তোমাতে আসক্ত পর্ব-২৪+২৫

0
3237

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৪

দাদিমার জন্য আমার জীবনটা এখন লুকোচুরি খেলার মতো হয়ে গিয়েছে। ঘুম থেকে উঠে আমাকে বেডে না পেয়ে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তোলছে। চিৎকার শোনে কোনো রকম দৌড়ে এসেছি,

–এই নাতবৌ তুই কোথায় ছিলি এতোক্ষণ। তোর চালচলন আমার কিন্তু ভালো ঠেকছে নাহ্।

বুড়িটা এখন ও বেডে ই বসা তারমানে বেশিক্ষণ হয়নি ঘুম থেকে যে উঠেছে। আমি হাই তোলতে তোলতে বললাম,

–এখন বাথরুমে গেলে ও বুঝি আপনাকে সাথে করে নিয়ে যেতে হবে।

–তুই বাথরুমে গিয়েছিলি??

–হে, দাদিমা।

কতোক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কী যেনো ভেবে বললো,

–দরজা লক কর, চাবি টা আমার কাছে দিয়ে যা।

এই যাহ্ হলো তো কাহিনী, ভাবছিলাম আবার ঘুমিয়ে পড়লে অভ্রের রুমে চলে যাবো, এই মহিলা তো দেখছি কিছু ই হতে দিবে না।

–এই মেয়ে কী এতো ভাবছিস, লক কর। করে চাবিটা আমাকে দিয়ে যা।

দাড়া একটা বুদ্ধি পেয়েছি, চাবি ভেতরে দিয়ে লক না করে ই বলবো লক করেছি, বলে চাবিটা দাদিমাকে দিয়ে দিবো, হা হা হা, কতো বুদ্ধি আমার।

মনে মনে অট্টহাসিতে ফেটে যাওয়া আমি, দরজা লক করেতে গেলাম।

–এই শোন দরজা লক করে আবার জোড়ে টান দিয়ে দেখ দরজা লক হয়েছি কী না।

কতোক্ষন বিরক্ত ভাব নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম।

দিলো তো আমার পাকা ধানে মই। হয়েছে আর যাওয়া হলো না। সুন্দর করে দরজা লক করে চাবিটা দিয়ে শুয়ে পড়লাম। মনে কষ্ট ফোনটা হাতে নিয়ে অভ্রকে মেসেজ করলাম,

–তোর জন্য সব হয়েছে। এখন নিজের বউ এর সাথে ও তুই দেখা ও করতে পারিস না।

মেসেজের রিপ্লাই আসে,

–তোমার জন্য হয়েছে ঐ দিন এভাবে পালিয়ে না গেলে কী আর দাদিমা এতো রাগ করতো নাকি। এখন বুঝো আমাকে ছাড়া থাকতে কেমন লাগে।

–তুই সব শর্ত মেনে নিলি কেনো। তুই আর আমার সামনে আসবি না।

–রাগ করো কেনো বউ। দাদিমা ঘুমিয়ে পড়ুক তারপর আবার নিয়ে আসবো।

–তোর দাদিমা, দরজা লক করে চাবি নিজের কাছে রেখে দিয়েছে।

–কী বুদ্ধি দাদিমার ভাবা যায়। আমার লক্ষী বউটা যে আমার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে তা দাদিমা বুঝে গিয়েছে।

–এই নাতবৌ কীসের এতো টুংটাং করছিসরে।

এই বুড়ি তো দেখি শান্তিতে মেসেজ ও করতে দিবে না। দ্রুত ফোন সাইলেন্ট করলাম।

–তুই আমার সাথে কথা ও বলবি না সামনে ও আসবি না। তোর জন্য পাগল হতে বয়ে ই গেছে।

–উফফ যা লাগে না টিয়া পাখি তুমি যখন তুই করে বলো।

কয়েকটা রাগের ইমোজি পাঠিয়ে মিহি ঘুমিয়ে পড়লো।

__________________

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে, মিহি ফ্রেশ হয় নিচে যাওয়ার জন্য। দাদিমা আগে ই উঠে চলে গিয়েছে। মিহি রুম থেকে বের হয়ে আনমনে হাটতে থাকলো,
হঠাৎ ই অভ্র টান দিয়ে নিজরে বুকের মধ্যে নিয়ে নেয়। দু হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

–আমাকে ঘুমাতে না দিয়ে তো সারা রাত দিব্বি নাক ডেকে ঘুমিয়েছো।

–এই নাক ডেকেছি মানে, কী বলতে চান আপনি।

–আরে বাবা, মাফ চাই। যা ই একটু তোমাকে কাছে পাই এই তোমার ঝগড়ার জন্য আমার রোমান্স করা হয় না।

–আগে বলুন আমাকে কেনো বলেছেন নাক ডেকে ঘুমিয়েছি।

–মাফ চাইলাম তো বউ। রাগ করে কেনো ঘুমিয়েছো তুমি। আমি তো চাই না আমার জান রাগ করে ঘুমিয়ে পড়ুক।

–তাহলে বললেন কেনো, আমি আপনার জন্য পাগল।

–তুমি আমার জন্য পাগল কিনা তা জানি না কিন্তু আমি তোমার প্রতি খুব বাজে ভাবে আসক্ত। তোমাকে ছাড়া আমার একমুহূর্ত ও চলে না। তোমার সামনে আসলে ই নেশা লেগে যায়। আমি আমার নিজের মধ্যে থাকিনা টিয়াপাখি। আসক্ত, আমি তোমাতে আসক্ত টিয়াপাখি। খুব বাজে ভাবে আসক্ত।

অভ্র পেটে সাইড করতে করতে কথাগুলো বললো, আমি নিতে পরছিনা অভ্রের স্পর্শগুলো, প্রতিটা স্পর্শে শিহরণ সৃষ্টি হচ্ছে। সরিয়ে দিতে ও পাড়ছি না।

–মিহি নাস্তা করতে এসবি তো, অনেকটা বেলা হয়েছে।

মিনতির কন্ঠ শোনতে ই মিহি অভ্রকে বললাম,

–আপু আসছে, ছাড়ুন।

আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

–থাকো না আরেকটু, বউ

–ছাড়ুন এদিকে ই আসছে মনে হচ্ছে।

অভ্র মিহির ঠোঁট আলতো করে ছুয়ে দিতে ই মিহি চোখ বন্ধ করে নেয়।
চোখ খোলে অভ্রকে আর দেখতে পায় না।

–এই মেয়ে এইখানে এমন মুর্তি মতো দাড়িয়ে আছিস কেনো।

আনমনে উওর দিলাম

–এমনি

–মা ডাকছে, খেতে চল।

–হুম আসছি তুই যা।

–আসছি বললে চলেবে না,
মিনতি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

___________________

দাদিমার রুমে বসে ছিলাম, মেসেজের নোটিফিকেশনে পেতে ই ফোন হাতে নিতে ই দেখি অভ্র মেসেজ করেছে,

“হ্যাপি রোজ ডে মাই টিয়া পাখি, সরি লেইট করে উইশ করার জন্য ”

আমি রিপ্লাই দিলাম,

–“ফুল ছাড়া উইশ করলে কেমন না লববিহীন তরকারি মতো লাগে, ফুল সহ উইশ করতে পরলে করবেন না হয় এই উইশ আমি গ্রহন করবো না”

—“আচ্ছা তাহলে আজ রাতে দেখে হচ্ছে তোমার যত গোলাপ লাগবে দিবো, কিন্তু বিনিময়ে আমি যা চাই দিতে হবে”

–“সে তখন দেখা যাবে”

–মিহি তোকে কী শাড়িটা অভ্র ভাইয়া দিয়েছে।

মিনতি দাদিমার রুমে ডুকতে ডুকতে বললো, মেজাজটা বেগড়ে গেলো,

–এই তুই জানিস না দাদিমা শোনলে প্রবলেম হবে, তবে কেনো চিল্লাতে হবে।

–সরি, এতো কিছু ভেবে তো বলি নাই।

–হে অভ্র ই দিয়েছে।

–শোন পরের বার থেকে যদি শুধু তোর জন্য গিফট আনে তাহলে কিংবা কথাটা দাদিমার কানে চলে যাবে, যে অভ্র ভাইয়া আর তুই লুকিয়ে দেখা করিস, গিফট দেওয়া নেওয়া ও হয়।

–তুই যে কতো স্বার্থপর, তোর জামাইকে বল এনে দিতে।

–হইছে ঝগড়া করবি না একদম। আজকে বিকেলে আমরা বাবা বাড়ি যাচ্ছি তুই কী জানিস।

মিহি খুশিতে লাফিয়ে উঠে। পরক্ষণেই ই দাদিমার কথা মনে হলো,

–দাদিমা ও যাবে নাকি??

মিহি মিনতিকে প্রশ্নটা করলো আর মনে মনে বললো,
আল্লাহ দাদিমা যেনো না যায়, তাহলে অভ্রের সাথে সময়টা ভালো কাটবে। আর যদি দাদিমা যায় তাহলে……

চলবে

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৫

মিহি রেডি হচ্ছে বাবা বাসায় যাওয়ার জন্য আর মনে মনে দাদিমা না যাওয়ার প্রার্থনায় মগ্ন। দাদি মা এখন ও কিছু বলেনি যাওয়া নিয়ে,মিহি বাবা বাড়ি যাচ্ছে তাই সরাসরি তো আর জিজ্ঞেস করা যায় না আপনি যাবেন কিনা। জিজ্ঞেস করলে পরে আবার বলতে পারে মিহি চায় না, দাদিমা তাদের সাথে যাক।

মিহি একটা কুর্তি পড়েছে,সাথে হিজাব পড়েছে, ঠোটে সেই বিখ্যাত বানানা লিপবাম, চোখে হালকা কাজল।রেডি হওয়া শেষে চার্জ থেকে ফোনটা খুলে হাতে নিলো, হাতে নিয়ে ই দেখতে পেলো অভ্র মেসেজ করেছে, মিহিদের সাথে অভ্র যাচ্ছে না, অভ্রের কাজ শেষ করে রাতে যাবে।
মিহির মুখে একরাশ হতাশা ফুটে ওঠে। ভেবেছিলো অভ্র যাবে সাথে।

রেনু বেগম রুমে ডুকে বললো,

–মিহি হলো তোমার,,,,

–জ্বি, আম্মু।

–তাহলে চলো বের হই,

— আম্মু, দাদিমা কোথায়।

–উনি তো গাড়িতে বসে আছেন।

বুড়ির তো দেখছি আমার থেকে বেশি তারা।

–কিছু বললে মা।

–না আম্মু, চলেন।

আম্মুর সাথে নিচে চলে আসলাম গাড়ির সামনে আসতে ই দাদিমা ভেতর থেকে ডাকছে,

–বড় নাতবৌ এই আমার সাথে বসে পড়।

এটা শোনে অনি বললো,

–ভাবি কতো ভালোবাসে তোমাকে দেখো, গাড়িতে উঠে বসে ই বললো, কেউ আমার পাশে বসবি না বড় নাতবৌ বসবে।

আমি আর কিছু বললাম না উঠে বসে পড়লাম।

__________________

বাসার সামনে গাড়ি থামতে ই আমি দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে আম্মুকে জড়িয়ে ধরি। কতোদিন পর মায়ের আদর পেলাম।

–হয়েছে, এখন একটু সরে আয় আমি একটু মায়ের সাথে কথা বলি।

–মা তোমার বড় মেয়ে কিন্তু অনেক হিংসুটে, আমাকে আদর করছো তো তাই সহ্য হচ্ছে না।

–মা তুমি কিন্তু সব সময় মিহিকে ই অনেক আদর করেছো, মিনতি নামের যে তোমার কোনো মেয়ে ছিলো তা তোমার মনে নেই।

–হয়েছে তোদের এতো ঝগড়া করতে হবে না, আমি আমার দুই মেয়েকে ই বড্ড বেশি ভালোবাসি।

মিনতি এটা শোনে বললো,

–না মা দুই মেয়ে না বলো যে আমার ছোট মেয়েকে আমি ভালোবাসি।

–ছোটরা সব সময় একটু বেশি ই আদর পায় পাগলিরা চল বাসায় চল, রাস্তা মধ্যে ই সব কী মান অভিমান করে দাড়িয়ে থাকবি নাকি।

সবাই আমাদের কান্ড দেখে হাসতেছে,সবাইকে নিয়ে বাসায় গেলাম। আম্মু সবাইকে সবার রুম দেখিয়ে দিলো, অভ্র আর আমার জন্য আমার রুম সিলেক্টেড করেছে। রাতে ঘুমানোর সময় বুঝা যাবে এই বাসায় ও কী, আমার আর অভ্রের এমন হরতাল চলবে নাকি।

সন্ধ্যার পর আমি বাগানে দাড়িয়ে আছি। কারণ অভ্র আমাকে কল দিয়ে এখনে দাড়াতে বলেছে। নতুন প্রেমে পড়েছি এমন একটা অনুভূতি কাজ করছে। অনুভূতিটা উপভোগ করার মতো। হঠাৎ কেউ একজন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো, স্মেইলটা আমার খুব পরিচিত বুঝতে সমস্যা হলো না আমার সে এসেছে।

–ভয় পেলে না যে।

–ভয় পাবো কেনো, এখন আপনি পাশে আসলে আমি অনুভব করতে পারি খুব ভালো ভাবে।

–তাই নাকি। তা কীভাবে অনুভব করতে পারো আমি না হয়ে অন্য কেউ ও এখন আসতে পারতো।

–ঐযে ভালোবাসা দিয়ে। এই স্মেইল টা আমার চেনা হয়ে গিয়েছে।

–হুম, পারফিউম চেঞ্জ করে ফেলবো।

–পারফিউম ই চেঞ্জ করতে পারবেন, অভ্র নামক মানুষটাকে কী চেঞ্জ করতে পারবেন।

আনমনে যখন কথাগুলো বলছিলাম,অভ্র আমাকে কোলে তোলে নিলো,

–আরে কী করছেন, কেউ দেখে ফেলবে।

–অন্ধকারে কেউ দেখবে না।

–দেখবো না কেনো আমরা কী অন্ধ নাকি ভাবি

হঠাৎ বড় আম গাছটার পেছন থেকে অপু, মিনতি অনি বের হলো।

অভ্র মিহি দুজন ই বেশ অবাক হলো, এরা কেনো এইখানে।
মিহি মিনমিন করে বললো”লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে”
অভ্র দ্রুত মিহিকে কোল থেকে নামিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে দাড়ায়।

–ট্রিট দেও নয়তো সব কথা দাদিমার কানে যাবে।

অভ্র কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,,

–তোর সব সময় খাই খাই স্বভাব অপু।১০০

অনি বললো,

–শুধু অপুর দোষ ই বা কেনো দিচ্ছো, আমি মিনতি ভাবি ও আছি।

–আচ্ছা কী খাবি বল।

— ঐ যে চার রাস্তার মোড়ে টং দোকানের স্পেশাল চা।

–ওহ্, চা খাবি। আগে বলবি তো চল নিয়ে যাই।

–হে চলো। আমরা রেডি।

মিহি মাঝখান থেকে বলে উঠলো,

–আমি রেডি না। দাদিমার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে নয়তো আমার যাওয়া হচ্ছে না।

–তা ঠিক বলেছো, দাদিমার থেকে অনুমতি না নিলে আবার বাসাটাকে রণক্ষেত্র বানিয়ে ফেলবে।

–কিন্তু দাদিমার কাছে গিয়ে বললে যদি না দেয় তখন।

অপু মাঝখান থেকে বলে উঠলো,

–দাদিমাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমাদের।

বলে ই সবাই হাটতে শুরু করলো, গন্তব্য দাদিমার রুম।

–আসবো দাদিমা।

চোখ তোলে তাকিয়ে সবাইকে এক সাথে দেখে, ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করে ,
–সবাই এক সাথে কেনো??

–দাদিমা আমরা একটি টং দোকানে চা খেতে যাবো।

কিছুক্ষন গম্ভীর থেকে বললো,

–তো আমি কী করবো।

–মিহিকে নিয়ে যাই। অভ্র ভাইয়া ও যাবে।

— হে, মিহি যাবে। যদি আমার কানে আসছে যে অভ্র মিহি দুজন এক সাথে হয়ে কথা বলেছো তাহলে তোর আর মিনতির ও এক ই হাল হবে যা।

অপু আর কিছু বললো না। মনটা গম্ভীর করে চলে গেলো। তাও সব বাদ দিয়ে সবাই রাস্তার মোরের দিকে পা বাড়ালো। বেশ ভালো লাগছে এভাবে রাতের বেলা সবাই মিলে হাটতে।

হঠাৎ অভ্রের নম্বরে কল আসলো, ফোনের স্ক্রিনে স্পষ্ট হয়ে লিখা আছে মীরা। তার মানে মীরা এতোদিন পর ফোন দিয়েছে।মিহির হাতটা ছেড়ে দেয় অভ্র।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে