#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??
??পর্ব-২২??
.
?
.
নিশি নিজের দুহাত ভাঁজ করে,,অন্যদিকে মুখ করে বসে আছে।আর আবির মাথা নিচু করে বসে আছে।কিছুক্ষণ নিরবতা পালনের পর,, আবির নিশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:আ’ম সরি!!
আবিরের মুখ থেকে আচমকা সরি শুনে নিশি কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল,,হাঁ করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।নিশির এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে আবির তাকে সরি বলেছে।আবিরের ডাকে নিশি কল্পনা জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো,,,তারপর নিজেকে সামলিয়ে নিল।
-:তুমি ঠিক আছো তো??(আবির)
-:হুম।।
-:আসলে আমি খুবই দুঃখিত সেদিনের ঘটনার জন্য।আসলে আমি…
আবিরকে থামিয়ে নিশি বলে উঠলো-;
-:এতে সরি বলার কী আছে??আর তাছাড়া আমার ভুলের কারণেই সেদিন একসিডেন্ট টা হয়েছিল।এতে আপনার কোনো দোষ নেই ভাইয়া।
নিশির সামনের দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলল।
-:নিশি আ…আসলে আমার উচিত হয়নি তোমাকে সবার সামনে ওভাবে অপমান করার।আসলে আমি বুঝতে পারিনি।
-:ভাইয়া প্লিজ আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে ছোট করবেন না।এতে আপনার কোনো দোষ নেই।আসলে আমিই ভুল করেছিলাম,,,আপনার মতন একজন উচ্চ মানের ব্যক্তিকে আমার পাশে কল্পনা করার মতন দুঃসাহস দেখিয়ে।অথচ দেখুন একবারও নিজের যোগ্যতা আমি বিচার করেই দেখিনি।আর আপনার কাছে আমি সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ কারণ আপনি না থাকলে আমি কোনদিনও জানতেই পারতাম না যে আমার সেই যোগ্যতাই নেই যে আপনার মতন একজন মানুষকে ডিসার্ভ করার,,আর সেই জায়গায় তো আমি আপনাকে আমার…
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আর মনে মনে ভাবল সত্যিই তো তার কী যোগ্যতা আছে আবিরের বউ হওয়ার??আবির একজন শিক্ষিত নামকরা ডাক্তার আর সে!!সে তো একজন কোনমতে টেনেটুনে পাশ করা একজন সাধারন স্টুডেন্ট,,,যে নিজের বাবার টাকায় চলে,,,যার নেই কোনো ভবিষ্যৎ চিন্তা।রাগের মাথায় হলেও আবির সেই দিন যা বলেছে একদম ঠিক বলেছে।তার বউ হওয়ার কোন যোগ্যতায় নিশির মতন একজন সাধারণ মেয়ের নেই।আবিরের বউ তো তার মতোই একজন শিক্ষিত মেয়ের হওয়া উচিত।
একটু দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছে সে আবিরের কথাগুলোর তাৎপর্য।তাই তো সে ঠিক করে ফেলেছে আবিরের লাইফের সাথে সে আর নিজেকে জড়াবে না,মুছে ফেলবে তার মনের কোনে জমানো আবির নামক অনুভূতি টাকে।সেই জন্যই তো সে চাইনি আবির তাকে চেকাপ করুক।সে তো আবিরের মুখোমুখি হতে চাই না আর।প্রথমে হয়তো একটু কষ্ট হবে কিন্তু পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।আবিরের সুখের জন্য না হয় নিজের ভালোবাসাকে দাফান ই করলো সে,,,তার এই ত্যাগের জন্য আবিরতো সুখে থাকবে,,এটাই তার কাছে অনেক।সবাই তো আর এই মহান কাজটা করতে পারেনা,,নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে ক’জনই বা পারে।
আর সব ভালোবাসাই তো আর পূর্ণতা পায় না।এমন অনেক ক্ষেত্রেই হয় যে দুটো মানুষ পরস্পরকে তীব্রভাবে ভালোবাসে,,,চাই নিজের জীবন সঙ্গির হাত শক্ত করে ধরে দূরে কেনো এক অজানা দেশে পাড়ি জমাতে,,,চাই বৃদ্ধ বয়সে একে অপরের নির্ভশীল হতে।নিজের কাছের মানুষটাকে নিজের মন পিঞ্জরাই বন্দি করে রাখতে।এগুলো চাই তো অনেকেই কিন্তু পারে কয়জনই বা??
কেউ সমাজে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে,,কেউ আবার নিজের পরিবারের মানুষদের মুখে হাসি ফোটাতে আবার কারোর বা অর্থের অভাবে ত্যাগ করতে হয় তাদের ভালোবাসার মানুষদের।হয়তো তারা সারা জীবনের সুখকে বিসর্জন দিয়ে এক মুহূর্তের সুখটাকেই আপন করে নেই।কিন্তু সুখী কি হতে পারে কেউ???
আর সেই জায়গায় নিশির ভালোবাসা তো এক তরফা।পৃথিবীতে একতরফা ভালোবাসাগুলোর পরিণতি যে বরোই নির্মম।অনেকেই আছে নিজের ভালোবাসার মানুষটির কাছে নিজের অনুভূতি কে প্রকাশ করতে পারে না,,,আবার অনেকে নিশির মতন ও আছে যে নিজের অনুভূতিকে প্রকাশ করতে পারলেও সেই ভালোবাসার মানুষটিকে অর্জন করতে পারে না।আর এর পরিণতি!!হ্যা এর পরিণতি হয় খুবই ভয়াবহ।কারণ নিজের মনে সঞ্চিত আবেগ গুলোকে একপ্রকার দাফন দিয়েই,,ভবিষ্যৎ জীবনে এগিয়ে যেতে হয় তাদেরকে।আবার অনেকে তা পারেও না তাই বেছে নেই আত্মহত্যার মতোন,,,এক চরম পাপ কাজ।কিন্তু না!!নিশি সেই পদ্ধতি অবলম্বন করবে না।কি হয়েছে সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের কাছে পাইনি বলে??না হয় ভাঙা মন নিয়েই এগিয়ে যাবে তার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।
এই কথাগুলো ভাবতেই নিশি মন চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছে।
আর এদিকে নিশির মুখে এমন কথা শুনে আবির সত্যিই আজ স্তব্ধিত।আসলেই সে নিজের অজান্তেই নিশির ছোট্ট মনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে,,,নয়তো নিশির মতন একজন সহজ সরল মেয়ের মুখে এমন কঠিন কথা কখনোই আসতো না।তার মনে যেই ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে,, সেটাকে সারানো আবিরের মতন একজন ডাক্তারের ও কাম্য নয়।
এই প্রথম নিশির মুখে ভাইয়া ডাক শুনে আবিরের কেমন যেন ভালো লাগলো না,,কিন্তু কেন??নিশি তো তাকে ভাইয়া বলেই ডাকতো সবসময়,,তাহলে আজ!!আজ কেন তার এতটা খারাপ লাগছে নিশির মুখে ভাইয়া ডাক শুনে।না এর উত্তর আবিরের কাছে নেই।থাকবেই বা কি করে সে তো নিজেই উত্তর আশার পথটাকে বন্ধ করে দিয়েছে।তবে কী সে কোনো ভুল করে ফেলল।
দুজনেই নিজেদের ভাবনার জগতে ডুবে রয়েছে,,,তবে দুজনার ভাবনা সম্পূর্ণ আলাদা।দরজার আওয়াজে তাদের দুজনারই হুশ ফিরল।সামনে তাকিয়ে দেখলো নিশির মা এক ট্রে খাবার নিয়ে রুমে ঢুকছেন।নিশির মাকে দেখে আবির নিজেকে ঠিক করে নিল।নিশির মা আবিরের সামনে যেই প্লেট টা রাখবে ওমনি আবির বলে উঠলো-;
-:আন্টি আজ আমার একটু তাড়া আছে।তাই আমাকে বেড় হতে হবে।
-:সে কী বলো??তোমার না ক্ষিদে পেয়ছে। চুপচাপ বসে আগে খাওয়া কমপ্লিট করবে,, তারপর উঠবে।
-:আন্টি প্লিজ আজ নয় অন্য একদিন খাবো।আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।ও আপনাদের তো বলাই হয়নি তিথির বিয়ে ঠিক হয়েছে।
তিথির বিয়ের খবর শুনে নিশি অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকালো।
-:সে কী কবে ঠিক হলো??আর ছেলে কি করে??তুমি আমাকে সবে বলছো এই কথা,,,এতই পর হয়ে গেছি আমরা তোমাদের।
কিছুটা অভিমানী শুরে নিশির মা বলে উঠলো।
-: আসলে সরি আন্টি হুট করে সব ঠিক হয়ে গেল।কিন্তু বিয়ে এখন হবে না,,,এখন শুধু এনগেজমেন্ট করিয়ে রাখবে তারপর নিশি পুরোপুরি সুস্থ হলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে পড়ানো হবে।
-:ও তা বেশ ভালো।তা ছেলে কী করে??
-:ছেলেকে আপনারা চেনেন।
-:কি বলো!!ছেলের নাম কি??
-:নিলয় চৌধুরী।
-:নিলয় চৌধুরী!!মানে নিশির আব্বুর অফিসের মালিক নিলয় চৌধুরী।
-:জি আন্টি।
-:বাহ খুব ভালো।ছেলে মাশাল্লাহ দেখতে খুব সুন্দর,,তিথি মামুনির সাথে খুব ভালো মানাবে।
-:হ্যাঁ।
তিথির বিয়ের কথা শুনে নিশি প্রথমে অবাক হলেও,,পরমুহূর্তে তিথির বিয়ে নিলয়ের সাথে হবে এটা জেনে প্রচন্ড খুশি হল।যাক সে নিজের মনের মানুষ টাকে পাইনি তো কি হয়েছে,, তার বেস্টু তো পাবে তার মনের মানুষকে নিজের করে।এটা ভেবেই নিশির মন খারাপ মুহূর্তেই দূর হয়ে গেল।আরো কিছুক্ষণ নিশির মার সাথে গল্প করে এবং নিশিকে চেক আপ করে আবির বাসায় চলে এলো।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]