#তোমাতেই_পূর্নতা
#পর্বঃ১০
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা
” বর্ষা আমি মানিব্যাগটা কোথায় ?
বর্ষা রান্নাঘরে নাস্তা তৈরি করেছিল রিয়ানের ডাকে রুমে গেল । টেবিলের উপর থেকে মানিব্যাগটা বের করে দিয়ে বলল ,
” মানিব্যাগটা ও খুঁজে নিতে পারেন না ?
রিয়ান গলায় টাই বাঁধাতে বাঁধতে বলল ,
” কি করে খুঁজব বলো ? আগে তো আমার জিনিস আমিই গুছিয়ে রাখতাম এখন তো তুমি গুছিয়ে রাখ !
বর্ষা মুখ ভেংচি কেটে বলল ,
” হুহহ !
বর্ষাকে মুখ ভেংচি দিতে দেখে রিয়ান হেসে দিল । বর্ষা কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে গেল । রিয়ান নাস্তা করে অন্য দিনের মতোই অফিসে চলে গেল ।
বিকেলে পাশের বাসার এক আন্টি পান চিবুতে চিবুতে আসল । বর্ষার শাশুড়ির পাশে বসে বর্ষার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকালো । বর্ষা আর তিন্নি সোফায় বসে মোবাইলে লুডু খেলছিল । আন্টি যে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়েছে তা অবশ্য বর্ষার চোখ আড়ায়নি । আন্টি বর্ষার শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলল ,
” রিয়ানের আম্মু রিয়ানের বিয়ে দিলে অনেকদিনই তো হলো । কোনো সুখবর আছে কি ?
” না । এখন ও তেমন কোনো খবর পাই নি !
” ও মা কেন ? শুনেছিলাম রিয়ানের নাকি বউ পছন্দ হয় নি । আমার কাছে একটা মেয়ের সন্ধান আছে । যেমন রূপ তেমন গুন । রিয়ানের ঠিক পছন্দ হবে আপনারা যদি বলেন তাহলে আলাপ করতে পারি ।
কথাগুলো বর্ষার কানে যেতেই আপনা-আপনি চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল । বর্ষা এখান থেকে দৌড়ে রুমে চলে গেল । বর্ষা যেতেই তিন্নি আন্টির সামনে গিয়ে বলল ,
” আপনাকে কি ভাইয়া একবার ও বলেছে তার বউ পছন্দ হয় নি ? কেউ বলেছে ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে । আমাদের এত জ্ঞান না দিয়ে নিজের চরকায় তেল দেন ।
” আমি তো তোমাদের ভালোর জন্যই বললাম ।
” আমাদের ভালোর জন্য আপনাকে কিছু বলতে হবে না। আপনি এক্ষুনি আমাদের বাসা থেকে বেরিয়ে যান ।
” আজকালকার ছেলেমেয়েরা এত বেয়াদব । গুরুজনদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে তা ও জানে না । অসভ্য মেয়ে কোথাকার !
” আপনি আমার গুরুজন তাই যথেষ্ট সম্মান দিয়ে কথা বলছি । আপনি এই সম্মানের ও যোগ্য না । আমাদের বাসায় আসার কথা মাথায় ও আনবেন না । বেড়িয়ে যান এখান বাসা থেকে ।
রিয়ান রাতে বাসায় ফিরে দেখল বর্ষা মন খারাপ করে শুয়ে আছে । চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে আছে । রিয়ানের বুকটা কেঁপে উঠলো । রিয়ান বর্ষার মাথার কাছে বসে বর্ষাকে বলল ,
” বর্ষা কি হয়েছে তোমার ? মন খারাপ করে আছো কেন ? আমাকে বল কি হয়েছে !
বর্ষা অপর পাশে মুখ ঘুরিয়ে বলল ,
” কিছু না !
রিয়ান উদ্বিগ্ন হয়ে বলল ,
” আমাকে না বললে আমি বুঝবো কি করে ?
বর্ষা তাচ্ছিল্যের সু্রে বলল ,
” বুঝেই কি করবেন আপনি ?
রিয়ান বর্ষাকে অনেকবার বলল কি হয়েছে বলতে কিন্তু বর্ষা কিছুতেই বলল না । রিয়ান তিন্নির কাছে গিয়ে বলল ,
” তিন্নি বর্ষার কি হয়েছে ?
তিন্নি বিকেলের সব ঘটনা রিয়ানকে বলল । রিয়ান সবকিছু শুনে রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল । রুমে ফিরে গিয়ে দেখল বর্ষা একইভাবে শুয়ে আছে ।
রিয়ান অনেকক্ষণ বিছানায় বসে থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বর্ষাকে কোলে তুলে নিল । বর্ষা অবাক হয়ে বলল ,
” আরে কি করছেন আপনি ছাড়ুন আমাকে !
রিয়ান কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে বর্ষাকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো । বর্ষা উওর না পেয়ে আবারও বলল ,
” কেউ দেখে ফেলবে প্লিজ নামিয়ে দিন ! আমি হেঁটে যাব !
রিয়ান ফিসফিস করে বলল ,
” কেউ দেখতে আসবে না ! তুমি চুপ করে থাকো নয়তো তোমার চিৎকারে সবাই চলে আসবে ।
বর্ষা আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো । রিয়ান বর্ষাকে নিয়ে ছাদে গেল । ছাদের মধ্যে একটা দোলনা আছে । রিয়ান বর্ষাকে দোলনায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও বর্ষার পাশে বসল । বর্ষা রিয়ানের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলল ,
” আমাকে এভাবে কোলে করে আনলেন কেন ? আমার কি পা নেই যে হেঁটে আসতে পারবো না !
রিয়ান বর্ষার চোখের দিকে তাকালো । রিয়ানের চোখের দিকে তাকাতেই বর্ষার বুকটা কেমন করে উঠলো । রিয়ান বর্ষার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ,
” ভালোবাসবে আমায় ?
আচমকা এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কথায় বর্ষা স্তম্ভিত হয়ে গেল । মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না । ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রিয়ানের দিকে । বর্ষাকে নিরব থাকতে দেখে রিয়ান আবারও বলল,
” নিলা আমার প্রথম ভালোবাসা । নিলাকে আমি কখনো ভুলতে পারব না । নিলার জায়গাটা ও তোমায় দিতে পারব না । তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না ।আমার শূন্যতার মাঝে তুমি পূর্নতা হয়ে এসেছিলে । আমাকে একটা সুযোগ দিবে তোমাকে ভালোবাসার ?
বর্ষা আবারও নিশ্চুপ হয়ে রইলো । রিয়ান আশাহত হয়ে বলল ,
” তুমি যদি না চাও , আমি তোমাকে কখনো জোর করবো না । তোমার কাছে স্বামীর অধিকার ও চাইবো না ।
বর্ষা রিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে বলল ,
” আমি কখনো বলবো না আপনি নিলা আপুকে ভুলে যান । আমিও চাই নিলা আপু আমার হৃদয়ে থাকুক , কিন্তু আমাকে অনেক ভালোবাসতে হবে । কখনো ছেড়ে যেতে পারবেন না ।
” আমি কখনো ছেড়ে যাব না ।
রিয়ান প্রাপ্তির হাসি হেসে বর্ষাকে জড়িয়ে ধরল ।
#চলবে