তোমাতেই পূর্নতা পর্ব-০৮

0
1090

#তোমাতেই_পূর্নতা
#পর্বঃ৮
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা

বর্ষা ও তিন্নি কলেজ থেকে রওনা হলো বর্ষার বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে। বিয়ের এতো দিন পর একবার ও বাবার বাড়িতে যাওয়া হয়নি বর্ষার । আজকে সকালে বর্ষার আম্মু ফোন দিয়ে বলল,

” বর্ষা মা অনেকদিন হলো তোকে দেখি না। আয়ানকে নিয়ে আয় না মা । আম্মুর কথা কি মনে পড়ে না ?

বর্ষার আম্মু কল কাটার পর বর্ষা আয়ানকে বলেছিল ,

” বিয়ের পর একবার ও আমাদের বাড়িতে যাইনি । আম্মু , আব্বুকে ও দেখতে ইচ্ছে করছে । আজকে চলুন না যাই !

আয়ান একবার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল ,

” সরি ! আজকে অফিস একটা জরুরী মিটিং আছে । আমি আজকে যেতে পারবো না ‌।

আয়ান একটু থেমে আবারও বললো,

” তুমি আজকে কলেজে যাবে তো ?

বর্ষা মাথা নাড়িয়ে বলল,

” হ্যাঁ যাবো ।

” তাহলে বরং তুমি আর তিন্নি কলেজ থেকে চলে যেও।

বর্ষা গাল ফুলিয়ে বলল,

” আচ্ছা !

বর্ষাকে গাল ফুলাতে দেখে আয়ান হেসে দিল । নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

” আমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসে যাব ! এবার খুশি ?

বর্ষার চোখ মুখে খুশির ঝিলিক দেখা দিল । হাসিমুখে বলল ,

” অনেক খুশি !

*******

সকালে বর্ষার আব্বুকে বাজারে পাঠিয়েছেন বর্ষার আম্মু । মেয়ের পছন্দের খাবার রান্না করবেন আজকে । বর্ষার আব্বু বাজার থেকে ফিরে আসার পর রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বর্ষার আম্মু । শুভ রান্নাঘরে পানি খেতে আসে । পানি খেয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখে তার আম্মু খুশি মনে রান্না করছে । শুভ তার আম্মুকে জিজ্ঞেস করল ,

” কি ব্যাপার আম্মু ? আজকে যেন তোমাকে খুশি খুশি লাগছে !

বর্ষার আম্মু তরকারিতে লবণ দিতে দিতে বলল,

” আজকে বর্ষা আসছে ।

” আমার বোন আসছে আর আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন বোধ করলে না ?

” তোকে বলবো বলবো করে ও বলতে পারি নি !

” আমার বেলায় তো কিছুই মনে থাকে না । সব তোমার মেয়ের বেলায় মনে থাকে ।

” দেখছো মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে তারপরও কেমন ঝগড়া করে !

” বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে ! আমার বোন আমি ঝগড়া করবো ।

” আচ্ছা বাবা করিস । এখন গিয়ে গোসল করে নে । কিছুক্ষণ পর ওরা চলে আসবে ।

” যাচ্ছি ।

বর্ষা ও তিন্নি বর্ষাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । তিন্নির বুক ধুকপুক করছে । হার্টবিট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে । শুভকে দেখার প্রবল ইচ্ছে জাগছে মনে । চোখ মুখে খানিক লজ্জার আবাস পাওয়া যাচ্ছে । বর্ষা তিন্নির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে বলল ,

” কিরে এভাবে লজ্জা পাচ্ছিস কেন ? এখানে তো লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু দেখছি না !

তিন্নি বর্ষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল ,

” তোর ভাইয়া বাসায় আছে ?

বর্ষা এতক্ষণে তিন্নির লজ্জার কারণ বুঝতে পারল । তিন্নির মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল ,

” দাঁড়া আমি তোর ভাইয়াকে বলে তর একটা ব্যবস্থা করছি !

কথাটা বলেই বর্ষা কলিংবেল চাপ দিলো । বর্ষার কথায় তিন্নি আঁতকে উঠলো । মেকি হেসে বলল ,

” তুই আমার কলিজার বান্ধবী , আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাএ বেষ্টফ্রেন্ড ! তুই প্লিজ ভাইয়াকে কিছু বলিস না । তুই তো ….

তিন্নি কথা বলার মাঝেই দরজা খুলে দিল বর্ষার আম্মু ।
তিন্নি আর কিছু বলল না । বর্ষা তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরল । নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিময় করল । তখন উপর থেকে ডাক ভেসে আসল ,

” আম্মু ! ও আম্মু দেখে যাও তো !

