#তোমাতেই_পূর্নতা
#শেষপর্ব
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা
রাতুল তার ফ্রেন্ড সাহেলকে বর্ষার বাসার খোঁজ নিতে বলে । সাহেল একদিন তিন্নি আর বর্ষাকে অনুসরণ করতে করতে রিয়ানদের বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সাহেল ভেবে নেয় এটাই বর্ষাদের বাসা । সাহেল রাতুল কে রিয়ানদের বাসার ঠিকানা দিয়ে দেয় ! রাতুল তার আম্মুকে গিয়ে বলে ,
” আম্মু বর্ষার বাসার ঠিকানা পেয়ে গেছি !
রাতুলের আম্মু খুশি হয়ে বলে ,
” তাহলে আজ বিকেলেই ওদের বাসায় যাব।
” ঠিক আছে আম্মু !
__________________
আজ রিয়ান অফিসে যায় নি । মায়ের সাথে সোফায় বসে কিছু নিয়ে আলোচনা করছে । তিন্নি আর বর্ষা উপরে বসে দুষ্টামি করছে । রিয়ান তার আম্মুকে বলল ,
” আম্মু আজকে …..
কথাটা শেষ করার আগেই কলিং বেল বেজে উঠল । রিয়ান দরজার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” এখন আবার কে এলো ?
” দরজাটা খুলে দেখ কে এসেছে !
রিয়ান মায়ের কথায় দরজা খুলে দেখল একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা । মহিলার পাশে এক তরুণ যুবক দাঁড়িয়ে আছে । রিয়ান সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলল ,
” আসুন , ভেতরে আসুন ।
দুজন ভিতরে আসল । রিয়ান তার আম্মুর দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলল ,
” এরা কারা ।
রিয়ানের আম্মু ইশারায় বলল ,
” চিনে না ।
রিয়ানের আম্মু মধ্যবয়স্ক মহিলাটিকে বললেন ,
” আপনাদের তো চিনলাম না ! আপনারা ….
কথা শেষ হওয়ার আগেই মধ্যবয়স্ক মহিলাটি বেশ উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠলো ,
” চেনা জানা তো লেগেই থাকবে । তার আগে আসল কথায় আসি । এটা হলো আমার ছেলে রাতুল ।
মহিলার কথায় রিয়ান আর রিয়ানের আম্মু রাতুলের দিকে তাকালো । তারপর মহিলাটি আবারও বলে উঠলো ,
” আসলে আমার ছেলের আপনার মেয়েকে অনেক পছন্দ হয়েছে তাই একেবারে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলাম ।
” আপনারা জানিয়ে আসলে ভালো হতো । আমরা তো এইসব কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না ।
তারপর রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল ,
” রিয়ান বর্ষাকে গিয়ে বল ওদের জন্য নাস্তার আয়োজন করতে ।
আচ্ছা বলে রিয়ান উপরে চলে গেল । রিয়ানের আম্মু আর রাতুলের আম্মু বসে বসে একজনের ছেলে ও মেয়ে সম্পর্কে কথা বলছে । রিয়ান বর্ষার কাছে এসে বলল ,
” বর্ষা নিচে গিয়ে মেহমানের জন্য নাস্তা তৈরি করো
তিন্নি রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল ,
” এখন আবার কোন মেহমান এল ভাইয়া ?
” শুনলাম তোকে দেখতে এসেছে। তুই রেডি হয়ে থাক বর্ষা এসে তোকে নিয়ে যাবে।
মূহুর্তের মধ্যে তিন্নির মনে কালো মেঘের আঁধার নেমে এলো । তিন্নি অশ্রুসিক্ত নয়নে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল ,
” কিন্তু ভাইয়া আমি তো এখন বিয়ে করতে চাই না !
” দেখতে আসলে তো আর বিয়ে হয়ে যাবে না । তুই রেডি হয়ে থাক ।
বর্ষা অবিশ্বাস্য চোখে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়ান বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” তুমি এখানে বসে আছো কেন ? নিচে চল !
বর্ষা শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথায় বড় করে ঘোমটা দিয়ে রিয়ানের সাথে নিচে নেমে গেল । ঘোমটা দেওয়ার কারণে বর্ষা রাতুল কে দেখতে পেল না । বর্ষা , রিয়ান চলে যেতেই তিন্নি স্তব্ধ হয়ে বসে রইল । অনেকক্ষণ বসে থাকার পর ফোনটা হাতে নিয়ে শুভকে কল দিল । শুভ কল রিসিভ করতেই তিন্নি বলে উঠলো ,
” কোথায় আপনি ?
তিন্নির কথায় শুভ হাস্যজ্জ্বল কন্ঠে বলল ,
” কেন ? এখন তোমাদের বাসায় গিয়ে তোমাকে দেখা দিতে বলবে নাকি ? দেখ আমি কিন্তু এখন কোথায় যেতে পারবো না ।
তিন্নি অসহায় ভাবে বলল ,
” আমাকে পাএ পক্ষ দেখতে আসছে !
