তোমাতেই সীমাবদ্ধ আমি পর্ব-৭

0
2430

#তোমাতেই সীমাবদ্ধ আমি
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
(৭)

ড্রইং রুমে বসে আছে রিশাদ সাহেব,রাহিমা বেগম,ইরফান,মোহনা সকলে।বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন রাহিমা বেগম। রিশাদ সাহেব এবার রেগে বলল,,

“হয় জ্ঞানে থাকো নাহলে অজ্ঞান হয়ে থাকো। এই বার বার মুর্ছা যাচ্ছো কেন?”

“তুমি আমার ছেলেকে এনে দাও। আমার বউমার কি হবে?আম…”

কথা বলা শেষ না হতেই রাহিমা বেগম আবারো মুর্ছা গেলেন।
এবার রিশাদ সাহেবের মেজাজ আরও খারাপ হচ্ছে।

“ইরফান এই মহিলার মাথায় পানি ঢাল.।”

“মোহনা আম্মুর মাথায় পানি ঢালো আমি ডক্টরকে ফোন দিচ্ছি।”

আনিশার বাবা মা ও ইয়াশদের বাসায় আছে।আনিশার বাবা মা এখনো বলেনি যে আনিশাও পালিয়েছে।ইয়াশ পালিয়েছে শুনেই রাহিমা বেগম ৩ বার মুর্ছা গেলেন আনিশাও পালিয়েছে শুনলে না জানি কি হয় এই জন্য আনিশার বাবা মা এটা বলেনি।

বেল বেজে উঠলো হঠাৎ,,

মোহনা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
পিছন থেকে ইয়াশের বাবা বলল,,

“কে এসেছে বউমা?”

“বাবা ইয়াশ এসেছে।”

কথাটা বলতে দেরি রিশাদ সাহেনবের দৌড়ে দরজার সামনে আসতে দেরি হয়নি।
দরজার সামনে আসতেই থ হয়ে গেলেন রিশাদ সাহেব।

আনিশার বাবা মাও এগিয়ে এলো সকলেই থ হয়ে ওদের দেখছে।
রিশাদ সাহেব চেচিয়ে বললেন,,
“এসব কি ইয়াশ?আর বউমা তুমি ওর সাথে নিশ্চয়ই ওকে রাস্তা থেকে এনেছো কই যাচ্ছিলো ও? আমার জুতা কই নিয়ে আসো কেউ ওকে কয়টা বারি দেই।”

“বাবা আম…”

ইয়াশকে বলতে না দিয়ে ইরফান বলল,,

“বাবা আমাদের উচিত ভিতরে গিয়ে কথা বলা।এভাবে বাহিরে দাড়িয়ে কথা বললে প্রতিবেশিরা কি ভাব্বে?”

সকলে ভিতরে এলো রাহিমা বেগম বসে আছেন। রিশাদ সাহেব রাহিমা বেগমকে বসে থাকতে দেখেই বললেন,,

“এ কি! এই মহিলা দেখি জ্ঞানে আছে?ওমাগো।”

আনিশার বাবা বলে,,

“বেয়াই মশাই এখন ঝগড়া রাখুন শুনি আগে কি হয়েছে।”

“ঠিক আছে।কিন্তু সব শোনার আগেই যদি এই মহিলা আরেকবার মুর্ছা গিয়ে আমার বুকের ধরফরানি বাড়িয়ে দেয় তাহলে কিন্তু বাড়ি ত্যাগ করবো আমি।”

” সেকি আহা বেয়াই মশাই বসুন। নিন পানি খান।”

রিশাদ সাহেব পানি খেয়ে নিলেন।
ইয়াশকে উদ্দেশ্য করে ইরফান সর্ব প্রথম প্রশ্ন করল,,

“কি হয়েছিলো তোর?এভাবে বাড়ি থেকে পালালি কেনো?তাও আবার বিয়ের আগের দিন।”

“আসলে ভাইয়া হয়েছে কি…”

“কি হয়েছে আবার নিশ্চয় কোনো মেয়ে নিয়ে কাহিনী আছে। সব বাপের সভাব পেয়েছে।”

রাহিমা বেগমের কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন রিশাদ সাহেব।রেগে বললেন,,

“সব বিষয় আমার দোষ টানা কি তুমি বাদ দিবে রাহিমা?”

রাহিমা বেগম মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।তার অভিমান হয়েছে এই মুহুর্তে ছেলের উপর।

রিশাদ সাহেব এবার আনিশাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“মা তুমি বলো এই গাধাটাকে কোথায় পেয়েছো?আর তোমার বাবা বলল তুমি নাকি পার্লারে গিয়েছিলে সেখানেই কি এই গাধা ছিলো?”

আনিশা বেশ অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলল,,

“আঙ্কেল হয়েছে কি আমি পার্লার থেকে আসার সময় দেখি রোড সাইডে বসে কান্না করছেন উনি।”

আনিশার কথায় ইয়াশের কাশি উঠে গেলো।কোনোরকম নিজেকে সামলে চোখ বড় বড় করে আনিশার দিকে তাকালো। আনিশা আবারো বলল,,

“উনি যার সাথে পালিয়েছিলেন সে ওনার সব নিয়ে ভেগে গেছে।”

“মানে?”

আনিশার বাবার প্রশ্নে আনিশা ঢোক গিলল।

ইয়াশ বলে “মানেটা আমি বলছি আঙ্কেল। ”

“বলো বাবা।”

“আমি যার সাথে পালিয়েছিলাম সে একটা চুরেল ছিলো। আমার পকেট মেরে পালিয়ে গেছে।তাই রোডে বসে শোক পালন করছিলাম।”

আনিশা রাগি চোখে ইয়াশের দিকে তাকালো।কিন্তু কিছু বলতে পারলো না।কারণ কিছু বললেই এখন ফেসে যাবে।আর বাজে দিকে চলে যেতে পারে ব্যাপারটা।

রিশাদ সাহেব কপাল চাপরে বলেন,,

“শেষে কি’না পকেট মার মেয়ের প্রেমে পড়েছিলে তুমি! ছি ছি ছি।”

ইরফান বলে,,

“তোকে কত ভালেবাসতাম সবসময় ব্যান্ডেড জিনিস কিনে দিতাম আর সেই তুই কিনা।”

“আব…আঙ্কেল এটা বাদ দিন না যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।”

ইরফানও বলে,,

“হুম বাবা এটা নিয়ে পরে কথা বলবে। কাল বিয়ে আঙ্কেল আন্টি আপনাদের কি কোনো সমস্যা আছে বিয়েতে?”

“না। ”

আনিশার মা আনিশার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল।

সবাই বেশ চুপচাপ হয়ে বসে আছে।ইয়াশ একাই অ/প/রা/ধী/র মতো বসে আছে।আনিশা এ যাত্রায় বেচে গেছে বলে সেই খুশি।

হঠাৎ নাক ডাকার ভয়ংকর শব্দে সকলে চমকে ওঠে।
রিশাদ সাহেব বলেন,,

“এই মহিলা আর ঘুমুনোর সময় পায়না।”

“থাক বাবা, মা ক্লান্ত অনেক চিন্তা করেছেন আজ।”

“মোহনা মা এভাবেই এই মহিলার সাফাই গেয়ো না।আমার পিলে চমকে গিয়ে ছিলো ভেবেছিলাম ষাড় এলো কইথেকে এখানে।”

“বাবা মা শুনলে তোমার খবর ছিলো।”

ইরফানের কথায় দমে গেলেন রিশাদ সাহেব।
আনিশার বাবা মা’র সাথে কথা বললেন রিশাদ সাহেব। আগামীকালই ইয়াশ আনিশার বিয়ে হবে।

আর ইয়াশের করা ব্যবহারের জন্য রিশাদ সাহেব মাফ চাইতে গেলে আনিশার বাবা বাধা দেন।তারপর বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে আনিশারা ওদের বাড়ি চলে যায়।

___________________________________

পরেরদিন,,
সকাল সকল ঘুম ভাঙে আনিশার। বিয়ে আজ ওর।মনে মনে খারাপও লাগছে আবার ভয়ও লাগছে কালকের ঘটনাটার জন্য।

আনিশার আম্মু রুমে এসে আনিশার কাছে বসলো,,

“আনু কি ভাবছো মা?”

“না মানে আম্মু…”

“কালকে তুমি যার সাথে পালিয়েছিলে সেটা ইয়াশই ছিলে তাই না?”

আনিশা অবাক হয়ে ওর মায়ের দিকে তাকালো।

“আমি তোমার মা আনিশা। আমি জানিনা কেনো তোমরা এই কাজ টা করেছো। তবে জানাজানি হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেতো তাই আমি চুপ ছিলাম।কালকে পালানর সময় ইয়সশের ড্রেস আমি খেয়াল করেছিলাম।”

“সরি আম্মু আমি চাইনি তোমাকে কষ্ট দিতে।”

“ইটস ওকে বাচ্চা।এমনটা আর করো না।”

“করবো না।”

আনিশার আম্মু আনিশার কপালে চুমু দিলো।

দুপুরের দিকে কনে সহ অনেকে বেরিয়ে গেলো পার্লারের উদ্দেশ্য।

অন্যদিকে দুপুর ১টা বাজে,,

ইয়াশ কম্বল মুরি দিয়ে ঘুম।রাহিমা বেগম ছেলের রুমে এসে ফ্যানের সুইচ অন করে দিলেন।
তারপর কম্বল সড়িয়ে গায়ে পানি ঢেলে দিলো।

লাফিয়ে উঠে বসলো ইয়াশ।

“আম্মু কি করলা এটা?”

“তোর আজকে বিয়ে তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস কেনো?”

“বিয়ে! কার ধুর সপ্ন দেখছি।”

“ইয়াশ আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে।”

“কেনো?”

রাহিমা বেগম ইয়াশের মুখে পানি দিলেন।

“মনে পড়লো কিছু?”

“হ্যা হ্যা।”

“হুম এবার উঠে রেডি হয়েনে ১ঘন্টার মধ্যে।”

বলে রাহিমা বেগম রুম ত্যাগ করেন।

ইয়াশ ফেসবুকে ঢুকে Messenger চেক করলো।নাহ কোনো নিউ ম্যাসেজ নেই।ইয়াশ রেডি হতে চলে গেলো।

বিকেলে,,

৩:৪৫,,

বরযাত্রী এলো।সব রিচুয়ালস কমপ্লিট করে ইয়াশরা ভিতরে গেলো।

আনিশাও পার্লার থেকে চলে এসেছে।

সকলে গল্প করছে।তখনই কাজি এলো।
ইয়াশ আর আনিশার মাঝে একটি পর্দা দেওয়া তাই কেউ কারোর মুখ দেখতে পারেনি এখনো।

কাজিকে দেখার জন্য দু’জনই সামনে তাকালো। কাজি আর কেউ না। রেদোয়ান। ইয়াশ আনিশা দু’জনে একসাথে বলল,,

“নোওওওওওওওও🫠”

চলবে…!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে