#তোমাকে_চাই💖
#কলমে_অনন্যা(অনু)
#পর্ব_০৬
(৯)
“তন্ময় কেন এমন করলে আমার সাথে?কি ক্ষতি করেছিলাম আমি তোমার?কেন করলে?আমি তো তোমায় ভালোবাসতে শুরু করলেছিলাম!তবে কেন এমন করলে?কেন স্বপ্ন দেখালে?আমি তো ঠিক করে নিয়েছিলাম কাউকে এ মনে জায়গা দেব না!কিন্তু তুমি ঠিক জায়গা করে নিলে।তোমাকে দেখে নিজের সিদ্ধান্ত বদলে ফেললাম আর তুমি এভাবে ছেড়ে চলে গেল?যদি ছেড়ে যেতে চেয়েছিলে তাহলে কেন এলে আমার জীবনে?কি নিয়ে থাকবো আমি?বলো কি নিয়ে থাকবো?কি করে বাঁচব আমি?এতো বড় ধোঁকা কেন দিলে?কি করেছি আমি?যদি এই ছিল তোমার মনে তাহলে কেন সেদিন এতো স্বপ্ন দেখালে?কেন আমার জন্য এতো কিছু করলে?কেন?বলো কেন?”,তরু চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলতে লাগল একসময় মেঝেতে ধপ করে বসে পড়ল।বাড়িতে কেউ নেই সকলে আশীর্বাদের কেনা কাটা করতে গেছে।তাই কেউ জানলো না তরুর কষ্টটা কেউ শুনতেও পারলো না তরুর কান্না।
*
দুদিন আগে,
সকালে তরু তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হচ্ছে কলেজ যাবে। তখন তন্ময় কল করল।
“তুমি কি রেডি?”,কল রিসিভ করতেই তন্ময় বলল।
“হ্যাঁ হয়েছে গেছে।শুধু ব্রেকফাস্ট করবো”,তরু বলল।
“আচ্ছা তাড়াতাড়ি করো আমি রেব হচ্ছি তন্নীকে নিয়ে”, তন্ময় বলল।
“ঠিক আছে”,তরু কল কেটে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো।
তন্ময়দের বাড়িতে পুজোর হওয়ার পর থেকেই তন্ময় তন্নী আর তরুকে কলেজে নিয়ে যায় এবং নিয়ে আসে।যদি কোনদিন কলেজ থেকে নিয়ে আসতে না পারে তবে গাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
তন্নী আর তরু এক কলেজে পরে।তন্ময়কে তরু না করেছিল নিয়ে যেতে,নিয়ে আসতে কিন্তু তন্ময় শোনেনি।আগে তরু স্কুটি নিয়ে কলেজে যেত এখন আর যায় না।অনিমেশ বাবু অন্য কলেজের প্রফেসর কলেজটা দূরে জন্য তরুকে সেখানের কলেজে ভর্তি করেননি।তন্ময় মনে করে দিয়া তরুর ক্ষতি করবে তাই তরুকে কোথায়ও একা ছাড়ে না।
তন্ময় আর তরু এখন অনেকটা ফ্রি হয়েছে।একে অপরকে সব কথা শেয়ার করে।সারাদিন কে কি করলো তা রাতের বেলায় ফোন করে সব বলে।তরু এখন তন্ময়ের প্রতি খুব দুর্বল হয়ে গেছে।ভালোবাসে ফেলেছে তন্ময়কে কিন্তু তন্ময়কে কিছু বলেনি।যদিও তন্ময় বুঝে গেছে।
কিছুক্ষণ পরে তন্ময় চলে আসে।তরুও চলে যায় ওদের সাথে।
কলেজে,
তন্নী আগে গাড়ি থেকে নেমে গেছে।তরু নামতে যাবে তখন তন্ময় তরুর হাত ধরে আটকে দেয়।
“আজকে সন্ধ্যায় বেরোবো আর কলেজ ছুটি হলে গাড়ি পাঠিয়ে দেব গিয়ে রেস্ট নিয়ে রেডি থাকবে”,মুচকি হেসে বলল তন্ময়।
“মানে?কোথায় যাবো?”,হটাৎ তন্ময়ের এমন কথা শুনে তরু খানিকটা অবাক হয়ে বলল।
“গেলেই জানতে পারবে,।রেডি থেকো”,তন্ময় বলল।
“আচ্ছা”,মাথা নাড়িয়ে বলল তরু।
তরু গাড়ি থেকে নেমে কলেজের ভেতরে চলে যায় আর তন্ময় অফিসে।
