#তোমাকে ঠিক চেয়ে নিবো
লেখা আশিকা।
পার্ট ০৭
” মা তোমার চা। নাও ধরো।”
লগ্ন মায়ের দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিতে লাগলো।
রাহেলা বেগম কথাটা না শোনার ভাণ করে কপালে বা হাতের উলটো পিঠ রেখে আবার ভালোমতে শুয়ে পড়লো।
লতিফ হাসেব আড়চোখে বউ এর দিক তাকালেন। রাহেলার এই রুপ তার চেনা। যখন কোন কিছু নিয়ে বেশি টেনশন করে তখন ওর মাথা ঠিক থাকে না। কি থেকে কি করে বসে কে জানে?
” মা তুমি কি চা নিবে না নিবে না। মাত্রইতো বললে আদা চা করে দিতে মাথা ব্যাথা করছে। ”
” হ্যা চেয়েছিলা হাফ ঘন্টা আগে। এতোক্ষন লাগে চা করতে?
চা নেয়ার আগে তুমি আমাকে বলবা এতোক্ষন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কার সাথে কথা বলছিলে?”তীক্ষ্ণ মেজাজে কথাটা বললেন রাহেলা।
” কই কারো সাথেই না। আমিতো কথা বলি নাই আম্মু।”
” ফের মিথ্যে হচ্ছে। এই তোমরা দুই ভাইবোন মিলে পাইছোটাকি আমারে হ্যা? দেখে মনে হয় ভাজা মাছটায় উল্টিয়ে খেতে পারোনা।
আবার তলে তলে তেনা ঠিকি ছিঁড়ো। ”
” মা ভাইয়া কি না কি করছে তারজন্যে তুমি আমাকে তেজ দেখাচ্ছো কেন?”
” এই অসভ্য মেয়েকে আমার সামনে থেকে যেতে বলো।”
স্বামীর দিকে চোখ রাংগিয়ে কথাটা বললো রাহেলা।
” লগ্ন মা তুই এখন যাতো। মায়ের সাথে এইভাবে মুখে মুখে কেউ তর্ক করে।”
শান্ত গলায় মেয়েকে কথাটা বললেন লতিফ সাহেব।
” হ্যা আমি উত্তর দিলে তর্ক হয়ে যায়। যাচ্ছি।” লগ্ন কাঁদোকাঁদো হয়ে চায়ের কাপটা বেডসাইড টেবিলে বেশ জোরে শব্দ করে রেখে ওখান থেকে চলে আসলো।
লতিফ সাহেব উঠে এসে স্ত্রীর পাশে বসে পড়লেন।
চায়ের কাপটা স্ত্রীর হাতে তুলে দিলো।
রাহেলা বেগম স্বামীর হাত থেকে চায়ের কাপটা নিলেন।
” দেখেছো কেমন অসভ্য।”
” হুম। তোমার কি হয়েছে তখন থেকে দেখতেছি। একটু খুলে বলবা?”
” কি খুলে বলবো আমি।
তোমার ছেলে আমার মান সম্মান আর বাকী কিছু রাখবে বলে মনে হয়না।”
” তোমার এইরকম টা কেন মনে হচ্ছে?”
” কেন মনে হচ্ছে?
তোমার ছেলে এখন ময়মনসিংহে কি সাংঘাতিক বুঝতে পারছো।। ওর ছোট মামু ওকে রিক্সায় একটা মেয়ের সাথে দেখেছে। ওর মামু চায়না থেকে যে জ্যাকেটটা এনে দিয়েছে ওইটা নাকি মেয়ের গায়ে। ভাবতে পারছো?”
” কি বলো?
আচ্ছা ওতো স্নিগ্ধার সাথে আবার দেখা ঠেকা করতে যায়নিতো।”
” না।
নির্বিকারভাবে কথাটা বললো রাহেলা।
” তুমি শিউর?”
