তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-১১+১২

0
1314

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১১

পাভেল বাহিরে এসে দাড়ালো সুযোগ খুজছে মিহির সাথে কথা বলার। মিহি রুম থেকে বের হয়ে মায়ের রুমের দিকে যাচ্ছিলো হঠাৎ পাভেল হাত ধরে ফেলে। দূর থেকে অভ্র স্পষ্ট দেখতে পায় কেউ একজন তার টিয়াপাখির হাত ধরেছে।

মিহি বিদ্যুতের গতিতে হাতটা সরিয়ে নেয়।

–এতো অসভ্য কীভাবে আপনি, চেনেন না জানেন না একজন মেয়ের হাত ধরে ফেলেছেন।

মিহি আরো অনেক কিছু ই বলে যাচ্ছে কিন্তু পাভেল শুধু মিহিকে ই দেখে যাচ্ছে।
হঠাৎ অভ্র এসে বললো,

–মিহি রুমে যাও।

–কেনো।

বেশ জোরে চিৎকার করে বললো,

–আমি যেতে বলিছি তাই যাবে।

অভ্রের দিকে আশেপাশে লোকগুলো তাকিয়ে আছে। মিহি অভ্রের দিকে তাকাতে ই দেখে চোখগুলো লাল হয়ে আছে। মুখের মধ্যে রাগের ছাপটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। তাই মিহি আর কোনো কথা বলেনি সোজা রুমে চলে যায়।

–পাভেল এটা তোর ভাবি হয়। ওর থেকে দূরে থাকবি।( পাভেল অভ্রের কাজিন)

–ওহ্ আচ্ছা। সব যদি বড় ভাইয়ারা ই বুক করে ফেলে তাহলে আমাদের মতো ছোটদের কী হবে।

— মিহিকে ছাড়া অন্য যাকে ভালো লাগে তাকে খুজেনে।

–ভালো তো একজনকে বাসা যায়। সবাইকে তো না।

–সে তোর ব্যাপার কিন্তু মিহির আশেপাশে ও যেনো তোকে না দেখি মাইন্ড ইট ব্রো।

বলে ই অভ্র চলে যায়। পাভেলের সাথে এই মুহূর্তে জামেলা করলে পাভেল শিউর যে বাসায় বলে দিবো। এতো দ্রুত অভ্র বাসায় জানাতে চাচ্ছে না তাই এতো ভালো ব্যবহার করে বুঝালো।

এতো মানুষের মধ্যে মিহির সাথে একমুহূর্তে জন্য ও কথা বলতে পারেনি অভ্র। বিয়ের সকল কাজ সম্পূর্ণ করে চলে এসেছে। অভ্র বিদায়ের সময় মিহিকে খুজে ছিলো কিন্তু পায়নি।

গাড়ি এসে গেইটের সামনে থামতে ই। অভ্র মা, ফুফু, চাচি, খালামনিরা বরণ ডালা নিয়ে রেডি।

মিহি, প্রিয়া, রিয়া,অলি সবাই ই এসেছে মিনতির সাথে। খুব সুন্দর করে অভ্রের বাসাটা ও সাজানো হয়েছে। পুরো বাড়িতে রকমারি লাইটের আলোতে ঝলমল করছে।

অভ্র দূর থেকে মিহিকে দেখে শান্তিতে নিশ্বাস নিলো। কাজিনদের সাথে দাড়িয়ে আছে মিহি।

মিনতির পাশে এসে দাড়িয়েছে মিহি আর তীব্রের পাশে দাড়িয়েছে অভ্র। মিনতি আর তীব্রকে বরণ করার সময় অভ্র মিহির দিকে তাকিয়ে আছে। মিহি ডান দিকে তাকাতে ই অভ্রের চোখে চোখ পড়লো। মিহি দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এরকম ভাবে তাকিয়ে আছে তাই মিহি জিজ্ঞেস করলো, মিহি ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে।

অভ্র মেকি হাসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো কিছু না।

অভ্রেদের বাসায় ডুকতে ই তীব্র আর মিনতির সহ সকল কাজিনরা মিনতিকে নিয়ে বাসর ঘরে ডুকে যায়। ভেতর থেকে দরজা লক করে দেয়।