“দাদার সাথে কথা হল?”,তন্নী মুচকি হেসে বলল।
“হুম হলো”,মৃদু স্বরে বলল তরু।
“যাবে তো রাতে?”,তন্নী বলল।
“মানে তুমি জানো?”,অবাক হয়ে বলল তরু।
“জানি মানে!অল্প একটু জানি যে,তোমাকে দাদা আজকে ডেট এ নিয়ে যাবে!”,তন্নী হেসে বলল।
তরু লজ্জা পেয়ে গেল তন্নীর কথায়।
“ওহহো বউমণি তুমি জানো লজ্জা পেলে তোমাকে খুববব কিউট লাগে”,তন্নী তরুর গাল টেনে বলল।
“তাই নাকি জানতাম না তো!”,তরুও তন্নীর গাল টেনে বলল।
“চলো ক্লাসে যাই”,তন্নী সময় দেখে বলল।
“হুম চলো”,তরু বলল।
ওরা ক্লাসে চলে গেল।ক্লাস শেষ করে বাড়ি এসে রেস্ট নিয়ে রেডি হতে শুরু করলো তরু।কিন্তু কি পরবে বুঝতে পারছে না।তাই তন্ময়কে কল করলো।
“হুম বলো,রেডি?”,তন্ময় হাল্কা হেসে বলল।
“আর রেডি!কি পরবো তাই বুঝতে পারছি না তো রেডি হবো কি করে?”, গাল ফুলিয়ে বলল তরু।
তন্ময় তরুর কথা শুনে জোরে হেসে দিলো।
“আচ্ছা ম্যাডামের তাহলে সাজেশন চাই তাই ফোন করেছে আমি আরো ভাবছিলাম আমাকে মিস করছে”,আফসোসের সুরে বলল তন্ময়।
“আমার বয়েই গেছে আপনাকে মিস হুম!”,মুখ ভেংচি দিয়ে বলল তরু।
“আচ্ছা আমি কি তোমার পর?”,তন্ময় হটাৎ গম্ভীর হয়ে বলল।
“মানে?হঠাৎ এই কথা কেন বলছেন?”,তরু বলল।
“কেন বলবো না বলো?তুমি আমাকে সব সময় আপনি আপনি করে কেন বলো?আমি তারমানে তোমার পর কেউ তাই তো?”,তন্ময় বলল।
“আরে না না আপনি কেন পর হবেন?আসলে বলতে বলতে অভ্যাস হয়ে গেছে”,আমতা আমতা করে বলল তরু।
“তুমি করে বলো তাহলে এটাও অভ্যাস হয়ে যাবে”,তন্ময় বলল।
“আচ্ছা ঠিক আছে চেষ্টা করবো”,তরু মৃদু হেসে বলল।
“চেষ্টা করবো বললে হবে না বলতেই হবে”,জেদ করে বলল তন্ময়।
“আচ্ছা আচ্ছা বলবো।এখন কি পরবো তা বলো”,মুচকি হেসে বলল তরু।
“বাহ এই তো তুমি বলেছো!এবার থেকে আপনি শুনলে না কথাই বলবো না।তা শাড়ি পড়লে বেশ খুশি হবো”,তন্ময়ও মুচকি হেসে বলল।
“শাড়ি!”,তরু জোরে বলে উঠল।
“হ্যাঁ শাড়ি.শাড়িতে তোমাকে দারুন লাগে তাই শাড়ি পরো নীল রং এর পরো।নীল শাড়ি আছে কি?”,তন্ময় বলল।
“হ্যাঁ আছে।রাখছি এখন”,তরু বলল।
“হুম তাড়াতাড়ি করো।সাতটায় যাবো”,তন্ময় বলল।
“ওকে”,তরু কল কেটে দিল।
তরু আলমারি খুলে একটা নীল শাড়ি বের করলো।আজকে নিজেই সাজলো।নীল শাড়ি সঙ্গে কানে বড় ঝুমকো,ঠোঁটে লিপস্টিক চুল গুলো ছাড়া এতেই তরুকে খুব সুন্দর লাগছে।
তরু রেডি হতে হতে সাতটা বেজে যায় তাই ও নীচে চলে গেল রেডি হয়ে।তন্ময় বাড়িতে ঢোকেনি আজকে।ওরা বেরিয়ে গেল।
তন্ময় তরুর মা বাবাকে আগে বলে রেখেছিল তরুকে নিয়ে বেড়বে।কারো কোন আপত্তি নেই বিয়ের আগে ওদের ডেটে যাওয়া নিয়ে।বড়োরা মনে করে বিয়ের আগে একে অপরকে জেনে নিলে ওদেরই ভালো তাই কেউ কিছু বলেনি।
কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা একটা রিসোর্টে পৌঁছে যায়।রিসোর্টটি আগে থেকেই তন্ময় বুক করে রেখেছিল।
“এখানে কেন এলাম?”,তরু অবাক হয়ে বলল।
“ভেতরে গেলেই জানতে পারবে”,তন্ময় মুচকি হেসে বলল।
“ধুর সেই কখন থেকে এক কথা বলছো!”,তরু মুখ ফুলিয়ে বলল।
“আরে চলো না ভেতরে।তাহলেই তো তোমার সব প্রশ্নের উওর পেয়ে যাবে তুমি”,তন্ময় হেসে বলল।
“চলো”,তরু বলল।
তরু গাড়ি থেকে নামতে তন্ময় ওর চোখে একটা কালো কাপড় বেঁধে দিল।
“এই এই এটা কি করছো?”,তরু বাঁধা দিয়ে বলল।
“আমার ওপর বিশ্বাস আছে তো?”,কানের কাছে ফিসফিস করে বলল তন্ময়।
তরু মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ” বলল।
“তবে চল”, তন্ময় তরুর হাত শক্ত করে ধরে বলল।
তরু আর কিছু না বলে তন্ময় এর সাথে ভেতরে গেল।কিছুটা যাওয়ার পর তন্ময় কালো কাপড়টা খুলে দিল।
“সামনে তাকাও”,তন্ময় তরুর কানের কাছে এসে বলল।
তরু সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।
বেলুন আর ছোটো ছোটো লাইট দিয়ে পুরো জায়গাটা সাজানো আর মাঝখানে একটা টেবিল যেটার চারপাশে গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজানো তার মাঝে একটা কেক রাখা তাতে লেখা আছে “হ্যাপি বার্থডে মাই লাভ”।
এখন তরুর মনে পড়ল আজকে ওর জন্মদিন।
তরু পেছন ঘুরতেই দেখে তন্ময় ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে সামনে একটা রিং বাড়িয়ে দিয়েছে
“আজকের দিনটা তোমার মনে ছিল না জানি।কি ভাবে কাউকে সারপ্রাইজ দিতে হয় সত্যি বলতে তা আমি জানি না।কোনদিন কাউকে সারপ্রাইজ দি নি।আর এসব সারপ্রাইজ আমার পছন্দ নয় তাই কেউ আমাকে কোন দিনো সারপ্রাইজ দেয়নি।তবে চেষ্টা করলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে কতোটা তোমার পছন্দ হলো জানি না। মনের কথা তো অনেক আগেই বলেছি।তবে সেটা গুছিয়ে বলতে পারিনি!কি ভাবে যে বলে তাই জানি না!তবে আজকে চেষ্টা করছি বলার,
হ্যাপি বার্থডে তরী।প্রথম দেখাতেই তুমি আমার মনে জায়গা করে নিয়েছো।কিভাবে যে আমিও তোমার ওপর দুর্বল হয়ে পড়েছি তা নিজেও জানি না।হবে তরী এই তন্ময় এর।আমার অগোছালো জীবনটা গুছিয়ে দেবে?তন্ময় এর তরী হবে?সারাজীবন তোমার হাত ধরে চলার সুযোগ দেবে?খুব ভালোবাসি তোমায় তরী।একবার হাত ধরার সুযোগ দাও কোনদিন ছেড়ে যাব না কথা দিলাম।”
তরু কি বলবে বুঝতে পারছে না।চোখ দিয়ে জল ঝরছে তবে এই জল খুশির,কিছু পাওয়ার খুশি।তরু কিছু না বলেই হাত বাড়িয়ে দিল।তন্ময় রিংটা তরুর হাতে পড়িয়ে উঠে দাঁড়াল।
তরু বলতে শুরু করল,”আমি কোনদিন কাউকে মনে জায়গা দেব তা ভাবিনি।এই প্রেম ভালোবাসা এসবে আমার বিশ্বাস নেই।অনেক জনকে দেখেছি কাউকে মন থেকে ভালবাসে কষ্ট পেতে।তাই তো এসব থেকে দূরে থাকতাম কিন্তু তুমি এসে সব কিছু ওলট পালট করে দিলে।না চাইতেও এই বেহায়া মনটা তোমাকে দিয়ে দিতে হয়েছে।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসে ফেলেছি তন্ময়।আমার শুধু #তোমাকে_চাই।সারাজীবন একসাথে বাঁচতে চাই।হ্যাঁ হবো আমি তন্ময় এর তরী।”
তন্ময় ভাবতেও পারেনি তরু ওর মনের কথা বলে দেবে।ওর প্রোপোজাল একসেপ্ট করে কোন রিপ্লাই দেবে।খুশিতে তন্ময় তরুকে জরিয়ে ধরলো।তরুও তন্ময়কে জরিয়ে ধরল।
কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর দুজন দুজনকে ছেড়ে দিল তারপর তরু কেক কেটে তন্ময়কে খাওয়া হল আর তন্ময় তরুকে।হঠাৎ তন্ময় এর ফোন বাজতে লাগল।তন্নী ফোন করেছে।
“বউমণিকে দে”,তন্নী বলল।
“হম হুম নে নে দিচ্ছি”তন্ময় ফোনটি স্পিকারে দিল।
“হ্যাপি বার্থডে”,তন্নী,বিবেক,সুকন্যা,তরুর মা বাবা,তন্ময়ের মা বাবা সবাই একসাথে বলে উঠল।
“সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ”তরু হেসে বলল।
“খালি ধন্যবাদ দিলে হবে না।আজকে তোর কাছ থেকে ট্রিট নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তন্ময় জিজু তোকে সারপ্রাইজ দেবে তাই কিছু বলিনি।তবে কাল কলেজে ট্রিট চাই”,বিবেক বলল।
“হ্যাঁ তরু কাল ট্রিট দিতে হবে।সকালে উইস করিনি জিজু না করেছে তাই।রাগ করিস না কিন্ত”,সুকন্যা বলল।
“আমার মনেই ছিল না আজকে আমার জন্মদিন তাহলে রাগ করবো কেন?প্রতিবছর সকালে মা বাবা উইশ করে তাই মনে থাকে।আজকে তো করেনি তাই মনেও ছিল না”,তরু বলল।
“আমি না করেছিলাম সবাইকে তাই কেউ কিছু বলেনি”,তন্ময় বলল।
“সব তোমারই প্ল্যান?”,তরু বলল।
“হুম”,তন্ময় বলল।
“তোরা মজা কর আর কাল ট্রিট দিস আমাদের তাহলেই হবে এখন রাখি”,বিবেক বললে উঠল।
ওরা কল কেটে দিল।তরু আর তন্ময় নিজেদের মতো সময় কাটিয়ে ডিনার করে বাড়ি চলে গেল।
*
দুদিন আগের সব কথা গুলো তরু ব্যালকানিতে রাখা দোলনায় বসে ভাবছিল।
“কেন এতো স্বপ্ন দেখালে?যখন থাকবেন না পাশে তখন কেন কথা দিলে?”,তরু আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে।
আজকে সকালে,
আজকে সকালেও তন্ময় তরু আর তন্নীকে কলেজে নিয়ে গেছে।তরুর আজকে কলেজে বেশি ক্লাস ছিল না তাই তন্নীকে বলে তন্ময় এর অফিসে যাবে বলে ঠিক করে।তন্ময়কে সারপ্রাইজ দেবে।যেমন ভাবা যেমন কাজ।
দুটো ক্লাস করে চলে গেল তন্ময় এর অফিসে।অফিসের সবাই জানে তন্ময় এর বিয়ের কথা। রিসেপশনে গিয়ে তরু নিজের নাম বলতেই সবাই চিনে গেল এটাই তন্ময়ের হবু বউ তাই রিসেপশনের মেয়েটা তন্ময় এর রুমে তরুকে নিয়ে গেল।
“এটাই স্যার এর রুম।আপনি যান ভেতরে”,প্রিয়া বলে মেয়েটি একটি কেবিনের সামনে এনে তরুকে বলল।
“আচ্ছা”,তরু বলল
নক না করেই তরু তন্ময় এর রুমে ঢুকে গেল।ঢুকে যা দেখল তাতে তরু অবাকের শেষ পর্যায় চলে গেছে।
তন্ময় আর দিয়া একে অপরকে জরিয়ে ধরে আছে আর দিয়া তন্ময়কে বলছে”,আমি তোমায় খুব ভালোবাসি তন্ময়।প্লিজ আমাকে এভাবে কষ্ট দিও না।আমি তোমাকে ছেড়ে বাঁচতে পারবো না।প্লিজ তন্ময় আমাকে একসেপ্ট করো প্লিজ।আমি জানি তুমি তরীকে ভালোবাসো না।এসব তোমার নাটক…..”আর কিছু শুনতে পারলো না তরু দৌড়ে বেরিয়ে গেল অফিস থেকে তন্ময় কি বলতো তা শুনলোই না।
#চলবে……?