শুভ কথাটা শুনে অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থেকে দু চোখ বন্ধ করে শান্ত কন্ঠে বলল ,
” রেডি হয়ে পাএ পক্ষের সামনে যাও ।
” আমার যদি বিয়ে হয়ে যায় ! আমাকে কি একটু ও ভালোবাসেন নি ?
” বিয়ে হবে না তুমি যাও !
” আমি আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো না । শুনছেন ? ভালোবাসি আপনাকে !
শুভ কিছু না বলে কলটা কেটে দিল । তিন্নি চুপ করে বসে থেকে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে একটা শাড়ি পড়ল । হালকা একটু সাজুগুজু করে বসে রইল । বর্ষা কিছুক্ষণ পর এসে বলল ,
” কিরে মুখটা পেঁচার মতো করে বসে আছিস কেন ?
তিন্নি অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে বলল ,
” বিশ্বাস কর বর্ষা , আমি তর ভাইয়াকে সত্যি ভালোবাসি ! ভীষণ ভাবে ভালোবাসি। আমার ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই । আমি এই কথা গুলো আবেগের বশে বলছি না।
বর্ষা স্মিথ হেসে বলল ,
” আমি জানি তুই ভাইয়াকে ভালোবাসিস । তোর চোখে আমি ভাইয়ার জন্য ভালোবাসা দেখেছি । এখন তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না । নিচে আয় ।
বর্ষা তিন্নিকে সাথে নিয়ে নিচে নেমে গেল। ওরা নিচে যেতেই রাতুল তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল ,
” তিন্নি তুমি ?
রাতুলের কন্ঠে তিন্নি বিস্ময়ে রাতুলের দিকে তাকালো । বর্ষা মাথায় ঘোমটা সরিয়ে রাতুল দিকে তাকাতেই রিয়ানের আম্মু বলে উঠলো ,
” এই তো আমার মেয়ে তিন্নি ! এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে ?
রাতুল বিস্ময়কর দৃষ্টিতে রিয়ানের আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল ,
” তাহলে বর্ষা কে ?
” বর্ষা আমার ছেলের বউ !
রাতুল হতবাক হয়ে বসে পড়ল । রাতুলের আম্মু অবাক স্বরে বলল ,
” আমরা তো বর্ষাকে দেখতে আসছি !
রিয়ান , বর্ষা এতক্ষণ চুপ থেকে ওদের কথা শুনছিল । রাতুলের আম্মুর কথায় দুজনে একসাথে বলল ,
” কিহহহ !
পরিবেশটা নিস্তব্ধ । সবাই চুপ করে আছে আছে । কারো মুখে কোন কথা নেই । বর্ষা মনে মনে ভাবছে “”””””””””” তাহলে রাতুল ভাইয়া আমাকে যেই মেয়েটির কথা বলত সেই মেয়েটি আমি নিজেই “””””””” কথাটা মনে আসতেই বর্ষা চমকে রাতুলের দিকে তাকালো । রাতুল বর্ষার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । কি মায়াভরা দৃষ্টি ! চোখে প্রেয়সীকে হারানোর বেদনা । দুজনের চোখাচোখি হতেই বর্ষা চোখ নামিয়ে নিল ।
কিছুক্ষণ পর রাতুল নিজেকে সামলিয়ে উঠে বলল ,
” আমাদের ভুল হয়েছে । না জেনে- শুনে আমরা এখানে এসে পড়ছি । আপনাদের বিব্রত করার জন্য দুঃখিত ।
তারপর বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” সরি বর্ষামনি !
বর্ষা মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল কোন কথা বলল না । রাতুল ও তার আম্মু আবারও ক্ষমা চেয়ে চলে গেল ।
____________________
বর্ষা রিয়ানের বুকে মাথা রেখে রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে । রিয়ান বর্ষাকে বলল ,
” রাতুল যে তোমাকে ভালোবাসত তুমি জানতে না ?
” নাহ । আমি তো কখনো বুঝতেই পারিনি রাতুল ভাইয়া আমাকে ভালোবাসেন ।
” তোমাকে বলেনি ?
” বলেছিল কোনো এক রাজকন্যাকে ভালোবাসেন। কিন্তু সেটা যে আমি , তা কখনো বলেনি ।
রিয়ান বর্ষাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল ,
” তুমি আমার ! আমার পূর্নতা । আমার ভালোবাসা তুমি। আমাকে ছেড়ে কখনো যেও না ।
” আমি আপনাকে ছেড়ে কখনো যাব না।
_____________
রিয়ান আর শুভ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে এক অচেনা রাস্তার মোড়ে । সম্পূর্ণ রাস্তায় নীরব , নির্জন । রিয়ান শুভর পিঠে কিল দিয়ে বলল ,
” কবে থেকে চলছে এসব ?
শুভ বুঝতে না পেরে বলল ,
” কোন সব ?
” আমার বোনকে পটিয়ে ফেললি আর আমি বুঝতে ও পারলাম না । কি সাংঘাতিক তুই !
শুভ মুচকি হেসে বলল ,
” আমি তো পটাইনি । সেই আমাকে পটিয়েছে !
রিয়ান চোখ বড় বড় করে বলল ,
” সত্যি ?
পরক্ষনেই বলল ,
” কেউ তোকে পটাতে চাইলো । অমনি তুই ও পটে গেলি।
শুভ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ভালোবেসেছি !
রিয়ান অভিজ্ঞদের মতো বলল ,
” হুম বুঝলাম ! তোদের ভালোবাসাকে এবার পরিপূর্ণ করতে হবে ।
_________________
বর্ষা , তিন্নি কলেজে পৌঁছাতেই রাতুল বর্ষার সামনে এসে দাঁড়ালো । বর্ষা রাতুলকে দেখে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই রাতুল বলল ,
” বর্ষামনি !
বর্ষা সেখানে স্থির ভাবে দাড়িয়ে রইল । রাতুল বর্ষার সামনে এসে বলল ,
” আমি চলে যাচ্ছি !
বর্ষা চমকে প্রশ্ন করল ,
” কোথায় ?
” আমেরিকা ।
” কেন যাচ্ছেন ?
রাতুল অদ্ভুত হেসে বলল ,
” এখানে থাকলে হয়তো কোনো না কোনো ভাবে আমার প্রেয়সীর সাথে দেখা হবে । প্রেয়সীর পাশে থাকবে তার স্বামী । এটা আমি কীভাবে সহ্য করবো বল ?
বর্ষা প্রসঙ্গ পাল্টে বলল ,
” কবে যাচ্ছেন ?
” সামনের শুক্রবার।
” আর তিনদিন পর ?
” হুম !
” আচ্ছা ভালো থাকবেন !
বলেই বর্ষা পিছন ফিরে হাঁটা ধরল । রাতুল তাকিয়ে রইল তার প্রেয়সীর দিকে । কত স্বপ্নই না দেখেছিল তার প্রেয়সীকে নিয়ে !
********** তিন বছর পর *********
বর্ষা , রিয়ান একপাশে দাঁড়িয়ে আছে । তিন্নির কোলে আছে বর্ষার ছেলে নিলয় । শুভ ওদের জন্য আইসক্রিম আনতে গেছে । বর্ষার ছেলের বয়স দুই বছর । তিন্নি তিন মাসের প্রেগন্যান্ট । দুই পরিবারের সম্মতিতে ওদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে । শুভ আইসক্রিম আনতে নিলয় বলল ,
” মামা আইতকিম খাব , আইতকিম খাব ।
শুভ হেসে বলল ,
” আইসক্রিম খাওয়া ভালো না । তোমাকে আমি চকলেট এনে দিব ।
ছোট্ট নিলয় তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল ,
” ফুপি দেখো মামা আমাকে আইতকিম দিচ্ছে না ।
তিন্নি শুভকে বলল ,
” ওকে আইসক্রিম দিয়ে দিন না । না হলে এখনই কেঁদে দিবে ।
শুভ নিলয় কে আইসক্রিম দিয়ে তিন্নিকে বলল ,
” কয়েকদিন পর নিলয়ের মতো একজন আমাকে বলবে ” আব্বু আইতকিম খাব, আইতকিম খাব ।
তিন্নি খুশি মনে বলল ,
” হুম। আর আপনি যখন দিতে চাইবেন না তখন আমাকে অভিযোগের স্বরে বলবে ” আম্মু দেখো আব্বু আমাকে আইতকিম দিচ্ছে না ।
বলেই দুজন হেসে উঠলো । ওদের হাসতে দেখে ছোটো নিলয়ও কিছু না বুঝে হাসতে লাগলো ।
রিয়ান বর্ষার খোপায় বেলি ফুলের মালা পড়িয়ে দিচ্ছে । বর্ষা সামনে তাকিয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের খেলা দেখছে।
রিয়ান ফুলের মালা বিক্রেতা কে টাকা দিতে যেতেই একটা পাঁচ-ছয় বছরের ছেলে বর্ষার হাতে একটা ফুলের তোড়া দিয়ে দৌড়ে চলে গেল । বর্ষা ফুলের তোড়ার দিকে তাকিয়ে একটা চিরকুট দেখতে পেল । বর্ষা চিরকুট খুলে দেখল ,
” বর্ষামনি ! খুব ভালোবাসি তোমাকে । তোমার স্বামী ভাগ্যবান তাই তো তোমাকে পেল । আমি ও তোমাকে পেয়েছি ! কীভাবে জানো ? আমার হৃদয় মাঝে । বাস্তবে তুমি আমার না হলেও কল্পনায় তুমি আমার। শুধুই আমার ,আমার – তুমি! অপূর্নতার মাঝেও পূর্নতা ।
****** সমাপ্ত******