#তোমাতে_আমি_মুগ্ধ (৫)
#ফারহানা_জান্নাত
“এতো রাগ ভালো না বউ জান। হুট করে এমন একটা আবদার করে বসলে। সে জন্য আমি কিছুটা চমকে গেছি বুঝলে? চলো তোমার ভাবনা সত্যি হোক।”
“প্রয়োজন নেই, এই নেও এখানে ৫০ হাজার টাকা আছে। ভাইয়ার জন্য খরচ করছিলা সেটা দিয়ে দিলাম। আর টাকা লাগলে আমাকে বলিও৷ রাস্তায় মানুষ আছে ছাড়ো আমাকে।”
–আহনাফ কপালে একটা কিস করে ছেড়ে দেয়। টাকা’টা নিয়ে নেয় কিছু না বলে। কারণ সে নিজেই অন্যের থেকে টাকা ধার নিয়ে ছিলো। আহনাফ ফোন বের করে মুন্নির কাছে ফোন দেয়।
“মুন্নি বিকেল ৫টার সময় দেখা করো। আগে যেখানে দেখা করতাম সেখানেই দেখা করবো। একা আসবা, কাউকে নিয়ে আসার প্রযোজন নাই।”
–আহনাফ বেশি কথা না বলে ফোন’টা রেখে দেয়। একবার রুমাইশা’র গাড়ির দিকে লক্ষ্য করে। চোখের পলকেই অনেকটা পথ চলে গেছে। আহনাফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে কি করবে বুঝতে পারছে না। ৩ বছরের ভালোবাসা তাকে কিভাবে ঠকাবে? আর একদিকে রুমাইশা রাহুলের বোন। রুমাইশা’কে ডিভোর্স দিলে, মেয়েটা একটা পদবি পাবে। ডিভোর্সি, যা সমাজে ঘৃন্য কাজ। সবাই ভাবে যারা ডিভোর্সি তারা খারাপ। আহনাফ হসপিটালে ফোন দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে, তারপর ঘুমের মেডিসিন নিয়ে ঘুমানোর জন্য বিছানায় যায়।
“এই সময় মাথা গরম করলে চলবে না। একটু ঘুমানো প্রয়োজন। উফ কেনো যে না বুঝে বিয়ে করছিলাম। আচ্ছা আমি রুমাইশা’কে বুঝিয়ে ডিভোর্স দিবো কি? নাকি মুন্নিকে ছেড়ে দিবো।”
–আহনাফ কেঁদে উঠে, তার কিছু ভালো লাগছে না। সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সব সময় ভুল করে সে। হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। মা-বাবা’র সাথে কথা না বললে সে থাকতে পারে না।
“সব তোমার জন্য, সব তোমার জন্য। তোমাকে বিয়ে না করলে আমি মা-বাবার সাথে ভালো থাকতাম। কেনো তোমাকে বিয়ে করতে গেলাম। আল্লাহ একটা পথ দেখাও।”
–আহনাফ বিছানায় গাঁ এলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে সে। এই দিকে আহনাফ ঘুম থেকে উঠতে পারে না দেখে আজ দেখা ও করতে পারে না। রাত ৮টার সময় ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। ফ্রেশ হয়ে রাহুলের কাছে যায়।
“শশুর বাড়ি থেকে একটু ঘুরে আসি। আহনাফ নিশ্চয় মা-বাবার জন্য কষ্ট পাচ্ছে। সম্পর্ক এই ভাবে শেষ হবে বুঝে উঠতে পারে নাই হয়তো। আচ্ছা আমাদের তো টাকা পয়সার অভাব নাই। বুঝিয়ে বললে কি, আহনাফে’র মা-বাবা আমাকে মেনে নিবে না?”
–সন্ধা ৭টার সময় আহনাফ”দের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামায়। এখান থেকে তাদের বাসায় যেতে ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। ড্রাইভার’কে টাকা দিয়ে আহনাফ’দের বাসার গেটে নক করে। ২ তলার বাড়ি তাদের, যেখানে রুমাইশা’দের বাসা ও দুই তালার। কিন্তু যে দেখবে সে চোখ ফিরাতে পারবে না। বিশাল জায়গায় নিয়ে তাদের বাড়ি বানানো হয়ছে। বেশ কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়। সামনে রুমাইশা’কে দেখে বলে,
“কি চাই এখানে?”
