গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি ❤
পর্বঃ০৮
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা
পার্টিতে এক কোনে সোফায় বসে আছে মিনি।হাতে জুসের গ্লাস।মাহিরা ফ্রেন্ডদের সাথে এনজয় করছে।কেউ কেউ নাচতেছে।দূর থেকে কেউ একজন মিনিকে দেখে মুখে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে বলল,আরিব্বাস!মালটা দেখি এখানে।একটুতো মজা নেওয়াই যায়।
এই ছেলেটা হচ্ছে সেদিন গাড়িতে বসে মিনি যার বডি নিয়ে মন্তব্য করেছিল সেই ছেলে।
চুপচাপ বসে আছে মিনি হঠাৎ সামনে কারো উপস্থিতি লক্ষ্য করে সামনে তাকিয়ে চমকে যায় এটাতো সেই ছেলেটা যার বডি দেখে আমি ইয়াক থু বলেছিলাম।খাইছে?এখন আমারে কি করবে আল্লাহ ভালো জানে।
ছেলেটি লালসার দৃষ্টি মিনির দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে বলে,আমি কি তোমার সাথে ডান্স করতে পারি সুন্দরী? ছেলেটার কথা মিনির ভালো লাগলোনা।তাই বলল,নাহ আমি এমনিই ঠিক আছি।
ছেলেটি বলল,আরে চলনা বেবি।লেটস এনজয়।
মিনি এবার বিরক্ত হয়ে বলল,
কতোবার বলবো আপনাকে আমি ডান্স করবোনা? কথা কানে যায় না?
এরকম একটা সুন্দরী সামনে থাকলে কথা কানে যাবে কি করে বলেই মিনির হাত চেপে ধরে।
মিনি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু একটা ছেলের শক্তির সাথে কি আর একটা মেয়ে পারবে?হাত ছাড়াতে না পেরে মিনি কষিয়ে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয় ছেলেটির গালে।
ছেলেটি বাঁকা হেসে বলল মামনির দেখছি অনেক তেজ?আই লাইক ইট।তারপর মিনিকে টেনে বাড়ির বাহিরে নিয়ে যায়।মিনি যেহেতু এক কোনায় ছিল তাই এতোক্ষণ কেউ ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করে নি।
এদিকে মাহিরা মিনিকে খুজছে।বাহিরে স্পর্শ ওয়েট করছে।মাহিরাকে কল করে জানিয়েছে।মিনিকেও কল করেছে মিনি ফোন তুলছেনা।
স্পর্শ অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন মাহিরা আর মিনিকে আসতে দেখলো না।তখন সে ভেতরে যাওয়ার প্রস্তুুতি নেয়।গেইটের ভেতর ঢুকতেই দেখলো একটা ছেলে একটা মেয়েকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর মেয়েটি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।স্পর্শ এগিয়ে গেল।কাছাকাছি আসতেই স্পর্শের চোখ রক্তবর্ণ ধারন করে।কারণ মেয়েটি মিনি।স্পর্শ আর দেরি না করেই ছেলেটির মুখ বরাবর পাঞ্চ করে।মিনি স্পর্শকে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পায়।দৌঁড়ে স্পর্শকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।ওর সারা শরীর কাপছে।যা স্পর্শ বুঝতে পারছে।স্পর্শ মিনিকে একপাশে দাঁড় করিয়ে ছেলেটিকে বেধরম মারতে থাকে।মাহিরা আর তিশা মিনিকে খুঁজতে বাহিরে এসে ছেলেটিকে স্পর্শ মারছে দেখে তিশা দৌড়ে এসে ছেলেটিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।স্পর্শ ছাড়ছেনা,মারতে মারতেই বলতে লাগলো,
তোর সাহস কি করে হয় ওকে টাচ করার?ওর সাথে মিসবিহেভ করার?বল।তিশা আর মাহিরা স্পর্শ কথা শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে মিনি কাঁদছে।ওরা বুঝে গেল এখানে কি হয়েছে।তিশা হাত জোর করে বলল,প্লিজ ভাইয়া আর মারবেন না।ও আমার কাজিন হয় এখনি ওকে এখান থেকে বাসায় পাঠিয়ে দেবো।আর কোনো মেয়ের সাথে মিসবিহেভ করার সাহস করবেনা ও।ছেলেটিকে ছেড়ে দিয়ে স্পর্শ বলে মনে থাকে যেন।পরের বার আমার হাতে পড়লে ও আর বেঁচে থাকতে পারবে না বলে মিনিকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।
আর ভয় নেই তোমার।আমি আছিতো।তারপর মাহিরাকে কিছুক্ষণ বকাবকি করলো ও কোথায় ছিলো।এগুলো কিভাবে ঘটলো।মাহিরা ভয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে।কোনো কথা বলছে না।তারপর ওদের দুজনকে নিয়ে স্পর্শ বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।
এদিকে তিশা ছেলেটির দিকে ঘৃণার দৃষ্টি দিয়ে বলতে লাগলো,
ছিঃ ভাইয়া ছিঃ আমি ভাবতেও পারছিনা তুই এরকম একটা কাজ করবি?আমি এক্ষুনি খালামণিকে সবটা বলবো।
ছেলেটি তিশার হাত ধরে অনুনয়ের সুরে বলল,প্লিজ মাকে কিছু বলিস না।মা অনেক কষ্ট পাবে।আই,আই প্রমিস আমি ভালো হয়ে যাবো।
ঠিক আছে বলবনা আমি খালামণিকে।(তিশা)।
থ্যাংকস(ছেলেটি)।
বাড়িতে পৌঁছে কলিং বেল টিপ দিতেই তাহমিনা চৌধুরী দরজা খুলে দেন।মিনির চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে মিনি তোমার চোখ মুখ এরকম লাগছে কেনো?
কেউ কিছু বলার আগেই স্পর্শ বলল,ওর মাথা ব্যথা একটু রেষ্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।স্পর্শ ওর মাকে টেনশন দিতে চায় না তাই আর কিছু বললোনা।
সে কি তাহলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?মেয়েটাকে উপরে নিয়ে যা।বলল তাহমিনা চৌধুরী।
মাহিরা নিজের রুমে,স্পর্শ মিনি ওদের রুমে চলে যায়।মিনিকে ফ্রেশ হতে বলে স্পর্শ ড্রেস নিয়ে গেস্টরুমের ওয়াশরুমে চলে যায়।মিনি থম মেরে বসে আছে।স্পর্শ না আসলে আজ কি হতো ওর সাথ?কিভাবে মুখ দেখাতো সবাইকে?নিশ্চয়ই মরা ছাড়া উপায় থাকতোনা।এসব ভেবেই চোখের পানি ছেড়ে দেয় মিনি।স্পর্শ চেঞ্জ করে রুমে এসে দেখে মিনি এখনো আগের জায়গায় বসে কাঁদছে।ফ্রেশ হয়নি।স্পর্শ মিনির কাছে গিয়ে মিনিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে দুহাতে মিনির গাল দুটো আলতো হাতে ধরে নরম কন্ঠে বলল,
কাঁদছো কেন তুমি? তুমি কি কোনো দোষ করেছো? দোষতো ওই জানোয়ারটা করেছে।তাহলে তুমি কেন কাঁদছো?নিজেকে শক্ত করো।তুমি যতো দুর্বল হয়ে পড়বে আশেপাশের মানুষ রুপি পশুরা ততো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।তুমি দুর্বল নও,একা নও,তোমার পাশে আমি আছি।
মিনি এতোক্ষণ ছলছল চোখে তাকিয়ে স্পর্শের কথা গুলো শুনছিলো।এবার স্পর্শের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে শব্দ করে কেঁদে উঠে।স্পর্শ থামায়না কিছুক্ষণ কেঁদে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।ঠিকই মিনি কিছুক্ষণ কেঁদে শান্ত হয়ে যায়।
স্পর্শ বলল,যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।খেয়ে ঘুমাবে।মিনি এতোক্ষণ চুপচাপ থাকলেও এখন বেশ লজ্জা লাগছে ও কিনা এতোক্ষণ স্পর্শের বুকে ছিলো?ছিটকে সরে আসে মিনি তারপর দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
মিনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসে স্পর্শ। মেয়েটা যে লজ্জা পেয়েছে সেটা ওর মুখ দেখেই বোঝা যায়।
“পরেরদিন সকাল”
ভোর পাঁচটা।চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ।আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।মিনি কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে ফুল গুলো কুড়িয়ে দুষ্টুমি করছে।স্পর্শের ও আজ তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যায়।পাশে তাকিয়ে মিনিকে না দেখে বুঝতে পারে মিনি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেই
আছে।কারণ ভোরে ঘুম ভাঙলেই মিনি গাছটার নিচে চলে যায়।স্পর্শ ও গেলো সেখানে।পেছনে দাড়িয়ে মিনি করা দুষ্টুমি গুলো মনযোগ দিয়ে দেখছে।মিনি পেছন দিকে ফিরতেই স্পর্শকে দেখে মুচকি হাসলো।
স্পর্শ বলল,যাবে আমার সাথে?
মিনি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই স্পর্শ মিনির হাত ধরে টেনে নিয়ে হাটতে শুরু করে।রাস্তায় মানুষ জন নেই। ঢাকা শহরে এতো ভোরে কেউ ওঠে না।গ্রাম হলে হয়তো মানুষের আনাগোনা দেখা যেতো।বেশ অনেক্ক্ষণ নিরবতা পালন করার পর মিনি বলল,সকালের এই স্নিগ্ধ বাতাসের ছোঁয়াটা আমার খুব ভালো লাগে।আগে মাঝেমধ্যেই বাবা/ভাইয়ার সাথে হাটতে বের হতাম।বিয়ের পর আজ আপনার সাথে বের হলাম।
স্পর্শ জবাব দিলো, আমি ও মাঝে মাঝে হাঁটতে বের হই।তপাৎ হচ্ছে আগে একা বের হতাম,এখন বউ নিয়ে।তারপর শব্দ করেই হেসে দিলো। সাথে মিনি ও হেসে উঠলো।
রোদের টুকরো গুলো চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে।আস্তে আস্তে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে।স্পর্শ আর মিনি অনেকটা পথ চলে এসেছে।এখন ফিরে যাবে।পাশাপাশি হেঁটে চলেছে দুজন।
মিনি স্পর্শের টি-শার্ট পেছন দিকে খামছে ধরে রেখেছে।স্পর্শ ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলল,এমন ভাবে খামছে ধরে আছো কেনো?পরে কোনো অঘটন ঘটলে আমার দোষ দিবা।
মিনি দুহাত কচলে আমতা আমতা করে বললো,আসলে ওখানে একটা কুকুর দাঁড়িয়ে আছে।
স্পর্শ কুকুরটির দিকে তাকিয়ে মিনির ভয়ে জড়োসড়ো মুখের দিকে তাকায়।তারপর হু হা করে হেসে ওঠে।তারমানে তোমার সিকরেট ভয় পাওয়ার জিনিস হচ্ছে কুকুর?
মিনি অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।এখনো নখ দিয়ে স্পর্শকে খামছে ধরে রেখেছে।এবার স্পর্শ শক্ত করে মিনির হাত ধরে বলল,কুকুর তোমাকে কিছুই করবেনা।দেখো ও দূরে দাঁড়িয়ে আছে।মিনির ভয়টা কিছুটা কেটে যায়।দুজন মিলে বাসায় চলে আসে।
“গভীর মনোযোগ দিয়ে পদার্থ বইটির ভেতর মুখ ডুবিয়ে রেখেছে মিনি।টেষ্ট পরীক্ষার আর মাত্র কিছুদিন বাকি।মিনি সারাবছর আড্ডা দিয়েই কাটিয়ে দেয়।পরীক্ষার ১০/১৫ আগ থেকেই ওর পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াসনেস বেড়ে যায়।স্পর্শ ল্যাপটপ নিয়ে কিছু একটা করছে।মাঝেমধ্যেই মিনির দিকে নজর দিচ্ছে।কিন্তু মিনির এতোদিকে খেয়াল নেই সে পড়ছে তো পড়ছেই।বিয়ের চার মাস কেটে যাওয়ার পরও মিনির কোনো হেলদোল নেই।যেন কোনো অনুভূতি ওকে গ্রাস করতে পারছেনা স্পর্শের এতো কাছে থেকে ও।”
রাতে ঘুমাতে গিয়েও স্পর্শ দেখল মিনি আসছেনা।এখনো বইয়ের ভেতর মুখ গুজে আছে।ডিনার ও করবে না বলে দিয়েছে।পরে স্পর্শই খাইয়ে দিয়েছে।এবার স্পর্শ বলল,,
সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসো।এখন ঘুমিয়ে পড়ো।
মিনি আসছি বলে বই গোছাতে লাগলো।বই গুছিয়ে স্পর্শের অপর পাশে শুয়ে পড়লো।স্পর্শ অপেক্ষায় আছে কখন মিনি ঘুমিয়ে পড়বে আর ও মিনিকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাবে।কিছুক্ষণের মধ্যেই মিনি ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।স্পর্শ আলতো হাতে মিনিকে বুকে টেনে কপালে অধর যুগল ছুঁইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে থাকে।কবে বুঝবে এই মেয়ে আমার ভালোবাসা।তুমি কি সত্যি বোঝনা?নাকি বোঝার চেষ্টা ও করো না?
দেখতে দেখতে মিনির পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এলো।একদিন পুরো দমে মিনি বইয়ের ভেতর ডুবেছিলো।আজ পরীক্ষার প্রথম দিন।স্পর্শ মিনিকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।মিনি গাড়ি থেকে নেমে স্পর্শকে বায় জানিয়ে কলেজের ভেতর ঢুকে গেলো।স্পর্শের ইচ্ছে হলো মিনির কপালে একটা চুমু একে দিতে।আপাতত ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রেখে গাড়ি ঘুরিয়ে অফিসে চলে যায়।
কলেজে ঢুকেই মিনি আর ওর ফ্রেন্ডরা নিজেদের সিট খুঁজতে থাকে।মিনির সিট যে রুমে পড়েছে ওই রুমে ওর কোনো ফ্রেন্ডর সিট না থাকায় মিনি মন খারাপ করে সিটে বসে পড়ে।সব কিছুই পড়ে এসেছে তাও প্রথম দিন তাই একটু টেনশন হচ্ছে।
চলবে……..