তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-১৫

0
2468

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-১৫??
.
?
.

নিচে গিয়ে তিথি ডাইনিং টেবিলে খাবার সার্ভ করলো।নিলয় নিচে নেমে চেয়ার টেনে বসে পরলো আর তিথিকে হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিল।তিথি নিলয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই,,নিলয় মুচকি হেসে বলল-;

-:আজকে আমরা একসাথে,,একই প্লেটে খাব।

-:কিন্তু..

তিথি কে থামিয়ে দিয়ে বলল-:

-:কোন কিন্তু নয়।প্রথমে আমি তোমাকে খাইয়ে দেবো তারপর তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে,,ওকে।।

-: আপনার তো খিদে পেয়েছে।আপনি বরং আগে খান,,, তারপর না হয় আমি খাব।

-:চুপ!!আমি যেটা বলছি সেটাই হবে।নাও ওপেন ইওর মাউথ,,হা করে পাখি,,কতক্ষণ ধরে থাকবো, হাত ব্যাথা করবে তো এবার।

তিথি আর কোন কিছু না বলে হা করলো। বিরিয়ানির দিকে তাকিয়ে নিলয় বলে উঠলো-;

-:বাহ খুব সুন্দর ঘ্রাণ আসছে তো।দেখে তো মনে হচ্ছে বিরিয়ানিটা খুব মজার হবে খেতে।।

তারপর নীলয় তিথি কে খাইয়ে দিল।তিথির খাওয়া শেষে হলে আর একটু বিরিয়ানি প্লেটে নিয়ে নিল।তারপর নিলয়ের দিকে এক লোকমা খাবার তুলে ধরতেই নিলয় গপ করে সেটা খেয়ে ফেলল।খাওয়ার সাথে সাথেই নিলয় চোখ বন্ধ করে ফেলল।নীলয়ের চোখ বন্ধ করা দেখে তিথি মনে মনে কিছুটা ভয় পেল,,তিথি ভাবছে হয়তো নিলয়ের খাবারটা পছন্দ হয়নি।তাই নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে জিজ্ঞাসা করল-;

-:কি হলো খাচ্ছেন না কেন??খাবার মজা হয়নি।

নিলয় আস্তে করে চোখটা খুলে,,তিথি হাত দুটো নিজের সামনে আনলো,,তারপর দুই হাতের তালুতে চুমু দিয়ে তিথির দিকে তাকিয়ে বলল-;

-:আমার বাচ্চাটা এত সুন্দর খাবার বানায় তা আগে জানতাম না তো।খুব সুন্দর খেতে হয়েছে বিরিয়ানিটা,,,পাখি আরো দাও খুব খিদে পাচ্ছে আমার।

নিলয়ের কথায় তিথি খুব খুশি হলো,,,তারপর প্লেটে আরেকটু বিরিয়ানি তুলে,,,নিলয় কে খাইয়ে দিতে লাগলো।অন্যান্য দিনের তুলনায় নিলয় আজ অনেক বেশি খেয়ে ফেলেছে।

খাওয়া শেষে নিলয় তিথিকে নিয়ে উপরে চলে গেল।তারপর তিথিকে খাটে বসিয়ে,,,তিথির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বলল-;

-:পাখি আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তো।কতোদিন আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারিনি,, আজ একটু ঘুমাবো।

এই বলে তিথির হাত নিজের মাথার উপরে রেখে,,,তিথির পেটে মুখ গুঁজে,, চোখ বন্ধ করে,,শক্ত করে দুহাতে জড়িয়ে ধরল তিথিকে।সকাল থেকে নিলয় এমন হুটহাট আক্রমণে,,তিথি বারবার কেঁপে উঠছে।তিথি কাঁপা কাঁপা হাতে নিলয়ের চুলে হাত দিল,,,তারপর আস্তে আস্তে চুলে হাত বোলাতে লাগলো।কিছুক্ষণের মধ্যেই,,, নিলয় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল।

তিথি নিলয়ের দিকে আছে একধ্যানে তাকিয়ে আছে,,,কি নিষ্পাপ মুখ।ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে একদম বাবুদের মত লাগে আর জেগে থাকলে একটা আস্ত ডেভিলে পরিণত হয়।এই মানুষটা তাকে ভালোবাসে,,এতটাই ভালোবাসে যার কোন তুলনা হয় না।এ কথা ভাবতেই তিথির মনে এক অজানা ভালোলাগা কাজ করছে। আবার সকালের কথা মনে পড়তেই তিথির মুখ লজ্জায় লাল নীল হয়ে উঠল। ‌
.
.
?
.
.

