#তোমাতেই সীমাবদ্ধ আমি
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
(৫)
আনিশা দৌড়ে ওর রুমে যেতে নিলো কিন্তু দরজার সাথে বেজে চিৎপটাং হয়ে পড়ে গেলো। পরে যাওয়াট শব্দতে সকলে এলো। এসে আনিশাকে এভাবে পরে থাকতে দেখে থ হয়ে গেলো।আনিশার আম্মু রেগে বলে,,
“এভাবে পড়লে কি করে?”
“আম্মু পড়ি নাই তো আমি তো ডান্স করছিলাম।”
আনিশার কথায় উপস্থিত সকলে আরেক দফা অবাক হলো।
আনিশার খালামনি বলল,,
“তুই না দৌরাদৌড়ি বেশি করিস নে উঠ।”
আনিশা বহু কষ্টে উঠল।কোমরটা বোধহয় গেছে।কাউকে বলতেও পারছে না খুড়িয়ে খুড়িয়ে রুমে গেলো।
আনিশার আম্মু ইয়াশদের বসতে বলল।সবাই বসে গল্প করছে।তখনই আনিশার আম্মু সকলের সাথে তার বোনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন।ইয়াশ মুখ ফসকে বলে ফেলল,,
“ম/রা মানুষ জিন্দা হলো কি করে আন্টি?”
ইয়াশের কথায় আনিশার আম্মু মিসেস মুক্তা বেগম বেশ চমকে উঠে।
“এসব কি বলছো বাবা? আমার বোন ম/র/বে কেনো?”
“কেনো তা জানিনা।তবে আনিশা আজ কলেজে বলল ওর খালা মা/রা গেছে।তাই ভাবলাম ইনি হয়ত সেই। ”
” ছিঃ আপু তোর মেয়ে আমায় জিন্দা মে/রে ফেলল রে।”
লাবণ্য বেগমের মরা কান্না শুরু হওয়ার আগেই রিফাত সাহেব (আনিশার বাবা) এলেন।
“কি হয়েছে।”
” দুলাভাই আপনার মেয়ে আমাকে মে/রে ফেলছে।”
“মিথ্যা বলার সভাব তোমার আর গেলো না লাবণ্য। কই তুমি তো ঠিক ই আছো।”
রিফাত সাহেবের কথায় একটু দমে গেলেন লাবণ্য বেগম।
রিফাত সাহেব সকলের সাথে গল্পে মসগুল হয়ে গেলেন।আর আনিশার বলা কথাটা কটিয়ে দিলেন।
তবে ইয়াশ এখনো বুঝতে পারছে না আনিশা কেনো এমন কথা বলল আজব।বড়ই অদ্ভুত মেয়ে তার বউ হতে চলেছে।
বিকেলে,,
সকলে শপিংয়ে এসেছে।মূলত এনগেজমেন্টের যাবতীয় শপিং আজই করা হবে।
ইয়াশ চেষ্টা করছে একবার আনিশার সাথে কথা বলার।কিন্তু সুযোগ করে উঠতে পারছে না।এখন কথা বলাটাও জরুরি।
এদিকে আনিশা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে ইয়াশকে।
“আমার কোমরের ব্যাথা কমে না ক্যান।এই অবস্থায় আবার আমাকে টেনে এনেছে।খালা মনি যে ২ঘন্টা আগে ঘুরাবে ধুর। ”
আনিশা মনে মনে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হাট ছিলো তখনই কারোর বুকের সাথে বারি খায়।
উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে ইয়াশ।
“স্যার আপনি?”
“এমন অবাক হচ্ছ যেন আজ প্রথম দেখলে?”
“না মানে তা না। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ”
“হু এভাবে হাটছো কেন ভালো করে হাটো।”
“আপনার জন্য আমার কমোড় ভাঙছে আর এখন আসছেন বলতে ভালো করে হাটতে।”
“আমি কি বলছিলাম তোমাকে ফ্লোরে নাগিন ডান্স করো হুহ।”
বলে ইয়াশ পকেটে দু হহাত গুজে চলে যায়।
“কি বলে গেলো?শুধু শুধু অপমান করল বুঝেছিলো যখন যে আমি পরে গেছি একটু ডক্টর তো ডাকতে পারতো ধুর।”
প্রায় ঘন্টাখানেক পর ওদের শপিং শেষ হলো। ডিনার করে সবাই বাসায় যাবে।
ডিনারের পর যে যার গাড়িতে উঠে পড়ে।আনিশা ২টো গাড়ির সামনে গিয়েই দেখে যায়গা নেই।
“আম্মু তুমি কি আমাকে ফেলে যাবা?”
“কেন এমনটা মনে হয় তোমার?তুমি ইয়াশের সাথে যাবা।”
“কিহ!”
তখন লাবণ্য বলে,,
“আরে যা যা জামাই বাবার সাথে যা।কথা বলবি তোরা।তোদের মধ্যের জড়তা কেটে যাবে।”
“কিন্তু …”
“কোনো কিন্তু না আনিশা যাও।”
আর কি করার আনিশাকে যেতেই হলো। ইয়াশের গাড়ির সামনে আসতেই বাকি ২ টো গাড়ি চলে গেলো।
“মানে এখন স্যার যদি আমাকে মে/রে গুম করে দেয় আমাকে বাঁচানোর জন্য কেউ নেই।”(মনে মনে)
আনিশাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইয়াশ বলে,,
” মিস নাগিন এভাবে দাড়িয়ে না থেকে উঠুন।এমনিতেই লেট হয়ে গেছি আমরা।”
আনিশা উঠল।ইয়াশ চুপচাপ ড্রাইভ করে যাচ্ছে।আনিশাও চুপ।
বেশ কিছুক্ষণ পর গাড়ি চলতে চলতে থেমে গেলো।আনিশা প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো।তাই চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল,,
“কি হলো স্যার?”
” বুঝলাম না দাড়াও নেমো না দেখছি।”
ইয়াশ নামলো দেখতে।আনিশা গ্লাস নামিয়ে জিজ্ঞেস করল,,
“কি হয়েছে স্যার?”
“যা হওয়ার তাই হইছে।কুফা সাথে নিয়ে আসছি।২টা টায়ার গেছে।”
“কিহ!এখন যাবো কিভাবে।?”
“জানিনা আমি।”
“স্যার”
“🙂”
কি হলো আপনি এমন রিয়াকশন দিচ্ছেন কেন?”
“তুমি স্যার ডাকা অফ করো।স্যার শুধু কলেজে। আর বাহিরে…”
“বাহিরে কি?”
ইয়াশ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।মনে মনে নিজেকেই বলল,,
“কি হয়েছে তোর ইয়াশ। কি বলতে যাচ্ছিলি যে তুই ওর হাসবেন্ড? সিরিয়াসলি এখনো বিয়েও হয়নি।আর তুই তো এই বিয়ে করতেই চাস না।মাথা গেছে তোর।”
“ও স্যার।”
“হু বলো।”
“ক্যাব বুক করুন একটা ”
” নেটওয়ার্ক নেই এখানে। ফাকা হাইওয়ে একটা।”
“মানে এখানে আপনি যদি আমাকে মে/রে গুম করে দেন কেউ আমায় খুজে পাবে না?”
ইয়াশ কি উত্তর দিবে ওর জানা নেই।এমন টাইমে কেউ এগুলো কিভাবে ভাবতে পারে?
“এখন টায়ার চেঞ্জ করতে হবে।”
“ওহ করুন তারাতাড়ি। ”
ওয় মিস বকবক আমাকে হেল্প করো তোমার জন্যই এগুলা হচ্ছে।”
“মানে কি স্যার?”
“মানে তুমি কুফা।”
“কি বললেন?আমি আন্টিকে বলবো আপনি আমার সাথে বাজে বিহেভ করেছে।”
“কখন করলাম।আচ্ছা নামো হেল্প করো।”
“আমি পারিনা তো।”
“আমি যা বলবো তাই করে দিও তাতেই হেল্প হবে।”
“ওকে।”
এরপর আনিশা ইয়াশকে হেল্প করে ইয়াশ টায়ার চেঞ্জ করে।
আনিশা দেখে ইয়াশকে কিউট লাগছে। মনে মনে আনিশা বলে,,
“স্যার তো মাশাল্লাহ অনেক কিউট।তাতে আমার কি স্যার তো স্যার।”
আনিশাকে ভাবতে দেখে ইয়াশ বলে,,
“এই যে মিস চলুন।”
“হুম।”
আনিশা গাড়িতে উঠলো ইয়াশও।বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে আনিশা আবার ঘুমিয়ে পড়ে।ইয়াশ ওকে ডাকে কিন্তু উঠে না।
“এ তো আমার থেকে বড় কুম্ভকর্ণ। ”
ইয়াশ আনিশার আম্মু আর বাবাকে ফোন করে পরে ওরা এসে আনিশাকে নিয়ে যায়।
ইয়াশ ওর বাসায় চলে যায়।
কয়েকদিন পর ওদের এনগেজমেন্ট হয়ে যায়।কলেজের কেউ এখনো জানেনা ইয়াশ আনিশার উডবি হাসবেন্ড। শুধু আনিশার ফ্রেন্ডরা জানে।
এনগেজমেন্টের ৩ দিন পর একদিন রাত ১২:০২ মিনিটে আনিশা ইয়াশকে ফোন করে।১৩ বার ফোন করার পর ইয়াশ ফোন ধরে।
“হ্যালো”
“স্যার আপনি কি বেঁচে আছেন?”
আনিশার কথায় ইয়সশ একবার ফোন স্ক্রিনে দেখল তাতে বড় করে লেখা মিস কুম্ভকর্ণ।
“তুমি কি এতো রাতে আমাকে এটা বলতে কল দিয়েছো আনিশা? ”
” না স্যার কালকে দেখা করতে পারবেন?”
“কখন?”
“বিকেল ৫টায়।”
“ওকে। ”
“ওকে স্যার।ঘুমান গুড নাইট।
ইয়াশ আবারো ঘুমিয়ে পড়ল।আনিশা কল কেটে গেম খেলতে লাগল।
চলবে…!!