গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি ❤
পর্ব:০১
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা
বিয়ে করেছেন কিন্তু খাটে ঘুমাতে দিবেন না এটাতো হতে পারেনা।এটা কোনো সিনেমা না যে আপনি আমাকে ধমকে বলবেন আর আমি ভয়ে শুড়শুড় করে ফ্লোরে গিয়ে শুয়ে পড়বো জ্বি না আমি কোনো সিনেমার হিরোইন না আমি আর্শিয়া জামান মিনি সো আমি খাটেই ঘুমাবো,,, হুহ
ইউ ইডিয়ট তুমি আমার ঘরে এসে আমার উপর হুকুম চালাচ্ছো,,,,,?এক্ষুনি খাট থেকে নামো আমার খাটে তোমার মতো বেয়াদব মেয়ের কোনো জায়গা নেই(রেগে ক্রুদ্ধ হয়ে কথা গুলো বললো স্পর্শ পুরো নাম মিশান চৌধুরী স্পর্শ)।
আপনি বেয়াদব বেয়াদব না হলে কেউ মেয়েদের সাথে এরকম অভদ্রতামি করে…….?(মিনি)
হোয়াট………? আমি তোমার সাথে কি অভদ্রতামি করেছি(স্পর্শ)
কি করেন নি…..?ঘরে ঢুকেই আমাকে লোভী মেয়ে উপাধি দিলেন আমি নাকি লোভে পড়ে আপনাকে বিয়ে করেছি আরো যাচ্ছে তাই বলেছেন।শেষে কিনা আমাকে খাটে ঘুমাতে দিবেন না এটা কি অভদ্রতা নয়….?(মিন)
বেশ করেছি তোমাকে কথা শুনিয়েছি ধৈ ধৈ করে নাচতে নাচতে বিয়ে করে নিয়েছো একবারো জানার প্রয়োজন মনে করো নি যাকে বিয়ে করছো সে রাজি কিনা(দাঁতে দাঁত চেপে বলল,স্পর্শ)
বিয়েতে যেহেতু রাজি না তাহলে ফ্যামিলিতে জানাতে পারেন নি..?আমার সাথে এখন ঘ্যানঘ্যান করছেন কেনো…..?(মিনি)
এই মেয়ে শুনো আমি বাবা- মাকে বলেছি কিন্তু তারপরে ও আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে তারমানে এই না যে তোমাকে আমি নিজের স্ত্রী হিসেবে মানবো আর তোমার কথা শুনবো(স্পর্শ)
নিজেরটা ষোলোআনা ঠিকই বুঝেন(মিনি)
মানে….?(স্পর্শ)
মানে আমিও কি আর ইচ্ছে করে বিয়ে করেছি…?বাবা-মাই তো জোর করে বিয়ে দিয়েছে না হলে আপনার মতো খাটাশ কে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে আমার ছিলোনা(মিনি)
এই তোর এতো বড় সাহস তুই আমাকে খাটাশ বলেছিস…?চড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দেবো, আর তখন কি বলছিলি আমি তোকে খাটে ঘুমাতে দিচ্ছি না কেনো,,? তুই খাটে ঘুমালে আমি
কোথায় ঘুমাবো….?(অতিরিক্ত রেগে গিয়ে বললো স্পর্শ)
তুই ফ্লোরে,সোফায়, বেলকনিতে যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুমা আমার কিচ্ছু যায় আসেনা(রেগে গিয়ে বললো মিনি)
আমাকে তুইতোকারি করা…..?(দাঁতে দাঁত চেপে বলল স্পর্শ)
আগে যে নিজে বললি সেই বেলায়..?(মুখ ভেংচি কেটে বলল মিনি)
আমি তোমার বড় তাই তোমাকে তুই বলতেই পারি তাই বলে তুমিও আমাকে তুই বলবে….?(অবাক হয়ে বলল স্পর্শ)
ছোটো হয়েছি তো কি হয়েছে ছোটোদের কি কোনো সম্মান নাই….?আপনি আমার সাথে যরকম ব্যবহার করবেন ঠিক সেরকম ব্যবহার আমার কাছ থেকে পাবেন।গট ইট..?(ভাব নিয়ে বলল মিনি)
তুমি তো আচ্ছা ঝগড়ুটে মেয়ে,তোমার সাথে আর কথা বলতে চাই না খাট থেকে নামো আমি ঘুমাবো (বিরক্তি নিয়ে বলল স্পর্শ)
বললাম তো আমি খাটেই ঘুমাবো চুপচাপ সরুন এখান থেকে (আয়েশ করে বসে বলল মিনি)
এবার স্পর্শের প্রচন্ড রাগ চেপে বসলো,
প্রচুর পরিমাণে ঘাড়ত্যাড়া এই মেয়েটা স্পর্শ বলল,এবার কিন্তু সত্যি চড় মেরে সোজা করে দেবো তোমাকে
ওমা আমি কি আপনাকে ছেড়ে দেবো নাকি(মিনি)
তেড়ে এসে স্পর্শ বলল কি করবে তুমি আমাকে মারবে নাকি…?
ইনোসেন্ট ফেস করে বলল মিনি নাতো আমি কেনো চড় মারবো আপনাকে
আচ্ছা তো কি করবে..? (স্পর্শ)
আমি তো যাষ্ট চিৎকার চেঁচামেচি করে সিনক্রিয়েট শুরু করবো বলেই এক শয়তানি হাসি দিলো মিনি
স্পর্শ অনেক ক্লান্ত সারাদিন অনেক ধকল গেছে তাই আর কথা বাড়ালো না চুপচাপ গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো,চোখ বন্ধ করতেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করলো চোখে
এদিকে মিনি বিশ্বজ্বয় করা হাসি হাসছে বেটাকে জব্দ করা গেলো সারা জীবন শুনেছে বউকে ফ্লোরে বা সোফায় ঘুমাতে হয় শয়তান জামাই গুলোর কারনে আর আজ সে ইতিহাস পাল্টে দিয়েছে ভেবেই খুশিতে আটখানা হয়ে নিজেকে বাহবা দিতে থাকলো।
তারপর আজকের ঘটনা গুলো এক এক করে মনে করতে থাকলো,
মিনি আর স্পর্শের পরিবার
একটা বিয়ে বাড়িতে যায়।
স্পর্শের বাবা মামুন চৌধুরী সেখানে গেয়ে তার কলেজ ফ্রেন্ড
আসাদ জামান দেখা পান। খুশিতে আটখানা হয়ে দুই বন্ধু(মামুন চৌধুরী ও আসাদ জামান)কোলাকুলি করেছেন।
কলেজ লাইফে মামুন চৌধুরী তার বন্ধু আসাদ জামানকে কথা দিয়েছে আসাদের মেয়েকে তার ছেলের বউ বানাবে।
মামুন চৌধুরীর দুই মেয়ে এক ছেলে, বড় মেয়ে মাইশা বিবাহিত, তারপর ছেলে অর্থাৎ স্পর্শ, আর ছোট মেয়ে মাহিরা ক্লাস টেনে পড়ে।
আসাদ জামান এর এক ছেলে এক মেয়ে, ছেলে বড় পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তারের পেশায় আছে নাম আদিব জামান,আর মেয়ে আর্শিয়া জামান মানে মিনিই হচ্ছে আসাদ জামানের মেয়ে।
এত বছর পর দেখা হওয়ার পরেও মামুন চৌধুরীর বন্ধুকে দেয়া কথা মনে আছে এখন যেহেতু এখানে একটা বিয়ে চলছে তাই মামুন চৌধুরী বন্ধু আসাদ জামান এর সাথে কথা বলে ঠিক করছেন কাজি যেহেতু আছে আজই ছেলের বউকে ঘরে নিয়ে যাবেন। এদিকে এসব শুনে মিনি,স্পর্শ দুজনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে, স্পর্শ কিছুতেই এখন বিয়ে করবেনা ও মাত্র পড়াশোনা শেষ করে বাবার অফিসে বসেছে একমাস ও হয় নি আর এখন কিনা বিয়ে করতে হবে ও সাফ সাফ না করে দিয়েছে ও বিয়ে করবেনা কিন্তু ওর মা সাফিয়া চৌধুরী ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে অনেক কষ্টে ওকে রাজি করিয়েছে।
অপরদিকে মিনি মাত্র ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে কিছুদিন হলো আঠারোতে পা দিয়েছে ও এখন বিয়ে করতে চায়না এখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া বয়স এখন কিসের বিয়ে।একপ্রকার চিৎকার চেঁচামেচি করা শুরু করে মিনি কিন্তু লাভ হলো না ওর মা থাপ্পড় মেরে ওকে নিয়ে যায় কাজির সামনে। মিনি মাকে একটু ভয় পেলেও বাবাকে মোটেও ভয় পায় না।বাবাকে বলে কিছু হবেনা বাবা যেহেতু নিজেই রাজি তাই চুপচাপ বিয়ে করে নিলো স্পর্শ ও দাঁতে দাঁত চেপে কবুল বলে দিলো।বিয়ে শেষ এবার বিদায়ের পালা মিনি একটুও কাঁদলো না আর না মা -বাবার দিকে তাকালো অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। তারপরও ওর বাবা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই করেছি একদিন ঠিকই বুঝবে,ওর মা ওকে ধরে কাঁদছে মিনি কিছু বলছেনা এর ভেতর আদিল দৌঁড়ে এলো ওর হসপিটালে কাজ থাকায় আসতে পারেনি যখন বাবা ফোন করে বললো ওর ছোট্র পরীটার বিয়ে তখন ছুটে এসেছে ভাইকে দৌঁড়ে আসতে দেখে মিনি ঝাঁপিয়ে পড়ে ভাইয়ের বুকে অঝোর ধারায় কাঁদছে মিনি, আদিলের চোখে ও পানি এটা মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে করুন দৃশ্য। ছেলেদের কাঁদতে নেই যখন তাদের সহ্য করার ক্ষমতা শেষ হয়ে যায় তখন কাঁদে।মামুন চৌধুরী এগিয়ে এসে মিনির মাথায় হাত রেখে বললো মনে করো আজ থেকে আমি তোমার আরেকটা বাবা আর তুমি আমার মেয়ে তোমার কোনো সমস্যা হবে না মা। তারপর মিনিকে নিয়ে মামুন চৌধুরী ও তার পরিবারের সবাই রওনা দেয়, স্পর্শের মা আগেই চলে গেছেন বাসায় সব ঠিকঠাক করতে হবে।স্পর্শ কোনো মতে কবুল বলেই বেরিয়ে গেছে ওখান থেকে রাত বারোটায় বাসায় ফিরতেই কাজিনরা আর ওর বোনেরা জোর করে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়।স্পর্শের মা বাসায় ফিরেই কাছের আত্মিয়-স্বজনদের জানিয়ে দেয় বাকিদের রিসিপশনের সময় ইনভাইট করবে।
ঘরে ঢুকেই বিছানায় সটান হয়ে মিনিকে শুয়ে থাকতে দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় স্পর্শের তাই মিনিকে বিছানা থেকে তুলেই লোভী, খারাপ মেয়ে যাচ্ছে তাই বলে অপমান করে শেষে বলে উঠে মিনি যাতে ওর খাটে না ঘুমায়, তারপরের ঘটনাতে আপনারা জানেনই।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমে তলিয়ে গেলো মিনি বুঝতেই পারলো না।
সকালের স্নিগ্ধ ছোঁয়া,সূর্যের আলো অনেক আগেই ফুটেছে, অনেক বেলা হয়ে গেছে, রাতে জানালার পর্দা টানা হয়নি তাই রোদ টুকরো গুলো এসে পড়ছে মিনির মুখে, বিরক্তিতে ছেয়ে আছে মুখটা, কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করেও লাভ হলো না তাই উঠেই ওড়লো।
ঘুম থেকে উঠেই জানালার দিকে বিরক্তির নজর
চোখ ফেরাতেই নজর পড়লো সোফায় বাকা ত্যাড়া হয়ে শুয়ে থাকা স্পর্শের দিকে আস্তে আস্তে উঠে সোফার দিকে এগিয়ে এসে স্পর্শের দিকে ঝুঁকে হাত দুটি স্পর্শের মুখের কাছে নিয়ে বলতে লাগলো বেটা খারুশ ইচ্ছে তো করে খামছে টকটকে লাল গাল দুটোও টেনে ছিড়ে ফেলি কাল রাতে জানালার পর্দা টানালি না কেনো এখন আমার স্বাদের ঘুমটা ভেঙে গেলো।তারপর রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
এদিকে স্পর্শ হতভম্ব হয়ে আছে, মেয়েটার মাথায় মনে হয় সিট আছে কি বলে গেলো এসব।স্পর্শ মিনির আগেই ঘুম থেকে উঠে,সোফায় ঘুমানোর কারনে কোমর ব্যথা হয়ে আছে তাই পা টান টান করে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিলো, চোখ খুলতে যেয়ে টের পেলো মিনি এদিকে আসছে তাই আর চোখ খোলে নি মিনি কি করে সেটাই দেখতে চেয়ে ছিলো কিন্তু মিনি যে এরকম কিছু করবে স্পর্শ তা মোটেই আশা করেনি।
সোফা ছেড়ে কোমর সোজা করতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো স্পর্শ।
ওয়াশরুমের দরজা খুলে মিনি একটা শাড়ি পরে বেরিয়ে আসে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ গায়ের রং মুখে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে, টানাটানা চোখ, চোখের মনি কুচকুচে কালো, পাতলা ঠোঁট, ঠোঁটের পাশেই বাম গালে একটা ছোট্ট তিল, মায়াবী মুখ,ঘন কালো কোমর ছড়ানো চুল। একেবারে সুন্দরী না হলেও যে কেউ এক দেখাতেই মুখ থেকে মাশাল্লাহ শব্দটি বেরিয়ে আসবে
এতক্ষণ ধরে স্পর্শ মিনিকে পর্যবেক্ষন করছিলো মেয়েটার চেহারা মাশাল্লাহ হলেও স্বভাব আসতাগফিরোল্লাহ,আস্ত একটা জংলী, ঘাড়ত্যাড়া মাইয়া……..
চলবে………