#তোমাতে_আমি_মুগ্ধ (৯)
#ফারহানা_জান্নাত
“রাহুল আমাকে সাথে নিবা না? আমি তোমার সাথে যেতে চাই। যারা টাকার লোভ করে তাদের কাছে আমি থাকতে চাই না। আমাকে তোমার সাথে নিয়ে চলো রাহুল।”
“দেখো বুইন এখানে ঢং করতে আসছো? ওর সাথে যাবা মানে কি! বিয়ে করতে পারবা ওকে? ও এখন বেকার, বিয়ে করে ওর সাথে সংসার করতে পারবা? নাকি কিছুদিন পর সব ছেড়ে পালিয়ে আসবা।”
“সরি ভাইয়া আপনি ভুল ভাবছেন। আমি তো জব করি তাই না? বিপদের সময় না হয় আমি রাহুলের পাশে থাকি। ও তো আমাকে অনেক হেল্প করছে। এমন কি জব’টা তো এমনি এমনি হয়নি, রাহুল ১০ লক্ষ টাকা দিছিলো দেখেই আমি একজন শিক্ষক হতে পারছি।”
“গাড়িতে উঠে বসো, তবে একটা শর্ত তুমি তোমার বাবার বাড়িতে কখনো আসতে পারবা না। ঐ যে পিছে তোমার নেংটা বাপ, তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে।”
–রাহুল মুখ বুঝে সব দেখতে থাকে, তবে মুখে লেগে আছে হালকা হাসি। আহনাফ’কে হালকা করে চিমটি দিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে,
“আমার ভালোবাসার তো খুব পরিক্ষা করছিলি তোরা দুইটা। এখন দেখ আমার সাথে পালিয়ে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছে। হুহ্ তুই মুন্নি’কে বল তুই এখন বিয়ে করবি। ও রাজি হয় নাকি!”
“আমারে খোঁচাবি না একদম, আমার বিয়ের প্যারা উঠে নাই। তোর ইচ্ছে জাগছে তুই বিয়ে কর, তুই ওরে হেল্প করছিস। আর সেই মানবতার খাতিরে ও তোর কাছে আসছে।”
“জোক! কিরে হিংসে হয় নাকি? আমার বউ হবে তুই সিঙ্গেল। সিঙ্গেল বলতে, বউ ছাড়া কি আর সেটাকে ডাবল বলা যায় বল! সামনে শিত আসছে।”
“ওয়াক কি অভদ্র, গাড়িতে বসে এসব না বললে হয় না তোমাদের! ৪-৫ টা করে কিন্তু বিয়ে দিবো সবার। তখন বুঝবা বউ চালানোর ক্ষমতা আছে নাকি নাই।”
“ওহ এখন বল তো, কে তোরে কি বলছে? আমাদের সাথে থাকিস সে জন্য কি হয়ছে। কেউ কিছু বলছে তোকে? আর আমাদের বা বলিস নাই কেনো।”
“আরে কে কি বলবে! হুদায় ভাবির বাবারে পটানো জন্য বলছিলাম। কিন্তু শা’লা আবা’ল মাইরি, এর অহংকার বের করবো থাম। আমার ১৮ বছর পূর্ন হোক শুধু, অফিস থেকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করবো।”
“হায়রে আমি ভাবলাম তোরে কেউ কিছু বলছে। যাই হোক, বিয়ে করে বাসায় ঢোকবো। আমার কাছে বিয়ে পড়ানোর জন্য যা যা লাগবে সব আছে। তুই কাজি অফিসে বলে সব ঠিকঠাক করতে বল”
“তর আর সইছে না তাই না!”
“হায় রে, রাহুল তোমার বোন তো দেখি ভাড়ি দুষ্টু। আমার সামনে আমার বাবা’কে শা’লা বলছে। আচ্ছা তোমার ভয় করছে না? যদি বিয়ে না করি তখন?”
“যে যেতে চায় তাকে যেতে দেওয়া উচিত। তার আগে একবার বাঁধা দেওয়া দরকার। আর আমরা তোমার বাসায় গেছিলাম, এখন তুমি গেলে চলে যাও। ভাইয়া সব দিক থেকে পার্ফেক্ট, তোমার মতো হাজার মেয়ে ওর জন্য রাজি। সো একটাকে ভাবি বানিয়ে আনবো।”
“ওরে! তার দরকার নাই বোন আমার। এই অধম’কে ভাবি বানিয়ে রেখে দেও। এই অধম রান্না করা, কাপড় কাচা, লঙ্কা বাটা, বাসন মাজা, জামাই আদর সব পারে?”
–রিতুর কথা শুনে সবাই ফিক করে হেসে ফেলে। কিছুক্ষণ হাসার পর রাহুল চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“সব না হয় পারো বুঝলাম। বাসায় কাজ করো সে জন্য পারো। বাট জামাই আদর কিভাবে পারো! এটা ও কি প্যাক্টিস করা আছে?”
“এ্যা!”
–সবাই আর এক দফা হেঁসে উঠে। রিতু বোকা বনে যায়, সে তো মজার ছলে কথাটা বলছে। কিন্তু রাহুল এখনো তার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে। জামাই আদর আগে করছে নাকি সেটা শোনার জন্য। রিতু মুখ বাঁকিয়ে হেঁসে বলে,
“হ্যা ঠিক ধরছো, তুমি তো খুঁত ধরা মানুষ। সে জন্য আগে একটা বিয়ে করে কিভাবে জামাই আদর করতে হয় তা শিখে রাখছি। যাতে তোমাকে বিয়ের পর সুন্দর করে আদর করছে পারি। সেবা করতে পারি, কিভাবে জামাই’কে শায়েস্তা করতেে হয় সব পারি।”
“লাগতো না বোন আমার, আমি এই বিয়ে করতাম না। মা আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করো, এক রাক্ষসী আসছে আমাকে খেয়ে দিবে।”
–সবাই আবারো হাসতে থাকে, কিন্তু হুট করে রুমাইশা ফিকরে কেঁদে উঠে। সবাই অবাক হয়ে রুমাইশার দিকে তাকিয়ে থাকে। রাহুল নিজের জায়গায় বদলে রুমাইশার পাশে বসে। রুমাইশা ভাইয়া’কে জড়িয়ে নিয়ে কান্না করতে থাকে।
“ভাইয়া”
“কি হলো হঠাৎ! রাহুল ও কান্না করছে কেনো? মজা করছিলাম সবাই তুমি আবার এমন কান্না করতে লাগছো কেনো রুমাইশা।”
“কিরে হঠাৎ কাঁদতে শুরু করছিস কেনো? কি হয়ছে আমাকে বল। রুমাইশা এই কথা বল, কাঁদিস না সমস্যা হবে তো।”
–রুমাইশা কাঁদতে কাঁদতে দূর্বল হয়ে পড়ে। রাহুল’কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আমি বাবাই’য়ের কাছে যাবো ভাইয়া। আমি বাবাই যাবো, বাবাই তোমার বিয়েতে কি থাকবে না ভাইয়া? আমি বাবাই যাবো।”
–রুমাইয়া জোরে কেঁদে দেয়, সবাই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চুপ মেরে যায়। পাশ থেকে রিতু রুমাইশা’কে আগলে নিয়ে বলে,
“এই মেয়ে একদম কাঁদবি না, দেখি আমার দিকে তাকা। আমরা সবাই আছি তো, বাবাই’য়ের জন্য কান্না না করে দোয়া কর। আমি তোর ভাইয়া সবাই তোকে অনেক ভালোবাসবো। আজকে না ভাইয়ার বিয়ে দিবি, দেখ ভাইয়া তো কাঁদছে।”
“ভাবি”
“কাঁদবি না একদম, আজকে বাবাই’কে দেখে আসবো কেমন? এবার একটু হাঁস দেখি।”
–রুমাইশা কান্না বন্ধ করে রিতুর বুকে মাথা রাখে। রাহুল চোখ বন্ধ করে কপালে হাত দিয়ে থাকে। হাসি খুশির মাঝখানে হঠাৎ যদি শোকের কিছু আসে, তা সহজেই মানুষের মনে দাগ কাটতে পারে। ঠিক তেমনি হলো, এতো মজার মধ্যে রুমাইশার একটা কথায় যথেষ্ট ছিলো। প্রায় ৩০ মিনিট পর তারা কাজি অফিসে আসে। তারপর বিয়ে পড়ানো শেষ করে সবাই রেস্টুরেন্টে যায় খাওয়া দাওয়া করতে।
“রুমাইশা প্লিজ মন খারাপ করে থেকো না। তোমার ভাইয়া আজ বিয়ে করছে, ওকে একটু আনন্দ করতে দেও। তোমার মন খারাপ দেখলে ওর কি ভালো লাগবে বলো?”
–খাওয়ার সময় খুব আড়ালে আহনাফ ফিসফিস করে রুমাইশার কানে কথাটা বলে। রুমাইশা কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
“আমাকে বাবাই’য়ের কবর দেখতে নিয়ে যাবেন ভাইয়া?”
“নিয়ে যাবো একটা শর্তে”
“কি শর্ত!”
“আজ তোমার ভাইয়ার বাসর, ওকে ওর মতো থাকতে দেও। রাহুল’কে সাথে নেওয়ার দরকার নাই। আমি, পারভেজ আর তুমি যাবো ওকে?”
“মুন্নি আপু?”
“ওর কথা এখন না বললেই নয়! উফ, ওর কালকে ক্লাস আছে, ও যেতে পারবে না। কারণ তোমাদের বাসায় যেতে আসতে অনেক সময় লাগে। রাত’টা ওখানে থেকে সকালে’র গাড়ি করে আসতে হবে।”
“আচ্ছা”
“এই তো গুড গার্ল, এখন সবার সাথে তাল মিলিয়ে মজা করো তো দেখি।”
–রুমাইশা হালকা হেঁসে নিজেই সবার সাথে হাসি মুখে আড্ডা দিতে থাকে। তারা বাড়িতে পৌঁছায় দুপুর ৩টার সময়। বাসায় এসে বাসর ঘর সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়। সন্ধার আগে আগে ঘর সাজানো হয়ে যায়। আহনাফ সেটা দেখে বুকে হাত দিয়ে হালকা কষ্ট পাওয়ার নাটক করে বলে,
“ইশ বুকে ব্যাথা করে বন্ধু, তুমি বিয়ে করে বাসর’টা ও করে ফেলবা। কয়দিন পর তোমার বাচ্চা আমাকে খোঁটা দিয়ে বলবে, “ঐ বুইড়া কাকা কবে বিয়ে করবা? আমি কি কাকি পাবো না নাকি” এই দুঃখ কই রাখবো বন্ধু?”
–আহনাফে’র কথায় সবাই হা হা করে হেসে দেয়। এমন ভাবে কথা’টা বললো, যেনো সত্যি সে অনেক কষ্ট পাইছে। রুমাইশা কিছুটা বাঙ্গ করার সুরে বলে,
“তো যাও না তুমি বাসর’টা সেরে ফেলো।”
–বলেই মুখে হাত দিয়ে নিজের রুমে দৌড় দেয়। মুখ ফসকে কি বলে ফেলছে সে? সব জায়গায় তার কথা না বললে যেনো হয় না। সবাই এক সাথে আসতাগফিরুল্লাহ বলে চোখ বড় বড় করে রুমাইশার যাওয়া দেখে। রুমাইশা নিজের রুমে এসে রেডি হয়ে বাহিরে বের হয়। সেটা দেখে রাহুল ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আবার জামা চেঞ্জ কেনো? কোথাও কি যাবি?”
“হ্যা তোদের বিরক্ত না করা ভালো তাই না আহনাফ ভাইয়া? আমি বাবাই’য়ের কবর’টা দেখে আসি। আহনাফ ভাইয়া, আর পারভেজ যাবে সাথে। মুন্নি আপু নাকি যেতে পারবে না।”
“মানে! যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আর গেলে আমরা সবাই যাবো।”
–মুন্নি আর আহনাফ রাহুলকে বুঝায়, মেয়ে’টা যেতে চাচ্ছে যাক। মুন্নির ক্লাস আছে নয়তো সে নিজে ও যেতো। রাহুল কিছুটা রাগ করে, কিন্তু কিছু করার নাই। সাথে আহনাফ থাকবে সে জন্য আর কথা বাড়ায় না। রাত ৮টার সময় তিনজন বাড়ি থেকে বের হয়। তার আগে আহনাফ মুন্নি”কে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসছে।
“কিসে যাবা? তুমি নাকি বাস ট্রেন কিছুতেই উঠতে পারো না। তো এখন কার ভাড়া করবা নাকি?”
–রুমাইশা ঠোঁট উল্টায়, পারভেজ ফিক করে হেসে দেয়। তার বোনের এই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসা, ঠোঁট উল্টানোটা তার বেশ লাগে। সামনে একটা কার এসে দাঁড়ায়, পারভেজ নিজেই টাকা দিয়ে ভারা করছে গাড়িটা। হুট করে আহনাফ অবাক কন্ঠে বলে,
“আচ্ছা আমরা তো চট্টগ্রাম থাকি! তাহলে যেতে আসতে সময় লাগব না তো! উফ আমি তো ভাবছি ঢাকা থাকি সে জন্য সময় লাগবে।”
“তো! আপনার কি মনে হয় আমরা ঢাকা আছি? আমি প্রথমেই ভাবছি আপনার খেয়াল নেই। কিন্তু কিছু বলি নাই, এখান থেকে বাসায় যেতে ৩০ মিনিট সময় লাগবে। আর অপর পাশে অফিস সেই হিসাবে অফিসে যেতে ২০ মিনিট লাগে। আর বাড়ি থেকে ৫০ মিনিট লাগতো অফিস আসতে।”
“উফ তো আগে বলো নাই কেনো! মুন্নি’কে সাথে নিয়ে আসতাম। রাতে এক সাথে আমরা ঢাকা বেক করতাম। তোমার জন্য সব, আর আমি একটা গাধা, এটা ঢাকা না চট্টগ্রাম সেটাই মনে ছিলো না।”
“হয়ছে থামেন তো, মেয়েদের মতো নেকামি করবেন না। আমি ইচ্ছে করেই বলি নাই। কারণ আজ বাসায় আসবো না, সৎ মায়ের বাসায় যাবো। গিয়ে একটু দেখে আসি কেমন আছে উনি। আমার তো যাওয়ার অধিকার আছে তাই না?”
–আহনাফ বিরক্ত হয়, গাড়িতে উঠার পর পারভেজ ঘুমিয়ে গেছে। তারা কারে আসার জন্য ২০ মিনিট ও সময় লাগে না। আর বেচারা ১০ টা মিনিট ও ঘুমাতে পারলো না। বাসায় এসে আগে সবাই কবর স্হান থেকে ঘুরে আসে। আহনাফ রুমাইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
“প্লিজ বাসায় না ফিরে হোটেলে থাকি? আমি তোমার এই শয়তান মায়ের বাসায় যাবো না। দেখা গেলো আমার বিয়ের আগে আমাকে মেরে দিলো। এই বয়সে আমি মরতে চাই না প্লিজ।”
“দূর বা’ল আচ্ছা চলো, আরে ছেলে মানুষ এতো ভিতু হলে হয় নাকি? এ তো দেখি উঠতে বসতে নেকামি করার জন্য বউয়ের হাতে মাইর খাবে।”
“কিছু বললে?”
“না”
–রাতে তিনজন একটা হোটেলে উঠে, সকাল ৯টার সময় সবাই ঘুম থেকে উঠে। আহনাফ উঠে দরজা খুলে দেখে সামনে রাহুল আর রিতু দাঁড়িয়ে আছে। রাতে শুনছিলো তারা কোন হোটেলে আছে। সে জন্য হয়তো নিজেরা ও বাবার কবর দেখতে চলে আসছে। আহনাফ কিছু না বলে রুমে বসতে বলে। সবাই ঘুম থেকে উঠে সকালের খাওয়া দাওয়া করে নিজ বাসায় ফিরে। আহনাফ সেখান থেকেই ঢাকা বেক করে। সময় বহমান, কেটে গেলো ৩.৫টা বছর। আজ এইচএসসি এক্সাম শেষ হলো রুমাইশার। পারভেজ এসএসসি পাশ করে বর্তামান ইন্টারে ভর্তি হয়। রাহুলের একটা ছেলে হয়ছে, বয়স ১ বছর। রিতু মায়ের মতো করে পারভেজ আর রুমাইশা’কে আগলিয়ে রাখছে। আহনাফ সেই বিয়ের সময় আসছিলো এর পর আর কখনো এখানে আসে নাই। রাহুলের সাথে যোগাযোগ থাকলে ও, আর কারো সাথে তার কথা হয় না।
–আজ এক্সাম শেষ হওয়ার জন্য রাহুল রুমাইশা’কে ডাকে, এরপর সে কি করবে সেটা শোনার জন্য। রাহুল রুমাইশাকে ডেকে বলে,
“রুমাইশা এখন কি করবি ভাবছিস? সেই অনুযায়ী কোচিং এ ভর্তি করায় দিবো তোকে।”
“ডাক্তার হবো, এখন কোন কোচিং ভালো হয় দেখো। আর কালকে আমাদের বাসায় ফিরছি রেডি তো? এতোদিন এক্সামের জন্য বাসায় যাই নি। আমার ১৮ বছর পূর্ণ হয়ছে জানুয়ারী মাসে, অফিস বাড়ি কিছু ছাড়বো না আমি।”
–রাহুল কিছু বলে না, গন্তব্য এখন তাদের লড়াই করার স্হানে। ৩.৫ টা বছর কম কষ্ট হয়নি তাদের চলাফেরা করতে। রাহুল একটা ছোট্ট কোম্পানি তে জব করছে। পারভেজ ছোট হয়ে ও টিউশনি করছে। পর দিন সকালে তাদের গন্তব্য হয় নিজ লড়াইয়ে জন্য।
চলবে?…………..