#তোমাতেই_পূর্নতা
#পর্বঃ৩
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা
এখন রাত দুইটা বাজে । আপনি বাসর ঘরে বসে আছি। রিয়ান ভাইয়া এখনও আসছে না । রিয়ান ভাইয়া কি মেনে নিবেন আমায় ? উনি তো আমাকে ভালোবাসেন না ! তাহলে কি আমাকে কখনো স্ত্রীর অধিকার দেবেন না ?
আমি যখন মনে মনে এই গুলো ভাবছি তখনই দরজা আটকানোর শব্দে সামনে তাকালাম । রিয়ান ভাইয়া দরজা বন্ধ করে দ্রুত গতিতে আমার কাছে এসে আমাকে একটানে বিছানা থেকে ফেলে দিলো । আমি টাল সামলাতে না পেরে মেঝেতে পড়ে গেলাম ! রিয়ান ভাইয়া আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
” কি কারণে বিয়ে করেছো আমাকে ? আমার বাবার টাকার জন্য ! তোমাদের মতো মেয়েদের তো এইটাই পেশা । বড়লোক ছেলেদের বিয়ে করে সব সম্পতি হাতিয়ে নিতে চাও !
রিয়ান ভাইয়ার কথা গুলো আমার বুকে এসে কাঁটার মতো বিঁধলো ! আমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে ! কিন্তু মুখ ফুটে একটা কথাও বলতে পারছি না। রিয়ান ভাইয়া আবারও বলতে শুরু করল,
আমি এখনও নিলাকে ভালোবাসি ! ভুলেও আমার কাছে আসার চেষ্টা ও করবে না ! আমি তোমাকে কখনোই স্ত্রীর অধিকার দেবো না । কথাটা মাথায় রেখো !
কথাগুলো বলেই রিয়ান ভাইয়া লাইট অফ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল ! তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” আমার বিছানায় আমিই ঘুমাবো । তোমাকে যেন এই বিছানার ধারে কাছে ও না দেখি !
রিয়ান ভাইয়া কথাগুলো বলেই কাঁথা মুড়ি দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লেন ! আমি উঠে বারান্দায় চলে গেলাম।
অমাবস্যার রাত ! চারিদিকে ঘোর অন্ধকার ! আলোর ছিটে ফোঁটা ও নেই । তবুও আকাশ দেখতে খুব ভালো লাগছে । আকাশে অজস্র তারার হাট বসেছে । বিশাল এই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি । অনেক প্রপোজ পেয়েছি কিন্তু আমার স্বামীকে আমার সব ভালোবাসা দেবো বলে কখনো প্রেম করিনি ! কে জানত আমার এমন একজন স্বামী হবে যে আমাকে কোনদিন স্ত্রীর অধিকার দেবে না । একবুক কষ্ট নিয়ে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে রইলাম । বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়ালই নেই !
সকালের মিষ্টি রোদ আমার মুখে এসে পড়লো । আমি চোখ পিটপিট করে খুলে এক অচেনা জায়গা দেখলাম ! তারপর আমার মনে পড়লো আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে । ফুলের মিষ্টি সুগন্ধ নাকে আসছে । বারান্দার এক পাশে তাকিয়ে দেখি ভিন্ন ভিন্ন রকমের ফুল গাছ। ফুল গুলো দেখেই মূহুর্তের মধ্যে মন ভালো হয়ে গেল ! আমি উঠে গিয়ে দেখলাম বেলী ফুল গাছটায় অনেক গুলো ফুল ফুটেছে । ফুল গুলো হাত দিয়ে ছুয়ে দিলাম!
এখানে আরো অনেক রকমের ফুল গাছ আছে । ফুল আমার অনেক প্রিয়। আমি যখন হাত দিয়ে নয়নতারা ফুল টা ধরতে যাব তখন কেউ খপ করে আমার হাতটা ধরে ফেললো। আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি রিয়ান ভাইয়া । উনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে এখনই ঘুম থেকে উঠছে । এলোমেলো চুল , ফোলা ফোলা চোখ । রিয়ান ভাইয়া আমার হাত টা ছেড়ে দিয়ে বলল ,
” খবরদার আমার ফুল গাছের দিকে নজর দিবে না । এইগুলো কখনো ছুঁয়েও দেখবে না ।
আমি রাতের মতো এখনো উনাকে কিছু বললাম না । উনাকে পাশ কাটিয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর নিচে গেলাম । নিচে গিয়ে দেখি আন্টি নাস্তা রেডি করছে । আমি আন্টির কাছে গিয়ে বললাম,
” আন্টি আমি হেল্প করি !
আমার কথায় আন্টি আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন আমি কোনো বড় অন্যায় করে ফেলেছি ! আমার আন্টির এই দৃষ্টি দেখে ভাবতে লাগলাম , কি এমন বললাম আমি তার জন্য এভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ? আন্টি হয়তো আমার মনের কথাটা বুঝতে পেরে বলল ,
” আন্টি আন্টি করছো কেন ? এখন থেকে আম্মু বলে ডাকবে !
” এতো দিনের অভ্যাস তো তাই আন্টি বলেছি !
” অভ্যাস চেঞ্জ করতে হবে ! রিয়ান কি ঘুম থেকে উঠেছে ?
” জী আম্মু !
” রিয়ান কে গিয়ে ডেকে আনো তো !
আম্মু বলার পরও আমি এখানেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। উনার কাছে গেলে উনি আবারও রেগে যাবেন তাই এখন আর উনার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে না । আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আম্মু আবারও বলল,
” কি হলো যাও।
এবার আর দাঁড়িয়ে না থেকে সামনের দিকে পা বাড়ালাম । সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রিয়ান ভাইয়া সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে । গোসল করে অফিস যাওয়ার জন্য একেবারে রেডি হয়ে এসেছে । উনাকে আসতে দেখে আম্মুকে বললাম ,
” উনি চলে এসেছে আম্মু !
আম্মু আমাকে বলল,
” রিয়ান কে গিয়ে নাস্তা দিয়ে এসো ।
আমি রিয়ান ভাইয়াকে গিয়ে নাস্তা দিলাম । আমাকে দেখে এমন ভাবে তাকালো যেন নাস্তা রেখে আমাকেই কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে । এখানে সবাই আছে তাই কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেল ।
রাতে রিয়ান ভাইয়া বাসায় ফিরার পর আম্মু আমাকে বলল ,
” রিয়ানকে এক গ্লাস লেবুর শরবত করে দেও ।
আমি কিচেনে গিয়ে একগ্লাস লেবুর শরবত করে উপরে গেলাম । রিয়ান ভাইয়া ফ্রেস হয়ে বসে মোবাইল টিপছে । আমি উনার সামনে গিয়ে শরবতটা ধরে বললাম,
” আপনার শরবত !
রিয়ান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাত থেকে শরবতটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো । গ্লাস ভাঙ্গার শব্দে আমি কেঁপে উঠলাম । অনেক হয়েছে আমি আর এইবার চুপ করে থাকলাম না । রিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম ,
” সমস্যা কি আপনার ? আমাকে কি খেলার পুতুল পেয়েছেন ? আপনার যা ইচ্ছে তাই করবেন ? আমি তো আপনাকে টাকার জন্য বিয়ে করেছি ! আপনি কেন বিয়ে করলেন ?? শরীরের লোভে ! আপনার যদি বিয়ে করার ইচ্ছে না থাকতো তাহলে কেন বিয়ে করলেন আমাকে ? এখন বলবেন , বাবা -মার চাপে পড়ে বিয়ে করেছেন। ….. বাবা- মা কি একা আপনারই আছে , আমাদের নেই ? শুনে রাখুন আপনার বাবার টাকা আমি ছুঁয়েও দেখবো না ।
আমার কথায় রিয়ান ভাইয়া অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । উনি হয়তো আশা করেন নি আমি এইগুলো বলবো ।
” আমাকে যখন বিয়ে করছেন এই বিছানায় ঘুমানোর অধিকার আমার ও আছে । আমি কোনো সিনেমার নায়িকা নই যে আমাকে বলবেন , তোমার এই বিছানায় জায়গা নেই ” আর আমি চুপচাপ গিয়ে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়বো । আপনার ইচ্ছে হলে একসাথে ঘুমাবেন না হলে আপনি গিয়ে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়বেন ।
রিয়ান ভাইয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম । আমার এখন নাচতে মন চাচ্ছে ! রিয়ান ভাইয়াকে কতগুলো কথা শুনিয়ে এলাম । বাহ বর্ষা তর তো অনেক সাহস ! নিজেই নিজেকে বাহবা দিয়ে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডর রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম । আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে কিছু বলার সুযোগই দিলাম না।
#চলবে