বিকেল পাঁচটায় বাসার সামনে তিথিকে নামিয়ে দিলে নিলয়।যেহেতু বাড়িতে আগে থেকেই বলা ছিল,,তাই কেউ তেমন কোনো প্রশ্ন করেনি তিথিকে।রাতে ডিনার করে তিথি শুয়ে শুয়ে,, নিলয়ের কথা ভাবছিলাম,,,তখনই তিথির মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো।ফোনটা রিসিভ করতেই,,ওপাশ থেকে নিলয় ঘুমঘুম কন্ঠে বলে উঠলো-;

-:পাখি ঘুমিয়ে পড়ো,,,আমার কথা আর ভাবতে হবে না।

নিলয়ের কথায় তিথি অবাক হয়ে গেল,,,কিছু বলতে যাবে তখনই নীলয় আবার বলে উঠল-;

-:এতো অবাক হচ্ছ কেন পাখি।তোমার মনের খবর আমি জানবনা তো কে জানবে শুনি।

-:আপনি কি করে জানলেন,,আমি এখন কি ভাবছি।

-:জানি জানি আমি সব জানি,,এখন চুপ করে ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে। কাল আবার কথা হবে,,ওকে।

এই বলে ফোনটা কেটে দিলো,,এদিকে তিথি মনে মনে নিজেই বলে উঠলো-;

-:আশ্চর্য এখন আমার মনের কথা জেনে যাচ্ছে,,,omg কি হবে এখন।

তারপর আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়ল।
.
.
?
.
.

আস্তে আস্তে দিন যেতে লাগল,,,এদিকে তিথি আর নিলয়ের সম্পর্কটাও আরও গারো হয়ে উঠলো।আর নিশি!!সে তো অনেকবার চেষ্টা করেছিল নিজের মনের কথাগুলো আবিরকে বলার কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হয়েছে।তাই সে ঠিক করে ফেলেছে আর কিছুদিন পর তাদের ফাইনাল এক্সাম শুরু হবে আর যেদিন এক্সাম শেষ হবে,, ওইদিনই সবার সামনে সে আবিরকে তার মনের কথাগুলো জানাবে।

এদিকে পরীক্ষা কাছে চলে আসায়,,,তিথি নিলয়ের সাথে কথা বলা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে।। সারাদিন নিজেকে পড়াশোনায় ব্যস্ত রেখেছে এখন সে কারণ তার এখনো পুরো সিলেবাস কমপ্লিট হয়নি।যদি পরীক্ষায় বাজে মার্কস আসে তাহলে বাড়িতে বকা তো খাবেই তার সাথে নিলয়ের সামনে তার প্রেস্টিজ পুরো জলে ভেসে,, ফেলুদা হয়ে যাবে।তাই সে মন লাগিয়ে পরছে।নিলয় সারাদিনে একবার ফোন করে তিথির খোঁজ খবর নেয়,,তাও আবার পাঁচ মিনিটের বেশি কথা বলে না,,,কারণ সে নিজেও চায় তিথি যেন এখন কোনমতেই নিজের সময় নষ্ট না করে।

দেখতে দেখতে তিথির পরীক্ষার দিন চলে এলো,,,আবির তাকে পরীক্ষা সেন্টারে পৌঁছে দিয়ে এসেছে।তিথি আর নিশীর সিট পরপর পড়েছে,,,তাই নিশি তিথিদের সাথেই যায়।।আবার পরীক্ষা শেষ হলে আবির এসে ওদের নিয়ে যায়।

এইভাবে পরীক্ষাগুলো শেষ হতে লাগলো একটার পর একটা।প্রতিটি পরীক্ষায় তিথির বেশ ভালই হয়েছে।কাল তিথির শেষ পরীক্ষা,,,এটা ভাবতেই তিথি মন নেচে নেচে উঠছে,,,অনেকক্ষণ ধরে ফোনটা নিয়ে নাড়াচাড়া করার পর,,,নিলয়ের নাম্বারে ডায়াল করলো,,,কিছুক্ষণ রিং হতেই অপর পাশ থেকে নিলয় ফোনটা রিসিভ করল-;

-:পাখি তুমি এখন এত রাতে আমাকে ফোন করেছ কেন??কোন সমস্যা হয়েছে।

-:না…না এমনি ফোন করেছিলাম।

-:হোয়াট,,কাল তোমার পরীক্ষা আর আজ তুমি এত রাতে না ঘুমিয়ে আমাকে ফোন করছ।(কিছুটা ধমক দিয়ে বলল নিলয়)

-:আমার বুঝি আপনার সাথে কথা বলতে একটুও ইচ্ছে করে না,,,কতদিন কথা হয়না,,,তা কি কারোর খেয়াল আছে,,সবাই সারাদিন ব্যস্ত আমাকে বকতে।(কিছুটা অভিমানী স্বরে বলে উঠলো)

-:পাখি আমি তা বলেছি নাকি কিন্তু কাল তোমার পরীক্ষা।তোমার এখন ঘুমানো উচিত,,নইলে শরীর খারাপ করবে তো।

-:আমিতো শুধু এটা জানানোর জন্য ফোন করেছিলাম যে কেউ একজন বলেছিল আমার পরীক্ষা শেষ হলে,,সে নাকি আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।তার কি সেটা মনে আছে,,,এটা জানার জন্যই ফোনটা করা।।

নিলয় তিথির কথা শুনে,,,মুচকি হেসে বলে উঠলো-;

-:আমার জানকে আমি যখন কথা দিয়েছি তখন তাকে নিয়ে অবশ্যই ঘুরতে যাব।

নিলয়ের কথা শুনে তিথি খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠলো-;

-:সত্যি!!আপনার মনে আছে তাহলে।তবে কাল পরীক্ষা শেষ হলেই পরের দিন যাব কিন্তু আমরা ঘুরতে।।

-;ঠিক আছে বাচ্চা,,এখন তুমি চুপচাপ ঘুমাও দেখি।

-:ওকে বাই।

এইবলে তিথি শব্দ করে ফোনে একটা কিস দিয়ে ফোনটা রেখে দিল,,,,তিথির এমন কাণ্ড নিলয় কিছুটা হাসে,,, মনে মনে বলে উঠল-;

-:পাগলি একটা,,খুব ভালোবাসি পাখি।।
.
.
?
.
.

আজ তিথিদের পরীক্ষার শেষ দিন,,তাই আজ নিশি মনে পুরোপুরি ঠিক করেই ফেলেছে যে আজ সে সবার সামনে আবির কে প্রপোজ করবে।তাই সে নিজের বাগানের একগুচ্ছ লাল গোলাপ আবিরের জন্য নিয়ে এসেছে।রীতিমত আজও আবির তাদেরকে সেন্টারে ছেড়ে,,,নিজের হসপিটালে চলে গেল।পরীক্ষা শেষ হলে আবার তাদের নিতে আসবে।

তিথীরা সবেমাত্র পরীক্ষার হল থেকে বের হলো,,,সব ছাত্র-ছাত্রীরা আজ বেজায় খুশি কারণ আজ তাদের পরীক্ষা শেষ এবার তারা একটা লম্বা ছুটি পাবে।তিথিও বেশ খুশি কারণ সেও ঘুরতে যাবে নিলয়ের সাথে।

তিথি অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে যে নিশি কোন একটা বিষয় নিয়ে খুব ভাবছে আর বারবার নিজের ব্যাগে কি যেন একটা দেখছে।তিথি এবার নিশির কাছে গিয়ে,,,নিশির মাথায় একটা চাটি মেরে জিজ্ঞাসা করল-;

-:কিরে পেত্নী বারবার কি দেখছিস ব্যাগে,,,কি চুরি করে নিয়ে এসেছিস দেখি একবার।

-:আরে না…না কিছু…কিছু নেই ব্যাগে।

এইবলে তিথির হাত থেকে এক প্রকার ছিনিয়ে নিল ব্যাগটা।।এবার তিথির কৌতুহল বেড়ে গেল।

-:কিছু নেই বললেই হল,,,কিছুতো একটা লুকাচ্ছিস তুই আমার কাছ থেকে আর সেটা আমি দেখেই ছাড়বো।

এই বলে নিশির কাছ থেকে টেনে-হিঁচড়ে ব্যাগটা কেড়ে নিল,, ব্যাগটা খুলতেই তিথি অবাক হয়ে গেল কারণ ব্যাগের মধ্যে আবিরের জন্য আনা নিশির বাগানের সেই একগুচ্ছ লাল গোলাপ ফুল রাখা ছিল।

তিথি নিশির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই,,নিশি বলে উঠলো-;

-:আজ আমি ওকে আমার মনের কথা বলব,,,তাই এ..এইটা এনেছি।

-:এই ওটা আবার কে?????।

-:তুই বুঝি জানিস না ওটা কে??(লজ্জা পেয়ে কথাটা বলল নিশি)

-:ওহো এতদূর।এই নিশি সত্যি করে বলতো তুই পরীক্ষাগুলো ভালো ভাবে দিয়েছিস তো,,,মানে পাস করতে পারবি তো।তুই যদি পাস না করেছিস,, তাহলে ভাইয়া তোর দিকে মুখ ফিরেও তাকাবেন।

-:তিথি আমি অতটাও খারাপ স্টুডেন্ট নয়।আর সব পরীক্ষা আমার ভালোই হয়েছে।

-:ঠিক আছে,,ঠিক আছে।ওই দেখ,,,ভাইয়া চলে এসেছে,,এখন চল তাড়াতাড়ি।

তিথি এগিয়ে যেতেই,,নিশি তিথির হাত ধরে ফেলল,,,তারপর তিথির দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলল-;

-:তিথু আবির ভাইয়া আমার মনের কথা বুঝতে পারবে তো।

-:আরে পারবে না মানে,,এত বছর ধরে তুই ভাইয়াকে নিস্বার্থভাবে ভালবেসে গেছিস।তোর কথা বুঝবে না,,তাই কখনো হয়।আর বাই দ্যা রাস্তা তুই নিজের হবু বর কে ভাইয়া ভাইয়া কি বলছিস,,,আরে সুয়ামি বলে ডাক।

-:তিথি??

-:আচ্ছা আচ্ছা এবার তো চল।

তিথি,,,নিশি সেন্টার থেকে বের হতেই আবির জিজ্ঞেস করলো

-:কিরে বুড়ি পরীক্ষা কেমন হলো তোর,,ভালো করে লিখেছিস তো।

-:হ্যাঁ ভাইয়া

এবার আবির নিশির দিকে তাকিয়ে বলল-;

-:আর তুই,,,তুই লিখেছে সবকিছু।

-:জ্বি।।

-:ভেরি গুড,,আজকে তোদের শেষ পরীক্ষা ছিল,,তাই তোরা আজ যা খেতে চাইবি,,তাই খাওয়াবো তোদের।

এই বলে আবির পিছনে ফিরতে নিলে নিশি আবিরকে ডাক দিল,,,আবির পিছনে ফিরে তাকাতেই,,,নিশি আবিরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে,,,একগুচ্ছ লাল গোলাপ আবিরের সামনে ধরল,, তারপর বলতে লাগলো-;

-:ছোটবেলায় যখন তোমায় প্রথম চিনলাম,,ডেকেছিলাম তোমায় ভাইয়া বলে।যখন আমার বয়স তেরো,,,হঠাৎ একদিন নীল পাঞ্জাবি আবৃত অবস্থায় তোমায় দেখে আমার কিশোরী মনের এক কোণে ছোট্ট একটা কেটেছিল দাগ ভালোলাগার।সেদিন উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে তোমাকে ভাইয়া বলে ডাকাটা,,আমার জীবনের চরম ভুল ছিল।কিন্তু তখন অতটাও গুরুত্ব দিইনি আমি এটাকে।

কিন্তু আমার হৃদয়ের গহীনে কখন যে এই ভালোলাগাটা ভালবাসায় পরিনত হয়েছিল বলতে পারব না।কিন্তু এটা আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম সেইদিন যেইদিন তোমাকে অন্য মেয়ের সাথে হেসে কথা বলতে দেখেছিলাম,,,তিথির জন্মদিনের পার্টিতে।সেদিন থেকে আজও পর্যন্ত ভালোবেসে গেছি তোমাকে নিঃস্বার্থভাবে।বিশ্বাস করো কোনদিন তোমাকে জানাতে চাই নি,,আমার মনের কথা।ভেবেছিলাম নিজের মনের কোণে থাক না চাপা আমার গোপন ভালোবাসা,,,কি দরকার বাইরের পৃথিবী কে জানানো আমার ভালবাসার মানুষটার কথা।

কিন্তু আমি নিরুপায়।।আমি পারবো না অতটাও ভালো হতো কারণ তুমি হীনা আমি যে একেবারে শুন্য।বানাবে কি আমাকে তোমার বউ,,কিচ্ছু চাই না বিশ্বাস করো,,,শুধু দিনশেষে একটুখানি ভালোবাসা দিলেই চলবে। প্লিজ ফিরিয়ে দিও না,,, আজ ফিরিয়ে দিলে যে আমি পুরো ভেঙে পড়বো।আই লাভ ইউ,,,,,আই লাভ ইউ সো মাচ।।তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না,,,আমাকে….