“আপু আগে ভিতরে আসি? নাকি বাহিরে দাঁড় করিয়ে সব শুনবেন।”
“ও হ্যা আসো ভিতরে আসো। আব্বুর কাছে আসছো কি? আব্বু তো বাসায় নেই।”
“না সবার সাথেই একটু কথা বলবো। আপনি আমাকে হয়তো চিনবেন না। কিন্তু আপনার মা-বাবা আমাকে চিনবে।”
“আরুহি কে আসছে মা?”
“একটা মেয়ে আম্মু, তোমাদের সাথে নাকি দরকার আছে। এই দিকে আসো, চিনো নাকি দেখো। এই মেয়ে আসো ভিতরে এসে আগে বসো।”
“তুমি! আহনাফ কোথায়? আবার কেনো আসছো এই বাড়ি’তে! আমি না তোমাদের বারন করছি। এই বাড়িতে আর কখনো আসবে না। তোমাদের দুজনের মুখ আমি দেখতে চাই না আর।”
–মালিহা খান বসার ঘরে আসার সময় রুমাইশা’কে দেখে কথাটা বলে। রুমাইশা’কে দেখে অনেক’টা রেগে যান তিনি। একে’ত নিজের পছন্দ করা মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারে নাই। তার উপর ছেলে তার হাটুর বয়সের মেয়ে’কে বিয়ে করছে। আরুহি মায়ের রাগ দেখে বলে,
“আম্মু মেয়ে’টা কে? তুমি চিনো নাকি।”
“চিনবো না কেনো? কোন ফকন্নি র মেয়ে দেখনা। আমার ছেলের গলায় ঝুলিয়ে পড়ছে। সুন্দর ছেলে দেখলেই এদের লোভ জাগে।”
“মানে ও রুমাইশা? আর ভাইয়া এমন পিচ্চি মেয়ে’কে বিয়ে করছে!”
“হুম, এই মেয়ে কথা বলছো না কেনো? এখানে কি জন্য আসছো। লজ্জা করে না এখানে আসতে।”
“আমাকে মাফ করবেন আন্টি। আপনার ছেলে আপনাদের জন্য মন খারাপ করে থাকে। কষ্ট পান উনি, হয়তো আপনাদের খুব ভালোবাসে। তাই দয়া করে উনার সাথে কথা বলুন।”
“এই জন্য তুমি আমাদের বাসায় আসছো? যে ছেলেকে এতো কষ্ট করে মানুষ করলাম। সেই ছেলে আমাদের না জানিয়ে তোমার মতো একটা মেয়ে’কে বিয়ে করলো।”
“আপনি রাগ করবেন না দয়া করে। আসলে আমাদের বিয়েটা স্বাভাবিক বিয়ে ছিলো না। হুট করে এমন’টা হয়ে গেছিলো।”
“এই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাও মেয়ে। তোমার মুখ দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই।”
“আচ্ছা, আগে আমার কথা শোনেন দয়া করে। আচ্ছা আমি কোন দিকে কমতি আপনার ছেলের জন্য বলেন। আমি কি আপনার ছেলের বউ হওয়ার যোগ্য না?”
“দেখো রুমাইশা, তুমি ভাইয়ার থেকে অনেক ছোট। আমাদের ফেমেলির এতো কম বয়সের মেয়েদের কেউ বিয়ে করে না। তাছাড়া আম্মুদের সময় কম বয়সের মেয়েদের বিয়ে হতো। তাও আম্মু ইন্টার শেষ করে বিয়ে করছে।”
“তো আপু আপনি কি বলতে চাচ্ছেন? শোনেন পড়াশোনা আমি ছেড়ে দেই নি। পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি ওকে। আর বিয়ে’ত হয়ছে তাহলে রাগ করে থাকার কি আছে?”
“তো যাও সংসার করো, এখানে কি করছো? জামাইয়ের অনুমতি নিয়ে আসছো তো?”
“দয়া করেন মা, আপনার ছেলে আপনাদের জন্য কষ্ট পায়। সে জন্য আমার এখানে আসা, নয়তো আসতাম না। এসব অপমান হওয়ার ইচ্ছে আমার নাই।”
“বাহ এই টুকু মেয়ে দেখি ভালোই পটর পটর করতে পারে। ভাইয়া যে তোমাকে কি দেখে বিয়ে করছিলো। আর শোনো ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে না। ভাইয়ার জিএফ আছে।”
–মালিহা খান মেয়ের দিকে তাকায়, আহনাফ রিলেশন করতো! তাহলে এই মেয়েটা’কে কেনো বিয়ে করলো? এটাই সুযোগ এই মেয়ে’কে তাড়িয়ে দেওয়া। সেই ভেবেই বলে উঠে,
“আচ্ছা তুমি কি চাও আমরা আহনাফে’র সাথে সব সম্পর্ক ঠিক করে নেই?”