” হ্যা। স্নিগ্ধার সাথে আমার কথা হয়েছে। প্রহরের সাথে ও মিট করতে চায় কিন্তু ব্যাস্ততার অযুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে গেছে। এ নিয়ে আমি ওকে কিছু বলেছিলাম কালকে।
কিন্তু আমাকে বলেছে এখনতো খুব ব্যাস্ততার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কিছুদিন পর সামার ভ্যাকেশন পড়ে যাবে তখন মিট করে নিবোনি।
দেখোছো এদিকে আবার কোন মেয়ে নিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন ওর দিব্বি সময় আছে।
আমি ওর ওখানেও খোজ নিয়েছি ও নাকি দুই দিনের ছুটিতে আছে। এইবার বল আমি আজাইরা টেনশন করছি।”
” আচ্ছা ওতো এরকম না।”
” হ্যা এরকম নয় বলেইতো ভাবাচ্ছে খুব। কোন মেয়ের পাল্লায় পড়ে এমন মিথ্যে বলা শিখে গেল কে জানে?
উফ আর ভাবতে পারছি না।”
————————————
“এই তোর কি হয়েছেরে? সারাদিন থুম মেরে বসে
ছিলি কিচ্ছু বলি নাই। এখনতো ছেড়ে দিবো না। ঝটপট উত্তর দে নইলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।তিথি প্রতিক্ষার গায়ের কাথা টান দিয়ে সরিয়ে দিতে দিতে কথাগুলো বললো।
প্রতিক্ষা চোখ ছোট ছোট করে তিথির দিকে তাকালো। বেশিক্ষণ আর তাকিয়ে থাকা হলোনা হাচি দিতে দিতে অবস্থা খারাপ হওয়ার যোগাড় হলো।
” কি রে তোর মুখে কি ডার্লিং এর কিস এখনো লেগে রয়েছে যে কথা বলতে পারছিস না। “চোখ মুখ বাঁকিয়ে কথাগুলো বললো তিথি।
” তিথি তুই দেখতে পাচ্ছিস যে, আমার বারবার হাচি আসছে কথা বলতে পাচ্ছি না। তাও আবোলতাবোল বলে চলেছিস..।”
” হুম বাইরেরটাতো দেখতেই পাচ্ছি।
কিন্তু তুই যে মনে মনে আধমরা হয়ে আছিস তার কি কারণ?”
প্রতিক্ষার যে খুব খারাপ লাগছে। যদি দুচোখ ভরে কাঁদতে পারতো তাহলে হয়তো একটু হালকা হয়া যেত। ইচ্ছে করছে তিথির কাছে সবটা বলতে। কিন্তু কি করে বলবে ও….
না ও পারবে না বলতে না পারবে কাঁদতে।
ওরা যখন ইউনিভার্সিটির গেটে তখন প্রহর কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে অনেকটা সময় নিয়ে ওকে বলে,
” আজকে যা হলো তারজন্য আমি সীমাহীন লজ্জিত । জানিনা কেন তুমি আমার সামনে থাকলে আমার পুরা পৃথিবী উলটপালট হয়ে যায়। আমি করতে চাই একরকম আর হয়ে যায় অন্যরকম ।
আজকের দিনটা এক্সিডেন্ট হিসেবে ভুলে যেও। আর যদি পারো ক্ষমা করে দিও।”
———————————–
আজকাল প্রহরের সবকিছু বড্ড এলোমেলো লাগে। ওর রোজকার জীবনের হিসেব বড় গোলমেলে হয়ে গেল।কোন কিছুতেই মন বসাতে পারেনা। ক্লাসে সবসময় স্টুডেন্টদের সাথে রাফ বিহেভ করা শুরু করে দিলো। বারবার সোজা ম্যাথ এর ইকুয়েশনেও ভুল হতে লাগলো। ওর সব ফ্যানরা ওর এইসব ব্যাবহারা খুবই হতাশ আর চিন্তিত অনুভব করলো। আগের আর বর্তমান প্রহরের মাঝে অনেক তফাৎ তারা খুজে বের
করলো।
মাথা থেকে যত প্রতিক্ষার ভুত নামাতে চায় ততো ঝাঁকিয়ে বসতে লাগলো। ওর জীবনে কোন মেয়ের সাথে এই ধরনের কিছু করার ইচ্ছে হয়নি। উহ শুধু প্রতিক্ষাকে দেখেই তার চরিত্রের এতো অধঃ পতন কি করে ঘটতে পারে? ভাবতে বসলে ওর মাথা ছিড়ে যায়। বাকী জীবন নিজের কাছে নিজেই অপরাধী হয়ে রইলো।
ওর খালি একটা কথাই মনে হয়। বন্ধুর বোনের সাথে এইটা ও কি করে করতে পারে?
প্রিয়ম জানতে পারলে কি ভাববে? পিউ যতোই ওকে ভালোবাসি বলুক ও কেন দূর্বল হলো। আর যাই হোক বন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও করতে পারবে না। তাছাড়া প্রিয়ম এর বাড়ী আর ওর বাড়ী পাশাপাশি এলাকায়। প্রিয়মের বাবা মা ওকে খুব ভালো বলেই জানে। ওনারা যদি জানে যে ওনাদের মেয়ের সাথে ওর কোন সম্পর্ক আছে তাহলে সবাই কি ভাববে?
ওর মান সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। কোন মতেই ওর সাথে পিউ এর কোন সম্পর্ক হতে পারে না।
ভাবনাকে নিজের মধ্যে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলো না। কেমন যেন দম আটকে যাবার মতো অবস্থা হলো।
প্রহর শত চেষ্টা করেও নিজেকে আটকাতে পারলো না। নম্বরটা ঠিকি ডায়াল করলো।
——————
——————
” প্রতিক্ষা দাঁড়াও?”
রিজভী এক দৌড়ে প্রতিক্ষার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
” বলুন কি বলবেন।”
নির্বিকারভাবে কথাটা বলে প্রতিক্ষা হাতে রাখা কাপড়চোপড় ভর্তি ব্যাগটা ফ্লোরে নামিয়ে দিলো।
” ভালোভাবে যেও।
আর সেদিনের জন্য আমি সরি। আসলে তোমাকে না বুঝে এরকম কিছু করতে চাওয়াটা উচিৎ হয়নি। পারলে ক্ষমা করো। আমি খুবই লজ্জিত।”
” ইটস ওকে স্যার। আমি কিছুই মনে করিনি। ”
এখন অন্তত স্যার না ডাকলেও পারতে। কথাটা মুখে এনেও বলার সাহস পেলোনা রিজভী।
“আশা করি শীঘ্রই দেখা হচ্ছে। ” রিজভী ক্লোজ আপ মার্কা হাসি ঝুলিয়ে কথাটা বললো।
প্রতিক্ষা একটা মুচকি হাসি দিয়ে স্যারকে টাটা বলে দিলো।
সামার ভ্যাকেশনে বাড়ী যাচ্ছে প্রতিক্ষা। অনেকদিন মায়ের আঁচলে মুখ লুকানো হয়নি। অন্তত আজকে তো ওর মায়ের বুকে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে।
প্রহরকে ও কিছুতেই বুঝতে পারছেনা। একবার মনে হয় ভালবাসে পরক্ষনেই মনে হয় মিছে সব মিছে। আসলে মানুষ যা পায় তা চায় না। আর যা চায় তা পায়না। হয়তোবা এটাই নিয়তি।
“সারাজীবন এই বৃষ্টিভেজা দিনটার কথা আমার মনে থাকবে। ভুলতে পারবোনা কোনদিনও। তুমি আমার হও না বা না হও এই সুখের অনুভুতিটাকে এক্সিডেন্ট হিসেবে ভাবতে পারবোনা।
বাহ্ সরি বলে দিলে সব শেষ হয়ে গেলো।পারো ও তোমরা।
ক্ষমা করে দিও আজকে তোমাকে রিফিউজ করার জন্য।
যে আমাকে ভালোইবাসেনা এটা জানার পরো তারসাথে বারবার হ্যাংলার মত দেখা করতে যাওয়ার ইচ্ছে আর মনের জোড় কোনটাই আমার নেই। তোমাকে না করায় কতোটা দহনে আমি জ্বলছি তা হয়তো বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই। কিন্তু এতোটা সহজলভ্য যে আমি নিজেকে বানাতে পারবোনা আমার যে একটা আত্নসম্মানবোধ আছে নিজেকে এইভাবে বিকিয়ে দিতে পারবোনা।”
নিজের মনে নিজেই কথা বলে চলেছে প্রতিক্ষা। হঠাৎ বাসটা বেশ জোড়ে সোড়েই দুলে উঠায় ওর ভাবনার দরজায় হানা পড়ে।
চলবে..