#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??
??পর্ব-২৩??
.
?
.
আজ তিথি এবং নিলয় এনগেজমেন্টের শপিং করতে বের হবে।অন্যান্য শপিং সব হয়ে গিয়েছে,,,আর ডেকোরেশনের সমস্ত কিছু আবির নিজের হাতে সামলে নিয়েছে,,একমাত্র বোনের এনগেজমেন্ট এর অনুষ্ঠান বলে কথা।কমিউনিটি সেন্টারে তিথির এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান হবে। এইদিকে নিলয়ের দিক থেকে ও সমস্ত আয়োজন হয়ে গিয়েছে।শুধু তিথি এবং নিলয়ের এনগেজমেন্টের দিনে পড়ার জন্য ড্রেস কেনা হয়নি এবং কিছু শপিং বাকি আছে,,,তাই তারা বেরিয়েছে।
নিলয় তিথিকে নিয়ে প্রথমে শপিংমলে ঢুকলো,,তারপর সেখান থেকে ওম্যান সেকশনে গিয়ে তিথির জন্য একটা হোয়াইট কালারের বারবি গাউন কিনল,,,খুব সুন্দর দেখতে গাউন টা,,অনেকটা ফোলানো এবং ঘেরওয়ালা।এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে জেনারেল কাউন্টারে গিয়ে,, তিথি নিলয়ের জন্য একটা কমপ্লিট ব্লাক সুট চয়েজ করলো।নিলয় আবির,,নিশি এবং মামা-মামীর জন্যও ড্রেস কিনলো নিজে পছন্দ করে।
এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে নিলয় তিথিকে নিয়ে জুয়েলারি সেকশনে গেল এবং সেখান থেকে তিথির জন্য একটা ডায়মন্ড পেন্ডেন্ট কিনলো ইউথ গোল্ড চেন,,একটা ডায়মন্ড ব্রেসলেট,,ছোট ডায়মন্ডের টপ ইয়ার রিং এবং একটা নোস পিন ও কিনলো।আংটি কিনতে চেয়েছিল কিন্তু তিথি বারণ করে দেয়,,কারন সে একেবারে এনগেজমেন্টের দিনেই নিলয়ের কাছ থেকে আংটি পড়বে,,, তার আগে নয়।
আর যেহেতু দুই পরিবারের তরফ থেকে আগে থেকেই আংটি কেনা হয়ে গিয়েছে,,,তাই নিলয় আর আংটি কিনল না।এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে তিথির জন্য কিছু মেকআপ মেটেরিয়ালস কিনে,,,তারা ফুড সেকশনে চলে গেল,,,তারপর কিছু খেয়ে তিথিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে,, নিলয় অফিসে চলে গেল।
.
.
?
.
.
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেল।আজ তিথির এনগেজমেন্ট তাই সকাল থেকে আবির খুবই ব্যস্ত,,,দম নেওয়ার ও টাইম নেই তার।তিথি আগের দিন নিশিদের বাড়িতে গিয়ে নিশিকে জোর করে নিয়ে এসেছে,,প্রথমে নিশি আসতে চাইছিল না কিন্তু তিথী জোরের কাছে,,তাকে শেষমেষ হার মানতেই হলো।নিশির বাবা-মাকেও তিথি আনতে চেয়েছিল কিন্তু নিশির বাবার একটা কাজ থাকায় তারা আসতে পারেনি,,,তাই তারা বিকালে আসবে।
প্রায় সব মেহমানরা চলে এসেছে।যেহেতু অনুষ্ঠানটা কমিউনিটি সেন্টারে হবে সুতরাং অনেকেই সকালের খাবার খেয়ে,,,সেখানে চলে গিয়েছে।সকাল ন’টায় নিশির ডাকে তিথির ঘুম ভাঙলো,,,চরম বিরক্তিকর ফেস নিয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে,,,জিজ্ঞাসা করল-;
-:কি হয়েছে??এত সকাল সকাল ডাকছিস কেন আমাকে??ঘুম পাচ্ছে খুব,, ঘুমাতে দে।
এই বলে যেই শুতে যাবে,,,অমনি নিশি তিথির হাত ধরে টেনে তুলল,,,তারপর তিথির দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:কটা বাজে জানিস??নটা!!ভুলে গেছিস আজকে কি??
তিথি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নিশির দিকে তাকাতেই,,নিশি বলে উঠলো-;
-:লাইক সিরিয়াসলি তিথু!!তুই জানিস না আজকে কি??আজ তোর এঙ্গেজমেন্ট তাও আবার নিলয় ভাইয়ের সাথে।আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস,,,কুম্ভকর্ণ একটা।
নিশির কথা শুনে তিথি কিছুটা অবাক হয়ে গেল,,,কারণ সে সত্যিই ভুলে গিয়েছিল আজ তার এনগেজমেন্ট।তারপর নিশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:লজ্জা করে না তোর,,,আজ আমার এনগেজমেন্ট,,,আর তুই!!তুই আমাকে এত দেরিতে ডাকছিস।এই সত্যি করে বলতো,,,তুই আমার বেস্টু নাকি অন্য কিছু??
সন্দেহের দৃষ্টিতে নিশির দিকে তাকিয়ে।তিথির কথা শুনে নিশি অসহায় নজরে তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:বাহ ভালো করতে নেই দেখছি মানুষের।।ভালোর জন্যই তোকে আমি ডাকলাম আর তুই!!তুই কিনা আমাকে কথা শোনাচ্ছিস।জানিস এক ঘন্টা ধরে তোকে ডাকছি আমি,, কিন্তু তুই কুম্ভকর্ণের মত ঘুমিয়ে যাচ্ছিস।এতে আমার কি দোষ বল??আচ্ছা এবার তাড়াতাড়ি ওঠে,,,ফ্রেশ হয়ে নিচে চল,,,আন্টি অনেকক্ষণ ধরে ডাকছে,, ব্রেকফাস্ট করার জন্য।তোর জন্য আমিও এখনো ব্রেকফাস্ট করিনি,,খুব খিদে পাচ্ছে তাড়াতাড়ি ওঠ।
নিশির কথা শুনে তিথির কিছুটা কষ্ট হল,,, সত্যিই তো নিশি অসুস্থ শরীর নিয়ে না খেয়ে আছে আর সে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।নিশি মোটামুটি হাঁটতে পারলেও,,,এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।হাতের ব্যাথাটা বেশ ভালোই আছে আর মাথার চোট টা অনেকটা শুকিয়ে গিলেও,,একটু ব্যাথা আছে।অনেক কড়া কড়া ওষুধ খেতে হয় তাকে,,, আর এখন নটা বাজে,,,এখনো সে ব্রেকফাস্ট করিনি,,,এটা ভাবতেই তিথির মনটা খারাপ হয়ে গেল।তিথিকে চুপচাপ থাকতে দেখে,,,নিশি তিথিকে এক ধাক্কা দিল,,তারপর জিজ্ঞাসা করল-;
-:কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?বুঝি বুঝি,,,সব বুঝি।এখন তোমার মন যে নিলয় ভাইয়ের কাছে।
ঠাট্টার ছলে নিশি বলল কিন্তু নিশির কথায় তিথি কোন উত্তর না দিয়ে,,,তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:সরি রে,,,একেই তোকে কতগুলো ওষুধ খেতে হয়।তার ওপর তুই এখনো না খেয়ে আছিস,,তাও আবার আমার জন্য।তোর খুব কষ্ট হচ্ছে না রে,,,দাঁড়া আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
তিথির কথা শুনে নিশি তিথির মাথায় ছোট্ট একটা চাটি মেরে বলে উঠলো-;
-:তুই একটু বেশিই বুঝে যাচ্ছিস আজ-কাল।। আমার যদি খিদে পেত না তাহলে তোর জন্য আমি অপেক্ষা করতাম না বুঝলি,,,আমি নিজেই নিচে নেমে খেয়ে নিতাম।
নিশির কথা শুনে তিথি একটু হাসলো,,,কারণ সে জানে আর যাই হোক তিথি এবং নিশি যখন এক জায়গায় থাকলে,,,কখনই কেউ কাউকে ছাড়া একা একা খাইনি।সত্যি এই দুনিয়ায় নিশির মতন বন্ধু পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার,,,তার মতো সহজ সরল মেয়ে খুব কমই আছে দুনিয়াতে,,,কেন যে ভাইয়া তাকে বুঝল না।
আর কিছু না ভেবে বিছানা ছেড়ে উঠে পরল কারণ নিশির এখনও খাওয়া হয়নি।তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে গেল দুজনে।ডাইনিং টেবিলে তিথি এবং নিশি বসে আছে।বাড়ির প্রায় সবাই দের খাওয়া হয়ে গিয়েছে,,মামি তিথি এবং নিশির প্লেটে খাবার বেড়ে দিল।তারপর তারা ব্রেকফাস্ট সেরে নিল।
.
.
?
.
.
বিকালে নিশি এবং তিথি পার্লারে চলে গেল,,,তিথির কিছু কাজিন ও তিথির সাথে যেতে চেয়েছিল,,,কিন্তু অনেক দেরি হয়ে যাওয়ায় তারা একেবারে সেন্টারে চলে গিয়েছে।প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে পার্লারের লোকেরা তিথি কে সাজালো।সাজানোর পর তিথি পিছনে ঘুরতেই,,,নিশি হাঁ হয়ে গেল,,,এতক্ষন সে সোফায় বসে ম্যাগাজিন পড়ছিল আর তিথিকে অপজিট সাইডে পার্লারের লোকেরা সাজাচ্ছিল।তাই এতক্ষণ সে তিথিকে লক্ষ্য করেনি।
হোয়াইট কালারের বার্বি গাউন অসম্ভব সুন্দর লাগছে তিথিকে দেখতে আজ।গাউনটা মাটির নিচ পর্যন্ত,,,পুরো গাউনটা ফোলানো।চুলটা খোপা করে বাধা এবং খোপার মাঝখানে হোয়াইট কালারের ছোট ছোট স্টোন দিয়ে সাজানো,,,আর মাথায় একটা ছোট্ট হোয়াইট স্টনের ক্রাউন,, ক্রাউনটা বেশ উজ্জ্বল দেখতে অনেকটা ডায়মন্ডের মতন।তিথি আজ নিলয়ের দেওয়া জুয়েলারিতে সেজেছে,,,দুই হাতে দুটো ব্রেসলেট,,কানে ছোট্ট টপ,,গলায় পেনডেট গোল্ড চেনের সাথে আর নাকে নোস পিন।চোখে গারো কাজল,,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর হালকা মেকওভারে তিথিকে আজ পরীর মতন দেখতে লাগছে।নিশি হাঁ করে তিথির দিকে তাকিয়ে আছে,,নিশিকে অমন তাকিয়ে থাকতে দেখে,,তিথি জিজ্ঞাসা করল-;
-:মুখ বন্ধ কর,,নইতো মশা ঢুকে যাবে।।
তিথির কথায় নিশি নিজেকে সামলে বলে উঠলো-;
-:সত্যি তিথি আজ সিওর নিলয় ভাইয়া তোকে দেখে জ্ঞান হারাবো।।বিশ্বাস কর আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে তোকে এক্ষুনি বিয়ে করে নিতাম,,, কিন্তু আমার ভাগ্য কি নির্মম দেখ আমি ছেলে না মেয়ে হলাম।
কাঁদো কাঁদো সুরে বলে উঠলো।নিশির কথা শুনে তিথি শব্দ করে হেসে উঠলো,,বলে উঠলো-;
-:থাক থাক এত পাম দিতে হবে না আর।
তারপর তিথি পার্লারে লোকেদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো-;
-:আমার এই বান্ধবীটা কে পরীর মতন সাজিয়ে দিন তো।
তিথির কথা শুনে নিশি অবাক হয়ে বলল-;
-:মানে কি??পাগল হয়ে গেছিস নাকি আমি এতেই ঠিক আছি,,,আমার আর কিছু লাগবে না।
-:তুই একদম কথা বলবি না,,,লজ্জা করে না বান্ধবীর বিয়েতে এরকম বিধবা মার্কা সেজে থাকতে।চুপচাপ থাকবি ওরা সাজাবে তোকে তাই সাজতে হবে আমার কসম।
নিশি আর কিছু বলল না কারণ সে জানে তিথিকে বলে কিছু লাভ হবে না।তারপর পার্লারে লোকেরা নিশিকে ও সাজিয়ে দিলো।নিলয় নিশির জন্য যে ড্রেসটা কিনেছিল,,,নিশি সেটাই পড়েছে। হালকা স্কাই ব্লু কালার গাউন খুব সুন্দর গাউনটা,,,তিথির মতন অতটা ফোলানো না হলেও বেশ ফোলানো,,চুলগুলো স্টেটনার দিয়ে কারলি করে এক সাইডে রাখা আর কানের পিছনে চুলের ভাঁজে আর্টিফিশিয়াল বেলি ফুল দিয়ে সাজানো,,, চোখে গারো করে আইলাইনার পড়ানো যেহেতু নিশি কাজল পরতে খুব একটা পছন্দ করে না তাই আইলাইনার দিয়েছে,,,আর ঠোঁটে পিয়াজি কালার লিপস্টিক।