আর কিছু বলতে পারল না নিশি তার আগেই আবির প্রচন্ড জোড়ে একটা থাপ্পর মারল নিশির গালে।এতক্ষন রাস্তার সবাই তাদের দিকে তাকিয়েছিল।হঠাৎ আবিরের এমনভাবে চড় মারায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা,,,,মানুষগুলো অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে,,,সাথে তিথি নিজেও প্রচন্ড পরিমানে অবাক নিজের ভাইয়ের এমন কাজে।কিছু বলতে গেলে,,আবির তাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়,,তারপর নিশির হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে,,আরেকটা চড় মারে নিশির অন্য গালে।।নিশি গালে হাত দিয়ে ছল ছল চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু আবিরের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই,,,সে রক্তলাল চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে,,তারপর একটা প্রচন্ড জোরে হুংকার দিয়ে উঠল-;

-:শাট আপ!!আই সে জাস্ট শাট আপ।

আবিরের এমন হুঙ্কারের নিশি কেঁপে উঠলো।। তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরল আপনা আপনি।আবির আবার চেঁচিয়ে বলতে লাগলো-;

-:how dare you!!আমাকে এইসব বলার সাহস তোকে কে দিয়েছে।কি যোগ্যতা আছে তোর আমার ব‌উ হবার,,,তোকে আমি তিথির মতই আমার বোন ভাবি।আর তুই!!তোর মনে এসব চলছিল অসভ্য বেয়াদব মেয়ে কোথাকার।তোর বাবার টাকা আছে বলে কি তুই নিজেকে আমার যোগ্য মনে করিস।যেমন তেমন ভাবে পাস করে তো প্রতিটা ক্লাসে উঠিস,,সারাদিন বাবার টাকায় ঘুরে বেড়াস,,,তোদের মত মেয়েদের কাছ থেকে আর কিই বা আসা করা যেতে পারে,,তোরা তো এমনি হোস।পড়াশুনা বন্ধ করে সারাদিন ঘুরে বেড়াস এদিক ওদিক আর বিভিন্ন ছেলেদের সাথে প্রেম করে বেড়াস,,, নিজেদের সময় কাটানোর জন্য।আয়নায় একবার নিজের রুপটাকে দেখেছিস,,তুই না রুপে আর না গুনে,,,কোন‌ও দিক দিয়ে আমার যোগ্য নোস।আর…

-:ব্যাস ভাইয়া এবার চুপ কর তুই।অনেক বলে ফেলেছিস,,আর নয়।।

তিথি চেঁচিয়ে উঠলো-;

-:কি জানিস তুই ওর সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে আমি দেখে আসছি ওকে,,,তাই তোর থেকে ওকে আমি বেশি ভালো করে জানি।।যেখান থেকে ও বুঝতে শিখেছে যে ও তোকে ভালবাসে সেখান থেকে ও নিঃস্বার্থভাবে এতটা বছর শুধু তোকেই ভালোবেসে গেছে।কত ছেলে ওকে প্রপোজ করেছে তা তোর ধারণা নেই কিন্তু ও কারোর দিকে তাকায় নি শুধুমাত্র তোর জন্য।আর তুই আজকে এতগুলো লোকের সামনে এইভাবে ওকে হেনস্তা করতে পারলে।তোর কাছ থেকে আমি এমনটা আশা করিনি।আই হেট ইউ ভাইয়া,,,আই হেট ইউ।

তিথি আর কিছু বলতে পারল না তার আগেই,,,নিশি নিজের চোখের জল মুছতে মুছতে দৌড়ে চলে গেল ওদের সামনে থেকে,,,তিথি নিশিকে অমন দৌড়াতে দেখে চেঁচিয়ে নিশিকে ডাকতে লাগলো কিন্তু কোন দিকে না তাকিয়েই নিশি দৌড়াতে লাগলো,,, রাস্তার মাঝখান থেকে। মেইনরোড হওয়ায় সেখানে তখন বিভিন্ন গাড়ি চলাচল করছিল।হঠাৎ একটা গাড়ি এসে নিশিকে ধাক্কা মারে বেরিয়ে গেল,,,নিশি ছিটকে পড়ল রাস্তার এক পাশে,,পুরো রাস্তা রক্তে ভরে গেল মুহুর্তেই।

আবির,,,তিথি দুজনেই কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল।হঠাৎ করে এমন কিছু হবে,,,কেউ বুঝতেই পারিনি।হঠাৎ তিথি নিশি বলে চেঁচিয়ে উঠলো,,,আবির দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখল নিশির অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল,,, এক্ষুনি হসপিটালে এডমিট করতে হবে।তাই সময় নষ্ট না করে নিশিকে কোলে তুলে নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।নিশির প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে,,,তিথি ক্রমাগত কান্না করেই যাচ্ছে আর নিশিকে ধরে গাড়ির পিছনে বসে আছে,,,এদিকে আবির কাঁপা কাঁপা হাতে দ্রুত ড্রাইভ করছে।
.
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে