#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৪
হঠাৎ ম্যানেজারের একটা কল আসে তাই চলে যায়। অভ্রের আর কিছু বলতে হয়নি। মিহি অভ্রকে বললো,
–ভালো ই হলো, এখন অযথায় আপনাকে মিথ্যা বলতে হতো বেচে গেলেন।
–আমার কথা আপনার না ভাবলে ও চলবে। এমন ড্রেস পড়েছে দেখে মনে হয় না আপনার বিয়ে হয়েছে তারউপর মুখের মধ্যে বাচ্চা একটা ভাব ফুটে ওঠেছে।
–আপনার সমস্যা কী। জ্বলে নাকি আপনার। দেখে আপনি বিয়ে না করলে ও কতো কিউট ছেলে সহ ছেলের বাবারা ও আমার পিছনে ঘুরে।
— হইছে বিয়ে করেছি তো আপনাকে আপনার ভাগ্য এটা।পরের বার আমার সাথে কোথাও যেতে হলে শাড়ি পড়ে নিবেন।
–আপনি আমাকে বিয়ে করতে পরেছেন এটা আপনার ভাগ্য মিস্টার অভ্র, মিহি চাইলে ও এখন দশটা ছেলে পিছনে লাইন ধরে।
–সব মেয়েদের সেইম ডায়লগ তা আপনি মেয়ে নাকি পাবলিক টয়লেট।
—কী বললেন আপনি।
–তাহলে দেখছি আপনি বয়রা ও।
–কী বললেন আপনি বয়রা আপনার চৌদ্দ গুষ্টি সব বয়রা।
–তাই নাকি,,
এটা বলে ই অভ্র বসা থেকে উঠে মিহির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। মিহি ভয়ে অভ্রের থেকে অনেকটা দূরে চলে যায় কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অভ্র যত সামনে যাচ্ছে মিহি তত পিছনে যাচ্ছে।।
–কেউ চলে আসবে কিন্তু, দেখতে পারলে আপনার ই খারাপ হবে।
–আমি তো বয়রা কী বলছো, শোনি নাই।
–সিরিয়াল মোডে নিয়ে এমন মজা করবেন না।
–আমি তো বয়রা কিছু শোনি না।
আস্তে আস্তে মিহি দেওয়া আটকে যায়।অভ্রের দুহাতের মাঝখানে মিহি বন্ধি হয়ে যায়।
–কাকে জানি কী বলেছিলেন
–আরশোলা
মিহি আরশোলা বলতে অভ্র ডান দিকেঘুরে তাকায় মিহি এই ফাকে হাতের নিচ দিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।
মিহি দিকে তাকাতে ই দেখে মিহি কেবিনে নাই। কবিন থেকে বের হয়ে গিয়েছে। অভ্র মেকি হাসি দিয়ে নিজের কাজ করার ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
মিহি কেবিন থেকে বের হয়ে সবার কাজ দেখছি। হঠাৎ পিছন থেকে সামির এসে বললো,
–ম্যাম কিছু লাগবে।
–নাহ্, এমনি দেখতে আসলাম।
–ম্যাম চলেন আমি আপনাকে ঘুরে দেখায়।
–চলেন
হঠাৎ একটা মেয়ে সামিরকে ডাকে।
–ম্যাম আমি একটু আসতেছি।
–অবশ্য ই।
কিছুক্ষন মেয়েটা সামিরের সাথে কথা বললো তারপর সামিরকে কিছু আনতে পাঠালো মনে হচ্ছে। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে সামির আর মেয়েটা কী করলো এতোক্ষণ তা দেখলাম।
মেয়েটা আমার এদিকে এগিয়ে এসে কিছুটা বিরক্তি ভাব নিয়ে বললো,
–আপনি স্যারের কী হন।
আমি ভাবতেছি কী বলবো বউ বললে যদি অভ্র আবার রাগ করে। তাই বললাম
–উনার ছোট বোন।
মেয়েটা কোনো কিছু না বলে ই চলে গেলো। আমি আমার মতো আবার চারদিকে চোখ বুলাতে থাকলাম।
–ম্যাম আমি চলে এসেছি।
সামিরের ডাকে পিছনে ঘুরে তাকাই।
–ওহ্, চলুন তাহলে সবটা ঘুরে দেখি।
–ম্যাম আমাদের স্যার কিন্তু অনেক ভালো মানুষ।
–হে, (ভালো নাকি বজ্জাতের গুষ্টি উনি তা ভালো ই বুঝি আমি) মনে মনে বললাম।
হঠাৎ করে আবার ঐ মেয়েটাকে সামনে দেখলাম। সামির মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
–তুমি এইখানে তোমার কাজ নাই।
–আমি কাজ করলে কী আর তোমার এই রঙ্গলিলা দেখতে পারতাম।
–কী বলছো এসব।
–মেয়েটা আমার থেকে সুন্দর আর স্যারের বোন তাই কী তুমি এই মেয়েকে একবার দেখে ই ভালোবেসে ফেলেছো।
–অরণী, স্যার জানতে পারলে তোমার জবটা শেষ আজকে ই।
–তোমাকে আমার লাইফ নিয়ে ভাবতে বলিনি সামির।
–আরে তুমি ভুল বুঝতেছো অরণী। আমি তো..
এর আগে ই সামিরের গালে একটা থাপ্পড় পড়ে, মেয়েটা থাপ্পড় মেরে একমুহূর্তে জন্য ও না দাড়িয়ে চলে যায়।
–ম্যাম স্যরি।
আমি মেকি হাসি দিয়ে বললাম,
–চলে যান, আপনি আমি আপনার স্যারের কাছে যাচ্ছি।।
এটা বলে আমি অভ্রের কেবিনের দিকে পা বাড়ালাম। এতোক্ষণ যাবৎ শুধু অরণী আর সামিরের কাহিনী দেখলাম।চাইলে আমি কিছু বলতে পারতাম কিন্তু বলিনি। দেখলাম বিশ্বাসের জোর কতোটুকু। সামিরে গার্লফ্রেন্ড অরণী। ওদের সম্পর্কে ভালোবাসা আছে কিন্তু বিশ্বাস নাই, এমন ভালোবাসা ই টিকে কম।
–কী নিয়ে গবেষণা চলছে আপনার মাথায়।
অভ্রের এমন কথায় অভ্রের দিকে তাকালাম,
–আপনার মাথা নিয়ে।
–ওয়াও খুব সুন্দর, তা তখন পালাচ্ছিলেন কেনো।
–আমার আশেপাশে আসলে আবার পালাবো।
–চলো..
–কোথায়
আমার কথার কোনো উওর না দিয়ে অভ্র আমার হাত ধরে টানতে টানতে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো,
কেবিন থেকে বের হয়ে সকল স্টাফদের এক সাথে করলো,
–আপনাদের সবাইকে একটা কথা বলার জন্য এভাবে এক সাথে করা। সবার মনে ই হয়তো এক প্রশ্ন যে আমার সাথে এই মেয়েটা কে।
উনি হচ্ছে অভ্র চৌধুরীর স্ত্রী মিসেস মিহি চৌধুরী।
কথাটা শোনার সাথে সবাই হাত তালি দিতে থাকে। আমি অবাক হয়ে অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আমাকে এক হাত দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে। আমি এক মনে তাকিয়ে আছি অভ্রের দিকে, এই মানুষ টা এমন কেনো। কী চায় উনি….
চলবে,
#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৫
অফিসের সবাই মিষ্টি মুখ করার জন্য বায়না ধরেছে। সবার এক কথা এখন মিষ্টি মুখ করাবে কয়েকদিন পর আবার ঝাল মুখ করাতে হবে। সবাই বেশ মজা করছে বিয়ের ব্যাপার টা নিয়ে।
অভ্র কয়েকজনকে পাঠালো মিষ্টি আনার জন্য। মিহি অভ্রের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে।সবার কথাকে উপেক্ষা করে মিহির দিকে তাকাতে ই অভ্রের কপালে ভাজ পড়ে হয়তো আমার মুখে এমন কষ্টের ছাপ দেখবে এটা তার কাম্য ছিলো না।
আস্তে আস্তে আমার পাশে এসে ইশারায় জিজ্ঞেস করে,কী হয়েছে।
আমি কোনো উওর দেইনি। উনি তো বললেন ই এ বিয়েটা শুধু ছয় মাসের জন্য তাহলে এমন ঘটা করে সবাইকে জানানোর কী প্রয়োজন।
–ম্যাম আই এম স্যরি
অরণীর শব্দ পেতে ই মুখ তুলে তাকাই।মুখে মিষ্টি একটা হাসি রেখে উওর দেই ইট’স ওকে।
–ম্যাম আমাকে ক্ষমা করবেন, স্যার এসব জানতে পারলে আমার জবটা থাকবে না।
–না, না আমি এসব কিছু আপনার স্যারকে বলবো না।
–ম্যাম তাহলে আমাকে আপনি মিথ্যা কেনো বলেছিন যে আপনি স্যারের বোন।
–এমনি, মজা করে বলেছিলাম।
–ম্যাম সামির আমার সাথে কথা বলছে না, আপনি একটু বলবেন আমার সাথে কথা বলার জন্য।
–যাকে ভালোবাসেন তাকে কেনো বিশ্বাস করেননি, বিশ্বাস প্রত্যেকটা সম্পর্কে ভিওি। যেখানে মানুষটাকে বিশ্বাস ই করতে পারেন না সেই মানুষটাকে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে জামেলা বাড়ানোর চেয়ে, মানুষটা থেকে দূরে থাকা শ্রেয়।
–ম্যাম আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।
–ঠিক আছে আমি বলে দিবো।
অভ্র আমাকে নিয়ে কেবিনে চলে এসেছে। আমাকে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কী হয়েছে আপনার মন খারাপ কেনো, আর বিশ্বাস নিয়ে তো দেখছি ভালো ই সঙ্গা দিতে পারেন।
–এসব করার কী খুব প্রয়োজন ছিলো। মন থেকে মেনে নেননি, তারপর কেনো সবাইকে জানাতে গেলেন এটা কী জানতে পারি।
–যতদিন ই আমার কাছে আছেন, আমি আপনাকে নিজস্ব পরিচয় দিয়ে ই রাখতে চাই। আজকে একজন বিয়ের কথা বলেছে, কালকে আরেকজন বলতে পারে তাই পরিচয়টা দিয়ে দেওয়া টা ই ভালো মনে হলো।
আজকে আবহাওয়া এতো শান্ত কেনো বুঝলাম না, হয়তো ঝড়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে। আল্লাল মালুম যা হওয়ার হবে।
___________________________
সন্ধ্যা নেমে এসেছে, আজকে পূর্ণ চাদ উঠেছে। চাদের আলোয় মনে হচ্ছে সব কিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বাগানের সাইডে মানমাতানো সৌরভ নিয়ে দাড়িয়ে আছে হাসনাহেনা গাছে। রাত হলে ই ফুলের গন্ধে চারদিকে ভরে যায়। মিষ্টি গন্ধ নাকে আসলে ই ফুলগুলোকে ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু এই রাতের বেলা বাগানে যেতে ভয় লাগে লোকমুখে শোনেছি হাসনাহেনা গাছে নাকি সাপ থাকে, নয়তো এখন ঠিক হাসনাহেনা গাছের নিচে চলে যেতাম। চাদের আলোয় সবগুলো ফুল খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
অভ্রের রুমের বারান্দায় বসে আছি আমি। বসে বসে প্রকৃতি মধ্যে নিজেকে হারিেয় ফেলতে ইচ্ছে করে। অফিস থেকে বিকেলে এসে ফ্রেশ হয়ে বসলাম, একটু আগে।
অভ্রের ডাকে রুমে প্রবেশ করি।
–শাড়ি পড় রেডি হয়ে নিন।
–কেনো, কোথায় যাবো।
— ডিনার করতে বাহিরে যাবো।
কথাটা শোনে খুশি হয়ে গেলাম কারন আমার ঘুরতে অনেক ভালো লাগে, রাতের বেলা তো আরো বেশি। কিন্তু সমস্যা বাঁধলো আমার শাড়ি পড়া নিয়ে, আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না। অভ্রকে বললাম,
–আমি শাড়ি পড়তে পারি না।
–না পড়লে, চেষ্টা করুন।
–পাড়ি না বলছি তো।
–না পারলে আমি একা একা যাবো আপনি বসায় বসে ভুতেদের সাথে গল্প করবেন কেমন।
–এই না, না, যাবো আমি।
–তাহলে শাড়ি পড়ে নিন। আমি চাই না আর কেউ আমাকে এসে আপনার বিয়ের কথা বলুক।
–আমি জানি তো আপনার পেটটা পুরোটা ভরা হিংসায়।
–কী বললেন।
চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতে ই আমি চলে আসি অন্য রুমে। একটা নীল কালারের শাড়ি নেই, ইউটিউব দেখে দেখে ট্রাই করতে থাকলাম। আমার মনে হচ্ছে ইউটিউব না থাকলে আমি কিছু ই করতে পারতাম না। যা ই হক যে মেয়ে জীবনে শাড়ি পড়তে পরে না সে কী একদিনে শাড়ি পড়া শিখে যাবে নাকি।
কোনো রকম শাড়ি পেচিয়ে নিলাম, মনে মনে অভ্রের চৌদ্দ গুষ্টিকে বকতে লাগলাম। সব ই হলো কুচি কীভাবে দেয়, আমি তো কুচি ই ঠিক করতে পরছি না, অনেকক্ষণ তো ট্রাই করলাম। না পেরে অভ্রকে ডাকলাম,
–একটু আসবেন এদিকে।
–নিজের কাজ নিজে করা ভালো।
–কান্না করে দিবো কিন্তু।
–তা আপনি করতে পারেন ।
–প্লিজ আসুন না।
অভ্র রুমে এসে, কতক্ষণ মন খুলে হেসে নিলো মিহির অবস্থা দেখে।
–হাসির কী হলো, আমার এই অবস্থা কিন্তু আপনার জন্য ই।
–বেশি কথা বললে আমি চলে যাবো কিন্তু।
–আর বলবো না এবার কিছু একটা করেন।
অভ্র এসে মিহির সামনে দাড়ায় কিন্তু শাড়ির কুচি ছাড়া অন্য কোনো কথা ও বলেনি তাকায় ও নি।
অভ্র যেটুকু পেড়েছে কুচিগুলো মিহির হাতে ঠিকে করে ধরিয়ে দিয়ে বিনা বাক্যে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
মিহি শাড়ি ঠিক করে, ম্যাচিং জুয়েলারি, ম্যাচিং চুড়ি পড়ে নিলো। কিন্তু ভাবনা একটা ই মিহি পারেনি অভ্র কী করে শাড়ির কুচি দেতে পারে। তাহলে কী আগে অন্য কাউকে শাড়ি পড়িয়েছিলো।
গাড়িতে বসে মিহির প্রশ্ন
–শাড়ি পড়লে মানুষ কতো প্রসংশা করে আপনি তো চোখ তুলে দেখলেন ও না।
–দেখে কী করবো,
–এট কেমন কথা,আপনি কী আগে কাউকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছিলেন।
–হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো করলেন। এই জন্য ই মানুষের উপকার করতে নেই।
–তাহলে আপনি আমার থেকে ভালো করে কুচি ঠিক করতে পারেন কী করে।
–আপনি যে একটা গাধা এটা আমি জানি তাই আপনি যাওয়ার পর শাড়ি পাড়ার কয়েকটা ভিডিও দেখেছি।
–ওহ্ আচ্ছা। গাধা না মেয়েদেরকে গাধী বলে।
আপনার মধ্যে শিক্ষার অভাব আছে।
কথাটা বলার সাথে সাথে অভ্র গাড়ি থামিয়ে দেয়, অভ্র গাড়ি থেকে নেমে মিহিকে টেনে গাড়ি থেকে নেমে, নিজে আবার গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
মিহি কিছু বুঝে উঠার আগে ই গাড়িটা চোখের আড়াল হয়ে যায়। কী হলো এটা, একা একা নামিয়ে কেন দিয়ে গেলো। আমি নিজে অনেক বেশি কথা বলি তাই কী মাঝ রাস্তায় আমাকে নামিয়ে চলে যাবে নাকি। চারদিকে খারাপ মানুষ এর অভাব নেই, আমি এভাবে একা দাড়িয়ে থাকলে দূর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা ই বেশি….
চলবে