#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ৯
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)
সকালে ড্রেসিন টেবিলের সামনে থেকে শব্দ ভেসে আসায় ঘুম ভেঙে যায় আরোহির। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ৭ টা বাজে।এত সকালে ইহানকে রেডি হতে দেখে ভ্রু কুচকায় আরোহি। ইহান তো ৯ টা এর আগে বের হয় না। তাহলে আজ এত সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছে। একবার ভাবল প্রশ্ন করবে কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল প্রশ্ন করবে না।
“ইহানের যেখানে ইচ্ছা হয় যাক তাতে আমার কি?আমি কি ওর সত্যি কারের বউ নাকি? আমি শুধু আয়ানের মা আর কিছু নই।”
কথাগুলো বিরবির করে বলে নিজেকে বোঝালো আরোহি। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলে না।মনের মধ্যে একটা কিন্তু থেকেই যায়।অবশেষে ভাবল শুধু একটু জিজ্ঞেস ই তো করবে তাতে কি।কিন্তু যখনই ইহানকে জিজ্ঞেস করতে যাবে তখনই ইহান ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।ইহানকে আর জিজ্ঞেস করা হয় না। আর ইহানের ও তাড়া থাকায় সে খেয়াল করে না আরোহির ঘুম ভেঙে গেছে।
সকাল ১১ টার বেশি বাজে।ইহান ফেরেনি।নিজেকে নানাভাবে বুঝ দিচ্ছে আরোহি কিন্তু মনকে শান্ত করতে পারছে না।করবে কি করে! প্রেমিক পুরুষ এর একটু খানি কষ্ট ও যে নারী মনে ঝড় তুলতে সক্ষম আর আজ সেই ঝড় চলছে আরোহির মনে।মুখে যতই বলুক না কেন আদে ও কি এই মানুষ টাকে ভুলতে পেরেছিল আরোহি।
ইহানের চিন্তায় সকালের নাস্তা ও করে নি আরোহি।তবে তার চিন্তা টা কাউকে বুঝতে দেয়নি।তবে সাড়ে ১১ টার দিকে ফিরে এলো ইহান।দরজায় বেল বাজার সাথে সাথে দরজা খুলতে ছুটে গিয়েছিল আরোহি।কারণ আরোহির মন বলছিল ইহান এসেছে।তবে ইহানের সাথে এক অজ্ঞাত ব্যাক্তিকে দেখে একটু অবাক হলো আরোহি। তবে কথা না বাড়িয়ে ভেতর আসতে দিল ওদের। ড্রয়িং রুমে বসে আছেন আরশি বেগম। ইদ্রিস সাহেব একটু আগে বেরিয়ে গেছেন। ছেলেটিকে দেখে আরশি বেগম ও অবাক হলেন।প্রশ্ন করলেন ইহানকে,
“ইহান এই ছেলেটি কে?”
“মা ও আমার বন্ধু রাফসান।তুমি বা তোমরা চিনবে না।আসলে ও একটু আয়ানে মানে আমার ছেলেকে দেখতে এসেছে।”
ইহানের কথা সবার কাছেই একটু অদ্ভুত লাগল।কারন এই ছেলেকে আগে কখনো আর আজ হঠাৎই ইহানের ছেলেকে দেখতে চলে এলো। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ইহান বলল,
“আসলে ও খুব বাচ্চা প্রিয় মানুষ। তাই আমার ছেলেকে দেখতে চলে এসেছে।”
ইহানের কথায় ব্যাপারটা সবাই বুঝল।ইহান রাফসান কে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। সাথে আয়ান ও।আরশি বেগম আরোহি কে ওদের জন্য কফি নিয়ে যেতে বলল।আর লতা বেগম কে নাস্তার ব্যাবস্থা করতে বললেন।
ঘরে ঢুকে ইহান আয়ানকে রাফসান এর হাতে তুলে দিল।নিজের ছেলেকে এই প্রথম কোলে নিচ্ছে রাফসান।বাবা হওয়ার সুখ বুঝি এমন হয়।শরীর আর মনের মধ্যে তোলপাড় চলছে রাফসানের এই প্রথম ছেলেকে কোলে নিতে পারায়।
কফি নিয়ে রুমে ঢুকে দেখে রাফসান নামের লোকটি আয়ানকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বসে আছে।আর ইহান সেটা পলক ভরে দেখছে।
আরোহি দরজায় নক করে ওদেরকে কফি দিয়ে চলে গেল।বেশ অনেকক্ষণ পর রাফসান আর ইহান বেরিয়ে এলো। আয়ান ঘুমিয়ে গেছে। তাই তাকে শুয়িয়ে দিয়ে দিয়েছে। সবাই রাফসানকে থেকে যাওয়ার জন্য বলল তবে রাফসান থাকল না সকলের সাথে কুশল বিনিময় করে চলে গেল। রাফসান বেরিয়ে যাওয়ার পর আরোহি ও ঘরে গেল।কিন্তু একি কফির মগ একটা খালি আর একটা ভরা।ইহান কফিটা খেয়েছে কারণ ইহানের মগটি খালি। আরোহি ভাবল,
“লোকটা কফি খায়নি নাকি।আচ্ছা লোকটা পুরো টা সময় আয়ানকে কোলে নিয়ে ছিলো নাকি যার জন্য কফি খেতে পারে নি। এত বাচ্চা প্রিয় লোক!”
নিজেই বিরবির করে ওয়াশ রুমে সাওয়ার নিতে চলে গেল আরোহি। সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসেছে আরোহি।আয়ান আরশি বেগমের কাছে আছে। তাই এই ফাকে আলমারিটা গুছিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো আরোহি।গতকাল আয়ানের একটা জামা খুঁজে পাচ্ছিলো না আরোহি যার জন্য আলমারিটা একটু অগোছালো করে ফেলেছে আরোহি।
এই আলমারি তে ইহান আর আয়ানের জামা কাপড় থাকে। আরোহি নিজের জামা আলাদা আলমারি তে রাখে। ইহানের ঘর বেশ অনেকটা বড় হওয়ায় দুটো আলমারি খুব সহজেই ঘরে রাখা যায়।
আরোহি খেয়াল করল আয়ানের জামার সাথে সাথে ইহানের ও কয়েকটা কাপড় এলোমেলো করে ফেলেছে আরোহি। প্রথমে ভাবল গুছিয়ে দেবে না।কিন্তু তারপর ভাবল এলোমেলো যখন আরোহি করেছে তখন এটুকু গুছিয়ে দেওয়ায় ই যায়।সে তো বউ হিসেবে দিচ্ছে না নিজে অগোছালো করে ফেলেছে বলে দিচ্ছে। নিজেকে এসব বুঝ দিয়ে আলমারি গোছানো শুরু করল আরোহি। কিন্তু তখনই একটা কাগজে চোখ আটকে গেল আরোহির। ইহানের কোনো ব্যাক্তিগত কাগজ দেখার ইচ্ছে নেই আরোহির তবে কাগজের ওপর লেখাটা যেন জ্বলজ্বল করছে। সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে ডিভোর্স। লেখাটা দেখেই আরোহি একটু চমকায়।তারপর কাগজটা হাতে নিয়ে দেখে এটা ইহান আর মায়ার ডিভোর্স পেপার।তবে ডিভোর্স টা আয়ানের জন্য হয়তো হয় নি।বিষয়টা ক্লিয়ার হলো না আরোহির কাছে।ইহান মায়ার প্রেগনেন্সি এর সময় ডিভোর্স ফাইল করেছে। হ্যাঁ তারিখ টা তো সেটাই বলছে কিন্তু কেনো।
“ওদের সম্পর্কে তো কোনো অসুবিধা ছিল না তাহলে ইহান মায়াকে ডিভোর্স কেনো দিতে চায়ছিল সেটা ও মায়া প্রেগনেন্ট জানা স্বত্তেও।
আরোহির সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কোনো মতোই সমীকরণ মেলাতে পারছে না।প্রশ্নের চাপে নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে যেটা সবাই জানে সেখানে কোনো গন্ডগোল আছে।কিন্তু এতো প্রশ্নের উত্তর কোথায় পাবে।একমাত্র ইহান ই দিতে পারবে এই প্রশ্নের উত্তর। আরোহি আর ভাবল না।আগে ইহান ফিরুক তারপর না হয় সব জানা যাবে।
ঘড়ির কাটা ১১ টার ওপারে অথচ এখন ও ইহানের দেখা নেই। যে মানুষ টা ৯ টার পরপরই বাড়িতে ফেরে সেই মানুষ টা এখনো বাড়িতে ফিরল না।বাড়ির সকলে ইহানের চিন্তা করছে।আরশি বেগম এর তো প্রেশার হাই হয়ে গিয়েছে। বেশি চিন্তা করলেই ওনার প্রেশার বেড়ে যায়।এত চিন্তার কিছু ছিল না যদি ইহান ফোন ধরত কিন্তু ইহানের ফোন সুইচ অফ।যার জন্য সকলের দুঃচিন্তা আরো বেশি হচ্ছে। সাড়ে এগারো টার দিকে আরোহি অনেক বুঝিয়ে তার খালা আর খালুকে অল্প কিছু খায়িয়ে শুয়ে পড়তে বলল।কারন আরোহি জানে এরকম দুঃচিন্তা করলে এনারা দুজনই অসুস্থ হয়ে যাবে।
খালা খালু নামক শ্বশুর শ্বাশুড়ি কে খাওয়াতে সক্ষম হলে ও নিজে কিছুই খেতে পারল না আরোহি।সকলের সামনে স্বাভাবিক থাকলে ও ভেতরে ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে আরোহির। আজই ঠিক করেছিল ইহানকে কিছু প্রশ্ন করবে যার উত্তর গুলো জানা খুব দরকার আরোহির। কিন্তু ইহানই তো ফিরল না। অপেক্ষা করছে আরোহি। এক সময় অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেল সে। সকালে হালকা রোদ চোখে পড়ায় ঘুম ভেঙে গেল আরোহির।কালকে ইহানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছিল সে।ইহানের কথা মনে পড়তেই চারিদিকে দেখল আরোহি।না ইহান নেই। তাহলে কি ইহান ফেরেনি।তখনই
চলবে,
(সকলের কাছে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।)