গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি❤
পর্ব:০২
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা
মিনি হেলতে দুলতে রুমে ঢুকে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে চুল আছড়াতে থাকে হঠাৎ চোখ যায় স্পর্শের দিকে স্পর্শ ওর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে তখনি মিনি মুখ বাকিয়ে বলে উঠলো,
আমার কি রূপ বেয়ে বেয়ে ঢক পড়ে যাচ্ছে নাকি,যদি তাই হয় তো একটা বোতলে ভরে রাখেন
মিনির কথায় ধ্যান ভাঙে স্পর্শের ধ্যান ভাঙতেই স্পর্শ বলল,কি আমার রূপের বাহার যেই রূপে মানুষ হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে নেহাৎ আমার হার্ট স্ট্রং বলে বেঁচে আছি।
😡😡😡(মিনি)
ভাবি মা ডাকছে তাড়াতাড়ি নিচে আসো তোমরা কেউ এখনো ব্রেকফাস্ট করেনি বলে মাহিরা আর দাঁড়ালো না
আসছি বলে মিনি বেরুতে গেলেই স্পর্শ বলে বিছানা গুছিয়ে তারপর যাও
মিনি চোখ দুটি সরু করে বলল যে পরে ঘুম থেকে উঠে নিয়ম অনুযায়ী তাকেই বিছানা গোছাতে হয়,সো বিছানা গুছিয়ে তারপর নিচে আসবেন,,,,,ওকে…..?
আমি কি ঘুমিয়েছি নাকি আমি তো যাষ্ট কোমরটা সোজা করতে একটু শুয়ে ছিলাম (স্পর্শ)
So what…..?বিছানা আপনি গোছাবেন বলেই মিনি গটগট করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে
এদিকে স্পর্শ রাগে ফেটে পড়ছে এই পুচকে মেয়ের এত সাহস আমাকে মিশান চৌধুরী স্পর্শকে আদেশ দিয়ে যায় এর ফল তোমাকে ভোগ করতে হবে আর বিছানা তুমিই গোছাবে বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
মিনি নিচে নামতেই তাহমিনা চৌধুরী বলে উঠলো একি মামনি তুমি সাজোনি কেনো….?
ভালোলাগছে না পরে সাজবো আন্টি
কে তোমার আন্টি….?মা বলে ডাকবে বুঝতে পেরেছো(তাহমিনা চৌধুরী )
জ্বি
স্পর্শ কই…..?বলে উপরে তাকাতেই স্পর্শকে নামতে দেখলো তাহমিনা চৌধুরী
সবাই এক সাথে খেতে বসেছে স্পর্শ চুপচাপ খেয়েই যাচ্ছে কোনো কথা বলছেনা আর মিনি একটু খাচ্ছে তো একটু সবার দিকি তাকাচ্ছে
কিছুক্ষণ নিরবতার পর স্পর্শের বাবা মিনিকে উদ্দেশ্য করে বললেন এখানে তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাতো মামনি….?সমস্যা হলেই আমাকে বলবে
উত্তরে মিনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো জ্বী না আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না আর কোনো সমস্যা হলেই তোমাকে অবশ্যই জানাবো।
খাবারের পর্ব শেষে তাহমিনা চৌধুরী বলে উঠলো মিনি মামনি তুমি আমার ঘরে এসো
মিনিও সম্মতি দিয়ে তাহমিনা চৌধুরীর পেছন পেছন ওনার ঘরে গেলেন
তহমিনা চৌধুরী একটা লাল রঙা কালো পাড়ের একটা সিল্কের শাড়ি আর কিছু গহনা মিনিকে দিয়ে বললেন,
এগুলো পড়ে রেডি হয়ে নাও একটুপর তোমাকে অনেকেই দেখতে আসবে।
মিনি ও সায় জানিয়ে নিজেদের ঘরে এসে আগে নিজের সমস্ত জামাকাপড় আলমারিতে রেখে দিয়ে শাড়ি আর গয়না গুলো পরে চোখে আইলাইনার আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিয়ে রেডি হয়ে যায় মিনি কাজল খুব কমই পড়ে।
নিচে নামতেই কতগুলো মহিলা এসে মিনিকে ওনাদের মাঝখানে বসিয়ে দেন। কেউ কেউ প্রসংশা করছে আর কেউ খোঁচাতে ব্যাস্ত
ওমা মেয়ের গায়ের রং দেখি চাপা
আর স্পর্শ ফকফকা ফর্সা ওর সাথে কি এই মেয়েটাকে মানাবে…..? (পাশের বাসার এক মহিলা বলে উঠলো)
মাইশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিনি বিরক্তি হয়ে মুখে হাসি রেখে বললো আন্টি তাহলে আপনার মেয়েকেই বিয়ে দিতেন।
আরেক মহিলা বলল ওমা মেয়ে দেখি মুখে মুখে তর্ক কর
মাইশা বলল আন্টি ও তো ঠিকি বলেছে
মহিলাটি বলে উঠলো এখন এসব বলে মাথায় উঠাচ্ছো পরে দেখবে এই মেয়ে তোমাদের নাক কান কাটবে
মিনি এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও গরমে অবস্থা খারাপ এই মহিলাদের ঘ্যানঘ্যান তো আছেই তাই মাইশাকে চিৎকার করে বললো আপু আমাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দাওতো
সবাই বিষ্ময়ে হা করে আছে যেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য দেখছে
এই মেয়ে বড় ননদকে পানি দিতে বলছে কি ডেঞ্জারাস মেয়ে
মাইশা বলল,আন্টি আপনাদের তো বউ দেখা শেষ এবার আসতে পারেন
মহিলাগুলো অপমানে নাক সিটকে চলে গেলো
তুমি কিছু মনে করো না ওনাদের কথায় (মাইশা)
মিনি বললো,ধুর উনাদের কাজই এটা বলে হেসে দিলো
সাথে সাথে মাইশা ও হেসে উঠলো।আচ্ছা তুমি গিয়ে রেষ্ট করো বিকেলে তোমাকে সাজাতে পার্লার থেকে লোক আসবে সন্ধ্যায় রিসিপশন
ঠিক আছে বলে মিনি ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়তে গিয়ে দেখলো স্পর্শ বিছানা গোছায়নি ও আর কিছু না করেই এক ঘুম দিলো।
স্পর্শ সকালে ব্রেকফাস্ট করেই বেরিয়েছে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে,বন্ধুরা কেউ জানেনা বিয়ের কথা ও ভেবেছিলো বলবে না কিন্তু একদিন না একদিন ঠিকই জানবে তখন আর ওর রক্ষে থাকবেনা তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব বললো,
বন্ধুরা সবাই ওকে চেপে ধরলো পার্টি দেওয়ার জন্য, ওর বন্ধু রেহান বললো,পার্টি পরে হবে আগে ভাবি দেখবো চল
স্পর্শ বলল,রাতে রিসিপশন তখন দেখতে পারবি
সবাই সম্মতি দিলো
ঘুম থেকে উঠেই মিনি অবাক কারণ ওর সব জামাকাপড় নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,ও বুঝতে পারলো এটা কার কাজ
ও স্পর্শ বলে চিৎকার করে উঠলো। স্পর্শ এতক্ষণ শাওয়ার নিচ্ছিলো মিনির চিৎকারে বুঝতে বাকি নেই মিনি কেনো চিৎকার করছে
স্পর্শ আস্তে আস্তে গোছল সেরে প্রায় ত্রিশ মিনিট পর বেরিয়ে আসে, এর মাঝে মিনি অনেকবার দরজা ধাক্কা দিয়েছে।
স্পর্শ বেরুতেই মিনি তেড়ে গেলো স্পর্শের সামনে, গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল আমার জামাকাপড় নিচে ফেললেন কেন….?
আমার আলমারিতে তুমি জামাকাপড় রাখলে কেন…..?(স্পর্শ)
তো আমি কোথায় রাখবো (মিনি)
ফ্লোরে,ব্যালকনিতে যেখানে ইচ্ছা সেখানে রাখো আমার কিছু যায় আসে না (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল স্পর্শ)
মিনি রেগে গিয়ে বলল,আমার কথা আমাকেই শোনাচ্ছেন…?
😁😁😁
এবার মিনি তেড়ে গিয়ে আলমারি থেকে স্পর্শের সব জামাকাপড় নিচে ফেলে দিয়েছে
স্পর্শ রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলেছে চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে, মিনি এতক্ষণ রেগে গেলেও এখন স্পর্শকে দেখে প্রচুর ভয় করছে।স্পর্শ আচমকা মিনির৮
হাত মুচড়ে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নেয়।হাতের ব্যাথায় কুকড়ে উঠে “আহহ” বলে মৃদু চেঁচিয়ে উঠে মিনি
স্পর্শের তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই এবার আর সহ্য করতে না পেরে স্পর্শের পায়ে হিল দিয়ে চেপে ধরলো
পায়ের ব্যাথায় স্পর্শ সিটকে সরে গেল,রেগে ক্রুদ্ধ হয়ে স্পর্শ বলে তোমার সাহসের তারিপ করতে হয় তুমি আমার সাথে পাঙ্গা নিতে চাইছো।
সাহসের কিছুই এখনো দেখেননি সবেতো শুরু তাই ভালো হবে আমার সাথে লাগতে না আসলে (মিনি)
স্পর্শ অবাক হচ্ছে এই মেয়ের সাহস দেখে রেগে রুমের সব জিনিস ভাংচুর করতে শুরু করে
মিনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের জামাকাপড় তুলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে যেন কিছুই হয়নি
স্পর্শের এখন নিজের উপরই রাগ লাগছে কেন যে এই মেয়ের জামাকাপড় ফেলতে গেলো…?
মাথার চুল দু’হাতে চেপে খাটে বসে পড়লো।
মিনি একঘন্টা সময় ধরে শাওয়ার নিয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুচতে মুচতে ঘরে প্রবেশ করে স্পর্শকে উদ্দেশ্য করে বলল এগুলো পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করুন যে কেউ রুমে চলে আসতে পারে ।
স্পর্শ কিছু না বলে উঠে ব্যালকনিতে চলে যায় আপাতত এই মেয়েটার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নাই
বিকালে
পার্লার থেকে লোক এসেছে মিনিকে সাজাতে পার্পল কালার গর্জিয়াস শাড়ি,ভারি গয়না,চুল গুলো স্টাইল করে সেট করা,সাথে ভারি মেকাপ,যেহেতু আজ রিসিপশন তাই গর্জিয়াস সাজে আপত্তি করেনি মিনি।
সাজানো শেষে মাহিরা বলল,ওয়াও ভাবি তোমাকে যা লাগছে না ভাইয়াতো চোখই ফেরাতে পারবেনা।
উত্তরে মিনি লজ্জা মাখা হাসি দিলো আর মনে মনে বলল আমার বয়েই গেলো তোমার ভাইকে আমার রুপ দেখাতে,,,হুহ
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে মেহমানরা সবাই এক এক করে চলে এসেছে। বাকি আছে মিনির বাড়ির লোকজন মিনি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কখন ওর ফ্যামিলি আসবে
হঠাৎ চোখ গেলো সিড়ির দিকে
স্পর্শ নেমে আসছে, মিনির সাথে ম্যাচিং করে পার্পল কালার সেরোয়ানি পরেছে বুকের দিকে কালো সুতার ডিজাইন, ব্ল্যাক সুজ,ব্ল্যাক ব্র্যন্ডেড ওয়াচ,চুল সেট করা,ফর্সা ত্বক,সরু নাক,পাতলা ঠোঁট, নাক বরাবর একটা লাল তিল মনে হচ্ছে কোরিয়ান হিরো
ও মাই গড !ও মাই গড! মেরা হার্ট ব্রেক হোগেয়া বলে বুকের ডান পাশে হাত দিয়ে পরে যেতে নেয় মিনি
তখন দু’হাতে কোমর পেচিয়ে ধরে ফেলে স্পর্শ
স্পর্শ বলল ঠিক করে দাড়াতে পারো না
আরে আপনাকে দেখেইতো আমার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম তাহলে নিজেকে সামলাবো কি করে (মিনি)
ওওও আচ্ছা! তো তোমার হার্ট কি ডান পাশে থাকে..?(ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলল স্পর্শ)
মিনি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে জিবনে প্রথম ক্রাশ খাইচিতো তা
ওর কথা শুনে স্পর্শ হেসে দিলো
এনিওয়ে তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে
থ্যাংকস
মিনির পরিবারের সবাই চলে এসেছে সবাইকে দেখে আর রাগ করে থাকতে পারলো না মা বাবা ভাইকে জড়িয়ে ধরে কথা শুরু করে দিলো ওর বান্ধবীরাও এসেছে এসেই শুরু করেছে বাসর ঘরে কি কি হয়েছে
মিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব বলল,মিনির বান্ধবীরা হাসতে হাসতে শেষ ওরা একটু ও অবাক হয়নি কারণ মিনি কিরকম ওরা খুব ভালো জানে। এর মাঝে স্পর্শ ওর বন্ধুদের সাথে মিনির পরিচয় করিয়ে দেয় সবাই বলে উঠলো ভাবিতো মাশাল্লাহ।
মিনির বান্ধবীরা স্পর্শকে দেখে আফসোসের শুরে বলল,এত সুন্দর,হ্যান্ডসাম জিজুর সাথে এসব করা তোর একদম উচিত হয়নি মিনি
ফটোগ্রাফার ছবি তোলার জন্য মিনি আর স্পর্শকে একেকবার একেক পোজ দিতে বলছে, এবার মিনি বলল স্পর্শের গলা জরিয়ে দরতে মিনি একেবারে শক্ত করে স্পর্শের গলা ধরে রেখেছে
গলা পেঁচিয়ে ধরায় স্পর্শের যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে
মিনির দিকে তাকিয়ে বলল গলাটা হালকা করে ধরতে
মিনি দাঁত কেলিয়ে আছে এর অর্থ ও গলা ছাড়বে না
স্পর্শ তখনকার ঘটনায় ওর প্রসংশা করাতে ভেবেছিলো মেয়েটা মনে হয় আর কোনো জামেলা করবেনা স্পর্শতো ভুলেই গেছে ও একটা দস্যি মেয়ে বিয়ে করে এনেছে……..
চলব………
(বিঃদ্রঃ রিচেইক করা হয় নি। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং 💞)