শুভর কন্ঠস্বর শুনে তিন্নির মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। মনের মাঝে মানুষটাকে দেখার প্রবল ইচ্ছা জেঁকে বসেছে ।

” ছেলেটা এখনও নিজের জিনিস নিজে গুছিয়ে রাখতে শিখলো না। সবসময় খালি আম্মু , আম্মু করে ‌।

কিছুক্ষণ পর সিঁড়ি বেয়ে এক হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে নিচে নামছে । তিন্নি শুভর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । শুভ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে বর্ষার দিকে তাকিয়ে হেসে কিছু বলতে যাবে তখন তিন্নির দিকে নজর গেল । তিন্নির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো কিন্তু তিন্নির কোনো পরিবর্তন হলো না । এতক্ষণ লজ্জায় মিইয়ে থাকা মেয়েটা এখন যেন বড্ড নির্লজ্জ হয়ে গেল । তিন্নি এভাবে তাকিয়ে থাকাতে শুভর অস্বস্তি হচ্ছে । শুভ বর্ষার পাশে বসে বর্ষাকে ফিসফিস করে বলল ,

” তোর ননদ কে এভাবে তাকাতে মানা কর । আম্মু এসে দেখলে কি ভাববে !

বর্ষা শুভর কথায় তিন্নির দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলল,

” ওই , একটু আগে তো লজ্জায় লাল হয়ে ছিলি ! এখন এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ? লজ্জা কি আকাশে উড়াল দিছে ?

বর্ষার কথা যেন তিন্নি শুনেও শুনল না । বর্ষা এবার একটু জোরে বলল ,

” তিন্নি ?

তিন্নি ঘোর থেকে ফিরে এসে নিজের কান্ডে নিজেই লজ্জা পেল । শুভ তিন্নির অস্বস্তি বোঝতে পেরে এখান থেকে উঠে চলে গেল ।

—————

রাত এগারোটায় আয়ান বর্ষাদের বাসায় আসল । বর্ষা সন্ধ্যা থেকে আয়ানের জন্য অপেক্ষা করছিলো কিন্তু আয়ান সেই দেরি করে আসলো । আয়ান আসার পর বর্ষা একটা কথা ও বলছে না আয়ানের সাথে । আয়ান বর্ষার দিকে সামনে গিয়ে কানে ধরে বলল ,

” এভাবে রাগ করে থেকো না ! বললাম তো ভুল হয়েছে। আমি তো ইচ্ছে করে দেরি করিনি । এমন হবে না আর !

বর্ষা আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল ,

” কালকে সকালে তো চলেই যাবেন ! সন্ধ্যার দিকে চলে আসলে কি আপনার চাকরি চলে যেত ? আপনাদেরই তো অফিস ।

” আরেক বার এসে বেশি দিন থেকে যাব ।

” সত্যি ?

” হুম ।

আয়ান বর্ষার রুমের দিকে তাকিয়ে দেখল রুমটা অগুছালো । আয়ান বর্ষার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বলল ,

” তোমাকে না বলেছি রুম সবসময় গুছিয়ে রাখবে ! এখন ও রুমটা অগুছালো কেন ?

বর্ষা আমতা-আমতা করে বলল ,

” আমি আসলে রুমে আসিনি কিছুক্ষণ আগেই এসেছি !

এমন সময় বর্ষাকে বর্ষার আম্মু ডাক দিল । বর্ষা আয়ানকে বলল ,

” আপনি একটু রুমটা গুছিয়ে দেন না ।

কথাটা বলেই বর্ষা রুম থেকে বেরিয়ে আম্মুর কাছে গেল । কিছুক্ষণ পর রুমে উঁকি দিয়ে দেখে আয়ান রুম গুছাচ্ছে । বর্ষা তখন পাশের রুম থেকে তিন্নিকে ঠেকে এনে বলল,

” তোকে বলেছিলাম না , তোর ভাইয়াকে দিয়ে আমার রুম গুছাবো ! দেখছিস আজকে তোর ভাইয়া আমার রুমটা গুছিয়ে দিচ্ছে ।

” তুমি তো এখন আমার ভাইয়ার বউ হয়ে গেছো তাই ভাইয়া রুমটা গুছিয়ে দিচ্ছে । না হলে জিবনেও গুছিয়ে দিতো না ।

” তর ভাইয়ের বউ না হলেও আমি তর ভাইয়াকে দিয়ে রুম গুছিয়ে নিতাম। হুহ !

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে