গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি ❤
পর্বঃ০৭
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা
গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে মিনি।চোখ দুটো লাল হয়ে পানিতে টলমল করছে।চোখের পাতা বুঝলেই টুপ করে গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়বে।
কিছুক্ষণ আগে,,,,,,
স্পর্শের একটা মিটিং ছিলো মিনির কলেজ থেকে একটু এগিয়ে গেলে সামনের একটা রেস্টুরেন্টে।ডিলটা অনেক বড় আর স্পর্শ ডিলটা পেয়ে ও গেলো।সেই খুশিতে স্পর্শ ভাবলো মিনিকে কলেজ থেকে নিয়ে একটু ঘুরে আসবে।গাড়ি চালিয়ে স্পর্শ মিনির কলেজের দিকেই যাচ্ছে।গাড়ি চালাতে আশেপাশের গাড়ি দেখছে।হঠাৎ পাশের একটা আইসক্রিম পার্লারের সামনে রাস্তার অপর পাশে মিনিকে দেখলো স্পর্শ।ওরতো এখন ক্লাসে থাকার কথা এখানে কি করছে।
এদিকে মিনি আর তার ফ্রেন্ডরা ক্লাস বাঙ্ক দিয়ে আইসক্রিম খেতে বেরিয়েছে।মাত্রই আইসক্রিম পার্লারের সামনে এসেছে।এবার রোড ক্রসিং করেই পার্লারে ঢুকবে।মিনির ফ্রেন্ডরা ওর পিছনেই আছে।মিনি রাস্তার মাঝখান দিয়ে ছুটলো পার্লারের দিকে।সামনে দিয়ে একটা গাড়ি আসছে মিনির সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।স্পর্শের তো মনে হচ্ছে কেউ কলিজা ছিড়ে ফেলছে এরকম অবস্থা।কোনোরকম দৌঁড়ে গিয়ে মিনির হাত ধরে টেনে রাস্তার পাশে আনে।এনেই সজোরে মিনির গালে থাপ্পড় মেরে দেয়।
“বর্তমান ”
স্পর্শ হাত মুষ্টি বদ্ধ করে চোখ মুক লাল করে দাঁড়িয়ে আছে। মিনির ফ্রেন্ডরা মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক্ষুনি কি হয়ে যেত ভেবেই।মিনি এখনো গালে হাত দিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।
চুপ,একদম কাঁদবেনা ধমক দিয়ে বলল,স্পর্শ। তারপর মিনির হাত শক্ত করে ধরে পার্লারের ভিতর যায়।মিনির ফ্রেন্ডরা স্পর্শের রাগ দেখে সামনে এগোচ্ছে না।মিনি ও খুব ভয় পেয়ে আছে।
স্পর্শ মিনিকে নিয়ে একটি টেবিলে বসে ভেনিলা,চকলেট ফ্লেভারের কতোগুলো আইসক্রিম ওর্ডার করে।এতো গুলো আইসক্রিম ওর্ডার করায় মিনি স্পর্শের দিকে তাকায়।মিনিকে তাকাতে দেখে স্পর্শ শান্ত কন্ঠে বলল,আইসক্রিম খাবে তাইনা?কোনো সমস্যা নেই রিল্যাক্স মুডে বসে আইসক্রিম খাবে।সবগুলো কিন্তু তোমার জন্যই।
স্পর্শের কথাগুলো যতটানা শান্ত তারচেয়ে বেশী ভয়ঙ্কর লাগছে মিনির কাছে।তাই ভয়ে ঢোঁক গিলছে মিনি।
ওয়েটার এসে কতোগুলো আইসক্রিম দিয়ে গেলো।স্পর্শ বলল,শুরু করো,আরো আছে।এগুলো শেষ করলেনা বাকিগুলো খেতে পারবে।
এবার মিনি শব্দ করেই কেঁদে উঠে।মিনির কান্না দেখে স্পর্শ বলল,,
স্টপ ক্রায়িং।একদম কান্না করবে না।তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করো।
মিনির কান্নার গতি আরো বেড়ে গেলো।লোকটা এতো নিষ্ঠুর।মনে কোনো দয়া,মায়া নেই।এইভাবে শাসিয়ে যাচ্ছে আমাকে।
আশেপাশে টেবিলের কয়েকটা ছেলে তাকিয়ে দেখছিল মিনির কান্না মাখা মুখের দিকে।স্পর্শ চায়না তার প্রেয়সীকে এইরুপে সে ছাড়া অন্যকেউ দেখুক,তাই নিজের রুমাল দিয়ে মিনির চোখ-মুখ মুছে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল,
এবার কান্না অফ করো।আর তুমি যতটুকু খেতে পারবে ততটুকুই খাও আমি কিছু বলব না।
এবার মিনি হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল,আপ,,,নি,,,আমা,,কে,, মে,,রে,,ছেন,,ধমক,,দি,,,য়ে,,ছেন।
ওকে আ’ম সরি।প্লিজ আর কেঁদো না।লোকে কি বলবে?সবাই বলবে,ওই দেখো একটা বাচ্চা মেয়ে আইসক্রিমের জন্য কান্না করছে।(মুখটা ইনোসেন্ট করে বলল স্পর্শ)।
মিনি চেঁচিয়ে বলল,আমি আইসক্রিমের জন্য কান্না করছি?
না।একদম না।কিন্তু কি বলোতো সবাই তো তাই ভাববে।(চোখ দুটো ছোটে করে বলল স্পর্শ)।
মিনি আশেপাশে তাকিয়ে স্পর্শকে বলল,আমি শুধু দুটো চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম খাবো।
স্পর্শ বলল,ঠিক আছে।
মিনি আইসক্রিম খাচ্ছে আর আশেপাশে তাকাচ্ছে।স্পর্শ তার প্রেয়সীকে দেখতে ব্যস্ত।মিনি মাঝেমাঝেই এক ব্রু কুচকে তুলছে।মিনির এই এক অভ্যাস খাওয়ার সময় আশেপাশে তাকানো যার ফলে মিনির নাকে, ঠোঁটের পাশে আইসক্রিম লেগে গেছে।স্পর্শ আবারো নিজের রুমাল বের করে মিনির নাক,মুখ মুছে দেয়।আইসক্রিম খাওয়া শেষ করে মিনি আর স্পর্শ গাড়িতে উঠে বসে।গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।মিনি অনেকবার স্পর্শকে জিজ্ঞেস করলো আমরা কোথায় যাচ্ছি।কিন্তু স্পর্শ বলছেনা।চুপ করেই আছে।স্পর্শ কথা বলছেনা বলে মিনি গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।যা দেখে স্পর্শ মুচকি হাসে আর কিচুক্ষণ পরপর মিনিকে দেখছে।এক সময় গাড়ি এসে থামে একটি নদীর ধারে।মিনি এতোক্ষণ গাল ফুলিয়ে থাকলেও এখন বেশ উচ্ছাসিত হয়েই গাড়ি থেকে নামে।
স্পর্শ হালকা হেসে বলল,জায়গাটা পছন্দ হয়েছে?
মিনি এক্সাইটেড হয়ে বলল,,খুব পছন্দ হয়েছে।তারপর দৌঁড়ে নদীর পাড়ে গিয়ে দুহাত মেলে চোখ বন্ধ করে প্রকৃতির স্বাদ নিতে থাকে।এখানে যে কেউ আছে সেই খেয়াল মিনির নেই।স্পর্শ বুকের সাথে দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে মিনিকে দেখছে।
কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে গেলো।মিনি এখানে একা নয় এই কথা মাথায় আসতেই মিনি লজ্জায় মিইয়ে যায়।স্পর্শ শক্ত কন্ঠে বলল,লজ্জা পেতে হবেনা তুমি তোমার নিজের মতো করে সময়টাকে উপভোগ করো।এবার মিনি একটু স্বাভাবিক হয়।
তারা দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে থাকে।এভাবে বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর লাঞ্চ টাইম হয়ে যাওয়ায় দুজনে একটা রেস্টুরেন্টে এসে লাঞ্চ সেরে নেয়।আবারো ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে মিনি,স্পর্শ।সারাদিন বাইরে কাটিয়ে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে দুজনে।
স্পর্শ ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।তাই মিনি মাহিরার ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই মাহিরা মিনিকে বলল,ভাবি কাল আমার ফ্রেন্ডর বার্থডে পার্টি আছে।তুমি কিন্তু আমার সাথে যাবে।
এই মাসে দেখি সবার বার্থডে। আমার ফ্রেন্ডের ও এই মাসেই বার্থডে গেছে।তো তুমি একাই যাওনা আমার যাওয়ার কি দরকার।(মিনি)
প্লিজ ভাবি না করো না।দেখো বাবা,মা আমাকে একা যেতে দিবে না।ভাইয়াতো একদমই যেতে দেবে না।প্লিজ ভাবি,প্লিজ,প্লিজ।(করুন সুরে বলল মাহিরা)
আচ্ছা ঠিক আছে।আমি এখন যাই অনেক টায়ার্ড লাগছে বলে মিনি নিজেদের রুমে চলে আসে।এসে দেখে স্পর্শ ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসে কাজ করছে।আজকে সারাদিন ঘোরাঘুরির কারনে কাজ করতে পারেনি স্পর্শ।তাই কিছুটা কাজ এখন বসেই করে নেবে।স্পর্শকে কাজ করতে দেখে মিনি এক মগ কফি করে এনে স্পর্শর সামনে রাখে।স্পর্শ চোখ তুলে তাকিয়ে এক মগ কফি দেখে মুচকি হেসে কফির মগটা হাতে নেয়। এখন এক মগ কফি খুব প্রয়োজন ছিলো স্পর্শের।কফির মগে এক চুমুক দিয়ে ল্যাপটপের দিকে নজর রেখেই স্পর্শ বলল,নিজের জন্য বানালে না যে ?
হাই তুলে মিনি বলল,
আমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে।আমি ঘুমাবো তাই আর নিজের জন্য কফি করি নি।তারপর মিনি খাটে এসে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
রাত এগারোটা বাজে।মিনি এখনো ঘুমাচ্ছে।স্পর্শ অনেকবার ডেকেছে ডিনার করার জন্য।মিনির বারবার এক কথা ও এখন ঘুমাবে,স্পর্শ যাতে ওকে ডিসটার্ব না করে।স্পর্শ সবার সাথে ডিনার করে মিনির খাবারটা উপরে নিয়ে এসেছে।সেই কখন থেকে ডেকেই যাচ্ছে কিন্তু মিনির ওটার নাম নেই।
হাতে হ্যাঁচকা টানে ঘুম থেকে উঠিয়ে মিনিকে বসিয়ে দিলো স্পর্শ।বিরক্তিতে চোখ,মুক কুচকে ফেলে মিনি।ওর এখন ইচ্ছা করছে স্পর্শের সব চুল ছিড়ে ফেলতে।
স্পর্শ বলল,আমার চুল পরে ছিড়তে পারবে আগে খেয়ে নাও বলে মিনির মুখের সামনে ভাতের লোকমা তুলে ধরে স্পর্শ।মিনি একটুও অবাক হয়না এই ভেবে যে স্পর্শ কিভাবে ওর মনের কথা বুজলো।কারণ মাঝেমধ্যেই এরকম হয়।প্রথম প্রথম অবাক হলেও এখন বিষয়টা ওর কাছে স্বাভাবিক লাগে।কোনো কথা না বলে ভাতের লোকমা মুখে তুলে নেয় মিনি।ও জানে স্পর্শ এখন ওকে খাবার খাইয়েই ছাড়বে।তাই শুধু শুধু গায়ের জোর খাটিয়ে লাভ নেই।খাওয়া শেষ হতেই স্পর্শ মিনির মুখ মুচে দেয়।আগে থেকে মিনি আর স্পর্শ সম্পর্কটা শত্রু থেকে বন্ধুতে পরিণত হয়েছে।মিনি ভাবে স্পর্শ হয়তো বন্ধুত্বের খাতিরে ওর কেয়ার করে।মিনি তো আর জানে না স্পর্শ তাকে ভালোবাসে।স্পর্শ খাবারের প্লেট রান্নাঘরে রেখে এসে মিনির পাশে শুয়ে পড়লো। এখন দুজন দুই প্রান্তে হলেও পরে দেখা যায় ঠিকই মিনি স্পর্শের বুকে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।
“সকাল”
রান্নাঘরে সবার জন্য ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে মিনি।তাহমিনা চৌধুরীর কাছ থেকে মোটামুটি রান্নাটা শিখে নিয়েছে।যদিও রান্না সবসময় তাহমিনা চৌধুরী নিজেই করেন,মাঝেমধ্যে মিনিও অবসর পেলে মিনিও রান্না করে।
ব্রেকফাস্ট তৈরি করে রুমে যায় মিনি,ঘামে পুরো চিপচিপে হয় আছে।স্পর্শ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মিনির অবস্হা দেখে তাড়াতাড়ি খাটে বসিয়ে দিয়ে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দেয়।
মিনি আর স্পর্শ বেরিয়ে পড়ে।মিনি কলেজে আর স্পর্শ অফিসে যাবে।
সন্ধ্যায় মিনি আর মাহিরা বেরিয়ে পড়ে মাহিরার ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে।তাহমিনা চৌধুরী স্পর্শকে বলে দিয়েছে ওদেরকে আসার সময় বাসায় নিয়ে আসতে।স্পর্শ এখনো অফিসে তা না হলে স্পর্শই ওদের দুজনকে ড্রপ করে দিতো।মাহিরা একটা লাল রঙা গ্রাউন পড়েছে।চুলগুলো উঁচু করে ক্লিপ দিয়ে আটকানো।মুখে ভারী মেকাপ।ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে জুয়েলারি পড়েছে।মেয়েটা এমনিতেই সুন্দরী,এখনতো সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে।রিজু এখানে থাকলে নির্ঘাত তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলতো।মিনির কথা আর কি বলল,,ও একটা ব্রাউন কালার গ্রাউন পড়েছে, স্ট্রেট চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া।ম্যাচিং জুয়েলারি,মুখে হালকা মেকাপ,এতেই যেন মিনির সৌন্দর্য উপছে পড়ছে।তাহমিনা চৌধুরী দুজনকেই নজর টিকা লাগিয়ে দিলেন,কারো নজর যেন না লাগে আমার মেয়েদের উপর।তারপর দুজন গাড়িতে চড়ে বসে।গাড়ি গিয়ে থামে মাহিরার ফ্রেন্ডের বাসায়।বাড়িটা অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।মিনির হাত ধরে মাহিরা ভেতরে নিয়ে যায়।বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে।হাতের গিফট বক্সটি তিশার(মাহিরার ফ্রেন্ড) হাতে ধরিয়ে দিয়ে মিনির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
মিট মাই সুইস ভাবি।আর ভাবি ও হচ্ছে আমার বেষ্টু তিশা(মাহিরা)।
হায়,,, (মিনি)
হ্যালো ভাবি(তিশা)
তারপর ওরা সবাই কথা বলতে লাগলো।একটু পরই কেক কাটা শুরু হবে।
চলবে…….
(বিঃদ্রঃ রিচেইক করা হয় নি।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং💞)