শুধু তীব্র একা বাহিরে। সবাই মিলে বিশ হাজার টাকা চেয়েছে। মিহিকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে সবাই ফ্লোরে নানা রকম গল্পে মেতে উঠেছে। অভ্র মিহি সাথে বসেছে। হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। অবশ্য মিহির শাড়ির জন্য তা কেউ বোঝার উপায় নেই।

মিহি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু অভ্র ছাড়ছে না।

–আপনি এমন কেনো বলেন তো।

–আমি আবার কেমন।

–হাত ছাড়ুন।

–ছাড়ার জন্য কী ধরেছি নাকি।

–বিয়ে করে বউয়ের হাত ধরুন।

–তুমি তো আমার বউ ই।

–ইসসস বয়ে ই গেছে আপনার মতো আক্ষাম্মার বউ হতে।

–তাই নাকি। তোমার জন্য আমার খুব দুঃখ হচ্ছে।

মিহি বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

–কেনো??

–এই যে এই আক্ষাম্মার বউ হতে হবে তোমাকে।

–ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কতো স্বপ্ন ই দেখা যায়।

এই আপু ভাইয়া দুজন কী এতো ফিসফিস করছো। মিহি দুষ্ট একটা হাসি দিয়ে বললো,

–এই যে তোমাদের ভাইয়ার নাকি পেট খারাপ হয়েছে তাই বলছে আমাদের বাসার খাবারে নাকি সমস্যা আছো।

অভ্র চোখ বড় বড় করে মিহির দিকে তাকিয়ে আছে।

–এই আমি অমন কথা কখন বললাম।

–আরে লজ্জা কিসের ওরা তো আপনার ই কাজিন।

–এই ওর কথা বিশ্বাস করিস না। আমার কিছু হয়নি।

–তাহলে কী কথা বলছিলে ভাইয়া আমাদের বলো।
মিহি দাতে দাত চেপে অভ্রকে বললো,

–নিন এখন বলেন কী বলতেছিলেন।

–কিছু না।

–ভাইয়া বলো কী বলেছো আপুকে?? আমাদের কে ফাকি দিয়ে কী তোমরা দুজন সব টাকা নিয়ে নিবে নাকি এই প্ল্যান ই চলছিলো তোমাদের মধ্যে তাই না।(অভ্রের কাজিন)

অভ্র ওদের কথা শোনে হতাশ কী বলে পুচকি গুলো।

— হে আমার পেটে সমস্যা হয়েছে এটা ই মিহিকে বলছিলাম। হয়েছে শুনেছিস তোরা।এবার থাম ভাই বোনেরা।

এই নে তোদের টাকা। এবার তো দরজা খোল।
বাহির থেকে তীব্র জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্চে আর বলছে।

মিহি দরজার পাশে গিয়ে বললো,

–বেশি স্মার্ট হয়েন না জিজু টাকা জানালা দিয়ে আগে দেন তারপর দরজা খুলবো।

তীব্র প্ল্যান টা ভেসতে গেলো। টাকা না দিলে দেখছি আজকে রুমে ডুকতে ই পারবে না। তাই জানালা দিয়ে টাকাটা দিয়ে দিলো।

সবাই রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসলো। তীব্র দরজা লাগানোর কিছুক্ষন পর অভ্র খুব সুন্দর করে দরজায় কান পাতলো। এটা দেখে মিহি জিজ্ঞেস করলো কী করছেন,

–আরে আস্তে বলো।

–হে বলবো, এখানে আবার কী করছেন।

–বিয়ে করবো তো কদিন পর তাই এক্সপেরিয়েন্স নিচ্ছি।

–তাই নাকি। শোনা যায়।

–কান পেতে দেখো।

মিহি ও দরজায় গান পাতলো। মিহি অভ্রকে দেখে বাকি কাজিন গুলো ও একে একে এসে কান পাতলো দরজায়। হঠাৎ তীব্র দরজা খুলে দিলো সবগুলো হুমরি খেয়ে রুমের ভেতরে মেজেতে পড়লো। মিহি একেবারে অভ্রের উপরে পড়েছে….

চলবে

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১২

মিহি ও দরজায় গান পাতলো। মিহি অভ্রকে দেখে বাকি কাজিন গুলো ও একে একে এসে কান পাতলো দরজায়। হঠাৎ তীব্র দরজা খুলে দিলো সবগুলো হুমরি খেয়ে রুমের ভেতরে মেজেতে পড়লো। মিহি একেবারে অভ্রের উপরে পড়েছে।
তীব্র আর মিনতি হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পড়েছে। একেক জন উঠে বসেছে। মিহি উঠতে গেলে অভ্র আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

___ছাড়েন নয়তো চিৎকার করবো।

—কেনো ছাড়বো তুমি এসে আমার উপর পড়েছো কেনো।

–আপনার কাছ থেকে কুবুদ্ধি নিয়ে ই পড়েছি।

–কিহ্ আমি কুবুদ্ধি দেই।

–তা নয়তো কী।

–এই আমি তোমাকে কী কুবুদ্ধি দিলাম।

–কান পাতার বুদ্ধিটা আপনার ই ছিলো।

–তুমি এতো ভালো তাহলে আমার কুবুদ্ধি কানে নিলে কেনো।

–এটা ই তো আমার দোষ।

–দোষ করেছো তাই শাস্তি পাচ্ছো।

এভার মিহি রেগে যাচ্ছে তাই অভ্র ছেড়ে দিলো। তীব্র আর মিনতি হাসতে হাসতে ই অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিক দিয়ে কী হচ্ছে তা তদের খেয়াল নেই। তীব্র হাসি থামিয়ে বললো,

–টাকা নিয়ে ও তোরা আমাকে শান্তি দিলি না।

–ভাইয়া এই জন্য আমাদের এভাবে ফেলে দিবেন।

–উচিত বিচার হয়েছে। আর কখনো কারো রুমে কানপাতবি না তোরা।

অভ্র উঠে এসে বললো,

–আমাকে তো একা ফেলিসনি আমার সাথে ছোট একটা ডাইনোসর এর বাচ্চা ও আমার উপরে ফেলেছিস কোমরটা ভেঙ্গে ব্লেন্ডার হয়ে গেছে।

মিহি চোখ বড় বড় করে অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্র এটা দেখে আর মিহির দিকে তাকায়নি অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।

__আমার ভদ্র ভাইবোনেরা দয়া করে রুম ত্যাগ করুন। (তীব্র)

–আচ্ছা এই যে আমাদের ফেলে দিলে না এটা বিচারটা করবো। এখন যাচ্ছি।

–আচ্ছা যান। এমন কজিন যে আল্লাহ কাউকে দেয় না।

–শকুনের দোয়ায় গরু তো মরতে দেখিনি।

এটা বলে ই সবগুলো বের হয়ে আসলো।

মিহিদের জন্য দুইটা গেস্ট রুম রেডি করা হয়েছে। মিহি তার কাজিনদের গেস্ট রুমে পাঠিয়ে দিয়ে অভ্রকে খুজতে যাচ্ছে। যেহেতু ডাইনোসর এর ছোট্ট বাচ্চা বলেছে তার একটা বিহিত তো করতে ই হবে। রাগে, মাথা দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে। এমন হালকা পাতলা একটা মেয়েকে ডাইনোসর এর ছোট্ট বাচ্চা বলেছে।

মিহি বিদ্যুৎ এর গতিতে অভ্রের রুম খুজতেছে। হঠাৎ কেউ টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়।

–আপনি।

দরজা লক করতে করতে অভ্র উওর দিলো।

–আমাকে খুজছিলে জানি।

–আপনি দরজা লক করলেন কেনো।

–ওয়াশরুম যাচ্ছি এসে সব প্রশ্নের উওর দিবো।

–আপনি দরজা খুলে যান। আমি আপনার কাছে থাকতে আসি নাই।

অভ্র কোনো কথা না বলে ওয়াশরুম চলে গেলো। মিহি হাবলার মতো দাড়িয়ে আছে এটা কী হলো।

হঠাৎ অভ্রের ফোনটা বেডে উপর পড়ে থাকতে দেখলো।

মিহি গিয়ে ফোনটা হাতে নেয়। ফোনটা হাতে নিতে ই ফোনের স্ক্রিনে নিজের ছবি দেখে চোখদুটো রসগোল্লা মতো করে তাকিয়ে আছে। এ কী দেখছে। ঘুমন্ত অবস্থায় মিহি অভ্ররে বুকে শুয়ে আছে। এটা তো তীব্র আর মিনতি রাতে দেখা করার সময়ের ছবি। মিহি ঘুমিয়ে পড়েছিলো। তারপর অভ্র এই কাজটা করতে পারলো।

অভ্র খালি গায়ে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়েছে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতেছে। এটা দেখে মিহি অন্য দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার দেয়।

–এই এই আপনি শার্ট না পড়ে এদিকে আসবেন না।

–যে জোরে চিৎকার দিছো মনে হচ্ছে আমি পেন্ট ও পড়িনি।

–আপনি খালি গায়ে বের হলেন কেনো।

–তোমাকে দেখানোর জন্য।

–ছিঃ আপনি এমন।

–হয়েছে ঘুরো এইদিকে শার্ট পড়েছি। ওয়াশরুম আমার শার্ট নিয়ে ডুকতে মনে নেই।

মিহি অভ্রের দিকে এগিয়ে এসে ফোন দেখিয়ে বললো,

–এই ছবি কেনো তোললেন।

–বলবো কেনো তোললাম।

–হুম

–শোনবে তুমি

খুব আস্তে আস্তে কথাগুলো বলে মিহির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মিহি পিছনে যেতে যেতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। অভ্র আরো কাছে আসতে ই মিহি চোখ বন্ধ করে দেয়।

অচমকা অভ্র মিহিকে কোলে তোলে নেয়। বারান্দায় বেলকনির গ্লাসটা খুলে মিহিকে নিয়ে বসে। বেলকনিটা খুব সুন্দর ডেকোরেশন করা। একটা ড্রিম লাইট জালানো। পাশে কিছু ফুলেট টব। ফুলগুলো থেকে খুব সুন্দর একটা স্মেল আসছে। মিহি চারদিকে তাকিয়ে দেখছে।

–আমাকে এখানে আনলেন কেনো। আমি চলে যাবো।

–এই লকস্কিনে যে ছবিটা দেখছো এটা কী তোমার বোনকে দেখাবো।

মিহি জোরে চিৎকার দিয়ে বলে
–নাহ

–তাহলে বসে আমার সাথে গল্প করো।

–আমার কজিনরা রুমে একা আছে আমাকে খুজবে।

–সে যখন খুজবে তখন দেখা যাবে।

–সুযোগে সৎ ব্যবহার করছেন।

–আচ্ছা তাহলে যাও। আমি তোমার বোনকে তোমার ছবিটা দেখিয়ে আনি।

মিহি চুপ করে বসে আছে আর কোথাও যাওয়ার কথা একবার ও মুখ দিয়ে বের করেনি। মিহি কে চুপ দেখে অভ্র বললো,

–মিহি আমি চাই না আর পাঁচটা রিলেশন মতো আমকে তুমি কাছে টেনে নেও।তুমি শুধু আমার চোখের সামনে থাকো আমাকে ভালোবাসতে হবে না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। সারাজীবন বুকে আগলে রাখতে চাই……

অভ্র কথা বলে ই যাচ্ছে কিন্তু মিহির কোনো শব্দ পাচ্ছে না তাই অভ্র মিহির দিকে তাকাতেই দেখে ফ্লোরে পড়ে ই ঘুমিয়ে আছে।

মিহিকে দেখে অভ্র হাসলো। কী ঘুম পাগলি। এতোটুকু সময়ের ভেতরে ঘুমিয়ে পড়লো। অভ্র কোলে তোলে নিয়ে বেডে বসলো। মিহিকে কোলে শুয়ে দিয়ে অভ্র বসে বসে মিহিকে দেখছে। ঘুমন্ত অবস্থায় একেবারে বাচ্চাদের মতো লাগছে।

______________________

—-অভ্র উঠ তো তোর সাথে কথা আছে।

দরজায় অনবরত নক করার শব্দে মিহির ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ মেলে তাকাতে ই দেখে অভ্রের কোলে শুয়ে আছে। অভ্র বসা অবস্থা বলিশে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে।

–অভ্র শোনতে পাচ্ছিস না নাকি।দরজা ভেঙ্গে আসতে হবে নাকি।

মিহি এবার ভয় পেয়ে গেলো। এভাবে দুজনকে একরুমে দেখলে তো আজকে মানসম্মান শেষ। এভাবে ডাকছে কেনো যেনে ফেললো না তো আমি এই রুমে আছি……

চলবে,

[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে