#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৬
আশেপাশে কয়েকটা ছেলে ছাড়া আর কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। অভ্র কী করে পারলো এরকম একটা যায়গায় রেখে যেতে। তাহলে কী অভ্রের আগের প্লান ছিলো এটা। এভাবে দাড়িয়ে থাকাটা আমার জন্য ভালো হবে না, কোথায় যাবো আমি, সামনে হাটলে ও ছেলে, পিছনে হাটলে ও ছেলে। এতোটা অসহয়া কখনো মনে হয়নি।
আশেপাশের ছেলেরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হে আল্লাহ আমাকে বাচায়। মনে মনে যা দোয়া আছে পড়া শুরু করলাম।
হঠাৎ একটা গাড়ি আমার থেকে কিছুটা সামনে গিয়ে আবার আমার সামনে এনে দাড় করালো। ভয় টা তো আরো বেড়ে গেলো
–মিহি তুমি এইখানে কেনো।
মুখের দিকে তাকাতে ই দেখলাম অপু। প্রাণটা যেনো ফিরে এলো, কিন্তু ওরা এতো দ্রতু ঢাকায় ফিরে আসলো কেনো।
–গাড়িতে উঠো,,,
–আমি কিছু না ভেবে ই গাড়ি উঠে পড়লাম।
গাড়িতে উঠার বসার সাথে সাথে সবার এক প্রশ্ন
–মিহি কী হয়েছে তুমি এখানে কেনো।
আমি সবটা খুলে বললাম। সবটা শোনে অভ্রের মা বললো,
–তুমি হয়তো বা কোনো ভুল করেছো তাই অভ্রের এভাবে রাস্তায় রেখে যাওয়া ঠিক হয় নাই।
অভ্রে দাদিমা সিলেট গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাই আমরা দ্রুত ঢাকায় চলে আসি। উনি অন্য গাড়ি আছে।আর এখন আমরা না আসলে কী হতো। অভ্রে আজকে বাসায় আসুক তারপর দেখো কী করি।
জীবনটা মাঝিবিহীন নৌকার মতো মনে হচ্ছে। নদীর স্রোত অনুযায়ী চলছে। অনেক হয়েছে আর এসব সহ্য করবো না। আমার জবীনটা আমি ই গুছিয়ে নিবো।
এসব ভাবতে ভাবতে বাসার সামনে চলে এসেছি। গাড়ি থেকে নেমে সোজা অভ্রে রুমে চলে গেলাম, আমার যা জামা কাপড় জুয়েলারি আছে সব নিয়ে, অভ্রের পাশের রুমে চলে গেলাম। ভয় পেয়ে মরে গেলো ও আর অভ্রের রুমে যাবো না।
________________________
অভ্র বাসায় এসে ই মায়ের রুমে চলে যায়, মায়ের সামনে বসতে ই রেনু বেগম বলে উঠে,
–অভ্র তোকে খুব ক্লান্ত লাগছে কী হয়েছি। আর আমি যে এসেছি কার কাছ থেকে শোনেছিস।
–দারোয়ান কাকা বলেছে মা।
উনি এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললেন,
–খেয়েনে, আর কী হয়েছে বল।
–আম্মু আমি রাগ দেখিয়ে মিহিকে রাস্তায় রেখে চলে গিয়েছিলাম। পরে দশমিনিট পরে এসে দেখলাম মিহি ঐ জায়গায় নেই। আশেপাশে অনেক খুজেছি পাইনি। আম্মু এই রাতের বেলা যদি মিহির কিছু হয়ে যায়। আমি রাগের মাথায় কী করলাম এটা। আমার মাথা ঠিক ছিলো না।
ছেলের এমন অস্থিরতা দেখে রেনু মেকি হাসি দিয়ে বলে,
–যাকে ভালোবাসো বাবা তাকে কেনো আগলে রাখো না। মনে রেখে একবার হারালে কখনো আর পাবে না।
–মা এসব কথা বলার সময় এখন না, কী করবো বলো না তুমি??
–শান্ত হও মিহি বাসায় ই আছে, আমরা নিয়ে এসেছি। কিন্তু কাজটা অভ্র ঠিক করিসনি।
অভ্র মায়ের সাথে আর কোনো কথা না বলে দৌড়ে রুমে চলে যায়। কিন্তু রুমে যেতে ই দেখে মিহি রুমে যায়।
মিহি রুমে নেই দেখে ই, দাদিমার রুমে, মিনতির রুমে খুজে, বাসার ছাদে যায়। কিন্তু কোথাও পায়নি।
এখন তো মনের মধ্যে আরেক ভয় ডুকে গিয়েছে মিহি কী বাবার বাসায় চলে গেলো নাকি। নিজেকে নিজে গালি দিতে ইচ্ছে করছে ঐ সময় রাগের মাথায় মিহির সাথে এতোটা খারাপ ব্যবহার না করলে ও চলতো।
অভ্র পরক্ষণেই মনে হলো মিহি যে অভ্রে পাশের রুমে থাকে। অভ্র দ্রুতগতিতে মিহির রুমের দিকে গেলো।
মিহি রুমের দরজা লক করে শুয়ে আছে। কান্না করতেছি। নিজের এমন পরিণতি মনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। বিয়েটা ই জীবনের সুখ শান্তি সব কেড়ে নিলো। বিয়ের আগে তো খুব ভালো ছিলো।
–মিহি দরজা খুলেন।
কন্ঠটা চিনতে বিন্দু পরিমান ও অসুবিধা হয়নি মিহির। অভ্রে কন্ঠ শোনে কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো। চুপ করে শুয়ে আছে, অভ্র অনবরত দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। কিন্তু মিহির এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই।
–কথা কানে যাচ্ছে না, দরজা খুলতে বলছি।
মিহি এভাবার রাগে চিৎকার দিয়ো বললো,
–খোলবো না, এখান থেকে চলে যান।
–স্যরি মিহি আমি বুঝি নাই, রাগের মাথায় এমনটা হয়ে গিয়েছে।
–আপনি এখান থেকে চলে যান বলছি, আমি মাকে কল দিয়েছি কালকে ই বাসায় চলে যাবো, আমার বাড়িতে থেকে নিজেকে কারাবন্ধি রাখতে পারবো না। আদিখ্যেতা না দিয়ে চলে যান।
–আপনি দরজা খুলবেন নাকি আমি দরজা ভেঙ্গে ফেলবো।
–খুলবো না
কথাটা বলার সাথে সাথে দরজায় লাথি মারেতে থাকে অভ্র।
মিহি লাথির শব্দ শুনে দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দেয়। মিহিকে দেখে অভ্র ই অভ্র এসে জড়িয়ে ধরে,মিহি কিছু বুঝার আগে ই।
মিহি ছাড়ানো ব্যর্থ চেষ্টা করছে । অন্ধকার রুমে মিহিকে ছাড়া অভ্র কিছু ই দেখছে না। তাও বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না মিহি যে কান্না করছে। একহাত দিয়ে মিহির চোখের পানি মুছে দেয়।
–মিহি প্লিজ আমার ভুল হয়ে গিয়েছে আমি রাগের মাথায় কী করেছি বুঝতে পারিনি।
–কী হয়েছে আপনার ছাড়ুন আমাকে।
কেউ আসার শব্দ শুনে অভ্র মিহিকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাড়ায়।
— কী হয়েছে অভ্র।
সামনে তাকিয়ে দেখলো, অভ্রের দাদিমা দাড়িয়ে আছে।
–কীসের শব্দ করেছিস অভ্র বাসা কী ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিস।
–দাদিমা এসব কিছু না।
–রুমটা অন্ধকার করে রেখেছিস কেনো। লাইট অন কর।
অভ্র দ্রুত গিয়ে লাইট অন করেতে ই দেখে মিহির সব ড্রেস এলোমেলো হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে, মিহির ব্যবহার্য বাকি জিনিস গুলো ও এক সাইডে পড়ে আছে।এগুলো দেখে তো অভ্রের রাগটা আরো বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন মিহি রেগে আগুন হয়ে আছে। হাজার রাগ থাকলে ও অভ্র কে এখন মিহির রাগ ভাঙ্গাতে হবে না হয় মিহি কী না কী করে বসে আল্লাহ ই জানে।
–কী ব্যাপার নাতবৌ এগুলো এইখানে কেনো। স্বামীর সাথে মনমালিন্য হলে মিটিয়েনে। অভ্রের রুমে যা। আর যেনো কোনো শব্দ না শোনি।
–দাদিমা সুস্থ হয়ে গিয়েছো নাকি।
–তোদের এরকম কান্ড দেখে অসুস্থ শরীর নিয়ে ই আসতে হলো।
বলে ই দাদিমা চলে গেলো। দাদিমা চলে যেতে ই অভ্র মিহির দিকে এগিয়ে যায়, মিহি ভয়ে পিছাতে থাকে…
চলবে
#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৭
আপনি আমার সামনে থেকে দূরে সরে যান, আমি আমার নিজের জীবনটা এই নরক থেকে মুক্তি দিতে চাই।
মিহি মুখে এমন কথা শোনে অভ্র জিজ্ঞেস করে,
–এতো কষ্ট ই কী আমি দিয়েছি।
–তা আর বলার অপেক্ষা রাখে নাকি।
–স্যরি মিহি। আমি তো আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
–ওমা সে কী কথা, অভ্র চৌধুরী আবার ক্ষমা চাইতে পারে নাকি। একটা মেয়ে যখন তার হাসবেন্ড এর বাসায় আসে, মা,বাব কে ছেড়ে তখন আদর করে আগলে রাখতে হয়। আর আপনি তো জোর করে বিয়ে করেছে তার উপর চুন থেকে পান খসলে আপনার…
অভ্র হাতের আঙ্গুল দিয়ে মিহিকে চুপ করে দিয়। মিহি অভ্রের হাত সরিয়ে দেয়। গিয়ে বেডে শুয়ে পড়ে।
অভ্র ও গিয়ে মিহির পাশে শুয়ে পড়ে।
মিহি এবার পোরা দমে অবাক। কী হচ্ছে কী। জীন ভর করলো নাকি, হয়েছি কী আজকে।
–আপনি আমার বেডে শুয়েছেন কেনো।
–আমার বউ এর পাশে শুয়েছি, আপনাকে বলার কী আছে।
–কে আপনার বউ?
–মিহি।
–আমি কারো বউ না।
–ওহ আপনার নাম বুঝি মিহি, আমার বউ এর নাম ও মিহি।
–তো আপনার বউ এর কাছে যান, আমার পাশে আসছেন কেনো।
–বউ এর পাশে ই আছি।
মিহি এবার বেড থেকে উঠে যেতে নিলে ই অভ্র টান দিয়ে অভ্রের বুকের উপর ফেলে দেয়। ওষ্ঠদ্বয় দুটো ছুয়ে দেয়। মিহি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। স্পর্শটা নিতে পাড়ছে না। আর অভ্রের এতোটা চেঞ্জ হওয়া টা ও নিতে পাড়ছে না।
বেশ কিছুক্ষন পড় অভ্রের পাশ থেকে উঠে পড়ার সুযোগ হলো। উঠে সোজা অভ্রের মায়ের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
অভ্র লজ্জায় আর মায়ের রুমে যায়নি।
–কী হয়েছে মা, রাগ করে চলে এসেছো বুঝি।
—কিছু না মা, ঘুমাবো।
মা মুখে হাসি রেখে আমার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।
আমি ও মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ালাম।
_____________________________
সকাল বেলা পাখির কিচিরমিচির এর শব্দ ঘুম ভাঙ্গলো, বাসায় বাগান থেকে এই শব্দ আসছে, বাগানটা বড় হওয়ার গ্রামের কিছু দৃশ্য উপভোগ করার যায়। মিহি ঘুমাচ্ছে পাশে টেবিলে অভ্র কফির মগটা রেখে চেয়ার টেনে মিহির দুহাত নিজের সামনে এনে হাত দুটো ধরে বসে আছে। মিহির দিকে তাকিয়ে হাসছে।
“প্রথম দেখার প্রেম তুমি
….. আমার প্রথম ভালোবাসা
আমার এই হৃদয় দিয়ে স্পর্শ করবো
তোমার ভালোবাসা
অভ্র মিহির কানের কাছে গিয়ে কথাগুলো বলে,
অভ্রের মুখ থেকে এমন কথাগুলো শুনে চোখ মেলে তাকায় মিহি, সাথে সাথে হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। অন্য দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়ে,
–মিহি কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছি, খাবেন না।
তোর কফি তুই খা হনুমান। অসভ্য, লুচু তুই মনে মনে কথাগুলো বললো মিহি।
–কথা বলছেন না কেনো আপনি??
মিহি এবার বেড থেকে নেমে নিজের রুমে দিকে চলে যায়।
————
মিহির আম্মুকে কালকে অনেকবার কল দিয়েছে মিহি। মিহিকে নিয়ে যাওয়া জন্য। মেয়ের এমন অস্থিরতা দেখে মিহির আম্মু সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। মেয়ের জন্য খুব টেনশন হচ্ছে । তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে ই রওনা দিয়েছে।
–মিহি তুই একটু বেশি ই করছিস মনে হচ্ছে না।
–মিনতি যেটা জানিস না, তা নিয়ে কথা বলবি না।
–একটা থাপ্পড় দিবো। আমি তোর এক দিনের হলে ও বড়। এমন ব্যবহার কেনো করছিস মিহি। কালকে রাতে মা তোর জন্য ঘুমাতে পাড়েনি। আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে ই রওনা দিয়েছে।
মিহি কোনো কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
হঠাৎ মিহির এই অগ্নিমুখ অভ্রের আর দেখতে ভালো লাগছে না। তাই সকাল সকাল গাড়ি নিয়ে বের হলো। ফুল,চলকেট,আইসক্রিম কিনতে। ফুল প্রত্যেকটা মেয়ের ই পছন্দ মিহির ও পছন্দ হবে। ড্রাইভ করছে আর মিহির কথা ভাবছে।
মিনতিকে যেদিন প্রথম দেখতে গিয়েছিলো তখন ই মিহিকে অর্ণব এর চোখে পড়ে, অবশ্য মিহি সামনে আসেনি পর্দা আড়াল থেকে বার বার উঁকি দিচ্ছিলো। বারবার পর্দার আড়াল থেকে কেউ একজন দেখছি মনে হচ্ছে তাই অভ্র একটু আড়ালে চলে গিয়েছো। যখন ই মিহি আবার উঁকি দেয় দেখার জন্য, মুহুর্তে ই অভ্রের ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করে। কিন্তু অভ্র অন্য কাউকে ভালোবাসতো তাই মিহির দিকে দ্বিতীয় বার ফিরে তাকায়নি।
——–
মিহি সব কিছু ভুলে আবার নতুন করে ভার্সিটিতে ভর্তি হবে, নতুন করে জীবন সাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মায়ের সাথে বাড়িতে এসে ই বিছানায় শুয়ে পড়লো। দুচোখ ঘুম ভর করছে। সারা রাস্তা মায়ের সাথে একটা কথা ও বলেনি। কতো প্রশ্ন করেছে কিন্তু কোনো কথা ই মিহি মাথায় ডুকেনি, মিহিকে এমন ভাবলেশহীন দেখে আর কিছু জিজ্ঞেস ও করেনি মিহির মা। এসব ভাবতে ভাবতে ই ঘুমের রাজ্যে ডুবে যায় মিহি।
অভ্র বাসায় আসে হাতে ফুল, চকলেট বাক্স,আইসক্রিম বাক্স একটা শপিং ব্যাগে মিহির জন্য প্লাজু আর ট্রি-শার্ট এনেছে। কারন এই ড্রেসটা মিহি বাবার বাসায় পড়তে দেখেছে।
কিন্তু বাসার ভিতর পা দিতে ই একরাশ হতাশা অভ্রকে আঁকড়ে ধরলো। অভ্র বুঝতে পারেনি মিহি সত্যি ই চলে যাবে তাও এতো সকালে।
কালকে যখন গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলো, পরক্ষণেই যখন খুজতে আসে তখন মিহিকে পাইনি অভ্র ঐ জায়গাতে। পাগলের মতো চারপাশে খুজতেছি। বুকের বা পাশে হালকা ব্যাথা অনুভব হচ্ছিল মিহির শূন্যতাটা ঠিক তখন বুঝতে পেরেছে। আজকে আবার সেই একই শূন্যতা বিরাজ করছে অভ্রের মনে।
_________
মিহি চোখ খুলে চারপাশ দেখছে, এই জায়গাটা তো বড্ড অচেনা লাগছে। এটা তো সেই রুম না যেখনে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এটা কোথায় আর আমার হাত পা এমন বাধা কেনো। হে আল্লাহ তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে আনলে। আমাকে কে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসলো, কথাটা বলে ই পিছনে ঘুরে তাকাতে দেখলো…….
চলবে,
[অধৈর্য হবেন না। সময় মতো সব জানতে পারবেন। গঠনমূলক মন্তব্য করুন। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]