে না তো। কী হলো হঠাৎ করে।

মিহি কারো কথা ই কানে নিচ্ছে না। নিজের কান্না নিজে করে ই যাচ্ছে। বড় বোনের আদরে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। মিনতি বোনকে কোলে শুয়ে বসে আছে।

অভ্র ও পাশে বসে আছে। ইচ্ছে করছে মিহির মাথায় বিলি কেটে দিতে নিজের উষ্ণতায় জড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করতে কী হয়েছে তার প্রাণ পাখিটার।
মিনতির থেকে বেশি অস্থির অভ্র হয়ে যাচ্ছে কোনো ভাবে ই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।রাতে বউ ভাতের অনুষ্ঠান আছে। নতুন বউ সবাই ই দেখতে আসছে। মিনতি অনিচ্ছা সর্তে ও মিহিকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে চলে গেলো।
প্রিয়া বেড সাইডে বসে আছে। অভ্র প্রিয়াকে সরে যেতে বললে,

এতে প্রিয়া বেশ অবাক হয়ে বললো,

–আমি কেনো সরে যাবো। সরে যেতে হলে আপনি যান।

–লক্ষি বোন আমার কথা পেচিয়ো না দরজা লক করে দিয়ে বাহিরে চলে যাও। কেউ আসলে রুমে ডুকতে দিবে না।

–কেনে আপনি মিহি আপুর সাথে একা থাকবেন কেনো??

–তোমাকে পরে সব বলবো এখন যাও।

প্রিয়া আর কেনো প্রশ্ন করলো না। বাহির থেকে দরজা লক করে দাড়িয়ে আছে।

মিহি সাদা ড্রেসটা ই পড়ে আছে। চুলগুলো এলেমেলো হয়ে মুখে এসে পড়ছে। চোখের কাজলগুলো লেপ্টে গেছে চোখের পানিতে। মুখখানা মলিন হয়ে আছে। এ যেনো সব সময় ঝলমলে চাঁদটা আজকে কষ্ট মেঘের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে।

অভ্র পাশ থেকে গ্লাসটা নিয়ে মুখে হালকা পানি ছিটালো। এতে ই মিহির ঘুমে বাধা পড়লো। উঠে অভ্রকে দেখে নিজের সর্বস্ব দিয়ে জড়িয়ে ধরে আবার কান্না জুড়ে দিলো। অভ্র মাথায় বিলি কেটে দিয়ে খুব নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

–কী হয়েছে টিয়াপাখি। ভয় পেয়েছো কী তুমি। বলো আমাকে। তোমাকে এম অবস্থায় দেখতে আমার যে ভালো লাগে না। বলো প্লিজ কী হয়েছে।

মিহির ঘোর কাটার সাথে সাথে অভ্রকে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয়। একটুর জন্য অভ্র বেড থেকে পড়ে যায়নি।

–কেনো এসেছেন এখানে?

অভ্র নিজেকে স্বাভাবিক রেখে উওর দিলো।

–তোমার কী হয়েছে তা আগে জানতে চাই।

–কিছু হয়নি বের হন এই রুম থেকে নয়তো আমি এখন বাসায় চলে যাবো।

–টিয়াপাখি তুমি আমার সাথে এমন ব্যবহার করছো কেনো।

–আপনি যাবেন নাকি আমি যাবো।১৬

অভ্র আর কিছু বললো না নিঃশব্দ বাহিরের দিকে পা বাড়ায়।

____________________________

চারদিকে মানুষে পুরোপুরি ভরা। মিহি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। অবশ্য বৌভাতের অনুষ্ঠানে আসার পর থেকে ই রেহনুমা আহমেদ মিহিকে নজরে রাখছে।

দূর থেকে অভ্র ও সুযোগ খুজচ্ছে কখন মিহির সাথে কথা বলবে আর তো দূরে থাকা সম্ভব না। মুখে বললে ও কাজে করে দেখানো খুব কঠিন। এই তো একটু আগে ই মনে মনে বেশ অভিমান জুগিয়েছিলো মিহির প্রতি কেনো করলো এমন। এতো ঘৃণ্য পাত্র যোগ্য কী অভ্র।

হঠাৎ লোডশেডিং হলো। অভ্রের সুযোগ হলো। মিহিকে টেনে নিয়ে একটা সাইডে দাড় করায়। মিহি স্মেল শুনে ই বুঝেছে এটা অভ্র।

–সমস্যা কী তোমার ইগ্নোর করছো কেনো।

মিহি ভয়ে চুপ করে আছে কী বলবে, এখন যদি বিদ্যুৎ চলে আসে তাহলো তো রেহনুমা আহমেদ সচোখে সব দেখে নিবে।

চলবে

[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে