#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??
??পর্ব-২১??
.
?
.
নিচে নেমে নিলয় দেখল তিথি তার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে,,দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিথি প্রচন্ড টেনশন এ আছে।আবির সোফায় বসে,,রিয়াদ হোসেন এর উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন-;
-:আঙ্কেল আমাদের কোনো আপত্তি নেই,,এই বিয়েতে।।
আবিরের এই কথাটি শুনে তিথির টেনশন যেন মুহূর্তেই খাওয়া হয়ে গিয়ে,,চোখেমুখে এক আনন্দের ঝিলিক ফুটে উঠল।আবির আবার বলে উঠলো-;
-:কিন্তু আমরা চাচ্ছি বিয়েটা অনুষ্ঠানিকভাবে কিছুদিন পর করতে।কারণটা আপনাদের আমরা আগেই বলেছি।
-:ঠিক আছে,,,,আমাদের তাতে কোন আপত্তি নেই।তবে আমরা চাই কিছুদিনের মধ্যেই অন্তত এনগেজমেন্ট টা করিয়ে রাখতে,,,যদি আপনাদের মত থাকে তবেই আমরা এগোবো এই বিষয়ে।
নজরুল সাহেব বলে উঠলেন-;
-:না না এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
-:তাহলে আমরা পরের সপ্তাহে ই তিথি এবং নিলয়ের এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠানটা আয়োজিত করবো।
-:ঠিক আছে।
তারপর আরো কিছুক্ষন গল্প করে,,,দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর নিলয় এবং রিয়াদ হোসেন বাড়ি ফিরে গেলেন।
.
.
?
.
.
রাতে নিলয় তিথি কে ফোন দিল,,,তিথি ফোন রিসিভ করতেই,,ওপাশ থেকে নিলয় বলে উঠলো-;
-:পাখি কি করো??
-:তেমন কিছু না।
-:আচ্ছা তখন মুখটা অমন করে রেখেছিলে কেন??
-:আসলে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তখন,,, ভেবেছিলাম ভাইয়া হয়তো আপনাকে উল্টোপাল্টা কোনো কথা বলেছে।
-:ও তাই বুঝি।।তা ম্যাডামের কবে থেকে আমার জন্য চিন্তা হচ্ছে??
-:ও তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আপনার জন্য আমার কোন চিন্তাই হয় না,,,কী তাইতো।।
কিছুটা অভিমানী সুরে বলে উঠলো তিথি,,,
-:আরে পাখি আমি কি তাই বলেছি নাকি।।আচ্ছা বলতো ডিনার করেছো তুমি??
-:হ্যাঁ।(কিছুটা মন খারাপ করে)
-:পাখি প্লিজ মন খারাপ করো না,, দেখো আমি তোমাকে এতগুলো কিসি দিচ্ছি ফোনের এপার থেকে,,, তবুও মন খারাপ করে থেকো না প্লিসসস।
এই বলে নিলয় শব্দ করে দু তিনটে চুমু খেলো ফোনের ওপর,,,নিলয়ের এমন কান্ডে তিথি হেসে ফেললো,,,তারপর বলল-;
-:মন খারাপও করতে দেবেন না আপনি আমাকে তাই না??
-:উহু,,না!!
-:কেন??
-:কেন মন খারাপ হতে দেবো তোমাকে শুনি?? নিজের কলিজাকে কী কেউ কোনোদিন কষ্ট পেতে দেয়।
-:আই লাভ ইউ নিলয়।
হুট করে তিথি বলে উঠলো।।তিথির মুখে এমন কথা শুনে নিলয় অনেকটাই অবাক হলো,,,কারণ এই প্রথম তিথি তাকে সরাসরি আই লাভ ইউ বলেছে।। কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুচকি হেসে বলে উঠলো-;
-:আই লাভ ইউ টু পাখি।।
-:হুম।
-:আচ্ছা নিশি কেমন আছে এখন??
-:এখন মোটামুটি সুস্থ আছে,,তবে হাঁটতে পারে না খুব একটা ভালো করে।
-:ও ডোন্ট ওয়ারি,,,সব ঠিক হয়ে যাবে।।নিশি অনুষ্ঠানের দিন আসবে তো।
-:হ্যাঁ আসবে কালকে ভাইয়া যাবে ওদের বাসায়।
-:ও ভেরি গুড।পাখি জানো আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে এত সহজে আমি তোমাকে পেয়ে যাব।।
-:হ্যাঁ আমারও তাই,,আমি তো ভেবেছিলাম ভাইয়া কখনোই মেনে নেবে না।কিন্তু দেখুন সবার আগে ভাইয়া ই মেনে নিল আমাদের সম্পর্কটা।
-:হুম।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর নিলয় ফোনটা রেখে দিলে।
.
.
?
.
.
সকলে তিথি ডাইনিং টেবিলে বসে পরোটা আর ভাজি খাচ্ছিল,,ঠিক এমন সময় আবির রেডি হয়ে নিচে নামল।আবির কে দেখে তিথি জিজ্ঞাসা করল-;
-:কিরে ভাইয়া এত সকাল বেলায় তুই কোথায় যাচ্ছিস??আর তাছাড়া আজকে তো তোর ছুটি।
যদি ও তিথি জানে বিষয়টা তবুও আবিরের মুখ থেকে শোনার জন্য জিজ্ঞাসা করল।
-:নিশিদের বাসায় যাব একবার।
-:তুই আর নিশি দের বাসায়!!বাট হোয়াই??
কিছুটা অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করলো,,,
-:আরে তোর মনে নেই,,,নিশিকে চেকআপ করতে যাওয়ার কথা আমার।
-:হ্যাঁ কিন্তু আগের সপ্তাহে তো অন্য একজন মহিলা ডাক্তার গেছিল,,নিশিকে চেকআপ করতে।তাহলে সে আজও নিশিকে চেকআপ করবে নিশ্চয়ই,,,,তাহলে তুই কেন যাচ্ছিস??আর এমনি তে ও নিশি তো তার কাছেই নিজের চেকআপ করাবে বলেছে।।
-:আমি আঙ্কেলকে কালকে ফোন করে বলেছি,,যে ওর চেকআপ আমিই করব,,আর ওই মহিলা ডাক্তার কে আসতেও বারণ করে দিয়েছি।
-:নিশি জানে এই কথাটা।
-:আই ডোন্ট কেয়ার।।এমনিতেই ও আগের সপ্তাহে জেদ করে নিজের চেকআপ অন্য একটা ডাক্তারের কাছে করিয়েছি আর আমাকে বলার প্রয়োজন বোধও করেনি।যদি না আংকেল ফোন করে আমাকে বলতো তাহলে তো আমি জানতেই পারতাম না।
তিথি কিছুটা খোঁচা মেরে আবিরকে বলল-;
-:তাতে কি হয়েছে ভাইয়া??তোর তো ভালোই হলো কষ্ট করে আর তোকে ওদের বাসায় যেতে হবে না,,,আর নিশিকে ও সহ্য করতে হবে না।।
-:তিথি আবারো।।
কিছুটা করুণ দৃষ্টিতে তিথির দিকে তাকিয়ে,,, তিথি বুঝতে পারলো আবির কষ্ট পেয়েছে তার কথায়।কারণ আবির তখনই তাকে তিথি বলে ডাকে যখন সে রেগে থাকে তিথির উপর আর ন হয় খুব কষ্ট পায় তিথির ব্যবহারে।।তিথি কিছু বলতে যাবে তখনই নজরুল সাহেব নীচে নামলেন,,,আর আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন-;
-: কোথায় যাচ্ছিস এখন??
-:এইতো বাবা নিশিদের বাসায় ওর চেকআপ করতে।
-:ও আচ্ছা ঠিক আছে।তিথির এনগেজমেন্ট হবে তার আয়োজন করতে হবে তো,,,এখনও কিছুই শপিং করা হয়নি।।
-:বাবা আমার সব মনে আছে তুমি এসব কিচ্ছু চিন্তা করোনা,,আল্লাহর রহমতে এনগেজমেন্ট এর অনুষ্ঠান ভালো ভাবেই হবে।
-:আচ্ছা ঠিক আছে তুই বরং আগে নিশিদের বাসায় যা।
-:হুম।।
এই বলে আবির চলে গেল।।।
.
.
?
.
.
নিশি খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে আর তার ঠিক পাশেই,,,চেয়ারের উপর বসে আবির তাকে চেকাপ করছে।নিশিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড পরিমাণে বিরক্ত আবিরের উপর।কিন্তু আবির সেটা বুঝেও কিছু বলছে না,,,চুপচাপ চেকআপ করে যাচ্ছে তাকে,,,,আবিরের ঠিক পাশেই নিশির বাবা এবং মা দাঁড়িয়ে আছে।।
আবির নিশির বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো-;
-:আঙ্কেল দেখেছেন ডাক্তার টা পায়ের ব্যান্ডেজ গুলোও ভালো করে করেনি,,,এমনকি ওষুধ ও দেয়নি ঠিক মতোন।।
-:তাই নাকি বাবা!!এই..এইজন্যই আমি চাইছিলাম না অন্য কেউ ওকে দেখুক,,,কিন্তু এত জেদ করে আজকাল যে আমাদের কিছু বলতেই দেয়না।
-:আপনারাও বা ওর জেদ পূরণ করেন কেন??বেশি জেদ করলে হাত পা বেধে,,,না খাইয়ে ঘরে বসিয়ে রাখবেন,,,দুদিন না খেয়ে থাকলেই তখন দেখবেন সব জেদ ফুস হয়ে গেছে।
নিশির পায়ে ব্যান্ডেজ করতে করতে,,,আড়চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে আবির বললো কথাটা।আবিরের কথা শুনে নিশি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো,,তারপর তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল-;
-:কই বাবা ব্যান্ডেজ তো ঠিকঠাকই করা ছিল,,,আমি তো কোন ভুলই দেখতে পাইনি,,,এবার কেউ যদি ইচ্ছা করে ডাক্তারের ভুল ধরে নিজেকে ফেমাস করতে চাই তাহলে কিছু করার নেই।
-:আহ নিশি কি হচ্ছে কি এসব!!আবির এত কষ্ট করে এখানে এসে তোকে চেকআপ করে যাচ্ছে,,, যাতে তোর কোন ক্ষতি না হয়,,,আর তুই…তুই কিনা ওকে উল্টোপাল্টা কথা শুনেছিস।
-:মা আমি তো…
-:চুপ একদম চুপ।।।বড় বেয়াদব হয়ে উঠছিস আজকাল তুই।
মায়ের এমন ধমকে নিশী খুব কষ্ট পেল,,,ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বসে আছে,,,নিশির ওমন ফেস দেখে আবির মুচকি মুচকি হেঁসে,,বলে উঠলো-;
-:থাক আন্টি ওকে বকতে হবে না,,বাচ্চা মানুষ না বুঝে বলে ফেলেছে।
-:না বাবা আজকাল ও বড় বদমাইশি করছে,,,কেউ উপকার করতে আসলে যে তাকে ধন্যবাদ দিতে হয় সেই জ্ঞানটুকুও নেই ওর।(রাগী চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে)
মায়ের ওমন শক্ত শক্ত কথা আর আবিরের এমন হাসিমাখা মুখ দেখে,,নিশির রাগ আরো বেড়ে গেল,, মনে মনে ভাবছে-;
-:আহা দরদ একেবারে উপচে পড়ছে,,মেয়ের হয়ে সাফাই গাওয়ার বদলে মেয়ের অতীত ক্রাশ আর ভবিষ্যতে বাঁশের উপরে ডবল ক্রাশ খেয়ে তার প্রশংসায় পাগল হয়ে যাচ্ছে,,,আরে মাই মাদার পিংপং তুমি কী এটা জানো যে এই সেই কালপ্রিট যে তোমার মেয়ের হাফ মৃত্যুর জন্য দায়ী,,,হুম জানো না তুমি তাইতো।কেউ বললে তো জানবে।
আর এই যে ক্যাবলাকান্ত আপনার হাসি যে একেবারে থামছেই না,,,খুব হাসি পাচ্ছে আমাকে দেখে তাই না,,,হাহাহাহা আমার মা তো আর জানে না যে তার এই সুইটু মেয়ের অ্যাক্সিডেন্টের পিছনে তুমি আছো,,,যদি জানতো না তাহলে তোমাকে ঝাঁটা পিটাই করে বের করতো আগে বাসা থেকে।
আবিরের কথায় নিশির ভাবনার ছেদ পরল,,
-:আসলে আমি যদি আমাকে ফেমাস করতে চাইতাম তাহলে এখানে আসতাম না।
নিশির দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল,,, আবিরের কথাটা শুনে নিশি তার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিল,,তারপর অন্য দিকে ঘুরে গেল। নিশির এমন কাণ্ডে আবির হেসে ফেলল।
-:আচ্ছা বাবা তুমি বস আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
-:আচ্ছা আন্টি।
-:মা তুমি বসো না এখানে আমার পাশে খাবার আনার কি দরকার আছে এখন,,,উনি নিশ্চয়ই খেয়ে এসেছেন বাড়ি থেকে।
-: নিশি এসব কি বলছিস তুই পাগল হয়ে গেলি নাকি।বাবা তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো না।।
-: না না আন্টি আমি বাচ্চাদের কথায় কিছু মনে করি না।
-:আমি মোটেও বাচ্চা নই।(মুখ ফুলিয়ে নিশি বলে উঠলো)
-:না না তুই একটা তালগাছ,,,নেই হয়েছে এবার,,, আন্টি আপনি যান আমার জন্য খাবার নিয়ে আসুন আমি আসলেই আমি বাড়ি থেকে কিছু খেয়ে আসিনি।।
-:আনছি,,,,তুমি একটু বোসো।।
এই বলে নিশির মা চলে গেলো,,,যদিও আবিরের খাওয়ার ইচ্ছা নেই তবুও নিশি সাথে কথা বলার জন্যই সে খাওয়ার কথাটা বলল।এদিকে নিশির বাবাও অফিস থেকে জরুরি কল আসায়,,বাইরে গিয়েছে কথা বলতে।নিশির তো প্রচুর বিরক্ত লাগছে,,,আবার সাথে একটু ভয়ও লাগছে,,,এইজন্যই সে তার মাকে তার পাশে বসতে বলেছিল।নিশিকে চুপ করে থাকতে দেখে আবির বলে উঠলো-;
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]