তোমাতে আসক্ত পর্ব-০৯

0
3036

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৯

অভ্র আমার হাতের দিকে তাকিয়ে, অভ্রের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। আমি শুধু অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভ্র বললো,

–সামান্য একটু ভালো ব্যবহার করছি বলে মনে করবেন না আমি আপনাকে মেনে নিয়েছি। শুধু অন্যের বাড়িতে আছি তাই কিছু বলছি না।

–বাহ্ জিএফ এর কথা বলতে তো বেশ রেগে গেলেন

অভ্র আর কোনো কথা না বলে বাহিরে চলে গেলেন।আমি ও দরজা হালকা চাপিয়ে শুয়ে পড়লাম, যদি কিছুর প্রয়োজন পড়ে তাহলে এসে নিয়ে যেতে পারে।

বহিরে যেমন অন্ধকার, রুমের ভিতরে তেমন নিরবতা। মিহির খুব মন খারাপ হচ্ছে এতো করে একটা মানুষকে বলার পর ও কেনো এতো রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। তাহলে কী অভ্রের সত্যি ই গার্লফ্রেন্ড আছে। যদি থাকতো ই তাহলে কেনো আমাকে ই বিয়ে করলো। ঐসব ভেবে কী আর আমার লাভ আছে, যেমন দিন যাচ্ছে, তেমন যেতে দেই। সময় মতো সব জানা যাবে। বলে ই শুয়ে পড়লো মিহি।

পাখির কিচিরমিচিরের শব্দ ঘুম ভাঙ্গলো মিহির। উঠে জানালা খুলে বাহিরে তাকাতে ই দেখলো, দেওয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকা আম গাছটায় দোয়েল,শালিকের সংসারিক আলাপে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা। খুব সুন্দর লাগছে, তাদের ভাষা বুঝতে পারলে হয়তো আরো ভালো লাগতো।

এসময় অভ্র রুমে প্রবেশ করলো,

–রেডি হয়ে নিন।

অভ্র কে দেখে মিহি কোনো কথা না বলে জানালা থেকে সরে দাড়ায়। ফ্রেশ হয়ে অভ্রের সাথে কোনো কথা না বলে ই নাস্তার টেবিলে চলে যায়।

–কী হলো মিহি অভ্রকে নিয়ে আসলি না।

—পারবো না।

–তুই এমন কেনো মিহি, জামাই এর দিকে একটু খেয়াল রাখতে পারিস না।

–উনি বাচ্চা না, যে আমার কোলে নিয়ে হাটতে হবে।

—আপনার কোলে উঠার বড্ড শখ আমার আমায় একটু কোলে নিন।

অভ্র টেবিলে বসতে বসতে বললো, মিহি হাসি মুখে উওর দিলো।

–এমন শখ পূরন করতে হলে এমন হাতির বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সাথে সাথে কোমায় চলে যেতে হবে।

–হাতির বাচ্চা কাকে বললেন।

মিহি চোখ বড় বড় করে বলে, হায়রে আবার কী বলতে কী বলে ফেললাম।

–না, আম্মু বলছিলো একটা হাতির বাচ্চা পালবে তো আমি বললাম হাতির বাচ্চা কোলে নিলে আমি কোমায় চলে যাবো।

অভ্র এবার মিহির মার দিকে তাকায়। মিহির মা মুখ টিপে টিপে হাসি মেয়ের কথা শুনে।উনি রান্না ঘরে চলে গেলেন।

–কাকে যে হাতির বাচ্চা বলছেন তা তো বেশ ভালো ই বুঝেছি, বাসায় যাই তারপর বুঝাবো।

–কার সাথে পাঙ্গা নিবেন, বুঝে নিয়েন।

অভ্র মেকি হাসি দিয়ে খাবার মুখে দেয়।
মিহি খাবার শেষ করে রেডি হয়ে নেয়। অভ্র রেডি হয়ে গাড়িতে চলে যায় আগে ই। মিহি মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নেয়। যেতে ইচ্ছে করছে না, বার বার কান্না পাচ্ছে তাও কান্না চেপে রেখে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

বাসা থেকে বের হয়ে কিছু দূর যেতে ই পিছন থেকে মিহির মা ডাক দেয়।

—মিহি দাড়া।

–হে মা কিছু বলবে।

–তোর বাবা, অভ্র সব সময় সামনে ছিলো তাই জিজ্ঞেস করতে পারিনি। তোর আর অভ্রের মধ্যে কী কোনো জামেলা হয়েছে। বিয়ের মাত্র চারদিন হলো কী বা জামেলা হবে এটা ও ভাবছি।

–না মা কিছু না।

–তাহলে অভ্রে জানি কেমন লাগছে।

–ঐসব কিছু না মা, যাই আমি,।শুধু এইটুকু করো আমি যদি তোমাদের কাছে ফিরে আসি তাহলে আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না।

কথাটা বলে ই গাড়িতে গিয়ে বসলাম।অভ্র আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

–আমাকে কী আপনার ড্রাইভার মনে হয়। পিছনে বসেছেন কেনো।

–আমার ইচ্ছে আমি কোথায় বসবো।

–সামনে আসুন

—আসবো না।

–সমস্যা কী আপনার।

–আমার সাথে পাশাপাশি ঘুমাতে পারেন না। তো বসতে পারবেন কীভাবে। আমি আপনার স্পর্শে আসতে চাই না।

অভ্র আর কোনো কথা না বাড়িয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। মিহি যেমন অল্পতে ই অনেক খুশি হয়,। ঠিক অল্পতে অনেক কষ্ট ও পায়। বাহিরের দিকে তাকিয়ে নিয়তির এই খেলার জন্য কান্না করছে মিহি। একদিনের মধ্যে নিজের জীবনের বিশাল পরিবর্তনট মনে নিয়ে ও কষ্টে থাকতে হচ্ছে। তাও মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখার চেষ্টা করবো সর্বদা।

________________

বাসার ভিতরে ডুকে ই মিহি সবার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। মিনতি, মিহির কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,

–মা, বাবা কেমন আছে মিহি। আর তুই না বলেছিস আসবি না।

–ভালো আছে। তা আমাকে মিহি বলে ডাকিস কেনো আমি তোর বড় জ্যা মনে রাখিস।

–তোকে আমি ভাবি ডাকবো।

–ভাবি ডাকবি কিনা তোর ব্যাপার, সম্মান দিবি বুঝলি।

মিনতি বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে উপরে দাদিমার রুমে গেলাম।

–কীরে তুই নাকি বলেছিস আসবি না, আমরা কী তোকে আদর কম করি।

–দাদিমা আমাকে দেখে ই এই কথা বলা শুরু করলে, আগে বলো কেমন আছো।

–ভালো, আমার নাতি তো বউকে চোখে হারায়।

–কোন নাতি।

–কোন নাতি আবার অভ্র

–তাই নাকি, তা কিভাবে বুঝলে বউকে চোখে হারায়।

— কালকে যখন শুনলো তুই আসিস নাই, সাথে সাথে চলে গেলো তোকে আনার জন্য। খুব ভালোবাসে তোকে মিহি।

অভ্রকে দাদির রুমে আসতে দেখে বললাম,

–হে দাদিমা তোমার নাতি যা রোমান্টিক, কী আর বলবো লজ্জা ই লাগে।

–মিহি কী বলছেন এসব।

–দাদিমাকে সত্যিটা বলছি।

উনি কোনো কথা না বলে আমার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসলেন। আমি হ্যাচকা টান দিয়ে হাত সরিয়ে নিলাম। দ্রুতগতিতে আলমারি থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলাম।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম উনি আমার ফোনে কি একটা করছে। আমি দেখে ও না দেখার বান করে ড্রেসিংটেবিলের সামনে চুল ঠিক করতে লাগলাম। উনি আর চোখে আমাকে দেখছেন।এটা দেখে আমি অন্য দিকে ফিরে বসে পড়লাম।

আমাকে অন্য দিকে ফিরতে দেখে উনি আমার সামনে এসে বসেন। আমি এখান থেকে উঠে জানালার পাশে গিয়ে দাড়াই। আমাকে জানালার পাশে যেতে দেখে অভ্র আমার সামনে গিয়ে মুখ চেপে ধরে বলে

–আমাকে ভাব দেখাছিস, সকাল থেকে কোনো কথা জিজ্ঞেস করলে বাঁকা উওর দিচ্ছিস কেনো।

আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে ধীরে ধীরে আমার অনেকটা কাছে চলে এসেছে। ভয়ে আমার
প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা….

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে