#তোমাতে আসক্ত (সিজন ২)
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১
কলেজের সবার সামনে আমাকে থাপ্পড় মারলো অভ্র একটা ছেলের সাথে কথা বলার অপরাধে, সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আমি গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকালাম। চোখ থেকে কয়েকফোটা জল নিচে গড়িয়ে পরলো।
—কতবার নিষেধ করেছি, ছেলেদের সাথে কথা বলবি না। তোর কোনো ছেলে ফ্রেন্ড থাকবে না।
–আমি ইমরানকে ভালোবাসি জানেন আপনি তাও ডিস্টার্ব করেন কেনো।
এটা বলার সাথে সাথে আরেকটা থাপ্পড় মুখে পড়লো।
এবার মিহি ও চোখ মুচে চড় মারতে যাবে তার আগে ই অভ্র হাত ধরে ফেললো। হাত ধরে হাতে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো,
–যতটা আঘাত করেছি ঠিক ততটা ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিবো এই কষ্ট। আই প্রমিস টিয়া পাখি।
বলে ই অভ্র তার বন্ধুদের নিয়ে গেইটের বাহিরে চলে গেলো।
মিহি শুধু অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।মিহি ঘোরে মধ্যে আছে মনে হচ্ছে কিছুক্ষন আগে শরিরে ইলেক্টিক শকট লেগেছে। কী হলো এটা।
এটা রোজকার ঘটনা অভ্র আসে মিহিকে কতক্ষণ ভালোবাসার বাণি শোনিয়ে চলে যায়। কিন্তু এই প্রথম অভ্র স্পর্শ করেছে মিহিকে।
সবাই দাড়িয়ে এতোক্ষণ শুধু দেখেছে। একটা টু শব্দ করার সাহস নেই কারো। কারন জানে অভ্র শোনতে পারলে জীবন নিয়ে নিবে। কলেজে এতো মানুষ নেই তাও একজন দেখলে ই হাজার জনের কানে পৌঁছাতে সময় কম ই নেয়।
মিহির আর পিছু ফিরে না তাকিয়ে সোজা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে গেলো।
বাসায় গিয়ে ই মিহি দ্রুত কিচেনের দিকে ছুটলো। মিহির মা আর বোন দুজনে ই মিহির পিছনে পিছনে গেলো,
–এই মেয়ে কথা বলিস না কেনো কি হয়েছে বলবি তো।
–বললে কী হবে।
–এই তুই হাতে বিমবার দিয়ে এভাবে মাজতেছিস কেন।
–আমার হাত আমি যা ইচ্ছে করবো তোর কীরে মিনতি।
–কথার কী স্টাইল দেখো। থাপ্পড় লাগাবো একদম।
–হে, একজন মেরেছে তাতে হয় নাই এখন তোর মারার বাকি আছে।
— কী বললি কে মেরেছে তোকে।
মিহি হাত ধুয়ে চলে গেলো রুমে। কি উওর দিবে তা জানা নাই তাই দৌড়ে পালালো।
বিছানায় বসতে ই আবার অভ্র কল দিলো।
মিহি বিরক্তি নিয়ে ফোন রেখে ই বাহিরে চলে গেলো। কী যে একটা জ্বালা এই ছেলেটা আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না।
বাহিরে যেতে ই মিহির আম্মু ভাত নিয়ে আসলো।খাবারের প্লেট দেখে মিহি দৌড়ে বাহিরে চলে যেতে নিলে। মিনতি ধরে এনে সোফায় বসিয়ে দেয়। সাথে একটা কান মলা ও খেয়েছে।
–তুই কী বাচ্চা নাকি এখনো মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হয়।কই আমাকে তো মা একদিন ও খাইয়ে দেয় না।
–বিয়ে হলে তখন শ্বশুর বাড়ির লোকজন তোকে খেইয়ে দিবে। মা দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করো প্লিজ মিনতির বিয়েতে আমি কতো মজা করবো একমাত্র বোন আমার।
–তোর বিয়েটা আগে ই দিতে বলবো মাকে।
–তুই বড় তোর আগে।
কথা বলছে আর মিহির মা তার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। মিহি একদম ই খেতে চায়না। দেখতে খুব ই চিকন লম্বা তাছাড়া ও দেখতে খুব সুন্দর।
–মিহি তোর ফোন বাজছে দাড়া নিয়ে আসি।
বলে ই মিনতি ফোন আনতে গেলো। ফোন আনার কথা শুনতে ই মিহি পানি খেয়ে দৌড়ে রুমে চলে যায়। মিনতির হাত থেকে টেনে নিয়ে নেয়।
–তুই এভাবে ফোন নিলি কেন।
–তোর ফোন আমাকে ধরতে দিস, তাহলে আমার ফোনে তুই হাত দিবে কেনো।
মিনতি আর কোনো কথা বললো না।
–এই যে আবার ফোন এসেছে রিসিভ করিস না কেন।
রিসিভ করবে কীভাবে তুই যদি জানতে পারিস আমাকে কোনো ছেলে ফোন দেয় তাহলে তো বাসায় মাইক দিয়ে বলবি। আর আমার ফোনটা ও আমার হাত ছাড়া হয়ে যাবে তাই রিসিভ করছি না। মনে মনে কথাগুলো। হঠাৎ দেখলো মিনতি চলে গেছে। তাই ফোন রিসিভ করলো।
–কী চাই কল কেনো দিয়েছে।
–বারান্দায় ঔষুধ রাখা আছে টিয়াপাখি।
–ঔষুধ দিয়ে কী করবো।
–খাবে।
–কেনো।
–থাপ্পড় মেরেছি, লাল হয়ে আছে দেখছি তাই ঔষুধ পাঠালাম।
–আদিখ্যেতা।
— কালকে কলেজে আসো তারপর দেখবো আদিখ্যেতা নাকি ভালোবাসা।
–যাবো না আমি কলেজে।
–তাহলে বাসায় চলে যাবো।
–বিরক্তিকর।
বলে ই কল কেটে দিলো মিহি।
_________________
রাতের বেলা,
বাসায় অনেক মেহমান এসেছে। মিহির তার ছোট্ট কাজিনদের নিয়ে ছাদে গেলো।এর মধ্যে আবার অভ্র কল দিলো। ব্লক করে ও শান্তি নাই বাসায় চলে আসার হুমকি দেয়।
মিহির মাথা এবার একটা বুদ্ধি আসলো এমন কাজ করবো যে আর কখনো আমাকে কল দিবা না।
–এই সানি এদিকে আস।(সানি মিহির খালাতো ভাই এর ছেলে।অনেক দুষ্ট)
—হিরো আলমের গান পারিস।
–হে পারি তো শোনাবো নাকি তোমাকে।
–হে দাড়া।
মিহি ফোনটা রিসিভ করে সানির মুখের সামনে দিতে ই সানি জোর গাওয়া শুরু করলো,
–তুমি হলে বাবু আমি তোমার হিরুরররররররররর অঅ।,,,অ অঅঅঅঅঅ
অভ্র কিছুক্ষণের মধ্যে ই ফোন কেটে দিলো। মিহি হাসতে হাসতে বসে পড়লো।
অভ্র আবার কল দিলো। সানি আবার গান শুরু করলো।
এসব গান শুনে অভ্রের গানের অবস্থা প্রায় শেষ।
রাত প্রায় বারোটা বাজে।মিহি সাধারণত এতো রাতে করে ঘুমায় না।
মিহিরা দুই বোন। ভাই নেই। বাবা কৃষক। কৃষক বলে কিন্তু গরিব না অনেক জমির মালিক সাইফুল মিয়া। এলাকার অনেক মানুষ তার জমিতে কাজ করে।
এসব ভাবতে ভাবতে ফোনের দিকে তাকাতে ই ইমরান নামটা ভেসে উঠলো। ফোনেটা রিসিভ করে মনটা শান্তি পেলো।অভ্র আর ইমরান এক ক্লাসে ই পড়ে। ইমরান আর অভ্রের মধ্যে বেশ কিছু বার ঝগরা হয়েছে মিহিকে নিয়ে। মিহি বার বার নিষেধ করে ঝগড়া করার জন্য কারণ ব্যাপারটা নিয়ে জামেলা করলে বাসায় শুনবে আর মিহির বাসায় শোনলে কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দিবে। সারাদিন কাজে ব্যস্ত ছিলো। ব্যস্ততা শেষে মনে পরলো তাহলে। অানন্দ নিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম।কিন্তু যতটা আনন্দ নিয়ে কথা শুরু করলো ঠিক ততটা কষ্ট নিয়ে ফোনটা কেটে দিলো এই রাতের বেলা নাকি বড় ভাই কল দিয়েছে। মিহি সব ব্যস্ততা মেনে নেয়। মনটা খারাপ করে ই ঘুমাতে গেলো।
______________
সকালে কলেজে যেতে ই অভ্র সামনে এসে দাড়ালো।
–পথ ছাড়ুন।
–কেনো ইমরান ওয়েট করছে বুঝি।
–জানেন ই তো আবার পথ আটকাচ্ছেন কেনো।
–যেতে দিবো না তাই।আজকে তোমাকে বিমবার খাওয়াবো।
–মানে।
–কালকে আমি হাতে চুমু খেয়েছি তাই হাত বিমবার দিয়ে ধুয়েছো। আজকে যদি অন্য কোথাও দেই তাহলে তো ধুতে গিয়ে খেতে হবে।
কথাটার মানে বুঝতে পেরে মিহি ভয় পেয়ে যায়।
অভ্র আস্তে আস্তে মিহির দিকে আসতে থাকে। মিহি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
চলবে,