#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৮
মিহি নিচের দিকে তাকিয়ে অভ্রের সামনে দাড়িয়ে আছে, শত ডাকা শর্তে ও উপরের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। অভ্র এভাবে কিডন্যাপ করার অভিনয় করবে মিহির তা জানা ছিলো না, মিহি খুব ভয় পেয়েছে।
–মিহি প্লিজ ক্ষমা করে দেন।
–আমি বাসায় যাবো।
— আমাকে ক্ষমা না করলে বাসায় যেতে দিবো না।
–আম্মু অনেক টেনশনে করবে, আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না।
–আমি আন্টিকে বলে এসেছি।
–আপনি এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো।
–আমার বউ আমি যেখানে ইচ্ছে নিয়ে যাবো, অনেক হয়েছে মিহি আমি আর এগুলো নিতে পারছি না।
–না নিতে পারলে আমার সামনে আসবেন না।
এবার অভ্র বেশ রেগে চেয়ার থেকে উঠে মিহির দিকে এগিয়ে গেলো। মিহির গাল চেপে ধরে মুখটা উপরে তুলে বললো,
–খুব রাগ তোর তাই না, আমি কথা বলছি তুই ভাব দেখাচ্ছিস, অনেক হয়েছে, দেখ আজকে কী করি। এতো দিন দূরে থাকতে দিয়েছিলাম, এখন নিজের সাথে জড়িয়ে রাখবো সব সময়। আজকে বুঝবি অভ্র কী জিনিস
বলে ই মিহিকে ধাক্কা দিয়ে বেডের উপর ফেলে দিলো নিজরে শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে মিহির দিকে এগিয়ে যায়, এতোটা কাছে চলে যায় দুজনের নিশ্বাসের শব্দ শুনা যাচ্ছে ,মিহি ভয়ে চোখগুলো খিঁচে বন্ধ করে নেয়, ঠোঁট জোড়া দুটো কাপতে থাকে। অভ্রে মিহির হাত ধরেতে ই, মিহি জোড়ে চিৎকার করে কেদে উঠে।
মিহির কান্নার শব্দে অভ্র দূরে সরে আসে।
–আজকে কিছু করলাম না। যদি নেক্সট টাইম আবর কোনো দিন আপনি এমন করেন তাহলে বুঝবেন কী হয়।
অভ্র রুম থেকে বের হয়ে যায়। মিহি কান্না ও বন্ধ হয়ে যায়। মূলত কান্না করেছিলো অভ্র যেনো স্পর্শ না করে। এটা কোথায় আছে মিহি কিছু ই বুঝতে পারছে না। রুমটা সুন্দর ই, বেশ সাজানো গুছানো। মিহি চোখ ভুলিয়ে চারপাশ দেখতে লাগলো।
বেডের পাশে ড্রেসিং টেবিলের উপর চোখ পড়তে ই দেখলো, ফুল দেখা যাচ্ছে। ফুল বরাবর ই মিহি ভালো লাগা। ফুলগুলো হাতে নিতে ই আরো কয়েকটা ব্যাগ চোখে পড়লো,
একটা ব্যাগ খুলতে ই তিনটা চকলেট বাক্স বের হলো। মিহি একটা বাক্স খুলে চকলেট খেতে খেতে অপর ব্যাগটা খুলে দেখলো আইসক্রিম, কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে আইসক্রিম গুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছুটা মন খারাপ করে পড়ের ব্যাগটা খুলতে ই দেখে প্লাজু আর ট্রি-শার্ট এটা দেখে মিহি এবার হেসে ফেলে। যা ই হক আমার দিকে তো অভ্রের ভালো ই খেয়াল আছে।
–আপনার দিকে আমার কোনো খেয়াল ই নেই।
অভ্র রুমে ডুকতে ডুকতে এই কথাটা বললো,
–আপনি এই ব্যাগগুলো খুলেছেন কেনো।
–এইখানে রাখা ছিলো তাই খুললাম।
–আপনি তো বেশ খাদক, বাক্স খুলে চকলেট খাওয়া শুরু করেছেন। এগুলো আপনার জন্য নাকি।
মিহি মুখে অসহায় একটা ভাব নিয়ে বললো,
–তাহলে কার জন্য।
–কার জন্য এটা আপনার জানার দরকার নাই, টাকা দিন এই যে আপনি এই রেপিং করা জিনিসগুলো খুলে নষ্ট করে ফেলেছেন। ব্যাগগুলো ও ছিড়ে ফেলেছেন। এখন এগুলোর টাকা দিন।
–না দিলে কী করবেন,
–একটু আগে কী জেনো করতেছিলাম।
—আচ্ছা আচ্ছা দিবো টাকা। তা কতো টাকা এই জিনিসগুলো।
–জিনিসগুলোর দাম যত ই হক এগুলো নষ্ট করার অপরাধে আপনাকে দশ হাজার টাকা ই দিতে হবে।
–এতো টাকা কেনো।
–জিনিসগুলো নষ্ট করেছেন কেনো। আপনি টাকাগুলো দিলে দেন নয়তো আমার কাজ আমি শুরু করে দেই, শার্ট এর বোতাম উপরের টা খুলে বললো,
— এই না, না, আমি টাকা দিবো।
–তাহলে এখন দেন।
–এখন কোথায় পাবো।
–তাহলে আমার কাছে বিকল্প একটা পদ্ধতি আছে মিসেস মিহি চৌধুরী।
–কী পদ্ধতি।
ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা স্টাম্প কালম বের করলো অভ্র। স্টাম্প এ লিখলো,
মিস মিহি অভ্রে চৌধুরীর কাছ থেকে দশ হাজার টাকা ধার নিয়ে ছিলো। সময় মতো পরিশোধ করতে না পাড়ায় আগামী দশদিন মিস মিহি অভ্রের কথা অনুযায়ী উঠবে এবং বসবে। অভ্র যা বলে তাই ই করতে বাধ্য থাকবে, অভ্রের কথা ছাড়া ওয়াশরুম অব্দি যেতে পারবে না। উপর উক্ত একটা নিয়ম ভঙ্গ করিলে মিহি দশদিন পর বিশ হাজার টাকা জরিমানা সহ পরিশোধ করিবে।
–নিন সাইন করুন।
–এই আমি আপনার কাছ থেকে কবে টাকা ধার নিয়ে ছিলাম। আর আপনি মিস মিহি কেনো লিখেছেন। মিসেস মিহি চৌধুরী লিখেন।
–পরের আপনি আমার কাজ না করলে তো এই স্টাম্প কাউকে দেখিয়ে আপনার বিচার করতে পরবো না। তাই আমার বউ আপনি এটা উল্লেখ করলাম না।
বেশি কথা বললে কিন্তু আমার কাজ আমি শুরু করে দিবো।
–আপনার যে কী অবস্থা করি আমি দেখবেন,আমাকে ভয় দেখিয়ে আপনি সাইন করাচ্ছেন। আপনার মতো বজ্জাত মানুষ পৃথিবীতে আরেকটা আছে নাকি সন্দেহ। আল্লাহ আপনার বিচার করুক।
–তাহলে আপনার সাইন করার দরকার নাই, আমার দশ হাজার টাকা দিয়ে দিন। এতো বদদোয়া নিয়ে আমি থাকতে চাই না।
–কোথায় সাইন করতে হবে বলেন।
মিহি মুখে বিরক্ত ভাব নিয়ে সাইন করে দিলো।
অভ্র মুখ টিপে টিপে হাসছে। এই দশদিন যদি তুমি আমার জন্য পাগল না হইছো তাহলে অভ্র চৌধুরী নিজের নামটা চেঞ্জ করে দিবে, মিহি পাখি। তোমার জন্য ই এনেছিলাম এই জিনিসগুলো গিফ্ট হিসেবে , তোমার গিফ্ট দিয়ে তোমাকে আমার ফাদে ফেললাম। মনে মনে কথাগুলো বলে স্টাম্প অভ্র ও সাইন করে স্টাম্প টা তালাবদ্ধ করে দেখে দেয়।মিহির দিকে তাকিয়ে বলে “লাভ ইউ লট মাই টিয়া পাখি”
চলবে,
#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৯
সকাল হতে ই সূর্য আলো গুলো জানালার পর্দা ভেদ করে চোখে এসে পড়ছে। সূর্যের আলো চোখে পড়তে ই অভ্র কাঁথা দিয়ে মুখ ঘুরে নেয়।
মিহির কাথা দিয়ে এভাবে মুখ ডেকে রাখলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মুখ ডেকে রাখার সাথে সাথে মিহি হাত দিয়ে কাথা সরতে যাবে, তখন ই খেয়াল করে অভ্র আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। কালকে এসব কান্ড শুরু হয়েছে বার বার এক ই ভয় দেখায় স্টাম্প সাইন করেছে, এখন অভ্র যা বলবে তা ই করতে হবে।
কয়েকবার ডাকলো মিহি, কিন্তু অভ্রের কোনো সাড়াশব্দ নেই। এদিকে মিহির শ্বাস নিতে অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। তাই অভ্রের কানের কাছে গিয়ে জোড়ে চিৎকার দেয় একটা।
অভ্র সাথে সাথে উঠে বসে পড়ে। বসে মিহির দিকে রাগি লুক দিয়ে তাকায়।
–এতো জোড়ে কেউ চিৎকার করে??
–আপনি যেভাবে শুয়ে ছিলেন আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো ডাকলাম উঠতেছিলেন না তাই আমার জাদু দেখালাম।
–দাড়ান না আমার জাদু দেখাই।
এটা বলে ই অভ্র বিদ্যুতের গতিতে মিহির ঠোঁট একটা চুমু খেয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো।মিহি একপ্রকার ফ্রিজড হয়ে বসে আছে।
একটু পরে ওয়াশরুম দরজা একটু ফাঁকা করে বললো, দেখলে আপনার জাদু দিয়ে আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিলেন আর আমার জাদু দিয়ে আপনাকে স্তব্ধ করে বসিয়ে রাখলাম। দুই জনের কতো মিল দুজন ই জাদু পারি। এটুকু বলে ই ওয়াশরুম দরজা বন্ধ করে দিলো।
আপনি ও শুনে রাখেন এক মাঘে তো আর শীত যায়না,শীত বার বার আসে। এবার না হয় আপনার পালা সামনে আমারটা আসতেছে।
অভ্র ওয়াশরুম থেকে ই উওর দিলো”আমি সব সময় প্রস্তুত।
জীবনে অনেক মানুষ দেখেছে, কিন্তু অভ্ররে মতো এমন ছেলে দেখেনি। কতো বাজে লোকরে বাবা।
কালকে রাতে ই বাসায় চলে আসে অভ্র মিহি,যেখানে মিহিকে নিয়ে অভ্র রেখেছিলো ঐটা ওদের অন্য একটা বাসা। যেটা অভ্র নিজের বাসা। বাসাটা খুব ভালো ই লেগেছিলো কিন্তু অভ্রের জন্য ভালো করে দেখতে পারেনি। অভ্রকে একদিন বলবো ঐ বাসাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
–এই যে ভাবি আসবো নাকি
ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে দরজার দিকে তাকাতে ই চোখ পড়ে অনির দিকে
–এটা আবার অনুমতি নেওয়া লাগে নাকি, আসো।
–আমাদের কে তো ভুলে ই গিয়েছো। আমার ভাইকে পেয়ে।
–হে তা ঠিক বলেছো, তোমার গুনধর ভাইকে পেয়ে আমি আমার নিজেকে ই ভুলে গিয়েছি।
–সে যা ই হক, যাও তোমাকে দাদিমা ডাকছে। দাদিমা কে বলবো তোমাকে নতুন নাম রেখে দিতে ভাইকে ভালো আকিকা দিয়ে দিতে
কথা শুনে আমি ফেলফেল করে তাকিয়ে আছি যেমন ভাই তার তেমন বোন। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম।
–ওহ্ আচ্ছা, গিয়ে বলো আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।
–হুম আচ্ছা, দ্রুত এসো, দাদিমা বলেছিলে সাথে করে নিয়ে যেতে।
বলে ই অনি চলে গেলো।
অভ্র ফ্রেশ হয়ে বের হতে ই আমি ওয়াশরুম ডুকে পড়ি। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বের হয়ে আসি। দাদিমা ডেকেছে বেশি লেইট করলে আাবর কী না কী ভাববে।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করতে ই অভ্র পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে।
–সব সময় এসব ভাল্লাগে না। ছাড়ুন দাদিমা ডাকছে আমাকে।
–স্টাম্পে সাইন করেছন ভুলে যাবেন না। আগে আমি তারপর দাদিমা।
–আস্ত বজ্জাত আপনি।[স্টাম্প সাইন করার আগে কী জানতাম আপনি একটা লুচু মনে মনে বললাম]
–সে আপনি যাই বলেন, আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখেন তো আপনাকে কেমন দেখাচ্ছে। কেনো যে আপনাকে বিয়ে করতে গেলাম।
–আমি বলেছি আমাকে বিয়ে করেন, যান ভালো সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করেন গিয়ে আমার সামনে এসেছেন কেনো।
–তাই নাকি, আপনি এখন আমাকে তুমি করে বলবেন।
–পারবো না।
–আপনি এখন আমাকে তুমি করে বলবেন। এবং আমাকে ও তুমি করে বলতে অনুরোধ করবেন।
—নাহ্।
–স্টাম্প টা কিন্তু সাথে ই আছে। আর না বললে আমি দাদিমার কাছে যেতে দিচ্ছি না।
–আচ্ছা তু,,তু,,তুুমি।
–এখন বলেন “অ গো তুমি আমাকে আপনি বাদ দিয়ে তুমি করে ডাকো প্লিজ”
–এইকথা আমি কেনো আপনাকে বলবো??
–আবার আপনি করে ডেকেছেন। বললে বলেন নয়তো এভাবে ই জড়িয়ে ধরে রাখবো, দাদিমা রেগে যাবে আপনি না গেলে এটা মনে আছে।
মিহি বিরক্ত হয়ে কান্না কান্না ভাব নিয়ে বললো
–অ গো তুমি আমাকে আপনি বাদ দিয়ে তুমি করে ডাকো প্লিজ।
সাথে সাথে অভ্র উওর দেয়।
–ঠিক আছে টিয়া পাখি, আমার কাজ শেষে তুমি এখন যেখানে ইচ্ছা যেতে পারো। কথাটা রেকর্ড করে রাখলাম ফোনে যখন ই আমার কথা শুনবে না,আর সাউন্ড বাক্স এ দিয়ে সবাইকে শোনাবো। এখন থেকে তুমি করে ই ডাকবা।
আর ভালো লাগছে না এসব। একদিনে ই আমার নাজেহাল অবস্থা বানিয়ে ছাড়ছে। দাদিমার রুমে গিয়ে দেখলাম, দাদিমা বসে বসে পান বানাচ্ছে,
–দাদিমা আসবো।
–হে, এতোক্ষণ লাগলো তোর আসতে।১০
–যা বলি মন দিয়ে শোন।
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।
–এক সাথে থাকতে গেলে স্বামীর সাথে একটু আধটু মন কষাকষি হবে তাই বলে কী বাবার বাড়ি চলে যেতে হবে। স্বামীকে নিজের আচলে বেধে রাখবি যেনো কোথাও যেতে না পারে। অভ্র ছেলে মানুষ তাই রাগটা একটু বেশি তাই বলে তুই ও কী রাগ দেখিয়ে চলে যাবি নাকি। মনে রাখিস মনুষের জীবনে বিয়ে একবার ই হয়। তোদের বিয়েটা আল্লাহ চাইছে বলে ই হয়েছো তোর জন্মের আগে থেকে ই কার সাথে বিয়ে হবে তা আল্লাহ ঠিক করে রেখেছে। যা ই করবি নিজের স্বামীকে নিজের আচলে বেধে নিয়ে করবি।
অভ্ররে দাদা ভাই যখন বেচে ছিলো। আমি প্রায় ই রাগ করতাম আর উনি আমাকে কতো রঙ তামাশা করে রাগ ভাঙ্গাতো। আর উনি যখন রাগ করতো আমি কোনো কথা বলতাম না। একটু পর নিজের ভুল বুঝতে পেড়ে আমার কাছে ক্ষমা চাইতো। কিন্তু ভুলটা আমার ই ছিলো আমি তা ও ত্যাড়ামি করতাম। কিন্তু উনি আমাকে খুব ভালোবাসতো মুখে প্রকাশ করতো না। কেউ মুখে ভালোবাসা প্রকাশ করে আবার কেউ কাজে কর্মে প্রমান করে আমার নাতি টা ও এমন ই।
জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে আল্লাহর হাতে। যা চাইলে ও মানুষ কখনো পরিবর্তন করতে পারে না।
দাদিমা তাহলে বিয়ের সাথে সাথে ডিভোর্স শব্দটা শোনলে আপনার কেমন লাগতো??
আমি প্রশ্নটা করে পিছনে ঘুরে তাকাতে ই দেখলাম অভ্র রুমে দরজায় দাড়িয়ে আছে। তাহলে কী অভ্র আমার কথাটা শোনে ফেললো।
চলবে
[ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]