দুই হাতে দুটো করে সরু চুরি,,, কানে দুটো ছোট্ট ইয়ার রিং আর গলায় সরু একটা সোনার চেন যা সে সবসময় পড়ে থাকে।তিথির মতই হালকা মেকওভার করা হয়েছে,,ব্যাস এইটুকু সাজেই নিশি কেও আজ পরীর মত দেখতে লাগছে।সত্যি আজ দুই বান্ধবীর দিক থেকে চোখ সরানো ও দায় হয়ে পড়েছে।এরপর তারা পার্লারের বিল পেমেন্ট করে কমিউনিটি সেন্টারে চলে গেল।
.
.
?
.
.
কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ করতে সবার তিথি এবং নিশির দিকে হাঁ হয়ে থাকি আছে তাকিয়ে আছে।তিথির বারবার চারিদিকে তাকাচ্ছে,,, তিথি এমন কাণ্ডে নিশি তিথি কানে ফিশ ফিশ করে বলে উঠলো-;
-: এই যে মিস একটু সবুর করুন,, আপনার মিয়া আপনার জন্য স্টেজে অপেক্ষা করছেন,,ওই দেখুন।
নিশির কথায় তিথি কিছুটা লজ্জা পেল,, তারপর স্টেজের দিকে তাকিয়ে দেখল,,নিলয় বসে আছে স্টেজের উপর।।নিলয়কে দেখতে আজ চরম সুন্দর লাগছে,,যে তাকাবে সে আজ তার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না।কমপ্লিট ব্ল্যাক কালার এর স্যুট পড়েছে আজ নিলয়,,, ভিতরে হোয়াইট কালারের শার্ট,,,প্যান্টটাও ব্ল্যাক কালারের,,,পায়ে ব্ল্যাক শু।চুলগুলো সিল্কি হওয়ায় বারবার তার কপাল ছুঁয়ে যাচ্ছে।তিথি নিলয় এর দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে না,,এতটাই সুন্দর লাগছে আজ তাকে দেখতে।আর এইদিকে নিলয়!! সে তো হা করে তিথির দিকে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে ভাবছে-;
-:এই মেয়েটা তো আমার মাথা একদমই খারাপ করে দেবে দেখছি,,,এত সুন্দর করে কে সাজতে বলেছে তাকে।।উফ!!নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়েছে।
নিশি তিথিকে স্টেজে নিয়ে গিয়ে নিলয় এর পাশে বসিয়ে দিল,,,হঠাৎ নিশির নজর যায় স্টেজের সামনে থাকা আবির এর উপর।আবির আজ স্কাই কালারের শার্ট পড়েছে তার ওপর হোয়াইট কালারের ব্লেজার এবং হোয়াইট কালারের কোট,,প্যান্টটাও হোয়াইট কালারের আর পায়ে ব্ল্যাক কালার শু,,,জেল দিয়ে চুলগুলো সেট করা,,,আবিরকে ও আজ দারুন লাগছে। আবির আড়চোখে বারবার নিশির দিকে তাকাচ্ছে যেটা নিশির নজর এড়ায়নি।
কিছুক্ষন পর এনগেজমেন্ট এর অনুষ্ঠান শুরু হল,,, নিলয় এবং তিথিকে স্টেজে সামনাসামনি দাঁড় করালো।প্রথমে নিলয় তিথির হাতে আংটি পরিয়ে দিল এবং পরে তিথি নিলয়ের হাতে আংটি পরিয়ে দিল,,এইভাবে তাদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর আবির….
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]