#তোমাকে ঠিক চেয়ে নিবো
লেখা আশিকা
পার্ট ০৫
ঘড়িটা খুব সুন্দর প্রহরের খুব প্রছন্দ হয়েছে। দেখামাত্রই হাতে পড়ে নিয়েছে। মেয়েটার প্রছন্দ আছে বলতে হয়। ঘড়িটার ঘোরে ও এতোটাই ডুবে ছিলো যে বক্সের ভিতর একটা নীল কাগজ ভাজ করা ছিলো ওটা এতোক্ষণ ওর চোখেই পড়েনি।
প্রহর নীল কাগজের উপর হামলে পড়ে ভাজটা খোলে ফেললো,
”
কিভাবে সম্বোধন করলে আপনি খুশি হবেন আমার জানা নেই। তাই বিনা সম্বোধনেই চিঠিটা লিখতে হলো।
এই অত্যাধুনিক যুগে চিঠির চল নেই বললেই চলে। তবুও আমার মত মুখচোরা মেয়ের অকৃত্রিম সাহসের নিদর্শনটা আপনার কাছেই জমা থাক। বোধ করি জন্মের পর থেকে এইটাই আমার প্রথম আর শেষ চিঠি।
জানেনতো বয়ঃসন্ধিকালের গন্ডি পেরিয়ে যৌবনের প্রথম প্রদক্ষেপটা দিয়েছি আপনার হাত ধরেই।
বাস্তবে হয়তোবা না তবুও কল্পনায় আঁকার দুঃসাহসটা দেখিয়েছি । মনের মাধুরী মিশিয়ে জীবনের সমস্ত রং তুলির প্রতিটি আচড়ে আচড়ে হৃদয়ের ক্যানভাসে আপনাকে জীবন্ত করে তুলেছিলাম।
শুনেছি বয়ঃসন্ধিকালের আবেগ, এট্রাকশন নাকি সময়ের সাথে সাথে ফুরিয়ে যায়। এটা নাকি ভালোবাসা নয়। কিন্তু এতো সময় অতিবাহিত হওয়ার পরো, আমার অনুভূতিতে কিঞ্চিৎ পরিমাণ ক্ষয় কেন হলোনা জানিনা।
জানেনতো বিনিময় প্রথা আমার নীতিতে নেই। শুধুই একতরফা ভালোবাসতে চেয়েছি। ভালোবেসেওছি আজীবন ভালোবাসতেও চাই। বিশ্বাস করুন অনুভূতিটা নিজের কাছেই রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু…..
সারাজীবন যে আফসোস থেকে যাবে। বলতে না পারার কষ্টটা যে কুড়ে কুড়ে খাবে..
না পাওয়ার নীলচে বেদনার থেকে এই আফসোস আরো মর্মান্তিক। হয়তো বুঝাতে পারবোনা।
সসর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি। ভালো থাকবেন। আর হ্যা আপনার উত্তর হয়তোবা পেয়ে গেছেন। আর এইটাকে প্রেমপত্র হিসেবে গন্য না করলেও চলবে।
ইতি
এক আকাশ অনুভুতির ধারক
চিঠিটা পড়তে পড়তে ওর মাথার তালু ঘামতে লাগলো। কি সাংঘাতিক পিউ ওকে ভালবাসে।
জীবনে অনেক মেয়েই ওকে ভালোবাসি বলেছে কিন্তু এখনকার মত অনুভুতি ওর আগে হয়নি।
আচ্ছা আমিও কি ওকে ভালোবাসি?
প্রহর মাথা থেকে ব্যাপারটা নিমিষেই ঝেড়ে ফেললো। অসম্ভব পিউকে ওর ভালোলেগেছে তাই বলে ভালবাসা!
ধুর হতেই পারে না। ব্যাপারটা ভালোলাগার উপর চাপিয়ে ও কিছুটা স্বস্তি পেলো।
প্রহরের ফোনটা বেজে উঠে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে। ওর ক্ষনিকের জন্য হলেও মনে হয়েছিলো পিউ ফোন করেছে। কিন্তু না ওকে ভুল প্রমানিত করে ফোনটা স্নিগ্ধা করেছে।
” এই যে দাম্ভিক পুরুষ,
কেমন আছেন?”
” এতোক্ষণতো ভালোই ছিলাম।”
” কেন আপনার কি ডাউট আছে যে এরপর আর ভালো থাকা হবেনা। ”
” না ঠিক তা নয়।”
” আচ্ছা আমি মনে হয় আপনাকে ডিস্টার্ব করছি। রাখছি।”
স্নিগ্ধা কিছুটা আহত হয়ে কথাটা বললো।
” আরে না আমি মোটেও ডিস্টার্ব হচ্ছিনা। আমিতো ফান করেই ওই কথাটা বললাম। ভালো লাগছেতো…।”
” দেখুন আপনার এইসব ফান আমি জাস্ট নিতে পারিনা। সেইদিন আমাকে আপনি যেভাবে পচালেন…
উফ ভাবলেই এখনো গা গুলায়।”
” আচ্ছা একটা কথা বলি রেগে যাবে নাতো।”
” না বলুন নির্ভয়ে বলুন।”
” তুমি আর তিশা একবার আমাদের বাসায় আমার রুমে ঘুমিয়েছিলা তাই না।”
” হুম অনেকবাইতো গিয়েছিলাম।
বিয়ের আগে শ্বশুড়বাড়ী থাকার কপাল কয়জনের হয় বলুন? সেই দিক থেকে বলতে গেলে আমি লাকি কি বলেন!”
” অবশ্যই লাকী। আর যাই হোক হবু বরের বিছানায় মুতো করার এক্সপেরিয়েন্সতো সবার হয়না।
এইদিক থেকে বলতে গেলে তোমার কপাল আছে স্নিগ্ধা সুন্দরী। ”
হি হি করে হাসতে হাসতে কথাটা বললো প্রহর।
ছিঃ ছিঃ ছিঃ কেমন ফাজিল। কবে কোনদিন ওদের বিছানায় মুতো করে ছিলাম সেটা এখনো মনে রেখেছে। আবার হেসে হেসে বলাও হচ্ছে। আল্লাহ আমাকে আসমানে তুলে নাও। কি লজ্জা কি লজ্জা!
না এখন আবার এইটাও জিজ্ঞাস করতে পারে যে,
আমি এখনো বিছানা ভিজাই কিনা? এর বিশ্বাস নেই কি থেকে কি বলে।
আগামী ২৪ ঘন্টা এই অসভ্যটার সাথে আমি কথা বলবো না।
প্রচন্ড রাগে, সীমাহীন লজ্জায় স্নিগ্ধা ফোন কেটে দিলো।
প্রহর আবার দাত কেলিয়ে হাসতে লাগলো।
——————
“প্রতিক্ষা তুই কি সারাদিন এই চুড়িগুলো নিয়েই বসে থাকবি?
অবশ্য তোর খুব একটা দোষ না। চুড়ীগুলো এতো সুন্দর না ধরে উপায়ই নাই।
আচ্ছা সব বাদ দিয়ে প্রহর তোকে এই এতো এতো চুড়ি কেন দিলোরে? বক্স ভর্তি সব কালারের চুড়ি আর চুড়ি।
চুড়ি কিনবেন চুড়ি?”
তিথি চুড়ীর বক্সটা ধরে ঝুকাতে ঝুকাতে বিছানায় ঢলে পড়ে হাসতে লাগলো।
প্রতিক্ষার এই হাসিতে এখন গা জ্বলে যাচ্ছে।
” শোন আমার না একটা ছন্দ মনে পড়ে গেছে। বলি?”
তিথি প্রতিক্ষার দুই বাহু ঝাপটে ধরে কথাটা বললো।
” বলো আর কি বলার বাকি আছে। শুনে ধন্য হই।”
” তোমার হাতে ঘড়ি,
আমার হাতে চুড়ি।
কাল রাতে স্বপ্নে দেখি
তোমার মা আমার শাশুড়ি। ”
তিথি হাসতে হাসতে আবার বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগলো।
প্রতিক্ষা চরম লজ্জা পেয়ে তিথিকে একটা ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে।
তিথি ওর হাত ধরে ফেলে,
” কিরে লজ্জা পেলি নাকিরে।
এ মা গালদুটো লাল হয়ে গেছে। ইশ কি ব্লাশ করছেরে!
প্রহর দেখলেতো একটা কিসসি করে দিতো ইশ আফসোস।”
” তিথি তুই থামবি।”
প্রতিক্ষার ধমকের সুরে কথাটা বলে ওখান থেকে সরে যায়।
চলবে…