#তোমাকে আমার প্রয়োজন ??
#মেঘ পরী??
??পর্ব-১৩??
.
?
.
নিলয় তিথির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।।গরমকালে পাখা চলায়,,তিথির অবাধ্য চুলগুলো পাখার হাওয়ায় বারবার তার মুখ ঢেকে দিচ্ছে,,নিলয় আস্তে আস্তে চুলগুলোকে সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিল।তারপর নিজের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে তিথির কপাল থেকে থুতনি পর্যন্ত হালকা করে স্লাইড করে,,,খাটের পাশে বসে এক গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ তিথির দিকে তাকিয়ে থাকলো।তিথি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন,,আর নিলয় নেশা জরানো চোখে তার মায়াবতীকে দেখতে ব্যস্ত। নিলয় আস্তে করে তিথির দিকে ঝুঁকে তিথির মুখের উপর ফু দিতে লাগলো।
হঠাৎ নিজের মুখের উপর গরম হাওয়া অনুভব করে তিথির ঘুমটা ভেঙে গেল।চোখ পিটপিট করে তাকাতেই দেখলো একজোড়া তৃষ্ণার্ত চোখ তার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে,,তা দেখে তিথি ভয়ে যেই চিৎকার করতে যাবে অমনি সেই আঁখিদ্বয়ের মালিক তার মুখ চেপে ধরল।তারপর তিথির কানে তার উষ্ণ ঠোঁটে একটা চুমু এঁকে দিয়ে,,,ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো-;
-:তোমার গোলাপি বর্ণ মসৃণ মুখশ্রীর উপর উন্মুক্ত একজোড়া গভীর কালো চোখ আর গোলাপের ন্যায় কোমল ঠোঁট যুগল দেখে যেদিন আমি প্রথম ঘায়েল হয়েছিলাম তোমার প্রেমে,,,সেইদিন ভেবেছিলাম তোমার রূপের জাদুকাঠি কেবল এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ,,,,কিন্তু তোমার ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখশ্রী তোমার জাগন্ত মুখশ্রীকে পরাজিত করে দিয়ে আমার ভুলটা ভেঙে দিল।তোমার বন্ধ চোখের দুয়ারে আর শুষ্ক ঠোঁটের ভাঁজেই লুকিয়ে আছে তোমার রূপের আসল জাদুমন্ত্র পাখী।
এমন নেশা ভরা কন্ঠ শুনে তিথি কিছুটা কেঁপে উঠলো।কারণ এই গলার স্বর যে তার চেনা,,এটা তো নিলয়ের গলার স্বর।কিন্তু এত রাতে উনি এখানে কি করে এলেন।নিলয় আস্তে করে নিজের হাতটা ছেড়ে দিল,,,তিথি সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:আপনি এখানে কী করে এলেন?কখন এলেন?আর কেনই বা এলেন??
-; চুপ।।একদম চুপ।।এতগুলো কথা একসাথে কি করে বলো তুমি।তুমি কি সারাক্ষণ বকবক ছাড়া কিছুই করতে পারো না আর আমি এখানে তোমার ফালতু বকবক শুনতে আসিনি তোমার ভুলের শাস্তি দিতে এসছি।সো স্টপ টকিং।
নিজের আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে তিথির ঠোঁটে চেপে ধরে কথাগুলো বলল নিলয়। নিলয় এর শাস্তি দেওয়া কথাটা শুনে তিথি ভয়েতে শুকনো ঢোক গিলল।
-:দে..দেখুন সত্যি বলছি নিশুর মায়ের শরীর খারাপ ছিল।আমি আপনাকে মিথ্যা কথা বলিনি।
-: চুপ আর একটা ফালতু কথা নয়।অন্যের মাকে নিয়ে এমন মিথ্যা অভিনয় করতে পারলা কি করে তুমি।।(ধমক দিয়ে উঠল নিলয়)
নিলয়ের ধমক খেয়ে তিথি নিজেকে গুটিয়ে নিল তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগল-;
-:য..য..দি অম..অমন না বল..বলতাম তা..হলে আমা..কে বা..সা থে..কে বে..র হতে দিত..না।
-:তাই বলে মিথ্যা কথা বলবে,, এইভাবে অন্যের মাকে নিয়ে।
-:s..sorry ভু..ভুল হয়ে গিয়েছে আর এমন হবে না।।(দু কানে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বলল)
কিন্তু নিলয়ের আজ খুব রাগ ধরছে তিথির উপর।সে তিথির সাথে কথা বলতে চেয়েছিল,,একান্তে কিছুটা সময় কাটাতে চেয়েছিল।কিন্তু তিথি কি করলো!! তখনকার কথা ভাবতেই নিলয়ের প্রচন্ড মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।।কালকে অফিসের ইম্পরট্যান্ট মিটিং এর জন্য,,,তাকে এক সপ্তাহের জন্য লন্ডন যেতে হবে,, তাই সে চেয়েছিল তিথির সাথে কিছুটা সময় কাটাতে কিন্তু এই মেয়ে তার সব প্লানে এক বালতি পানি ঢেলে দিল।এসব কথা ভাবতে ভাবতে নিলয় রাগী দৃষ্টিতে তিথির দিকে তাকালে,,,তিথি তখনও মাথা নিচু করে বসেছিল।নিলয় এবার তিথি দুই বাহু প্রচন্ড জোরে চেপে ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বলতে লাগলো-;
-:এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হলো আমার সাথে কথা না বলে চলে যাওয়ার,,,একটুও বোঝার চেষ্টা করনা না আমার ফিলিংসগুলোকে,, আমি কি চাই সেটা তুমি আমার চোখ দেখে বুঝতে পার না।
আমাকে মানুষ বলে তোমার মনে হয় না??এই বলোনা আমাকে মানুষ বলে তোমার মনে হয় না,,,এতদিন ধরে কুকুরের মতন,,,তোমার পিছে পিছে ঘুরেছি আর তুমি একটুও বোঝার চেষ্টাই করলে না আমাকে।আরে একটা মেয়ে কোন ছেলের তাকানো দেখলেই বলে দেবে সে ছেলে তাকে কি নজরে দেখছে।।আর তুমি,,,,তুমি এক সপ্তাহ আমার বাড়িতে থেকেও আমাকে বোঝার চেষ্টা করলেনা যে আমি কি চাই?সারাদিন অফিস শেষে শুধু তোমাকে এক পলক দেখার জন্য,,,তোমার স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি আর তুমি কিছুই বুঝলা না।
তোমার একটু কষ্ট হলে আমি আমার বুকের বাম পাশটায় তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করি যানো,,কিন্তু তুমি কিছুই বোঝ না।।ওতটাও বাচ্চা নও তুমি পাখি।বলতো আর কবে বুঝবে আমাকে,,,আমার মনের ফিলিংস গুলোকে,,,আমি মারা যাওয়ার পর।আমি তোমাকে খুব জ্বালায় না তোমার আমার সাথে কথা বলতে খুব বিরক্ত লাগে।।আমি এত রাতে তোমার বাড়িতে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি,,,তাতেও তোমার খুব রাগ হচ্ছে আমার উপর না।।
ঠিক আমি তোমাকে আর কোনদিনও ডিস্টার্ব করবো না,,,আর কোনদিনও তোমার মুখোমুখি হবো না,,কথা দিলাম তোমাকে।আচ্ছা তিথু পাখী একটা কথা বলবে আমায়,,,আমি মানুষটা কি সত্যি ভালোবাসা পাওয়ার অযোগ্য।ছোটবেলায় তো বাবা মা আমাকে একা ফেলে চলেই গেল,, আর বাকি জীবনটা যাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইলাম সেও আমাকে বুঝলো না।
কথাগুলো বলার সময় নিলয়ের গলা বারবার ধরে আসছিল,,চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে।।
তিথি কোনদিন নিলয়ের এমন চেহারা দেখেনি।নিলয়ের প্রতিটি কথায় মধ্যে তার মনের কোনে জমে থাকা কষ্টগুলোর সাথে তিথি পরিচিত হচ্ছিল।নিলয়ে এমন কথা শুনে তিথির চোখ ভিজে যাচ্ছে আপনা আপনি।।লোকটার বুকে যে এতটা কষ্ট লুকিয়ে ছিল তিথি বুঝতেই পারিনি এতদিন,,,তার জন্য যে এতটা তীব্র অনুভূতি লোকটার বুকে জমেছিল সে জানতেই পারেনি এতদিন।তিথি অনেক কষ্টে নিজের অশ্রু সংবরণ করছিল কিন্তু নিলয়ের শেষের কথাটা শুনে আর নিজের চোখের জল আটকাতে পারল না।
তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি গাল বেয়ে পড়তে লাগলো।নিলয় তিথি চোখের জল দেখে,,তিথির বাহু ছেড়ে দিয়ে তার গালে নিজের দুহাত দিয়ে ধরে,কপালে কপাল ঠেকিয়ে স্লো ভয়েসে বলে উঠল-;
-:তিথু পাখি ডোন্ট ক্রাই।।তোমার কাছে এই অশ্রু মূল্যহীন হতে পারে কিন্তু আমার কাছে এই অশ্রুর একেকটা দানা মুক্তার মতন।সো আমার মতন ফালতু লোকের জন্য এই মুক্ত গুলোকে নষ্ট করোনা এইভাবে।।
এই বলে নিলয় নিজের ঠোঁট দিয়ে তিথির অশ্রুগুলো শুষে নিতে থাকলো। কিছুক্ষণ পর তিথির দুই চোখে আর কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলল-;
-:পাখি খেয়াল রেখো নিজের।আর পারলে কোনো এক বসন্তের দুপুরে অথবা কোন এক পড়ন্ত বিকালে সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণে এই বাজে মানুষটাকে,,,একবার হলেও মনে করো,,,,নিজের অজান্তে।।হয়তো কিছু কাল অতীত তোমার মনকে নাড়া দিবে,,কিন্তু সেটা ক্ষণস্থায়ীর জন্য,,না হয় তুমি সেটা সহ্য করল।।
তারপর নিলয় আর কোন কথা না বলে,,চলে গেল।।আর তিথি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে ,,আর নিলয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকলো।।
.
.
?
.
.
আজ ৮ দিন হয়ে গেল নিলয় কোন খোঁজ নেয়নি তিথির।আর এদিকে তিথি নিলয়কে এক পলক দেখার জন্য ছটফট করতে লাগলো। অনেকবার নিলয়ের ফোনে ট্রাই করেছে তিথি,, কিন্তু হয় নিলয়ের ফোন সুইচড অফ দেখাচ্ছে আর নয় তো দুবার রিং হলেই ফোনটা কেটে যাচ্ছে।তিথি আর কিছু চিন্তা করতে পারছে না,,,তাই সে ঠিক করল সে নিলয়ের বাড়িতে যাবে নিলয়ের সাথে দেখা করতে।আজকে যেহেতু ছুটির দিন,,,তাই নিলয় বাড়িতেই থাকবে। তিথি আর দেরী করলো না আজকে সে নীলয়ের সাথে কথা বলেই ছাড়বে।
তিথিকে আজ দেখতে পুরো হুর পরীর মত লাগছে।মিষ্টি কালারের একটা সিল্কের শাড়ি পরেছে তিথি আজ,,,দুহাত ভরে সিলভার কালারের চুরি,,,চোখে গাঢ় করে কাজল,, ঠোঁটে পিংক কালারের লিপস্টিক দিয়ে তৈরি করেছে নিজেকে সে।চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে তিথি,,তিথির চুলগুলো বেশ লম্বা কোমর পর্যন্ত।। তিথি রেডি হয়ে আয়নার সামনে তাকাতেই নিজেই নিজেকে দেখে লজ্জা পেয়ে গেল।আজকের তিথি সেজেছে,,মন ভরে সেজেছে শুধুমাত্র নিলয়ের জন্য।এতদিন ধরে সে ঠিক করে ফেলেছে তাকে কি করতে হবে,,,তাই আজ নিলয়ের সাথে কথা বলা তার খুবই জরুরী।নিলয় তাকে এভাবে দেখে কী রিয়্যাক্ট করবে এটা ভাবতেই তিথীর মুখ লাল টমেটোর মত হয়ে যাচ্ছে।নিলয় এর জন্য কিছু খাবার নিজের হাতে বানিয়ে ছিল তিথি আজ সকালে।।তিথি সেগুলো টিফিন বক্সে ভর্তি করে,, নিলয়ের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।আর বাসায় বলে এসছে যে সে নিশিদের বাসায় যাচ্ছে,,তাই ফিরতে লেট হবে।
.
.
?
.
.
নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল নিলয়।হঠাৎ দরজায় আওয়াজ হওয়াতে পিছনে ফিরে তাকাতেই নীলয় অবাক হয়ে গেল।।নিলয় বিশ্বাসই করতে পারছে না যে সে কোনদিন তিথিকে এইভাবে তার সামনে দেখতে পাবে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তিথি কে দেখতে আজ। চোখ ফেরানোই যাচ্ছে না।নিলয় তিথিকে দেখে উঠে দাঁড়ালো,,যেই কিছু বলতে যাবে তখনই তিথি নিলয়কে কষিয়ে একটা চড় মারলো আর বলল……
.
.
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]