“হ্যা আন্টি আমি তো এটাই চাই। এই দুইটা দিন আপনার ছেলে শান্তিতে ঘুমাতে পারে নাই। আপনাদের জন্য মন খারাপ করে বসে থাকে।”
“দেখো তোমাকে তো আহনাফ ভালোবাসে না। আর আহনাফে’র নাকি রিলেশন আছে। তো তুমি আহনাফ কে ছেড়ে দেও।”
–রুমাইশা চমকে উঠে, এই মহিলা কি বলে! ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিয়ে করছে নাকি। যতই হোক সে তো আহনাফ’কে ভালো… আর কিছু ভাবতে পারে না সে। তার আগেই মালিহা খান কিছুটা জো’ড়ালো কন্ঠে বলে,
“তুমি যতোদিন আহনাফে’র সাথে থাকবে, ততদিন আমরা আহনাফ কে এই বাড়িতে ঢুকতে দিবো না। আর ওকে বলে দিও, আমরা মরে গেলে ও এই বাড়িতে পা যেনো না রাখে।”
“আন্টি এসব কি বলছেন? এমন করবেন না প্লিজ। এসব বলবেন না, আচ্ছা আপনি কি চান তাই হবে। তবুও আহনাফে’র সাথে এমন করেন না।”
“তাহলে ওকে ডিভোর্স দিয়ে দেও। আর তারপর থেকেই আহনাফে’র সাথে আমাদের সম্পর্ক আগের মতো হবে। আর হ্যা এটা যেনো আহনাফ না জানে। তাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”
“আপনি একজন শিক্ষকা, তবুও আপনি এসব বলছেন? শুনছিলাম আপনারা অনেক ভালো মনের মানুষ। কিন্তু ভালো না খারাপ সেটা ফেমেলি প্রবলেম এর সময় বুঝা যায়।”
“তোমাকে এতো কথা কেউ বলতে বলছে নাকি? আমার ছেলের যোগ্য বউ হতে পারবা না তুমি। আমি একজন ডাক্তার বউ নিবো শুনে রাখো।”
“আন্টি যোগ্যতার কথা বলবেন না। টাকা পয়সা আমাদের কম নাই। আপনি বিজনেস ম্যান রায়হান চৌধুরী কে চিনেন? আমি উনার মেয়ে। এসব টাকা পয়সা আমার হাতের মোয়া।”
–হঠাৎ রুমাইশার গালে একটা চড় বসিয়ে দেয় মালিহা খান। রাগে উনার চোখ লাল হয়ে আছে। রায়হান চৌধুরী এই নামটা সে সহ্য করতে পারে না। আর নামের আসল মালিকের মেয়ে রুমাইশা তাকে কিভাবে সহ্য করবে? মালিহা খান রুমাইশা’কে বাড়ির দরজায় টেনে আনে। তারপর ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। আর দরজা লাগিয়ে দেওয়ার আগে বলে,
“তোমার বড়লোক বাবা’কে বলো, মালিহা নামের কাউকে চিনে নাকি। তাহলে বুঝবে, তুমি আমার বাড়ির বউ হতে পারবে নাকি। ভুলে ও এই বাড়িতে পা রাখার চেষ্টা করবা না। আমার ছেলে যদি তোমার জন্য মরেও যায়। তবুও তোমাকে আমি এই বাড়ি উঠাবো না।”
–রুমাইশা থতমত খেয়ে যায়, হুট করে এমন ব্যাবহার সে আশা করে নাই। তবে এতটুকু বুঝতে পারে, তার বাবাই আর এই মালিহা খানের একটা সম্পর্ক আছে। রুমাইশা ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে। সময় এখন রাত ৮:৩০, সেই কখন থেকে ও বাহিরে বসে আছে। বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না।
“এই মেয়ে এখানে এখনো বসে আছো কেনো? আমি বললাম না, এই বাড়ির আশেপাশে তোমাকে দেখতে চাই না।”
–মালিহা বাড়ির বাহিরে একটু বের হয়ছিলো। তখন দেখে রুমাইশা একটা গাছের নিচে বসে আছে। রুমাইশা বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়,
“না এমনি বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না সে জন্য। কি ব্যাপার! বউ বানিয়ে নেওয়ার জন্য আসলেন নাকি?”
“রুমাইশা শোনো মেয়ে, তোমাকে আমি কখনো এই বাড়ির বউ বানাতে পারবো না। তুমি আমার শর্তে রাজি হও, আমি এখনি আমার ছেলের সাথে যোগাযোগ করবো।”
“আর আপনার ছেলে যদি আমাকে চায়?”
“তাহলে আমার অসুবিধা নাই, কিন্তু এই বাড়ির মুখ তোমরা চোখে দেখবা না। তবে সত্যি কথা বলি? যদি আহনাফ তোমার সাথে সংসার করে। তাহলে নিজেকে শেষ করে দিবো। দায়ি থাকবে, তুমি আর তোমার বাবা।”
–রুমাইশা অবাক হয়ে যায়, এখানে ওর বাবা’কে টানছে কেনো? রুমাইশা অনেক কিছু বুঝে ধির কন্ঠে বলে,
“আপনি আপনার ছেলে’কে মেনে নেন। আগের মতো কথা বলেন, আমি আপনার ছেলের জীবন থেকে আজ থেকে এই মুর্হূত থেকে সরে গেলাম। আর কখনো স্বামী হিসাবে আহনাফ ভাইয়াকে মানবো না।”
“হুম গুড গার্ল, বাবার মতো এক রোখা হও নি। দোয়া করি ভালো কিছু করো, কিন্তু অভিশাপ দিলাম আমার ছেলে’কে কখনো পাবে না।”
“ভাগ্য আমার, মা বেঁচে নাই ভালো হয়ছে। নয়তো মা এই ভাবে কাউকে অভিশাপ দিলে কষ্ট কতো আমার। মা নাই তাই ভাবতাম মা অনেক ভালো হয়। আদর স্নেহ করে, কিন্তু আজ জানলাম সৎ মায়ের মতো সব মা।”
–রুমাইশা কথাটা বলে কেঁদে দেয়। একজন মা এই ভাবে অভিশাপ দেয় সেটা তার জানা ছিলো না। তার জন্মের সময় মা মারা গেছে। আর মায়ের বান্ধবীকে বাবাই বিয়ে করছে। কিন্তু যখন নিজের জমজ ছেলে-মেয়ে হলো, তখন থেকে তাদের সহ্য করতে পারে না। মালিহা খান কিছুটা চমকে উঠে, রুমাইশার মা মারা গেছে!?
“তোমার মা বেঁচে নাই?”
“এসব আপনার না জানলে ও চলবে, তবে জানি না আমার বাবাই এর উপর আপনার এতো রাগ কেনো। কিন্তু একটা কথা যেনে রাখুন, আমার বাবাই মৃত্যু সাথি। উনার মরা বাঁচা সব’টা আল্লাহর হাতে।”
“এমন’টাই হওয়ার কথা তো। আগে না হয়ে এখন হয়ছে। আমার ছেলের থেকে দূরে থাকো আর কিছু বলবো না।”
–রুমাইশা মাথা নাড়িয়ে বুঝায় আচ্ছা। রুমাইশার সামনেই মালিহা খান আহনাফে’র কাছে ফোন দেয়। আহনাফ মায়ের ফোন পেয়ে তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে।
“মম”
“কেমন আছিস বাবা? বউ’মা কেমন আছে। বউমাকে নিয়ে বাসায় আসিছ। সেদিন তোর বাবা রেগে ছিলো, সে জন্য এমন ব্যাবহার করছে। জানিস তো তোর বাবা কতোটা রাগি।”
“অনেক ভালো আছি মম, তোমার সাথে কথা হওয়ার পর ভালো না থেকে কি থাকা যায়? আচ্ছা মম আমার এখন ছুটি নাই। ১০-১২ দিন পর যাবো, তোমার বউ’মা ও এখন এখানে নাই। ও একটু কাজে বাসায় গেছে।”
“আচ্ছা বাবা তাহলে তখনি আসিছ। বাবার কাছে ফোন দিয়ে কথা বলিস।”
” আচ্ছা মম, আরুহি কেমন আছে?”
“হুম ভালো আছে সবাই।”
–আরো কিছুক্ষণ কথা বলে মলিহা খান ফোন’টা কেটে দেয়। তারপর রুমাইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
চলবে?……….………